১৬ জনের মৃত্যু, সর্বোচ্চ ১০ ফুট জলোচ্ছ্বাসে বিস্তীর্ণ এলাকা পস্নাবিত
আশীষ কুমার দে : ঘূর্ণিঝড় ‘আইলা’র তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড হয়েছে দেশের দড়্গিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় উপকূলের বিস্তীর্ণ জনপদ। এ পর্যন্ত ১৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। সাগরে মাছধরা ট্রলারসহ শত শত জেলে নিখোঁজ রয়েছেন। অনেক স্থান থেকে বহু লোক আটকেপড়ার খবরও পাওয়া গেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ মঙ্গলবার দুর্গত এলাকা পরিদর্শনে যাবেন। ভেড়িবাঁধ ও বসতবাড়িসহ হাজার হাজার স্থাপনা বিধ্বস্ত ও চিংড়িসহ ফসলের ব্যাপক ড়্গয়ড়্গতি হয়েছে। দেশের এক-তৃতীয়াংশ এলাকায় ভেঙে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। উদ্ধার কাজে সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন করেছে সরকার। নিখোঁজ ও আটকেপড়াদের উদ্ধারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য মন্ত্রিসভার সদস্যসহ সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। দুর্গত প্রতিটি জেলার জন্য নগদ ১২ লাখ টাকা এবং ১ লাখ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। গত ২২ মে দড়্গিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি ক্রমেই দড়্গিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগরের দিকে অগ্রসর হয়ে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়ে গতকাল সোমবার দুপুর ২টায় মংলা সমুদ্র বন্দরের কাছ দিয়ে খুলনা উপকূল অতিক্রম করে। আইলা নামের প্রলয়ঙ্করী এই ঘূর্ণিঝড়টি খুলনা উপকূলে প্রথম আঘাত হানে। এর পরপরই ঘূর্ণিঝড়টি খুলনা, বাগেরহাট, পটুয়াখালীর বিস্তীর্ণ উপকূল অতিক্রম করতে শুরু করে। স্বাভাবিকের চেয়ে ৮ থেকে ৯ ফুট উঁচু জোয়ারে পস্নাবিত হয়ে পড়েছে বিস্তীর্ণ জনপদ। বরগুনায় সর্বোচ্চ ১০ ফুট জলোচ্ছ্বাস সৃষ্টি হয়। মংলা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ৭ ও ৬ নম্বর বিপদ সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। সারা দেশে সব ধরনের নৌ-যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।ঘূর্ণিঝড় আইলার প্রভাবে ঝড়, বৃষ্টি ও সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসের কারণে এ পর্যন্ত পাঁচজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে সরকার। এর মধ্যে ভোলার চরফ্যাশনে তিনজন, পটুয়াখালীর বাউফলে একজন ও গলাচিপায় একজন মারা গেছেন। তবে ভোরের কাগজ প্রতিনিধিরা নোয়াখালীতে পাঁচ, ভোলায় ছয়, লক্ষ্মীপুরে তিন ও পটুয়াখালীতে দুজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন।আইলার কারণে বিধ্বস্ত হয়েছে খুলনা, বাগেরহাট, সাতড়্গীরা, বরিশাল, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুরের হাজার হাজার বাড়িঘর। ভেসে গেছে শত শত চিংড়ি ঘেরসহ অসংখ্য স্থাপনা। বিভিন্ন স্থানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ ভেঙে শত শত গ্রাম তলিয়ে গেছে। বিআইডব্লিউটিএ গতকাল দুপুর থেকেই সারা দেশের সব অভ্যন্তরীণ রুটে নৌযান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। এ ছাড়া সাগর উত্তাল থাকায় সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরও সব ধরনের সমুদ্রগামী ও উপকূলগামী জাহাজ চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। বিআইডব্লিউটিসি পদ্মার পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া এবং মাওয়া-চরজানাজাত রুটে ফেরি ও লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দেয়ায় রাজধানীর সঙ্গে দড়্গিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার সড়ক যোগাযোগও বন্ধ রয়েছে। ঢাকা আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ছাদেকুল আলম বলেছেন, ঘূর্ণিঝড়টি সুনির্দিষ্টভাবে কোথায়ও আঘাত হানেনি। নিম্নচাপের প্রভাবে গতকাল দুপুর থেকেই খুলনাসহ উপকূলীয় জেলাগুলোতে প্রবল বর্ষণ, ঝড় এবং সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস শুরু হয়েছে। তবে একই অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোঃ শাহ আলম উপকূলে আইলার আঘাত হানার কথা জানিয়ে বলেছেন, এটি রাত ১০টা নাগাদ খুলনা উপকূল অঞ্চল অতিক্রম করে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করার কথা। ঘূণিঝড়টির গতি পশ্চিবঙ্গমুখী হওয়ায় বাংলাদেশ অনেকটা বেঁচে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি। আবহাওয়া অফিস জানায়, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৭০ কিলোমিটার। যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া আকারে ৯০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে থাকে। এর প্রভাবে সাগর প্রচণ্ড উত্তাল হয়ে ওঠে এবং শুরু হয় সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস। বিকালে ভাটা শুরু হলে উপকূলে পানির উচ্চতা কমতে থাকে। তবে রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে ঝড় ও প্রবল বর্ষণ হচ্ছিল। আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী যেসব অঞ্চলকে ৭ নম্বর বিপদ সঙ্কেতের আওতায় থাকতে বলা হয়েছে সেগুলো হচ্ছে- ভোলা, বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতড়্গীরা ও যশোর জেলা এবং তাদের অদূরবর্তী চর ও দ্বীপগুলো। এ ছাড়া কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, কুমিলস্না ও চাঁদপুর জেলা এবং এসব জেলার অদূরবর্তী চর ও দ্বীপগুলোকে ৬ নম্বর বিপদ সঙ্কেতের আওতায় থাকতে বলা হয়েছে। স্থানীয় সূত্রগুলোর উদ্ধৃতি দিয়ে বিভিন্ন স্থান থেকে ভোরের কাগজ প্রতিনিধি ও সংবাদদাতারা জানান, দুপুর ২টা থেকে খুলনা উপকূল অতিক্রম করতে শুরু করে ঘূর্ণিঝড় আইলা। এ সময় স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে এখানে ৮ থেকে ৯ ফুট পানি বেড়ে যায়। হুমকির মুখে পড়েছে শহররড়্গা বাঁধ। উপকূলীয় অঞ্চলের প্রায় সব চিংড়ি ও মাছের ঘের পস্নাবিত হয়েছে। ৩ ফুট পানিতে তলিয়ে গেছে মংলা শহর। বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে বিস্তীর্ণ অঞ্চল। জোয়ারের পানির তোড়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভেড়িবাঁধ ভেঙে খুলনার পাইকগাছা, কয়রা, দাকোপ ও বটিয়াঘাটা এবং সাতড়্গীরার কালীগঞ্জ ও শ্যামনগর উপজেলার দেড় শতাধিক গ্রাম পস্নাবিত হয়েছে। এসব এলাকায় বসতবাড়ি ও পানের বরজ বিধ্বস্তসহ ফসলের ব্যাপক ড়্গয়ড়্গতি হয়েছে। দুপুর ১টার পর থেকে অবিরাম বর্ষণ ও সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসে বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ, শরণখোলা ও কচুয়া উপজেলা সদর এবং জেলা শহরের একাংশ তলিয়ে যায়। রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এসব স্থানে প্রবল বর্ষণ হচ্ছিল। অবিরাম বৃষ্টি আর থেমে থেমে দমকা হাওয়া বইছে পটুয়াখালী উপকূলজুড়ে। স্বাভাবিকের চেয়ে ১০ ফুট বেশি উচ্চতার পানিতে পস্নাবিত হয়েছে চরাঞ্চল। শহর এলাকা পস্নাবিত হয়েছে ৩ থেকে ৪ ফুট পানিতে। এ ছাড়া গলাচিপা উপজেলার মৌডুবি, চর মন্তাজ, রাঙ্গাবালি, খেপুপাড়ার ধুলেশ্বর, দেবপুর, লালুয়া এবং কুয়াকাটার খেজুরা নিজামপুর ও চেয়ারপুর বাঁধ ভেঙে পস্নাবিত হয়েছে কমপড়্গে ১০ হাজার ঘরবাড়ি। চাঁদপুরে মেঘনার পানি অস্বাভাবিক বেড়ে এরই মধ্যে ডুবে গেছে লঞ্চ টার্মিনালের জেটিসহ দুটি পন্টুন। নোয়াখালীর মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপে ৭/৮ ফুট এবং হাতিয়ার মূল ভূখণ্ডের ভেড়িবাঁধের বাইরে নিম্নাঞ্চল ৫/৬ ফুট জোয়ারের পানিতে পস্নাবিত হয়েছে।গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকায় এক সংবাদ ব্রিফিঙে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ জানান, দুর্যোগ মোকাবেলায় সরকার সম্ভাব্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে। উপকূলীয় এলাকায় জেলা প্রশাসন ও রেড ক্রিসেন্ট অফিসে খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। জেলা প্রশাসনের পড়্গ থেকে উপজেলা ও ইউপি চেয়ারম্যান এবং ইউপি সদস্যসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের স্বেচ্ছাসেবকদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া উদ্ধার তৎপরতা কাজে সিভিল প্রশাসনের পাশাপাশি বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডকে নিয়োগ করা হয়েছে বলে আবুল কালাম আজাদ জানান। খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আটকেপড়া মানুষদের উদ্ধার করতে সেনা, নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। গতকাল ঘূর্ণিঝড় আইলা নিয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠক শেষে এ কথা বলেন। ত্রাণ তৎপরতা তদারকির জন্য প্রধানমন্ত্রী গতকালই মন্ত্রিসভার সদস্যদের নির্দেশ দিয়েছেন বলে খাদ্যমন্ত্রী জানান।দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে ঘূর্ণিঝড় আইলার আঘাত সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যায়।
ভোলায় ৪ ট্রলার ডুবি : নিহত ৬ ভোলা :
পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভেড়িবাঁধ ভেঙে ও জলোচ্ছ্বাসে প্রায় ২ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ঝড়ের কবলে পড়ে একটি লঞ্চ ও চারটি ট্রলার ডুবে গেছে। স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ট্রলারডুবি, জলোচ্ছ্বাস ও ঘরচাপা পড়ে ৬ জন নিহত হয়েছে। এ ছাড়া প্রায় ২৫ জন নিখোঁজ রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সকাল ১০টার দিকে ঘূর্ণিঝড় আইলা ভয়াবহ আঘাত হানে জেলার চরফ্যাসন উপজেলায়। উপজেলার মাদ্রাজ ইউনিয়নে সাগরের ১০/১২ ফুট উঁচু পানির তোড়ে পাউবোর ৫৬ ও ৫৭নং পোল্ডারের নতুন ও পুরোনো ভেড়িবাঁধ ভেঙে ব্যাপক ড়্গয়ড়্গতি হয়। মুহূর্তের মধ্যে কয়েকটি স্পট দিয়ে হু হু করে পানি ঢুকে পড়লে এলাকার কয়েকটি গ্রাম ৬/৭ ফুট পানিতে তলিয়ে যায়। আসলামপুর, হামিদপুর, মফিজাবাদ এলাকায়ও বাঁধ ভেঙে প্রায় ৩০/৪০ হাজার লোক পানিবন্দী হয়ে পড়ে। স্থানীয় মিজান নামের একব্যক্তি জানান, বঙ্গোপসাগরের মোহনায় ইউসুফ মাঝির মাছধরা ট্রলার ডুবে যায়। ট্রলারে থাকা চারজন মাঝি ফিরে আসতে পারলেও নাজিম উদ্দিন (২৫) নামের এক জেলে মারা যায়। পরে তার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া লালমোহন উপজেলায় ঘরচাপা পড়ে অজ্ঞাত এক মহিলা নিহত হয়েছে।ভোলা সদরের দড়্গিণ বালিয়া এলাকায় তেতুলিয়া নদীর ভেড়িবাঁধ ভেঙে শত শত বাড়িঘর তলিয়ে গেছে। এ সময় গিয়াস (৩০) নামের এক ব্যক্তি জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে বলে জানা গেছে। ধারণা করা হচ্ছে সে নিহত হয়েছে। অপরদিকে ভোলা সদরের তুলাতলি মেঘনার ভেড়িবাঁধের ওপর থেকে ঘর সরাতে গিয়ে হারুন (২৫) নামে এক ব্যক্তি মেঘনায় ভেসে গেছে। সদরের বিচ্ছিন্ন ইউনিয়ন রাজাপুরের হাজার হাজার বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করেছে। ভোলা-৪ আসনের এমপি আব্দুলস্নাহ আল ইসলাম জ্যাকব চরফ্যাসনে দুর্গত মানুষের মাঝে ব্যক্তিগত তহবিল থেকে দেড় লাখ টাকা সাহায্য করেছেন। উপজেলা প্রশাসন থেকে নগদ ৫০ হাজার টাকা ও চিড়া, গুড় বিতরণ করা হয়েছে।
নোয়াখালীতে নিহত ৫নোয়াখালী : নোয়াখালীতে ঘর চাপা পড়ে, পানিতে ভেসে গিয়ে ও নৌকা উল্টে ৫ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে বয়ার চরে ফারুক (৭) ও রাজিব (১৬), নিঝুম দ্বীপে নাজমা (৩) ও ফাতেমা (৫) এবং নদের চলের চরে অজ্ঞাত ১ শিশু মারা গেছে। এছাড়া হাতিয়া দ্বীপের কয়েকটি স্থানে প্রচণ্ড জোয়ারে ভেড়িবাঁধ ভেঙে অন্তত ৪০০ পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে। সকালের প্রচণ্ড বাতাসের বেগের সঙ্গে ৭/৮ ফুট উচ্চতায় জোয়ারের পানিতে তমরুদ্দি ইউনিয়নের খিরদিয়ায়, চরকিং ইউনিয়নের বগুলা এবং চরচেঙ্গা ইউনিয়নের বাজার সংলগ্ন ভেড়িবাঁধটি ভেঙে গিয়ে হাজার হাজার একর ফসলি জমি ও কয়েকশ ঘরবাড়ি পস্নাবিত হয়েছে। নিঝুম দ্বীপের প্রায় ৭০ শতাংশ ৭/৮ ফুট জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে। সেখানকার মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে স্থানীয় আশ্রয়কেন্দ্রে ও উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে।
লক্ষ্মীপুরে ঘরচাপা পড়ে নিহত ৩লক্ষ্মীপুর : লক্ষ্মীপুর উপকূলের বিভিন্ন এলাকা জলোচ্ছ্বাসে ভেসে গেছে। রামগতি, চর গজারিয়া এবং চরগাজী এলাকায় ঘরচাপা পড়ে ৩ জন নিহত হয়েছেন। এরা হলেন- চরগাজীর মারুফ (৭), আমেনা বেগম (৪৮) এবং চর গজারিয়া দ্বীপের রোজিনা (৯)। এদিকে ঝড়ে ৫ শতাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। ভেড়িবাঁধের বাইরের হাজার হাজার মাছ পানিতে ভেসে গেছে। সকাল থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।
ঝালকাঠি : শহরের অধিকাংশ রাস্তায় হাঁটুপানি। কাঠালিয়া উপজেলার ৩০টি গ্রাম তলিয়ে গেছে। বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ সকাল ১০টা থেকে। পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য জেলা প্রশাসন ২০টি আশ্রয় কেন্দ্র, ৩৭টি মেডিকেল টিম ও ৫টি কন্ট্রোল রুম তৈরি রেখেছে।
খুলনা : সোমবার দুপুরে ঝড়টি জেলার দাকোপ, কয়রা, পাইকগাছাসহ উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হানে। এসব এলাকার নদ-নদীতে পানির উচ্চতা স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৬-৭ ফুট বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে কয়রা উপজেলার শিবসা, চুনকুড়ি কপোতাড়্গ নদীর পানি বেড়ে উত্তর ও দড়্গিণ বেদকাশী, সদর, মহারাজপুর, পূর্ব মঠখালী, মহেশ্বরীপুরসহ বিভিন্ন স্থানের বাঁধ ভেঙে গেছে। এ ছাড়া এ উপজেলার আরো অর্ধশতাধিক বাঁধ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। পাইকগাছা উপজেলার বোয়ালিয়া ভেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। এ উপজেলার গড়াইখালী, সদরবাজার, ভরেঙ্গার চক, হালদার চক, বাড়ৈইখালী এলাকায় পানিতে ছাপিয়ে গেছে। দাকোপ উপজেলার পশুর, ঢাকী, চুনকুড়ি নদীর পানি বৃদ্ধিতে ভেড়িবাঁধগুলো ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। আকস্মিক ঝড়ে জেলার কয়েক হাজার হেক্টর জমির উঠতি ফসল ও সবজি, মাছের ঘের তলিয়ে গেছে। এ ছাড়া শতাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি ধসে প্রায় দেড় হাজার পরিবার ড়্গতিগ্রস্ত হয়েছে।
পটুয়াখালীতে নিহত ২পটুয়াখালী : ঘূর্ণিঝড় ‘আইলার’ প্রভাবে পটুয়াখালীর বাউফলের কালাইয়া এলাকার শৌলা গ্রামে গাছচাপা পড়ে আবদুল আজিজ মলিস্নক (৬৫) নামে এক বৃদ্ধ এবং গলাচিপায় সুমাইয়া ৯২) নামের শিশু মারা গেছেন। প্রচণ্ড জলোচ্ছ্বাসে উপকূলীয় এলাকা ১০ ফুট পানির নিচে রয়েছে। ভেঙে গেছে উপকূলীয় এলাকার শত শত মানুষের কাঁচা ঘরবাড়ি এবং ভেসে গেছে গরু-মহিষ ও ২ হাজার মাছের ঘের। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে অন্তত ৫ লড়্গাধিক মানুষ। দুপুর থেকে লোকজন আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে আশ্রয় নিতে শুরু করেছে। পানির তোড়ে ভেঙে গেছে জেলার গলাচিপা ও কলাপাড়া উপজেলার ২০০টি পয়েন্টের ভেড়িবাঁধ। পানিতে পটুয়াখালীর লেবুখালি, কলাপাড়া, হাজিপুর, মহিপুর, বগা ও মির্জাগঞ্জের ফেরির গ্যাংওয়ে তলিয়ে যাওয়ায় পটুয়াখালী জেলার সঙ্গে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। অপরদিকে কুয়াকাটা সংলগ্ন গভীর সাগরে শত শত মাছ ধরার ট্রলার উপকূলে আশ্রয় নিয়েছে। পটুয়াখালী-ঢাকা রুটসহ অভ্যন্তরীণ সব রুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে নৌ-বন্দর কর্তৃপড়্গ। জেলা প্রশাসক মোঃ রিয়াজ আহমেদ জানায়, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। জেলা সদরসহ সবকয়টি উপজেলায় কন্টোল রুম খোলা হয়েছে। ৭৫টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলো খুলে দেয়া হয়েছে। উপকূলীয় এলাকায় মাইকিং করা হচ্ছে। এ ছাড়া উদ্ধার নৌযান ও শুকনো খাবার প্রস্তুত রাখা হয়েছে।বরগুনা : স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৭/৮ ফুট পানিতে নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চল পস্নাবিত হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বিপুলসংখ্যক মানুষ সাইক্লোন শেল্টার ও বিদ্যালয় ভবনে আশ্রয় নিয়েছে। বরগুনার শহর, পাথরঘাটা ও তালতলীর অসংখ্য ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। জেলার প্রায় ৫০ হাজার পরিবারের আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন স্থানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভেড়িবাঁধ ভেঙে হু হু করে প্রবেশ করছে নদীর পানি । জেলা ও উপজেলা প্রশাসন জরুরি সভা করে ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে।
টেকনাফে ৩ মাঝিসহ ফিশিং বোট নিখোঁজটেকনাফ : টেকনাফের একটি ফিশিং বোটসহ ৩ জন মাঝি-মালস্না নিখোঁজ রয়েছেন। জানা যায়, সেন্টমার্টিন মাজেরপাড়া মৃত নুরুল কবিরের পুত্র মোঃ হোছেন (৪৫) ও তার পুত্র মোঃ নুর (২৬) এবং অপর জেলে মোঃ আলম (২৪) গতকাল সকাল সাড়ে ৮টার সময় সেন্টমার্টিন উত্তরপাড়া ঘাট থেকে একটি ফিশিং বোটসহ সাগরে নিখোঁজ হয়ে যান। সকাল থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ায় এলাকার জনজীবন বিপর্যস্ত। প্রবল জোয়ারে সেন্টমার্টিনের পর্যটন স্পট ভেঙে জেটি বিছিন্ন হয়ে পড়েছে। কক্সবাজার-টেকনাফ বিকল্প সড়ক মেরিন ড্রাইভ সড়ক যোগাযোগ বিছিন্ন রয়েছে। এ ছাড়া শাহপরীর দ্বীপের ভাঙা ভেড়িবাঁধ সাগরের পানি ঢুকে নিম্নাঞ্চল পস্নাবিত হয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দরে তিন মাত্রার সতর্কতাচট্টগ্রাম : ঘূর্ণিঝড় আইলার প্রভাবে বন্দর নগরী চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় সোমবার সকাল থেকে বৃষ্টিপাত হয়। থেমে থেমে বইছে দমকা বাতাস। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে সকাল থেকে বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও জেলা প্রশাসক আলাদা নিয়ন্ত্রণ কড়্গ খুলেছে। চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব সৈয়দ মোহাম্মদ ফরহাদ উদ্দিন বলেন, করণীয় নির্ধারণে বন্দর কর্মকর্তারা রোববার রাতে জরুরি বৈঠক করে। বন্দরে তিন মাত্রার সতর্কতা চলছে। মালামাল ওঠানামা ও খালাসের কাজ বন্ধ রয়েছে। খোলা হয়েছে নিয়ন্ত্রণ কড়্গ। তিনি জানান, বন্দরে বর্তমানে ২৩টি জাহাজ আছে। বহির্নোঙরে আছে ৪৮টি জাহাজ। পর্যায়ক্রমে জেটির জাহাজগুলোকে বহির্নোঙরে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। ছোট জাহাজগুলোকে উজানে থাকতে বলা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় আইলা : পশ্চিমবঙ্গে ১১ জনের মৃত্যু, ব্যাপক ড়্গয়ড়্গতি
ডেস্ক : ঘূর্ণিঝড় ‘আইলা’র আঘাতে পশ্চিমবঙ্গে ব্যাপক ড়্গয়ড়্গতি হয়েছে। ঝড়ো হাওয়া এবং প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে বিভিন্ন দুর্ঘটনায় ১১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ঝড়-বৃষ্টির কারণে কলকাতার জীবনযাত্রা অচল হয়ে পড়েছে। কলকাতায় অবতরণ করতে আসা অন্তত ১৪টি ফ্লাইট অন্যত্র অবতরণ করানো হয়েছে। ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। খবর বিবিসি ও এনডিটিভির। রাজ্যের বিভিন্ন স্থান থেকে পাওয়া খবরে বলা হয়, ঝড়ে গাছপালা উপড়ে পড়ায় বেশকিছু সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে এবং এতে অন্তত দুব্যক্তি মারা গেছে। একটি ঘটনায় গাড়ির মধ্যে আটকেপড়া এক ব্যক্তিকে উদ্ধার করা হয়েছে।গতকাল সন্ধ্যায় পাওয়া খবরে বলা হয়, রাজধানী কলকাতা ও এর আশপাশের জেলাগুলোতে ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার বেগে ঝড় বয়ে গেছে। কলকাতার কাছে উত্তর ও দড়্গিণ ২৪ পরগনা জেলায় শত শত কাঁচা ঘরবাড়ি ধসে পড়েছে। বাঁধ ভেঙে জলমগ্ন হয়েছে অন্তত ২০০ গ্রাম। রাজ্য সরকার দুর্গত লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়ার জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।