সরকারকে অস্থিতিশীল ও সেনাবাহিনীর ৰতি করাই ছিল মোটিভ
সরকারকে অস্থিতিশীল ও সেনাবাহিনীর ক্ষতি করাই ছিল মোটিভ
পিলখানা হত্যাকাণ্ডের সরকারি তদন- রিপোর্টের সারসংক্ষেপ, প্রকৃত কারণ ও উদ্দেশ্য নিশ্চিতভাবে নির্ণয় করা যায়নি, সেনা কর্তৃত্ব মেনে না নেয়ার মানসিকতা দীর্ঘদিন থেকে প্র"ছন্ন ছিল, চেইন অব কমান্ড ভেঙে বিডিআরকে অকার্যকর করা ছিল উদ্দেশ্য, পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছেন বিএনপির সাবেক সাংসদ পিন্টু , সেনা আইনে বিচারের সুপারিশ
কাগজ প্রতিবেদক : চেইন অব কমান্ড ধ্বংস করে বিডিআরকে অকার্যকর করা, সামগ্রিকভাবে সেনাবাহিনীর ক্ষতিসাধন ও নবনির্বাচিত সরকারকে অসি'তিশীল করার উদ্দেশ্যেই পিলখানায় নৃশংস হত্যাকাণ্ড চালানো হয়। সেনা কর্মকর্তাদের বির"দ্ধে সাধারণ বিডিআর সদস্যদের নেতিবাচক মনোভাব, তাদের অপূরণকৃত দাবি-দাওয়া নিয়ে বিদ্যমান ক্ষোভ ও অসনে-াষ ছিল এই বিদ্রোহের প্রাথমিক কারণ। গত ২৫ ও ২৬ ফেব্র"য়ারি পিলখানায় সংঘটিত হত্যাকাণ্ড ও বিদ্রোহের কারণ অনুসন্ধানে গঠিত তদন- কমিটি গতকাল বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে তদন- প্রতিবেদনের সার সংক্ষেপ প্রকাশ করে এসব কথা জানায়। তবে এই নারকীয় ঘটনার প্রকৃত কারণ ও উদ্দেশ্য নিশ্চিতভাবে নির্ণয় করা যায়নি বলে তদন- প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এ জঘন্য অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের অনতিবিলম্বে সেনাআইনে বিচার ও বিভিন্ন জাতীয় সংকট মোকাবেলায় ‘জাতীয় সংকট মোকাবেলা কমিটি’ গঠনসহ স্বল্পমেয়াদি ৮ দফা ও দীর্ঘমেয়াদি ১৫ দফা সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। তদন- কমিটির প্রধান আনিস উজ জামান তদন- প্রতিবেদনের সার সংক্ষেপটি সাংবাদিকদের সামনে পাঠ করেন। এ সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এডভোকেট সাহারা খাতুন, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ, স্বরাষ্ট্র সচিব আবদুস সোবহান সিকদার, বিডিআরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মইনুল ইসলাম ও তদন- কমিটির সদস্যরা উপসি'ত ছিলেন।বিদ্রোহের পটভূমি হিসেবে বিডিআর সদস্যদের দীর্ঘদিনের দাবি-দাওয়া ও অসনে-াষকে দেখানো হয়েছে। এতে বলা হয়, বিডিআর সদস্যদের মধ্যে সেনা কর্তৃত্ব মেনে না নেয়ার মানসিকতা দীর্ঘদিন থেকে প্র"ছন্ন ছিল। তারা বিসিএস ক্যাডারের আদলে নিজস্ব অফিসার নিয়োগসহ সীমান- ভাতা বৃদ্ধি, শতভাগ রেশন ভাতা প্রদান, জাতিসংঘ মিশনে প্রেরণ, সেনাবাহিনীর আদলে বেতন কাঠানো পুনর্বিন্যাস ইত্যাদি দাবি জানিয়ে আসছিল। পাশাপাশি ডালভাত কর্মসূচি, সৈনিকদের শাসি- প্রদান, ও বিডিআর শপ পরিচালনায় অস্ব"ছতা, সেনা কর্মকর্তাদের বিলাসবহুল জীবনযাপন, স্কুল পরিচালনায় দুর্নীতি ইত্যাদি বিষয়ে সাধারণ সৈনিকদের মধ্যে নানা অভিযোগ ও অসনে-াষ ছিল। এসব ক্ষোভ ও দাবি-দাওয়া নিয়ে তারা বিভিন্ন সময়ে লিফলেট বিলি করেছে।বিদ্রোহের কারণ সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ কথা নির্দ্বিধায় স্বীকার করা যায় যে, এ নারকীয় ঘটনার প্রকৃত কারণ ও উদ্দেশ্য নিশ্চিতভাবে নির্ণয় করা যায়নি। প্রকৃত কারণ নির্ণয়ের জন্য আরো তদনে-র প্রয়োজন রয়েছে। সাধারণ বিডিআর সদস্যদের মধ্যে সেনা কর্মকর্তাদের বির"দ্ধে বিরাজমান নেতিবাচক মনোভাব ও তাদের অপূরণকৃত দাবি-দাওয়া নিয়ে বিদ্যমান ক্ষোভ ও অসনে-াষকে বিদ্রোহের প্রাথমিক কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। তাদের এসব দাবি বিশ্লেষণ করলে প্রতীয়মাণ হয় যে, কতিপয় মামুলী দাবি এতো বড় একটি নারকীয় ঘটনা ঘটানোর জন্য মূল কারণ হতে পারে না। সাধারণ বিডিআর সৈনিকদের মাঝে বিষবাষ্প ছড়ানোর কাজে এগুলো ব্যবহৃত হয়েছে মাত্র। এ দাবিগুলোকে সামনে রেখে মূল কুশীলবরা নেপথ্যে থেকে রাষ্ট্রের সি'তিশীলতা বিপন্ন করার জন্য পরিকল্পনামাফিক কলকাঠি নেড়ে থাকতে পারে। এছাড়া কয়েকটি সহায়ক কারণ এই বিদ্রোহ সংঘটনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভূমিকা রেখেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রধান গোয়েন্দা সংস'াসমূহের পেশাগত অদক্ষতা ও সাংগঠনিক ব্যর্থতা, রাইফেলস সিকিউরিটি ইউনিট (আরএসইউ)-এর বিদ্রোহীদের সঙ্গে যোগসাজশ, দাবি-দাওয়া সম্পর্কে বিডিআর ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে প্রয়োজনীয় সমন্বয়ের ঘাটতি, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া কর্তৃক অন্যায্য দাবির প্রতি উস্কানি এবং সামগ্রিকভাবে মিডিয়ার ওপর তথ্য মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণ না থাকা ইত্যাদি।বিদ্রোহের মূল লক্ষ্য বা মোটিভ হিসেবে যেসব বিষয়কে চিহ্নিত করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে, চেইন অব কমান্ড ধ্বংস করে বিডিআরকে অকার্যকর করা, সেনা কর্মকর্তাদের নৃশংস নির্যাতন ও হত্যার মাধ্যমে ভবিষ্যতে সেনা কর্মকর্তাদের বিডিআরে প্রেষণে কাজ করতে নির"ৎসাহিত করা, সেনাবাহিনী ও বিডিআরকে সাংঘর্ষিক অবস'ানে দাঁড় করানো, নবনির্বাচিত সরকারকে অসি'তিশীল করা, বাংলাদেশের অভ্যন-রীণ নিরাপত্তা ও সি'তিশীলতাকে নষ্ট করা, বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তিকে বিনষ্ট করা ও জাতিসংঘ শানি- মিশনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ ক্ষতিগ্রস- করা ইত্যাদি।বিডিআর বিদ্রোহের পর বিদ্রোহীদের পালিয়ে যেতে বিএনপির সাবেক সাংসদ নাসির উদ্দিন আহম্মেদ পিন্টু সাহায্য করেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। তদন-কারীরা জানতে পেরেছেন, ওই সাংসদ নিজ বিদ্রোহীদের পারাপারে ইঞ্জিন নৌকা দিয়ে সহায়তা করেছেন। এ ছাড়া বিএনপির সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার সুরাইয়া বেগম, তার দুই ছেলে, স'ানীয় সন্ত্রাসী মাসুদ, সন্ত্রাসী লেদার লিটন প্রমুখ বিডিআরদের বিভিন্নভাবে সহায়তা করেছে।অনেক দিন ধরেই নানা কারণে অসন'ষ্ট বিডিআর জওয়ানরা তাদের দাবি-দাওয়া আদায়ে নানা প্রচেষ্টা চালিয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়। সমপ্রতি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একদল বিডিআর সদস্য এসব দাবি-দাওয়া নিয়ে নিজেদের সংগঠিত করতে থাকে। তারা দাবি-দাওয়া নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করে। কিন' আশানুরূপ সাড়া না পাওয়ায় তাদের মধ্যে অসি'রতা দেখা দেয় এবং তারা কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন স'ানে কয়েকটি গোপন বৈঠক করে। ২৫ ফেব্র"য়ারির দরবারে তারা মহাপরিচালকসহ অন্য সেনা কর্মকর্তাদের জিম্মি করার পরিকল্পনা করে। এই পরিকল্পনা বাস-বায়নের জন্যই তারা অস্ত্রাগার লুট এবং গুর"ত্বপূর্ণ স'াপনার নিয়ন্ত্রণ গ্রহণের পরিকল্পনা নেয়। ওই ঘটনায় সাধারণ সৈনিকরা মূল পরিকল্পনার প্রকৃত ধরন সম্পর্কে বিশদ জানতো না বলে তদন- প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়, সাধারণ সৈনিকদের ধারণা ছিল, তারা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে কঠোর অবস'ান নেবে। কিন' মহাপরিচালকসহ অন্য সেনা কর্মকর্তাদের হত্যা ও অন্য জঘন্য অপকর্মের পরিকল্পনার কথা শুধু কতিপয় হার্ডকোর বিদ্রোহীই জানতো। ২৪ ফেব্র"য়ারি রাতে চূড়ান- বৈঠকে বিদ্রোহীরা নিজেদের মধ্যে দায়িত্ব বণ্টন করে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। বিদ্রোহের পরিকল্পনা ও বাস-বায়নকারী হিসেবে ডিএডি তৌহিদ, ডিএডি হাবিব, ডিএডি জলিলসহ ২৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। ২৫ ফেব্র"য়ারি সকাল ৮টা মধ্যে বিদ্রোহীরা ১, ৩, ৪, ও ৫নং গেটের নিয়ন্ত্রণ নেয় ও কেন্দ্রীয় অস্ত্রাগার লুট করে। দরবার হলে মহাপরিচালকের ভাষণ চলাকালে সকাল ৯টা ২৭ মিনিটে সিপাহি মাঈনুদ্দিন ও সিপাহি কাজল হঠাৎ মঞ্চে প্রবেশ করে। এর মধ্যে মাঈনুদ্দিন সশস্ত্র ছিল। সে মহাপরিচালকের দিকে অস্ত্র তাক করে। এ সময় বাইরে থেকে একটি ফাঁকা গুলি করা হয় যা বিদ্রোহ শুর"র সিগন্যাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সৈনিকদের চূড়ান-ভাবে উস্কে দেয়ার জন্য এ কথা ছড়িয়ে দেয়া হয় যে দরবার হলে গুলি করে একজন বিডিআর সদস্যকে কর্মকর্তারা হত্যা করেছে। এরপর দরবার হলকে ঘিরে এলোপাতাড়ি গোলাগুলি শুর" হয়। দরবার হলে আটকা পড়েন ৪০ সেনা কর্মকর্তা। বাকিরা বিভিন্নভাবে পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও আটকেপড়া সবাই নির্মমভাবে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন।প্রতিবেদনে বলা হয়, শুর" থেকেই সরকার সংলাপের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের ওপর গুর"ত্ব দেয়। পাশাপাশি প্রয়োজনে সামরিক অভিযানের প্রস'তিও নেয়া হয়। বিদ্রোহীদের আলোচনায় নিয়ে আসার জন্য প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক ও হুইপ মির্জা আযমের প্রচেষ্টা ও পরবর্তী সময়ে ডিএডি তৌহিদের নেতৃত্বে ১৪ সদস্যের একটি বিদ্রোহী দলের যমুনায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের কথা উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। কিন' ওই দলটি পিলখানায় ফিরে আসলে অস্ত্র সমর্পণ নিয়ে বিদ্রোহীদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়। ফলে যমুনায় গৃহীত সিদ্ধান- বাস-বায়িত হয়নি। এরপর রাত ৮টায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে হোটেল আম্বালা ইন-এ দ্বিতীয় দফা আলোচনা হয় বিদ্রোহীদের। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দফা দফা বৈঠকে বারবার বিদ্রোহী নেতৃত্বের পরিবর্তন ঘটতে থাকে দাবি-দাওয়াও বদলাতে থাকে। বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচনা প্রলম্বিত করে তারা রাতের অন্ধকারে লাশ স'ানান-র, গুম করা, গণকবর খনন ইত্যাদি অপকর্ম করতে থাকে। রাত ১টার দিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী ও আইজিপি পিলখানায় প্রবেশ করেন। সেখানে আরেক দফা আলোচনার পর রাত ৩টা দিকে বিদ্রোহীরা কিছু অস্ত্র সমর্পণ করেন। ভোর নাগাদ ১৫টি জিম্মি পরিবারকে মুক্ত করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ অন্যরা পিলখানা থেকে বের হয়ে আসেন। তাদের প্রস'ানের সঙ্গে সঙ্গেই আবারো অস্ত্র হাতে তুলে নেয় বিদ্রোহীরা।পিলখানা বিদ্রোহের শুর" থেকেই মিডিয়ার ভূমিকা নেতিবাচক ছিল বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলো লাইভ টেলিকাস্টের মাধ্যমে এই বিদ্রোহের খবর দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে দেয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই জাতীয় নিরাপত্তার চেয়ে ব্যবসায়িক বিবেচনাকে প্রাধান্য দেয়া হয়। মিডিয়ার অনিয়ন্ত্রিত, দায়িত্বহীন ও পক্ষপাতদুষ্ট সমপ্রচার এবং সহজলভ্য মোবাইল যোগাযোগের কারণে ঢাকার বাইরে বিভিন্ন বিডিআর ইউনিটে উত্তেজনা পরিলক্ষিত হয়।২৬ ফেব্র"য়ারি দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে বিদ্রোহীদের অস্ত্র সমর্পণ করে ব্যারাকে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। নইলে কঠোর ব্যবস'া গ্রহণের হুঁশিয়ারি উ"চারণ করেন তিনি। সে অনুযায়ী বিদ্রোহ দমনে সামরিক অভিযানের প্রস'তি চলতে থাকে। এতে মনোবল ভেঙে যায় বিদ্রোহীদের। অবশেষে বিকাল ৫টা ৫০ মিনিটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে চূড়ান- অস্ত্র সমর্পণ করে।২৫ ফেব্র"য়ারি সকাল ১১টার মধ্যেই অধিকাংশ সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয় বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। নিহত ৫৭ সেনা কর্মকর্তার মধ্যে ৫২ জনকেই দরবার হল ও তার আশপাশের এলাকায় ও বাকি ৫ জনকে অন্যান্য স'ানে হত্যা করা হয়েছে। বিদ্রোহে নিহত ৯ বিডিআর সদস্যের মৃত্যু সম্পর্কে বলা হয়, সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া না গেলেও অনুমিত হয় যে, এরা হয় বিদ্রোহে বাধা দিতে গিয়ে অথবা ক্রসফায়ারে পড়ে মারা গেছেন।প্রতিবেদনে বলা হয়, এ ঘটনা বাংলাদেশে সদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলতে বাধ্য। নির্বাচিত সরকারকে ২৫ ফেব্র"য়ারির ঘটনা মারাত্মক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন করেছে। এ বিদ্রোহ বাংলাদেশের সি'তিশীলতার জন্যও হুমকি ছিল। সেনাবাহিনী অনেক মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তাকে হারিয়েছে। প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিডিআর ধ্বংসের কাছাকাছি পৌঁছেছে এবং জনগণের আস'া ও শ্রদ্ধা হারিয়েছে। সেনাবাহিনীও সামগ্রিকভাবে ক্ষতিগ্রস- হয়েছে। তবে এই চক্রান-কারীদের এই অপপ্রয়াস ব্যর্থ হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, বিচক্ষণতা ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কারণে এ বিদ্রোহের অবসান হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষ থেকে তদন- প্রতিবেদন প্রকাশের আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, বিডিআর বিদ্রোহে দেশের সূর্যসন-ান সেনা কর্মকর্তাদের নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। ২৫ ও ২৬ ফেব্র"য়ারি বিদ্রোহ ঘটনার পর আমরা চেয়েছিলাম ৭ দিনের মধ্যে ঘটনার কারণ খুঁজে বের করে জনসমক্ষে পেশ করতে। কিন' তদন- কমিটির সদস্যরা একটি নির্ভুল ও নিরপেক্ষ তদন- প্রতিবেদন তৈরি করতে আড়াই মাস সময় নিয়েছেন। বর্তমান সরকার জবাবদিহিতার সরকার উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন আরো বলেন, বিদ্রোহ ঘটনার পর আমরা ঘোষণা দিয়েছিলাম তদন- প্রতিবেদন জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে। দেশের মানুষের মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছিল অতীতে কোনো ঘটনারই তদন- প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়নি তাই বিডিআর বিদ্রোহের তদন- প্রতিবেদনও প্রকাশ করা হবে না। জনগণের কাছে দায়বদ্ধতার কারণে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার বিডিআর বিদ্রোহের তদন- প্রতিবেদন প্রকাশ করলো।
কাগজ প্রতিবেদক : চেইন অব কমান্ড ধ্বংস করে বিডিআরকে অকার্যকর করা, সামগ্রিকভাবে সেনাবাহিনীর ক্ষতিসাধন ও নবনির্বাচিত সরকারকে অসি'তিশীল করার উদ্দেশ্যেই পিলখানায় নৃশংস হত্যাকাণ্ড চালানো হয়। সেনা কর্মকর্তাদের বির"দ্ধে সাধারণ বিডিআর সদস্যদের নেতিবাচক মনোভাব, তাদের অপূরণকৃত দাবি-দাওয়া নিয়ে বিদ্যমান ক্ষোভ ও অসনে-াষ ছিল এই বিদ্রোহের প্রাথমিক কারণ। গত ২৫ ও ২৬ ফেব্র"য়ারি পিলখানায় সংঘটিত হত্যাকাণ্ড ও বিদ্রোহের কারণ অনুসন্ধানে গঠিত তদন- কমিটি গতকাল বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে তদন- প্রতিবেদনের সার সংক্ষেপ প্রকাশ করে এসব কথা জানায়। তবে এই নারকীয় ঘটনার প্রকৃত কারণ ও উদ্দেশ্য নিশ্চিতভাবে নির্ণয় করা যায়নি বলে তদন- প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এ জঘন্য অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের অনতিবিলম্বে সেনাআইনে বিচার ও বিভিন্ন জাতীয় সংকট মোকাবেলায় ‘জাতীয় সংকট মোকাবেলা কমিটি’ গঠনসহ স্বল্পমেয়াদি ৮ দফা ও দীর্ঘমেয়াদি ১৫ দফা সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। তদন- কমিটির প্রধান আনিস উজ জামান তদন- প্রতিবেদনের সার সংক্ষেপটি সাংবাদিকদের সামনে পাঠ করেন। এ সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এডভোকেট সাহারা খাতুন, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ, স্বরাষ্ট্র সচিব আবদুস সোবহান সিকদার, বিডিআরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মইনুল ইসলাম ও তদন- কমিটির সদস্যরা উপসি'ত ছিলেন।বিদ্রোহের পটভূমি হিসেবে বিডিআর সদস্যদের দীর্ঘদিনের দাবি-দাওয়া ও অসনে-াষকে দেখানো হয়েছে। এতে বলা হয়, বিডিআর সদস্যদের মধ্যে সেনা কর্তৃত্ব মেনে না নেয়ার মানসিকতা দীর্ঘদিন থেকে প্র"ছন্ন ছিল। তারা বিসিএস ক্যাডারের আদলে নিজস্ব অফিসার নিয়োগসহ সীমান- ভাতা বৃদ্ধি, শতভাগ রেশন ভাতা প্রদান, জাতিসংঘ মিশনে প্রেরণ, সেনাবাহিনীর আদলে বেতন কাঠানো পুনর্বিন্যাস ইত্যাদি দাবি জানিয়ে আসছিল। পাশাপাশি ডালভাত কর্মসূচি, সৈনিকদের শাসি- প্রদান, ও বিডিআর শপ পরিচালনায় অস্ব"ছতা, সেনা কর্মকর্তাদের বিলাসবহুল জীবনযাপন, স্কুল পরিচালনায় দুর্নীতি ইত্যাদি বিষয়ে সাধারণ সৈনিকদের মধ্যে নানা অভিযোগ ও অসনে-াষ ছিল। এসব ক্ষোভ ও দাবি-দাওয়া নিয়ে তারা বিভিন্ন সময়ে লিফলেট বিলি করেছে।বিদ্রোহের কারণ সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ কথা নির্দ্বিধায় স্বীকার করা যায় যে, এ নারকীয় ঘটনার প্রকৃত কারণ ও উদ্দেশ্য নিশ্চিতভাবে নির্ণয় করা যায়নি। প্রকৃত কারণ নির্ণয়ের জন্য আরো তদনে-র প্রয়োজন রয়েছে। সাধারণ বিডিআর সদস্যদের মধ্যে সেনা কর্মকর্তাদের বির"দ্ধে বিরাজমান নেতিবাচক মনোভাব ও তাদের অপূরণকৃত দাবি-দাওয়া নিয়ে বিদ্যমান ক্ষোভ ও অসনে-াষকে বিদ্রোহের প্রাথমিক কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। তাদের এসব দাবি বিশ্লেষণ করলে প্রতীয়মাণ হয় যে, কতিপয় মামুলী দাবি এতো বড় একটি নারকীয় ঘটনা ঘটানোর জন্য মূল কারণ হতে পারে না। সাধারণ বিডিআর সৈনিকদের মাঝে বিষবাষ্প ছড়ানোর কাজে এগুলো ব্যবহৃত হয়েছে মাত্র। এ দাবিগুলোকে সামনে রেখে মূল কুশীলবরা নেপথ্যে থেকে রাষ্ট্রের সি'তিশীলতা বিপন্ন করার জন্য পরিকল্পনামাফিক কলকাঠি নেড়ে থাকতে পারে। এছাড়া কয়েকটি সহায়ক কারণ এই বিদ্রোহ সংঘটনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভূমিকা রেখেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রধান গোয়েন্দা সংস'াসমূহের পেশাগত অদক্ষতা ও সাংগঠনিক ব্যর্থতা, রাইফেলস সিকিউরিটি ইউনিট (আরএসইউ)-এর বিদ্রোহীদের সঙ্গে যোগসাজশ, দাবি-দাওয়া সম্পর্কে বিডিআর ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে প্রয়োজনীয় সমন্বয়ের ঘাটতি, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া কর্তৃক অন্যায্য দাবির প্রতি উস্কানি এবং সামগ্রিকভাবে মিডিয়ার ওপর তথ্য মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণ না থাকা ইত্যাদি।বিদ্রোহের মূল লক্ষ্য বা মোটিভ হিসেবে যেসব বিষয়কে চিহ্নিত করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে, চেইন অব কমান্ড ধ্বংস করে বিডিআরকে অকার্যকর করা, সেনা কর্মকর্তাদের নৃশংস নির্যাতন ও হত্যার মাধ্যমে ভবিষ্যতে সেনা কর্মকর্তাদের বিডিআরে প্রেষণে কাজ করতে নির"ৎসাহিত করা, সেনাবাহিনী ও বিডিআরকে সাংঘর্ষিক অবস'ানে দাঁড় করানো, নবনির্বাচিত সরকারকে অসি'তিশীল করা, বাংলাদেশের অভ্যন-রীণ নিরাপত্তা ও সি'তিশীলতাকে নষ্ট করা, বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তিকে বিনষ্ট করা ও জাতিসংঘ শানি- মিশনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ ক্ষতিগ্রস- করা ইত্যাদি।বিডিআর বিদ্রোহের পর বিদ্রোহীদের পালিয়ে যেতে বিএনপির সাবেক সাংসদ নাসির উদ্দিন আহম্মেদ পিন্টু সাহায্য করেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। তদন-কারীরা জানতে পেরেছেন, ওই সাংসদ নিজ বিদ্রোহীদের পারাপারে ইঞ্জিন নৌকা দিয়ে সহায়তা করেছেন। এ ছাড়া বিএনপির সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার সুরাইয়া বেগম, তার দুই ছেলে, স'ানীয় সন্ত্রাসী মাসুদ, সন্ত্রাসী লেদার লিটন প্রমুখ বিডিআরদের বিভিন্নভাবে সহায়তা করেছে।অনেক দিন ধরেই নানা কারণে অসন'ষ্ট বিডিআর জওয়ানরা তাদের দাবি-দাওয়া আদায়ে নানা প্রচেষ্টা চালিয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়। সমপ্রতি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একদল বিডিআর সদস্য এসব দাবি-দাওয়া নিয়ে নিজেদের সংগঠিত করতে থাকে। তারা দাবি-দাওয়া নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করে। কিন' আশানুরূপ সাড়া না পাওয়ায় তাদের মধ্যে অসি'রতা দেখা দেয় এবং তারা কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন স'ানে কয়েকটি গোপন বৈঠক করে। ২৫ ফেব্র"য়ারির দরবারে তারা মহাপরিচালকসহ অন্য সেনা কর্মকর্তাদের জিম্মি করার পরিকল্পনা করে। এই পরিকল্পনা বাস-বায়নের জন্যই তারা অস্ত্রাগার লুট এবং গুর"ত্বপূর্ণ স'াপনার নিয়ন্ত্রণ গ্রহণের পরিকল্পনা নেয়। ওই ঘটনায় সাধারণ সৈনিকরা মূল পরিকল্পনার প্রকৃত ধরন সম্পর্কে বিশদ জানতো না বলে তদন- প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়, সাধারণ সৈনিকদের ধারণা ছিল, তারা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে কঠোর অবস'ান নেবে। কিন' মহাপরিচালকসহ অন্য সেনা কর্মকর্তাদের হত্যা ও অন্য জঘন্য অপকর্মের পরিকল্পনার কথা শুধু কতিপয় হার্ডকোর বিদ্রোহীই জানতো। ২৪ ফেব্র"য়ারি রাতে চূড়ান- বৈঠকে বিদ্রোহীরা নিজেদের মধ্যে দায়িত্ব বণ্টন করে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। বিদ্রোহের পরিকল্পনা ও বাস-বায়নকারী হিসেবে ডিএডি তৌহিদ, ডিএডি হাবিব, ডিএডি জলিলসহ ২৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। ২৫ ফেব্র"য়ারি সকাল ৮টা মধ্যে বিদ্রোহীরা ১, ৩, ৪, ও ৫নং গেটের নিয়ন্ত্রণ নেয় ও কেন্দ্রীয় অস্ত্রাগার লুট করে। দরবার হলে মহাপরিচালকের ভাষণ চলাকালে সকাল ৯টা ২৭ মিনিটে সিপাহি মাঈনুদ্দিন ও সিপাহি কাজল হঠাৎ মঞ্চে প্রবেশ করে। এর মধ্যে মাঈনুদ্দিন সশস্ত্র ছিল। সে মহাপরিচালকের দিকে অস্ত্র তাক করে। এ সময় বাইরে থেকে একটি ফাঁকা গুলি করা হয় যা বিদ্রোহ শুর"র সিগন্যাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সৈনিকদের চূড়ান-ভাবে উস্কে দেয়ার জন্য এ কথা ছড়িয়ে দেয়া হয় যে দরবার হলে গুলি করে একজন বিডিআর সদস্যকে কর্মকর্তারা হত্যা করেছে। এরপর দরবার হলকে ঘিরে এলোপাতাড়ি গোলাগুলি শুর" হয়। দরবার হলে আটকা পড়েন ৪০ সেনা কর্মকর্তা। বাকিরা বিভিন্নভাবে পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও আটকেপড়া সবাই নির্মমভাবে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন।প্রতিবেদনে বলা হয়, শুর" থেকেই সরকার সংলাপের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের ওপর গুর"ত্ব দেয়। পাশাপাশি প্রয়োজনে সামরিক অভিযানের প্রস'তিও নেয়া হয়। বিদ্রোহীদের আলোচনায় নিয়ে আসার জন্য প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক ও হুইপ মির্জা আযমের প্রচেষ্টা ও পরবর্তী সময়ে ডিএডি তৌহিদের নেতৃত্বে ১৪ সদস্যের একটি বিদ্রোহী দলের যমুনায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের কথা উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। কিন' ওই দলটি পিলখানায় ফিরে আসলে অস্ত্র সমর্পণ নিয়ে বিদ্রোহীদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়। ফলে যমুনায় গৃহীত সিদ্ধান- বাস-বায়িত হয়নি। এরপর রাত ৮টায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে হোটেল আম্বালা ইন-এ দ্বিতীয় দফা আলোচনা হয় বিদ্রোহীদের। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দফা দফা বৈঠকে বারবার বিদ্রোহী নেতৃত্বের পরিবর্তন ঘটতে থাকে দাবি-দাওয়াও বদলাতে থাকে। বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচনা প্রলম্বিত করে তারা রাতের অন্ধকারে লাশ স'ানান-র, গুম করা, গণকবর খনন ইত্যাদি অপকর্ম করতে থাকে। রাত ১টার দিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী ও আইজিপি পিলখানায় প্রবেশ করেন। সেখানে আরেক দফা আলোচনার পর রাত ৩টা দিকে বিদ্রোহীরা কিছু অস্ত্র সমর্পণ করেন। ভোর নাগাদ ১৫টি জিম্মি পরিবারকে মুক্ত করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ অন্যরা পিলখানা থেকে বের হয়ে আসেন। তাদের প্রস'ানের সঙ্গে সঙ্গেই আবারো অস্ত্র হাতে তুলে নেয় বিদ্রোহীরা।পিলখানা বিদ্রোহের শুর" থেকেই মিডিয়ার ভূমিকা নেতিবাচক ছিল বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলো লাইভ টেলিকাস্টের মাধ্যমে এই বিদ্রোহের খবর দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে দেয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই জাতীয় নিরাপত্তার চেয়ে ব্যবসায়িক বিবেচনাকে প্রাধান্য দেয়া হয়। মিডিয়ার অনিয়ন্ত্রিত, দায়িত্বহীন ও পক্ষপাতদুষ্ট সমপ্রচার এবং সহজলভ্য মোবাইল যোগাযোগের কারণে ঢাকার বাইরে বিভিন্ন বিডিআর ইউনিটে উত্তেজনা পরিলক্ষিত হয়।২৬ ফেব্র"য়ারি দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে বিদ্রোহীদের অস্ত্র সমর্পণ করে ব্যারাকে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। নইলে কঠোর ব্যবস'া গ্রহণের হুঁশিয়ারি উ"চারণ করেন তিনি। সে অনুযায়ী বিদ্রোহ দমনে সামরিক অভিযানের প্রস'তি চলতে থাকে। এতে মনোবল ভেঙে যায় বিদ্রোহীদের। অবশেষে বিকাল ৫টা ৫০ মিনিটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে চূড়ান- অস্ত্র সমর্পণ করে।২৫ ফেব্র"য়ারি সকাল ১১টার মধ্যেই অধিকাংশ সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয় বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। নিহত ৫৭ সেনা কর্মকর্তার মধ্যে ৫২ জনকেই দরবার হল ও তার আশপাশের এলাকায় ও বাকি ৫ জনকে অন্যান্য স'ানে হত্যা করা হয়েছে। বিদ্রোহে নিহত ৯ বিডিআর সদস্যের মৃত্যু সম্পর্কে বলা হয়, সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া না গেলেও অনুমিত হয় যে, এরা হয় বিদ্রোহে বাধা দিতে গিয়ে অথবা ক্রসফায়ারে পড়ে মারা গেছেন।প্রতিবেদনে বলা হয়, এ ঘটনা বাংলাদেশে সদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলতে বাধ্য। নির্বাচিত সরকারকে ২৫ ফেব্র"য়ারির ঘটনা মারাত্মক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন করেছে। এ বিদ্রোহ বাংলাদেশের সি'তিশীলতার জন্যও হুমকি ছিল। সেনাবাহিনী অনেক মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তাকে হারিয়েছে। প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিডিআর ধ্বংসের কাছাকাছি পৌঁছেছে এবং জনগণের আস'া ও শ্রদ্ধা হারিয়েছে। সেনাবাহিনীও সামগ্রিকভাবে ক্ষতিগ্রস- হয়েছে। তবে এই চক্রান-কারীদের এই অপপ্রয়াস ব্যর্থ হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, বিচক্ষণতা ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কারণে এ বিদ্রোহের অবসান হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষ থেকে তদন- প্রতিবেদন প্রকাশের আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, বিডিআর বিদ্রোহে দেশের সূর্যসন-ান সেনা কর্মকর্তাদের নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। ২৫ ও ২৬ ফেব্র"য়ারি বিদ্রোহ ঘটনার পর আমরা চেয়েছিলাম ৭ দিনের মধ্যে ঘটনার কারণ খুঁজে বের করে জনসমক্ষে পেশ করতে। কিন' তদন- কমিটির সদস্যরা একটি নির্ভুল ও নিরপেক্ষ তদন- প্রতিবেদন তৈরি করতে আড়াই মাস সময় নিয়েছেন। বর্তমান সরকার জবাবদিহিতার সরকার উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন আরো বলেন, বিদ্রোহ ঘটনার পর আমরা ঘোষণা দিয়েছিলাম তদন- প্রতিবেদন জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে। দেশের মানুষের মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছিল অতীতে কোনো ঘটনারই তদন- প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়নি তাই বিডিআর বিদ্রোহের তদন- প্রতিবেদনও প্রকাশ করা হবে না। জনগণের কাছে দায়বদ্ধতার কারণে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার বিডিআর বিদ্রোহের তদন- প্রতিবেদন প্রকাশ করলো।
পিলখানা হত্যাকাণ্ডের সরকারি তদন্ত রিপোর্টের সারসংক্ষেপের পূর্ণ বিবরণতদন্ত কমিটি গঠন ও এর কার্যক্রম
দেখতে এখানে ক্লিক করুন http://www.bhorerkagoj.net/content/2009/05/28/news0687.php
দেখতে এখানে ক্লিক করুন http://www.bhorerkagoj.net/content/2009/05/28/news0687.php