বাংলাদেশ জাতিসংঘের সর্বজনীন পর্যায়ক্রমিক পর্যালোচনার জন্য নিবেদন মানবাধিকার কাউন্সিলের ইউপিআর ওয়ার্কিং গ্রুপের চতুর্থ অধিবেশন ফেব্রুয়ারি ২০০৯

বাংলাদেশঃ জাতিসংঘের সর্বজনীন পর্যায়ক্রমিক পর্যালোচনার জন্য নিবেদন
ডকুমেন্ট - বাংলাদেশঃ জাতিসংঘের সর্বজনীন পর্যায়ক্রমিক পর্যালোচনার জন্য নিবেদনঃ মানবাধিকার কাউন্সিলের ইউপিআর ওয়ার্কিং গ্রুপের চতুর্থ অধিবেশন, ফেব্রুয়ারি ২০০৯

১ সেপ্টেম্বর ২০০৮ সর্বসাধারণের জন্য ‍এআই সূচী: এএসএ ১৩/০০৬/২০০৮এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালবাংলাদেশজাতিসংঘের সর্বজনীন পর্যায়ক্রমিক পর্যালোচনার জন্য নিবেদনমানবাধিকার কাউন্সিলের ইউপিআর ওয়ার্কিং গ্রুপের চতুর্থ অধিবেশনফেব্রুয়ারি ২০০৯

নির্বাহী সারাংশএই নিবেদনে, এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সর্বজনীন পর্যায়ক্রমিক পর্যালোচনার অধীনে তথ্য প্রস্তুতির জন্য সাধারণ নির্দেশনায় (General Guidelines for the Preparation of Information under the Universal Periodic Review) উল্লিখিত অনুচ্ছেদ খ, গ ও ঘ-এর অধীনে তথ্য প্রদান করেঃ1• মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে রক্ষাকবচগুলো এড়িয়ে যাওয়ার জন্য ২০০৭ সালের জানুয়ারি থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জরুরি আইন ব্যবহার সম্পর্কে অনুচ্ছেদ খ-এর অধীনে এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল উদ্বেগ তুলে ধরে৷• বিধিবহির্ভূতভাবে গ্রেপ্তার ও আটক রাখা, পক্ষপাতমূলক বিচার, এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়মুক্তি সম্পর্কে অনুচ্ছেদ গ এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের উদ্বেগগুলোকে ফুটিয়ে তোলে৷• অনুচ্ছেদ ঘ-তে, এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সরকারের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বেশ কয়েকটি সুপারিশ পেশ করে৷

বাংলাদেশজাতিসংঘের সর্বজনীন পর্যায়ক্রমিক পর্যালোচনার জন্য এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের নিবেদনইউপিআর ওয়ার্কিং গ্রুপের চতুর্থ অধিবেশন, ফেব্রুয়ারি ২০০৯
খ. রাষ্ট্রের মাননির্ধারক ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোজরুরি অবস্থার অধীনে মানবাধিকার লঙ্ঘন
ব্যাপকভাবে মেরুকরণ হওয়া রাজনৈতিক পরিবেশ এবং সেইসাথে ব্যাপকভিত্তিক সহিংসতা, গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং নির্বাচনে কারচুপি করার আশঙ্কা থেকে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন এবং সেনাবাহিনীর সমর্থনে বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা করেন৷ যদিও তত্ত্বাবধায়ক সরকার দীর্ঘদিন থেকে পড়ে থাকা সংস্কার কর্মসূচিগুলোর প্রতি নিজেদেরকে নিবেদিত রাখার ঘোষণা দিয়েছে - যার ফলশ্রুতিতে নির্বাহী বিভাগ থেকে নিম্ন আদালতকে পৃথক করার জন্য সুপ্রীম কোর্টের ১৯৯৯ সালের রায় ২০০৭ সালে বাস্তবায়ন, ২০০৮ সালে একটি জাতীয় মানবাধিকার কমিশন প্রতিষ্ঠা এবং একটি স্বাধীন পুলিশ অভিযোগ কমিশন প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি প্রদান - কয়েকটি ধারাবাহিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা মোকাবেলায় সরকারের ক্রমবর্ধমান ব্যর্থতা সরকারের সংস্কার কর্মসূচিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে৷মত প্রকাশের স্বাধীনতা সহ, জরুরি অবস্থার অধীনে নিষেধাজ্ঞাগুলো,2 নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারের আন্তর্জাতিক চুক্তির অনুচ্ছেদ ৪-এর শর্তাবলি পূরণ করে না, বাংলাদেশ এই চুক্তির একটি পক্ষ৷ অনুচ্ছেদ ৪ অনুযায়ী সরকারের চুক্তির শর্তাবলি খর্ব করার কোনো ইচ্ছা থাকলে এবং খর্ব করার কারণগুলো সরকারকে অবিলম্বে জাতিসংঘ মহাসচিবকে অবহিত করতে হবে৷ এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের জানামতে, এই ধরনের কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি৷ তদুপরি, অনুচ্ছেদ ৪ শুধুমাত্র সেই মাত্রার খর্ব করাকে অনুমোদন করে যা পরিস্থিতির প্রয়োজনে একেবারেই অপরিহার্য৷ জরুরি অবস্থার অধীনে যে ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে তা এই কঠোর নিয়মকে পূরণ করে না৷মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে রক্ষাকবচগুলো এড়িয়ে যাওয়া এবং আইনের শাসন ও যথাযথ প্রক্রিয়াকে অগ্রাহ্য করার লক্ষ্যে দায়বদ্ধতা এড়ানোর জন্য ২০০৭ সালের জানুয়ারি থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জরুরি আইন ব্যবহার, আগের সরকারগুলোর নির্বাহী ক্ষমতার অপব্যবহারের বহুল ব্যবহৃত রীতিকে জোরদার করেছে৷ মানবাধিকারের সুরক্ষা জোরদার করতে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার সম্পন্ন করার জন্য জরুরি আইন অপরিহার্য - কর্তৃপক্ষের এই যুক্তি ক্রমাগত মানবাধিকার লঙ্ঘনে সরকারের ভূমিকার প্রেক্ষিতে অগ্রহণযোগ্যই রয়ে যায়৷জরুরি আইনের অধীনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নির্বিচারে গ্রেপ্তার করে এবং আটক রাখে; আইনী প্রক্রিয়া ও মত প্রকাশ, সমাবেশ ও সংগঠন করার স্বাধীনতার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, এবং ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে সাধারণ নির্বাচনের প্রাক্কালে কয়েক ডজন রাজনীতিবিদকে আটক রাখে যাতে তারা রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করতে না পারে৷ এই ভাবে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার তার নিজস্ব রাজনৈতিক কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য জরুরি আইনকে ব্যবহার করে৷সরকারকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অন্য আরো কতগুলো বিষয়ের প্রতিও অবশ্যই দৃষ্টি দিতে হবে, যেগুলো জরুরি অবস্থা আরোপের সাথে সংশ্লিষ্ট নয়, যাতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু, নির্যাতন ও অন্যান্য দুর্ব্যবহার, বিচার-বহির্ভুত হত্যাকাণ্ড, ধর্ষণ ও অন্য ধরনের লিঙ্গ ভিত্তিক সহিংসতা, এবং দায়বদ্ধতা নিয়ে আইন প্রয়োগকারী এজেন্সিগুলোর ক্ষমতার অপব্যবহার৷গ. কার্যক্ষেত্রে মানবাধিকারের প্রবর্ধন ও সুরক্ষা
নির্বিচারে গ্রেপ্তার ও আটক রাখা
সবগুলো সরকার কর্তৃক কোনো অভিযোগ বা বিচার ছাড়াই প্রতিরোধমূলকভাবে আটক রাখার পদ্ধতির ক্রমাগত ও ব্যাপকভিত্তিক ব্যবহার বাংলাদেশের মানবাধিকার অবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে৷ বাংলাদেশের সংবিধান ও আন্তর্জাতিক আইনে সন্নিবেশিত, ইচ্ছাকৃতভাবে কাউকে স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত রাখার উপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞাকে লঙ্ঘন করে ব্যাপক সংখ্যক ব্যক্তিকে তাদের স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত রাখার জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিরোধমূলকভাবে আটক রাখার আইন ব্যবহার করা অব্যাহত রেখেছে৷প্রতিরোধমূলক বন্দীত্ব আইনের অন্তর্ভুক্ত রয়েছে বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৭৪, দণ্ডবিধির ৫৪ ধারা, এবং জরুরি ক্ষমতা আইন ২০০৭৷ এগুলো এমন ব্যক্তিকে আটক রাখার ক্ষমতা প্রদান করে যার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের জন্য “ক্ষতিকর” কাজে লিপ্ত হওয়ার অভিযোগ রয়েছে৷3 এই আইনগুলোর অধীনে অপরাধগুলো ব্যাপকভাবে সাজানো হয় এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যসাধনের জন্য উন্মুক্ত থাকে যাতে সরকার তার সমালোচনাকারী ও প্রতিপক্ষকে আটক রাখতে পারে, এবং সেইসাথে পুলিশ ও অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনী এগুলোর অপব্যবহার করতে পারে৷বিনা বিচারে অনির্দিষ্ট কালের জন্য আটক না থাকার অধিকার আন্তর্জাতিক আইনে সুনিশ্চিত করা হয়েছে, এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক চুক্তির অনুচ্ছেদ ৯, বাংলাদেশ যার একটি রাষ্ট্রপক্ষ, যাতে অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে যে একজন ব্যক্তিকে একটি শনাক্তযোগ্য অপরাধমূলক কার্যক্রমের জন্য অভিযুক্ত করতে হবে এবং অবিলম্বে একটি নিরপেক্ষ আদালতের সামনে হাজির করতে হবে অথবা মুক্তি দিতে হবে৷ বন্দীদের অধিকার থাকতে হবে তাদেরকে গ্রেপ্তার করার কারণ সম্পর্কে জানার এবং অবিলম্বে পরমর্শ করার জন্য সুযোগ পাওয়ার এবং তাদেরকে আটক রাখার আইনগত বৈধতা সম্পর্কে চ্যালেঞ্জ করার জন্য আদালতের সামনে হাজির হওয়ার৷
১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের অধীনে বিনা বিচারে আটক রাখা
অপরাধমূলক কার্যক্রমের অভিযোগে অভিযুক্ত না করেই লোকজনকে আটক রাখার জন্য ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইন ব্যবহার করা হয়েছে৷ এটি সেই সব ব্যক্তিকে আটক রাখার ক্ষমতা প্রদান করে যারা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে “ক্ষতিকর কর্মাকাণ্ডে” জড়িত থাকতে পারে এবং ইচ্ছামাফিক মানুষজনকে আটক রাখার জন্য নির্বাহী বিভাগকে ব্যাপক ক্ষমতা প্রদান করে, যে কর্মকাণ্ডের জন্য নির্বাহী বিভাগকে আদালতের সামনে ন্যায্যতা প্রতিপাদনের আবশ্যকতা নেই৷একজন ব্যক্তি একটি “ক্ষতিকর কাজ” করার সম্ভাবনা রয়েছে, সরকার এই উপসংহারে পৌঁছানোর জন্য আবশ্যক কোনো প্রমাণ সম্পর্কে বিশেষ ক্ষমতা আইন কোনো দিকনির্দেশনা দেয় না৷ এটি সুনির্দিষ্টভাবে ঘোষণা করে যে, বিশেষ ক্ষমতা আইনের অধীনে কোনো আদেশ সম্পর্কে, “কোনো আদালতে প্রশ্ন উত্থাপন করা যাবে না, এবং এই আইনের অধীনে ভালো উদ্দেশ্য নিয়ে করা বা করার অভিপ্রায় থাকলে সরকার বা কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোনো মামলা, বিচার বা অন্য কোনো আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে না৷”4 বিশেষ ক্ষমতা আইনের অধীনে আটকাবস্থা সম্পর্কে শুধুমাত্র হাই কোর্টে পদ্ধতিগত প্রক্রিয়া যেমন ফরম পূরণে অসামঞ্জস্য সম্পর্কে চ্যালেঞ্জ করা যাবে; তবে, বন্দীরা তাদেরকে আটক করার কারণ সম্পর্কে চ্যালেঞ্জ করতে পারে না৷বিচার বিভাগ বহির্ভুত পরামর্শ বোর্ডের সামনে বন্দীরা আইনী প্রতিনিধি উপস্থিত করার অধিকার পায় না, এই বোর্ড গ্রেপ্তারের ১২০ দিনের মধ্যে সরকারকে আহ্বান করতে হয়, এবং বিশেষ ক্ষমতা আইনের অধীনে আটক বন্দীদের জন্য পরামর্শ বোর্ডই একমাত্র পর্যালোচনা পদ্ধতি৷ পরামর্শ বোর্ড বিশেষ ক্ষমতা আইনের অধীনে আটক বন্দীর আটকাদেশ প্রত্যাহারের সুপারিশ করতে পারে অথবা প্রতিবারে ছয় মাস করে অনির্দিষ্টকালের জন্য আটকাদেশ বাড়াতে পারে৷5 বিশেষ ক্ষমতা আইনের অধীনে আটক যে সব বন্দী তাদের আটকাদেশের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে সফলভাবে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারে (প্রক্রিয়াগত কারণে) তাদেরকে প্রায় ক্ষেত্রেই মুক্তি দেয়া হয় না, কারণ কর্তৃপক্ষ পরবর্তীতে তাদের বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ উত্থাপন করে৷ অনেকগুলো ক্ষেত্রে এই সব অপরাধের অভিযোগ আদালতের নিরীক্ষায় টিকেনি এবং একবার শুনানির পর এগুলো বাতিল করা হয়, কারণ উক্ত ব্যক্তিকে নিরাপত্তা হেফাজতে রাখা নিশ্চিত করার জন্য অজুহাত হিসেবে এগুলো উত্থাপন করা হয় বলে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়৷ বিশেষ ক্ষমতা আইনের অধীনে আটক ব্যক্তিদের সঠিক সংখ্যা জানা যায়নি এবং বাংলাদেশে কোনো নিরপেক্ষ সূত্র বিশেষ ক্ষমতা আইনের অধীনে আটক বন্দীদের সংখ্যা পদ্ধতিগতভাবে পর্যবেক্ষণ করে না৷ সরকারের কাছ থেকে সর্বশেষ যে সংখ্যা জানা যায় তা অনুযায়ী, ২০০৭ সালে বিশেষ ক্ষমতা আইনের অধীনে ৯৪৪ জন ব্যক্তিকে আটক করা হয়৷ এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বিশেষ ক্ষমতা আইন প্রত্যাহারের জন্য বারবার আহ্বান জানিয়েছে৷
দণ্ডবিধির ৫৪ ধারার অধীনে গ্রেপ্তার ও আটক রাখা
অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার সন্দেহে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা ছাড়া লোকজনকে গ্রেপ্তার করার জন্য এবং তাদেরকে ২৪ ঘন্টা পর্যন্ত যোগাযোগবিচ্ছিন্ন অবস্থায় আটক রাখার জন্য অস্পষ্টভাবে তৈরি দণ্ডবিধির ৫৪ ধারা ব্যবহার করা হয়েছে৷ যোগাযোগবিচ্ছিন্ন অবস্থায় আটক থাকার সময়, অনেক বন্দী নির্যাতন ও অন্যান্য দুর্ব্যবহারের শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন৷ সংবাদপত্রের অনুমান অনুযায়ী, জরুরি অবস্থা জারির পর থেকে পুলিশ গ্রেপ্তারকৃত লক্ষ লক্ষ ব্যক্তির প্রায় অর্ধেককে গ্রেপ্তারের জন্য ৫৪ ধারা ও জরুরি ক্ষমতা আইন ব্যবহার করেছে৷6
২০০৭ সালের জরুরি ক্ষমতা আইনের অধীনে গ্রেপ্তার ও আটক রাখা
এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল মনে করে যে ২০০৭ সালের জরুরি ক্ষমতা আইনের অধীনে আরোপকৃত কিছু কিছু নিষেধাজ্ঞা আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে অনুমোদনযোগ্য সীমাকে লঙ্ঘন করে৷ তত্ত্বাবধায়ক সরকার জরুরি ক্ষমতা আইনের অধীনে বিনা বিচারে অনির্দিষ্ট কালের জন্য আটক রাখার ব্যপ্তিকে আরো বৃদ্ধি করেছে লোকজনকে তাদের সমবেত হওয়ার ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা চর্চা করার জন্য, এবং সেইসাথে দুর্নীতি, মাদক সংক্রান্ত অপরাধ ও চোরাকারবারের মত অপরাধের জন্য অভিযুক্ত ব্যক্তিদেরকে আটক রাখার জন্য৷জরুরি ক্ষমতা আইনের অধীনে অভিযুক্ত বন্দীদেরকে জামিনে মুক্ত হওয়ার সুযোগ সহ অনেকগুলো আইনী প্রতিবিধান থেকে বঞ্চিত রাখা হয়েছে৷ আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে, বিচারের জন্য অপেক্ষমান ব্যক্তিকে কারাগারে বন্দী করে রাখাটা অবশ্যই সাধারণ নিয়ম হতে পারবে না; জরুরি ক্ষমতা আইনের ১৯ঘ অনুচ্ছেদ, যা জরুরি ক্ষমতা আইনের অধীনে আটক সকল ব্যক্তিকে জামিনে মুক্তি দেয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, এই বিধিকে লঙ্ঘন করে৷যে কোনো একটি সময়ে প্রতিরোধমূলক বন্দীত্ব আইনের অধীনে অভিযোগ ছাড়া আটক ব্যক্তিদের সঠিক সংখ্যা সুস্পষ্ট নয়৷ ২০০৭ সালে বিভিন্ন কারণে লক্ষ লক্ষ লোককে আটক রাখার খবর পাওয়া গেছে,7 এবং ২০০৮ সালের মে মাসের শেষদিকে এবং জুন মাসের প্রথমদিকে হাজার হাজার রাজনৈতিক কর্মীকে সমাবেশ করার জন্য গ্রেপ্তার করা হয়েছে যারা মনে করেছিল যে সমাবেশ করার উপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়েছে৷ আটককৃতদের অধিকাংশকে অপেক্ষাকৃত অল্প সময় পরে মুক্তি দেয়া হয়, কিন্তু কিছু কিছু ব্যক্তিকে অভিযোগ বা বিচার ছাড়াই ২০০৮ সালের অগাস্ট পর্যন্ত আটক রাখা হয়৷জরুরি অবস্থার সময় যাদেরকে আটক রাখা হয় তাদের মধ্যে বিবেকের বন্দীরাও ছিল, এদের মধ্যে রয়েছে তাসনিম খলিল, তাকে মানবাধিকার লঙ্ঘন সম্পর্কে তথ্য প্রচারের জন্য ২০০৭ সালের মে মাসে ঢাকায় প্রায় ২৪ ঘন্টার জন্য আটক রাখা হয় এবং নির্যাতন করা হয়; জাহাঙ্গীর আলম আকাশ, র্যা ব সদস্যরা একজন নিরস্ত্র ব্যক্তিকে গুলি করা সম্পর্কে ২০০৭ সালের মে মাসে টেলিভিশনে তার প্রতিবেদন প্রচারের পর তাকে ঐ বছরের অক্টোবরে এক মাসের বেশি সময় ধরে আটক রাখা হয় এবং উত্তর-পশ্চিমাংশের শহর রাজশাহীতে র্যা পিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যা ব) সদস্যরা তাকে নির্যাতন করে৷ আদালত তার জামিন মঞ্জুর না করলে তিনি পুনরায় গ্রেপ্তার হওয়ার ঝুঁকির মধ্যে থাকবেন৷ রাজশাহী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ক্ষমতার অপব্যবহারের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করার কারণে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয়জন শিক্ষককে ২০০৭-এর অগাস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত আটক রাখা হয় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারজন শিক্ষককে ২০০৭-এর অগাস্ট থেকে ২০০৮-এর জানুয়ারি পর্যন্ত আটক রাখা হয়৷ কার্টুনিস্ট আরিফুর রহমানকে তার একটি কার্টুনে নবী মোহাম্মদ (সাঃ)-এর নাম ব্যবহার করার কারণে ইসলামী গ্রুপগুলোর প্রতিবাদের মুখে ২০০৭-এর সেপ্টেম্বর থেকে ২০০৮-এর মার্চ পর্যন্ত আটক রাখা হয়৷
অনৈতিক ও অন্যায় বিচার
জরুরি অবস্থাকে কখনোই নির্বিচারে স্বাধীনতা হরণ করার ক্ষেত্র হিসেবে অথবা সুষ্ঠু বিচারের মূলনীতিগুলোকে উপেক্ষা করার জন্য ব্যবহার করা যাবে না৷8 এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বিশ্বাস করে যে জরুরি আইনের অনেকগুলো অনুবিধি হয় খুব বিস্তৃতভাবে তৈরি করা হয়েছে অথবা এমনভাবে বাস্তবায়িত করা হয়েছে যা আটক ব্যক্তির যথাযথ প্রক্রিয়ার অধিকারকে লঙ্ঘন করে৷ জরুরি অবস্থার অধীনে দুর্নীতির জন্য অভিযুক্ত ১৭০ জনেরও বেশি রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীর মধ্যে, কয়েক ডজনকে অভিযোগ বা বিচার ছাড়াই এক বছরেরও বেশি সময় ধরে আটক রাখা হয়েছে যা নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক চুক্তির অনুচ্ছেদ ৯(১) ও ১৪(১)(গ)- এর লঙ্ঘন৷ এছাড়াও জরুরি আইনের অধীনে জামিনে তাদের মুক্তির পথ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে৷ তাদের মধ্যে প্রায় ১২০ জন তাদেরকে ক্রমাগতভাবে আটক রাখার বিষয়ে প্রক্রিয়াগত কারণ দেখিয়ে চ্যালেঞ্জ করেছে, যেমন জরুরি আইনের অধীনে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনার জন্য নির্দিষ্ট সময় পার হয়ে যাওয়ার পরেও তাদেরকে মুক্তি দেয়া হয়নি৷ তাদের অনেককেই কারাগারের মূল দরজায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং তারপর নতুন অভিযোগে পুনরায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ কিছু কিছু ক্ষেত্রে, যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা ছাড়া তাদেরকে পুনরায় গ্রেপ্তার না করার জন্য আদালত কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছে৷ ফলশ্রুতিতে, এক ডজনেরও বেশি বন্দীকে জামিনে মুক্তি দেয়া হয়েছে, কিন্তু তারা পুনরায় গ্রেপ্তার হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন৷দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত ৫০ জনেরও বেশি বিবাদীকে বিশেষ আদালত কর্তৃক বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে যেখানে আইনজীবীর সহায়তা ও দালিলিক প্রমাণ লাভের ক্ষেত্রে তাদের সীমিত সুযোগ ছিল, যেমন তাদের আত্মপক্ষ সমর্থন করার জন্য অফিসের নথিপত্রের সাহায্য পাওয়া৷ যদিও হাই কোর্টে তাদের আপিল এখনো মীমাংসিত হয়নি, এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল উদ্বিগ্ন যে এই ধরনের পরিস্থিতিতে বিশেষ আদালত দ্বারা বিচার প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখাটা একইরকম পক্ষপাতদুষ্ট হবে৷
মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়মুক্তি
সংস্কারের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিবৃত প্রতিশ্রুতি মানবাধিকারের সুরক্ষার জন্য দীর্ঘদিনের প্রতিবন্ধকতা অপসারণের একটি সুযোগ৷ তবে, এটি আইনের শাসনকে জোরদার করা ও তদন্তমূলক, অভিশংসক ও বিচার বিভাগীয় কার্যক্রমকে সুরক্ষিত করার জন্য রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ থেকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো প্রতিরোধ করার জন্য ব্যাপক প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের মাধ্যমে মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়মুক্তির অবসান ঘটাতে ব্যর্থ হয়েছে৷ মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ী হিসেবে অভিযুক্ত সামরিক ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যদেরকে বিচারের সম্মুখীন করা হয়নি৷জরুরি অবস্থার সময় আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য পুলিশ ও সামরিক বাহিনীর সদস্যদের সমন্বয়ে তৈরি যৌথ বাহিনী,9 এবং সেইসাথে র্যা পিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যা ব),10 একটি অভিজাত পুলিশ ইউনিট যা মূলতঃ সামরিক বাহিনীর সদস্যদেরকে নিয়ে তৈরি, মোতায়েন করা হয়৷ এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং অন্যান্য মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই সব আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো দ্বারা গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা শনাক্ত করেছে, কিন্তু আজ পর্যন্ত, কোনো সেনা, নৌ বা র্যাসব সদস্যকে রাষ্ট্র কর্তৃক বিচারের সম্মুখীন করা হয়নি৷ আইন-শৃঙ্খলা অভিযানের সময় অপ্রয়োজনীয় ও অতিরিক্ত শক্তি ব্যবহার এবং বিচার-বহির্ভুত হত্যাকাণ্ড, মানবাধিকার কর্মীদেরকে ভীতি প্রদর্শন বা গ্রেপ্তার, এবং র্যা ব সদস্যদের দ্বারা নির্যাতন ও অন্যান্য দুর্ব্যবহারের বিশ্বাসযোগ্য প্রতিবেদন রয়েছে৷এক ধরনের হত্যাকাণ্ড, যাকে সরকার “ক্রসফায়ারে মৃত্যু” হিসেবে দেখিয়ে থাকে, এটি ২০০৪ সালে র্যা ব প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে র্যাহবের অপারেশনের বৈশিষ্ট্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়৷ সংবাদপত্রের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০০৪ সালে এই ধরনের ঘটনায় কমপক্ষে ১৪৭ জন ব্যক্তি নিহত হয়, এবং পরবর্তী বছরগুলোতে এই সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে৷ একটি এনজিও’র সূত্র অনুযায়ী, ২০০৭-এর জানুয়ারি থেকে ২০০৮-এর অগাস্ট পর্যন্ত কমপক্ষে ২০৮ জন ব্যক্তি “ক্রসফায়ারে মৃত্যুবরণ” করেছেন৷11 এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল উদ্বিগ্ন যে পুলিশ ও র্যা ব সদস্যরা তাদের হেফাজতে থাকা বন্দীদের মৃত্যুর দায়-দায়িত্ব এড়াতে এই বর্ণনা ব্যবহার করে থাকে৷২০০৮-এর জুলাইতে, পুলিশ বেআইনী ঘোষিত পূর্ব বাংলা কম্যুনিস্ট পার্টির (লাল পতাকা অংশ) নেতা ডা. মিজানুর রহমান টুটুলের মৃত্যুর কথা ঘোষণা করে একটি “ক্রসফায়ারের” ঘটনা হিসেবে৷ ২৬ জুলাই তারিখে ডা. টুটুলের মা সাংবাদিকদেরকে তার গ্রেপ্তারের বিষয়টি জানান এবং তার নিরাপত্তার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে উন্মুক্ত আহ্বান জানান৷ পরের দিন পুলিশ “ক্রসফায়ারে” তার মৃত্যুর কথা ঘোষণা করে৷সামরিক বাহিনীর সদস্য বা র্যা পিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের হেফাজতে নির্যাতন বা মৃত্যুর ঘটনা পুলিশ তদন্ত করে না৷ সরকার জানিয়েছে যে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা সম্পৃক্ত রয়েছে এমন প্রতিটি মৃত্যুর ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছে; এই তদন্তগুলোর কোনোটিতেই র্যা বের গুলিবর্ষণ শুরু করার ঘটনা অন্যায্য হিসেবে পাওয়া যায়নি৷ তবে, এই ধরনের তদন্তের কোনো প্রতিবেদন, অথবা এগুলোর প্রক্রিয়া বা ব্যবহৃত প্রমাণ জনসম্মুখে প্রকাশ করা হয়নি৷ এই ধরনের গোপনীয়তা মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়মুক্তিকে চিরস্থায়ী করেছে এবং সরকারের সংস্কার কার্যক্রমকে দুর্বল করেছে৷এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের প্রশ্নের জবাবে, ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা বলেছেন যে সামরিক বাহিনীর সদস্যরা হত্যাকাণ্ড বা ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত থাকলেই কেবল পুলিশ তদন্ত করতে পারে; সামরিক বাহিনীর সদস্যরা অন্য কোনো ধরনের মামলায় জড়িত থাকলে সেগুলো সেনাবাহিনীর কাছে প্রেরণ করা হয় যারা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই একটি গোপন তদন্ত পরিচালনা করে থাকে যার ফলাফল জনসম্মুখে প্রকাশ করা হয় না৷ সামরিক বাহিনীর সদস্যদের হেফাজতে ২০০৭-এর মার্চে আদিবাসী গারো নেতা, চলেশ রিচিলের মৃত্যুর ঘটনায়, একটি বিরল ঘটনা হিসেবে সামরিক বাহিনীর সদস্যদের দায়-দায়িত্ব স্বীকার করে সরকারি কর্তৃপক্ষ এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালকে বলেছে যে একটি তদন্ত পরিচালনার পর সংশ্লিষ্ট সদস্যের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল৷ তবে, তদন্তের বিস্তারিত ফলাফল জনসম্মুখে প্রকাশ করা হয়নি, এবং অপরাধীদের কাউকে বেসামরিক আদালতে বিচারের সম্মুখীন করা হয়নি৷
ঘ. পর্যালোচনাধীন রাষ্ট্রের জন্য কার্যক্রমের সুপারিশএ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছেঃ
নির্বিচারে গ্রেপ্তার এবং অনৈতিক ও অন্যায় বিচার• নির্বিচারে গ্রেপ্তার ও আটক রাখার অবসান ঘটানো, এই ধরনের কার্যক্রম অনুমোদনকারী সকল আইন বাতিল বা সংশোধন করা, এবং নিশ্চিত করা যাতে গ্রেপ্তারকৃত সকল ব্যক্তিকে একটি শনাক্তযোগ্য অপরাধমূলক কার্যক্রমের জন্য অভিযুক্ত করা হয় এবং অবিলম্বে একটি নিরপেক্ষ আদালতের সামনে হাজির করা হয় অথবা মুক্তি দেয়া হয়৷ যে সব ব্যক্তিকে তাদের স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করা হবে তাদের সবাইকে অবিলম্বে তাদেরকে বন্দী করার কারণ সম্পর্কে অবহিত করতে হবে এবং তাদেরকে আটক রাখার বৈধতা সম্পর্কে আদালতে চ্যালেঞ্জ জানানোর সুযোগ দিতে হবে, এবং একজন আইনজীবী, তাদের পরিবার ও চিকিৎসা সহায়তা লাভের সুযোগ দিতে হবে৷• যোগাযোগবিচ্ছিন্ন অবস্থায় আটক রাখার অবসান ঘটাতে হবে, যাতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে দণ্ডবিধির ৫৪ ধারার অধীনে আটক রাখা;• ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ব্যবহার স্থগিত রাখতে হবে এবং এটি বাতিল করার জন্য পদক্ষেপত নিতে হবে;• জরুরি ক্ষমতা আইনের ১৯ঘ অনুচ্ছেদ বাতিল করতে হবে, যা জরুরি ক্ষমতা আইনের অধীনে অভিযুক্ত বন্দীদের জামিনের অধিকারকে প্রত্যাখ্যান করে৷ বিচার শুরু হওয়ার আগে জামিনে মুক্তির জন্য সকল বন্দীর আবেদন করার সুযোগ থাকতে হবে৷ আদালত কর্তৃক অনুমোদিত জামিনের আদেশকে সম্মান করতে হবে এবং বিনা কারণে দেরি না করে বন্দীদেরকে ছেড়ে দিতে হবে৷নির্যাতন, অন্যান্য দুর্ব্যবহার, ও বিচার-বহির্ভুত হত্যাকাণ্ড• সকল নির্যাতন ও অন্যান্য দুর্ব্যবহার, বিচার-বহির্ভুত হত্যাকাণ্ড এবং অন্যান্য মানবাধিকার লঙ্ঘনের অবিলম্বে অবসান ঘটাতে হবে; সুস্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করতে হবে যে, এই ধরনের কোনো ঘটনা কখনোই সহ্য করা হবে না, এই ধরনের সব ঘটনা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত করা হবে এবং সন্দেহভাজন অপরাধী, ও সেইসাথে তাদের সাথে চেইন-অব-কমান্ডে জড়িত দায়ী সবার বিচার করা হবে;• নির্যাতন, অন্যান্য দুর্ব্যবহার, ও বিচার-বহির্ভুত হত্যাকাণ্ডের শিকারদের আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সাথে সঙ্গতিপূর্ণভাবে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে, যাতে অন্তর্ভুক্ত থাকবে ফেরত প্রদান, ক্ষতিপূরণ, পুনর্বাসন, সন্তুষ্টি এবং পুনরাবৃত্তি না হওয়ার নিশ্চয়তা৷দায়মুক্তি• নিরাপত্তা ও সশস্ত্র বাহিনী কর্তৃক মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়মুক্তির অবসান ঘটানো, যাতে অন্তর্ভুক্ত থাকবে সামরিক বাহিনীর সদস্য ও র্যারব কর্তৃক মানবাধিকার লঙ্ঘনের সবগুলো অভিযোগের দ্রুত, নিরপেক্ষ ও কার্যকর তদন্ত নিশ্চিত করা, এবং অপরাধীদেরকে বিচারের সম্মুখীন করা৷ সামরিক বাহিনীর সদস্য কর্তৃক বেসামরিক ব্যক্তিদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগগুলো একটি বেসামরিক আদালত কর্তৃক তদন্ত করাতে হবে; মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকারদেরকে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দিতে হবে;• সশস্ত্র পুলিশ ব্যাটালিয়ন অধ্যাদেশের অনুচ্ছেদ ১৩ সহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদেরকে বিচার থেকে দায়মুক্তি দেয়ার আইনগুলো বাতিল করতে হবে৷
পরিশিষ্টঃ আরো সূত্র হিসেবে এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদনসমূহ12
• এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, ‘বাংলাদেশঃ বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের স্মারকলিপি’, AI Index ASA 13/001/2008, ১০ জানুয়ারি ২০০৮• এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, ‘বাংলাদেশঃ আটকাবস্থায় মৃত্যু এবং নির্যাতনের প্রতিবেদন’, AI Index: ASA 13/005/2007, ১০ মে ২০০৭• এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, ‘বাংলাদেশঃ মানবাধিকারের সুরক্ষার জন্য আইনী ও অন্যান্য সংস্কারের জরুরি প্রয়োজনীয়তা’, AI Index: ASA 13/012/2003, ১৬ মে ২০০৩1 মানবাধিকার কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত ৬/১০২-এ রয়েছে, মানবাধিকার কাউন্সিলের প্রস্তাব ৫/১-এর ফলো-আপ, অনুচ্ছেদ ১, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০০৭ তারিখে গৃহীত৷2 কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা জটিল রাজনৈতিক সহিংসতার পর, ২০০৭ সালের জানুয়ারিতে সেনা-সমর্থিত একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার একটি জরুরি অবস্থা চাপিয়ে দেয়৷ এটি ২২ জানুয়ারি ২০০৭ তারিখে অনুষ্ঠিতব্য সংসদ নির্বাচনকে ২০০৮ সালের শেষদিক পর্যন্ত স্থগিত করে, এবং মূল রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থকদের মধ্যে সহিংস সংঘাত অবসানের অজুহাতে মত প্রকাশ, সংগঠন ও সমাবেশ করার স্বাধীনতাকে গুরুতরভাবে সীমিত করে৷3 বিশেষ ক্ষমতা আইনে উল্লিখিত “ক্ষতিকর কাজের” মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করা, বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মধ্যে শত্রুতা ও ঘৃণার অনুভূতি বা উত্তেজনা সৃষ্টি করা এবং আইন ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি করা৷ এগুলো জরুরি ক্ষমতা আইনে পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে৷4 বিশেষ ক্ষমতা আইন, ১৯৭৪, অনুচ্ছেদ ৩৪, ‘আদালতের এখতিয়ারের উপর নিষেধাজ্ঞা’৷5 প্রাথমিকভাবে এক-মাস আটক থাকার পর৷6 উদাহরণ হিসেবে ২১ মে ২০০৭ তারিখের ‘নিউ এজ’-এর একটি প্রতিবেদন দেখুন যার শিরোনাম ‘জানুয়ারি ১২ থেকে ১,৯১,৯৬৭ জন গ্রেপ্তার, ১,৫৬০টি অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র বাজেয়াপ্ত’৷7 সরকার নিশ্চিত করেছে যে ২০০৭ সালে সর্বমোট ৪৭৯,৮৬৪ জন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়, কিন্তু মন্তব্য করেছে যে এত বেশি সংখ্যক গ্রেপ্তার কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে একটি নিয়মিত ঘটনা এবং এটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে ব্যতিক্রম হিসেবে ঘটেনি৷8 উদাহরণস্বরূপ দেখুন মানবাধিকার কমিটি, সাধারণ মন্তব্য নং ২৯: জরুরি অবস্থা (অনুচ্ছেদ ৪), জাতিসংঘের দলিলঃ CCPR/C/21/Rev.1/Add.11, ৩১ ডিসেম্বর ২০০১, অনুচ্ছেদ ১১৷ 9 ২০০৭ সালের জরুরি ক্ষমতা আইনের অধীনে সামরিক, আধাসামরিক ও পুলিশ বাহিনীর একটি যৌথ দলকে সম্মিলিতভাবে আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে৷ সাধারণভাবে যৌথ বাহিনী হিসেবে পরিচিত, এই বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে পুলিশ, সুসজ্জিত সশস্ত্র পুলিশ ব্যাটালিয়ন (দাঙ্গা পুলিশ), র্যা পিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (একটি আধাসামরিক ধাঁচের পুলিশ ইউনিট যা পুলিশ ও সৈন্যদেরকে নিয়ে গঠিত), ব্যাটালিয়ন আনসার (গ্রাম প্রতিরক্ষা দল), বাংলাদেশ রাইফেলস্‌ (সীমান্তরক্ষী বাহিনী), উপকূলরক্ষী বাহিনী, জাতীয় নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা বাহিনী এবং সেনা গোয়েন্দা সংস্থা ও বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী৷10 র্যা ব, যদিও মূলতঃ প্রেষণে নিযুক্ত সৈন্যদেরকে নিয়ে গঠিত এবং আঞ্চলিক পর্যায়ে সামরিক কর্মকর্তাদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, এর প্রধান হচ্ছে পুলিশের মহাপরিদর্শক এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে রিপোর্ট করে থাকে৷11 অধিকার, ‘জরুরি অবস্থায় ১৯ মাস’, ১২ অগাস্ট ২০০৮৷12 এই সবগুলো ডকুমেন্ট এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবেঃ http://www.amnesty.org/en/region/asia-and-pacific/south-asia/bangladesh

Popular posts from this blog

THE CONSTITUTION OF THE BANGLADESH AWAMI LEAGUE

ইতিহাসবন্ধনী

ব্রিগেডিয়ার বারীর যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা