প্রভাকরণকে হত্যা ও গৃহযুদ্ধ জয়ের দাবি শ্রীলংকার
Tiger leader Prabhakaran dead: Sri Lanka
প্রভাকরণকে হত্যা ও গৃহযুদ্ধ জয়ের দাবি শ্রীলংকার
প্রভাকরণকে হত্যা ও গৃহযুদ্ধ জয়ের দাবি শ্রীলংকার
কলম্বো, মে ১৮ (বিবিসি)-- লিবারেশন টাইগার্স অব তামিল ইলম (এলটিইি) এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান ভেলুপিল্লাই প্রভাকরণকে হত্যা করে সোমবার ২৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলতে থাকা গৃহযুদ্ধে জয়ী হয়েছে শ্রীলংকার সেনারা। ১৯৮৩ সালে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের এ সশস্ত্র সংঘাত শুরু হওয়ার পর এদিন প্রথমবারের মতো পুরো দ্বীপদেশটির ওপর সরকারের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা হয়েছে। সেনাবাহিনী একথা জানিয়েছে। শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট মহিন্দা রাজাপাকসে মঙ্গলবার পার্লামেন্টে গৃহযুদ্ধ জয়ের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবেন। দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানিয়েছে, নাটকীয় চূড়ান্ত লড়াইয়ে সোমবার ভোরের দিকে একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে পালিয়ে যাওয়ার সময় প্রভাকরণকে হত্যা করেছে শ্রীলংকার সেনাবাহিনীর বিশেষ কমান্ডো সেনারা। প্রতিবেদনে বলা হয়, এলটিটিই'র গোয়েন্দা প্রধান পোত্তু আম্মান এবং নৌ-শাখা 'সী টাইগার' এর প্রধান সোসাইও এ লড়াইয়ে মারা গেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। আত্মঘাতী হামলার কৌশল অবলম্বনকারী এলটিটিইকে গড়ে তোলার নায়ক ৫৪ বছর বয়সী এই র্দুর্ধষ গেরিলা নেতা অঙ্গীকার করেছিলেন, তিনি কখনোই জীবিত অবস্থায় ধরা পড়বেন না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সেনাবাহিনীর একটি সূত্র রয়টার্সকে জানায়, "এটা নিশ্চিত যে ভোরের আগে আগে একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে পালিয়ে যাওয়ার সময় প্রভাকরণকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা প্রেসিডেন্টের আনুষ্ঠানিক ঘোষণার জন্য অপেক্ষা করছি।" শ্রীলংকার সেনাপ্রধান লেফট্যানেন্ট জেনারেল সারাথ ফনসেকা বলেছেন, প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসে তিন বছর আগে যে দায়িত্ব দিয়েছিলেন সোমবার সকালে তা পুরোপুরি সম্পন্ন করেছে সেনারা। রাষ্ট্রীয় টিভিতে তিনি ঘোষণা করেন, "সন্ত্রাসীদের কাছ থেকে উত্তরাঞ্চলকে পুরোপুরি মুক্ত করে পুরো দেশকে মুক্ত করেছি আমরা। এলটিটিই অধিকৃত এলাকার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছি আমরা।" ২৫ বছরেররও বেশি সময় ধরে চলা এশিয়ার দীর্ঘতম আধুনিক এ যুদ্ধে রোববার পরাজয় স্বীকার করে নেয় এলটিটিই। অবশ্য এর একদিন আগেই সেনারা পুরো উপকূলীয় এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেওয়ার পর এলটিটিই-কে সামরিকভাবে পরাস্ত ঘোষণা করেন রাজাপাকসে। উত্তর উপকূলের মাত্র ৩০০ বর্গ মিটারের একটি বালুকাময় জঙ্গল এলাকায় এ রক্তাক্ত সংঘাতের অন্তিম লড়াই চলে। সেখানে চারদিকে স্থলমাইন ও ফাঁদ পেতে রেখে বাঙ্কারের ভেতর থেকে লড়াইয়ের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল এলটিটিই'র অবশিষ্ট গেরিলারা। শ্রীলংকার জাতীয় নিরাপত্তা তথ্যকেন্দ্র থেকে জানানো হয়েছে, যুদ্ধাঞ্চলে আটকাপড়া ৭২,০০০ বেসামরিক লোকের অবশিষ্টদের উদ্ধারের পর শনিবার চূড়ান্ত অভিযান শুরু করে সেনারা। শেষ লড়াইয়ের পর সেখান থেকে ২৫০ জন টাইগার গেরিলার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এর আগে সোমবার সকালে সেনাবাহিনী জানায়, এলটিটিইর চার শীর্ষ নেতা যুদ্ধে নিহত হয়েছেন এবং তাদের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এদের মধ্যে এলটিটিই প্রধানের ছেলের মৃতদেহও রয়েছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র কেহেলিয়া রামবুকওয়ালা বলেছেন, একটি মৃতদেহ পাওয়া গেছে যা প্রভাকরণের ছেলে চার্লস এন্টনির বলে ধারণা করা হচ্ছে। তিনি জানান উদ্ধার করা অপর তিনটি মৃতদেহের একটি এলটিটিই'র রাজনৈতিক শাখার প্রধান বলসিঙ্গম নাদেসানের, একটি তাদের শান্তি সচিবালয়ের প্রধান শিবরত�ম পুলিদেভানের এবং অপরটি তাদের সামরিক নেতা রামেশের। শ্রীলংকার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সোমবার প্রথমবারের মতো প্রভাকরণের ছেলে এবং অন্যান্য শীর্ষ নেতাদের নিহত হওয়ার খবর ও ছবি প্রকাশ করার পরপরই এলটিটিই প্রধানের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। সেনাবাহিনীর দাবির বিষয়ে এলটিটিই'র কাছ থেকে কোনো মন্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি এবং যুদ্ধাঞ্চলে বাইরের পর্যবেক্ষকদের যাওয়া নিষিদ্ধ থাকায় তা নিরপেক্ষ কোনো সূত্র থেকে বা অন্য কোনোভাবে তা যাচাই করা যায়নি। ২০০২ সালের অস্ত্রবিরতি তিন বছর আগে ভেঙে পড়তে শুরু করার পর লাগাতার অভিযান চালিয়ে তামিল টাইগারদের নিয়ন্ত্রণে থাকা উত্তরপূর্বাঞ্চলের প্রায় ১৫,০০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা ধাপে ধাপে নিজেদের অধিকারে নেয় সেনাবাহিনী। এর আগে ওই অঞ্চলে কার্যত একটি আলাদা রাষ্ট্র পরিচালনা করছিল তামিল গেরিলারা। সংখ্যালঘু তামিল স�প্রদায়ের জন্য দ্বীপদেশটির উত্তর ও উত্তরপূর্বাঞ্চলে তাদের ভাষায় 'তামিল ইলম' বা একটি আলাদা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯৮৩ সালে সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করেছিল এলটিটিই। টাইগাররা কর আদায় করত, আদালত পরিচালনা করত এবং একটি পুরোদস্তুর সেনাবাহিনীসহ নৌ এবং ছোট আকারের বিমান বাহিনীও ছিল তাদের। উত্তরাঞ্চলের শহর কিলিনোচ্চি টাইগারদের রাজধানী হিসেবে পরিচিত ছিল। অবশ্য কিছু এলাকা বাদে টাইগারদের নিয়ন্ত্রণাধীন বাকি অংশেও শ্রীলংকা সরকার পরিচালিত শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবা চালু ছিল।
ঘটনাপ্রবাহ: শ্রীলংকার ২৫ বছরের গৃহযুদ্ধ
ঢাকা, মে ১৭ (রয়টার্স)- শ্রীলংকার দীর্ঘদিনের রক্তক্ষয়ী বিচ্ছিন্নতাবাদী যুদ্ধের দৃশ্যত যবনিকা পড়লো রোববার। সরকারের ভাষায় সেনাবাহিনীর চূড়ান্ত অভিযানের মুখে "তিক্ত লড়াইয়ের অবসান হয়েছে' বলার মাধ্যমে কার্যত পরাজয় স্বীকার করে নিয়েছে তামিল টাইগাররা। দেশটির ২৫ বছরের গৃহযুদ্ধের ঘটনাপ্রবাহের চুম্বক অংশ নিচে তুলে ধরা হল। ১৯৮৩- দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে একটি স্বাধীন তামিল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গঠিত লিবারেশন টাইগারস অব তামিল ইলম (এলটিটিই) উত্তরাঞ্চলে হামলা চালিয়ে ১৩ সেনাকে হত্যা করে। রাজধানী কলম্বোয় শুরু হয় তামিলবিরোধী দাঙ্গা। মারা যায় শতশত মানুষ। এই ঘটনাকে টাইগাররা যুদ্ধ শুরু বলে অভিহিত করে। ১৯৮৭- টাইগারদের এক সময় অস্ত্রের যোগান দিলেও শান্তি স্থাপনে ১৯৮৭ সালে শ্রীলংকায় সেনা পাঠায় ভারত। কিন্তু অস্ত্র সমর্পণে অস্বীকৃতি জানায় টাইগাররা। শুরু করে ভারতীয় বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ। নিহত হয় এক হাজার ভারতীয় সেনা। ১৯৯০- ভারত সেনা প্রত্যাহার করে নেয়। উত্তরাঞ্চলীয় জাফনা শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় টাইগাররা। 'দ্বিতীয় ইলম যুদ্ধ' শুরু। ১৯৯১- সন্দেহভাজন এলটিটিই আত্মঘাতীর হামলায় নিহত হন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী। দুই বছর পরে আরেকটি আত্মঘাতী হামলায় নিহত হন শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট রানাসিঙ্গে প্রেমাদাসা। দুটি হামলার জন্যই এলটিটিইকে দায়ী করা হয়। ১৯৯৫- বিদ্রোহীদের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে রাজি হন প্রেসিডেন্ট চন্দ্রিকা কুমারাতুঙ্গা। কিন্তু এ বছরই নৌবাহিনীর জাহাজ ডুবিয়ে দিয়ে বিদ্রেহীরা শুরু করে 'তৃতীয় ইলম যুদ্ধ'। সেনাবাহিনীর কাছে জাফনার নিয়ন্ত্রণ হারায় টাইগাররা। ১৯৯৫-২০০১- উত্তর-পূর্বাঞ্চল জুড়ে চলতে থাকে যুদ্ধ। কলম্বোয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আত্মঘাতী হামলায় নিহত হয় প্রায় একশ' জন। টাইগারদের হামলায় আহত হন প্রেসিডেন্ট কুমারাতুঙ্গা। ২০০২- নরওয়ের মধ্যস্থতায় সরকার ও বিদ্রোহীদের মধ্যে ঐতিহাসিক যুদ্ধবিরতি স্বাক্ষর। ২০০৩- শান্তি আলোচনা থেকে বেরিয়ে আসে টাইগাররা। তবে যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকে। ২০০৪-২০০৫- টাইগারদের পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডার কর্নেল করুনা আমান প্রায় ছয় হাজার যোদ্ধা নিয়ে এলটিটিই থেকে বেরিয়ে যান। সন্দেহভাজন টাইগারদের হামলায় নিহত হন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। কট্টর এলটিটিই বিরোধী মাহিন্দা রাজাপাকশে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ২০০৬- এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত তুমুল যুদ্ধ চলে। 'চতুর্থ ইলম যুদ্ধ' শুরুর আশঙ্কা তৈরি হয়। অক্টোবরে জেনেভায় নতুন করে আলোচনার উদ্যোগ ব্যর্থ হয়। ২০০৭- পূর্বাঞ্চলে টাইগারদের শক্ত ঘাঁটি দখল করে নেয় সেনাবাহিনী। ২০০৮- জানুয়ারির প্রথম দিকেই যুদ্ধবিরতি অকার্যকর ঘোষণা করে সরকার এবং বড় ধরণের যুদ্ধাভিযান শুরু করে সেনাবাহিনী। জানুয়ারি ২, ২০০৯- টাইগারদের ঘোষিত রাজধানী কিলোনাচ্চি দখল করে নেয় সেনারা। এপ্রিল ১৭- সরকার ঘোষিত দুই দিনের অস্ত্রবিরতি শেষ হওয়ার পর যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানায় বিদ্রোহীরা। তবে সরকার এ আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে। এপ্রিল ২০- ক্রমশ কোণঠাসা হয়ে পড়া বিদ্রোহীদের আত্মসমর্পণের জন্য ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেয় সরকার। যুদ্ধাঞ্চল থেকে পালিয়ে আসে প্রায় দশ হাজার সাধারণ নাগরিক। এক সপ্তাহের মধ্যে এই সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় এক লাখ ১৫ হাজার। এপ্রিল ২৬- একতরফা যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে এলটিটিই। সরকার টাইগারদের এই ঘোষণাকে 'হাস্যকর' অভিহিত করে জানায় তাদের অবশ্যই আত্মসমর্পণ করতে হবে। মে ১৬- ২৫ বছর আগে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর প্রথমবারের মতো সমগ্র উপকূলসীমার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় সেনাবাহিনী। জর্ডান সফররত প্রেসিডেন্ট রাজাপাকশে বলেন, এলটিটিই পরাজিত হয়েছে। মে ১৭- বেসামরিক নাগরিকের বেশ ধরে নৌকা করে পালানোর সময় নিহত হয় ৭০ এর বেশি এলটিটিই যোদ্ধা। এছাড়া আরও অনেকে আত্মঘাতী হামলার মাধ্যমে প্রাণ বিসর্জন দেয়। যুদ্ধ এলাকার সকল বেসামরিক নাগরিককে মুক্ত করার ঘোষণা দেয় সেনাবাহিনী। এলটিটিই নেতা ভেলুপিল্লাই প্রভাকরণের ভাগ্যে কী ঘটেছে এই নিয়ে গুঞ্জন সর্বত্র।
ঢাকা, মে ১৭ (রয়টার্স)- শ্রীলংকার দীর্ঘদিনের রক্তক্ষয়ী বিচ্ছিন্নতাবাদী যুদ্ধের দৃশ্যত যবনিকা পড়লো রোববার। সরকারের ভাষায় সেনাবাহিনীর চূড়ান্ত অভিযানের মুখে "তিক্ত লড়াইয়ের অবসান হয়েছে' বলার মাধ্যমে কার্যত পরাজয় স্বীকার করে নিয়েছে তামিল টাইগাররা। দেশটির ২৫ বছরের গৃহযুদ্ধের ঘটনাপ্রবাহের চুম্বক অংশ নিচে তুলে ধরা হল। ১৯৮৩- দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে একটি স্বাধীন তামিল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গঠিত লিবারেশন টাইগারস অব তামিল ইলম (এলটিটিই) উত্তরাঞ্চলে হামলা চালিয়ে ১৩ সেনাকে হত্যা করে। রাজধানী কলম্বোয় শুরু হয় তামিলবিরোধী দাঙ্গা। মারা যায় শতশত মানুষ। এই ঘটনাকে টাইগাররা যুদ্ধ শুরু বলে অভিহিত করে। ১৯৮৭- টাইগারদের এক সময় অস্ত্রের যোগান দিলেও শান্তি স্থাপনে ১৯৮৭ সালে শ্রীলংকায় সেনা পাঠায় ভারত। কিন্তু অস্ত্র সমর্পণে অস্বীকৃতি জানায় টাইগাররা। শুরু করে ভারতীয় বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ। নিহত হয় এক হাজার ভারতীয় সেনা। ১৯৯০- ভারত সেনা প্রত্যাহার করে নেয়। উত্তরাঞ্চলীয় জাফনা শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় টাইগাররা। 'দ্বিতীয় ইলম যুদ্ধ' শুরু। ১৯৯১- সন্দেহভাজন এলটিটিই আত্মঘাতীর হামলায় নিহত হন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী। দুই বছর পরে আরেকটি আত্মঘাতী হামলায় নিহত হন শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট রানাসিঙ্গে প্রেমাদাসা। দুটি হামলার জন্যই এলটিটিইকে দায়ী করা হয়। ১৯৯৫- বিদ্রোহীদের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে রাজি হন প্রেসিডেন্ট চন্দ্রিকা কুমারাতুঙ্গা। কিন্তু এ বছরই নৌবাহিনীর জাহাজ ডুবিয়ে দিয়ে বিদ্রেহীরা শুরু করে 'তৃতীয় ইলম যুদ্ধ'। সেনাবাহিনীর কাছে জাফনার নিয়ন্ত্রণ হারায় টাইগাররা। ১৯৯৫-২০০১- উত্তর-পূর্বাঞ্চল জুড়ে চলতে থাকে যুদ্ধ। কলম্বোয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আত্মঘাতী হামলায় নিহত হয় প্রায় একশ' জন। টাইগারদের হামলায় আহত হন প্রেসিডেন্ট কুমারাতুঙ্গা। ২০০২- নরওয়ের মধ্যস্থতায় সরকার ও বিদ্রোহীদের মধ্যে ঐতিহাসিক যুদ্ধবিরতি স্বাক্ষর। ২০০৩- শান্তি আলোচনা থেকে বেরিয়ে আসে টাইগাররা। তবে যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকে। ২০০৪-২০০৫- টাইগারদের পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডার কর্নেল করুনা আমান প্রায় ছয় হাজার যোদ্ধা নিয়ে এলটিটিই থেকে বেরিয়ে যান। সন্দেহভাজন টাইগারদের হামলায় নিহত হন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। কট্টর এলটিটিই বিরোধী মাহিন্দা রাজাপাকশে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ২০০৬- এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত তুমুল যুদ্ধ চলে। 'চতুর্থ ইলম যুদ্ধ' শুরুর আশঙ্কা তৈরি হয়। অক্টোবরে জেনেভায় নতুন করে আলোচনার উদ্যোগ ব্যর্থ হয়। ২০০৭- পূর্বাঞ্চলে টাইগারদের শক্ত ঘাঁটি দখল করে নেয় সেনাবাহিনী। ২০০৮- জানুয়ারির প্রথম দিকেই যুদ্ধবিরতি অকার্যকর ঘোষণা করে সরকার এবং বড় ধরণের যুদ্ধাভিযান শুরু করে সেনাবাহিনী। জানুয়ারি ২, ২০০৯- টাইগারদের ঘোষিত রাজধানী কিলোনাচ্চি দখল করে নেয় সেনারা। এপ্রিল ১৭- সরকার ঘোষিত দুই দিনের অস্ত্রবিরতি শেষ হওয়ার পর যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানায় বিদ্রোহীরা। তবে সরকার এ আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে। এপ্রিল ২০- ক্রমশ কোণঠাসা হয়ে পড়া বিদ্রোহীদের আত্মসমর্পণের জন্য ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেয় সরকার। যুদ্ধাঞ্চল থেকে পালিয়ে আসে প্রায় দশ হাজার সাধারণ নাগরিক। এক সপ্তাহের মধ্যে এই সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় এক লাখ ১৫ হাজার। এপ্রিল ২৬- একতরফা যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে এলটিটিই। সরকার টাইগারদের এই ঘোষণাকে 'হাস্যকর' অভিহিত করে জানায় তাদের অবশ্যই আত্মসমর্পণ করতে হবে। মে ১৬- ২৫ বছর আগে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর প্রথমবারের মতো সমগ্র উপকূলসীমার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় সেনাবাহিনী। জর্ডান সফররত প্রেসিডেন্ট রাজাপাকশে বলেন, এলটিটিই পরাজিত হয়েছে। মে ১৭- বেসামরিক নাগরিকের বেশ ধরে নৌকা করে পালানোর সময় নিহত হয় ৭০ এর বেশি এলটিটিই যোদ্ধা। এছাড়া আরও অনেকে আত্মঘাতী হামলার মাধ্যমে প্রাণ বিসর্জন দেয়। যুদ্ধ এলাকার সকল বেসামরিক নাগরিককে মুক্ত করার ঘোষণা দেয় সেনাবাহিনী। এলটিটিই নেতা ভেলুপিল্লাই প্রভাকরণের ভাগ্যে কী ঘটেছে এই নিয়ে গুঞ্জন সর্বত্র।
পরাজয় স্বীকার করল তামিল টাইগাররা
কলোম্বো, মে ১৭ ডটকম/রয়টার্স-- শ্রীলংকার ২৫ বছরের রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধে রোববার পরাজয় স্বীকার করে নিয়েছে তামিল টাইগাররা। কয়েকদফা আত্মঘাতী হামলার মধ্য দিয়ে সেনাদের সঙ্গে শেষ লড়ায়েই পর তারা পরাজয় স্বীকার করেছে। 'লিবারেশন টাইগার্স অব তামিল ইলম'(এলটিটিই) এর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক শাখার প্রধান সেলভারাজা পাথমানাথন বলেছেন, "তিক্ত লড়াইয়ের অবসান হয়েছে।" তামিল টাইগারপন্থী 'তামিলনেটডটকম' ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে তিনি একথা বলেন। পাথমানাথন আরও বলেন, "আমাদের এখন একটি পথই আছে। আর তা হল, শত্র"রা যাতে আমাদের লোকজনকে মারার আর কোনও অজুহাত দেখাতে না পারে। আমরা অস্ত্রের ব্যবহার বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।" সেনাবাহিনী এ ব্যাপারে তাৎক্ষণিক কোনও মন্তব্য করেনি। যুদ্ধে ৩ হাজার লোক নিহত হয়েছে এবং ২৫ হাজারেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন পাথমানাথন। বছরের পর বছর ধরে তিনি ছিলেন এলটিটিই'র অস্ত্র চোরাচালানের হোতা। ইন্টারপোল পাথমানাথনকে খুঁজছে। ওদিকে, এলটিটিই প্রধান ভেলুপিল্লাই প্রভাকরণের ভাগ্যে কি ঘটেছে তা জানা যায়নি। তার মতো দেখতে একজনের লাশ পাওয়া গেছে এবং তা সনাক্ত করার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে সেনাবাহিনী। তামিল টাইগাররা পরাজয় স্বীকার করার আগেই যুদ্ধে জয় ঘোষণা করেন প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপাকসে। শ্রীলংকার সেনাবাহিনী বলেছে, যুদ্ধাঞ্চলে মানবঢাল হিসেবে আটকে রাখা সব বেসামরিক তামিলকে সরিয়ে নিয়েছে তারা। সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার উদয় নানায়েক্কারা বলেছেন, "ভেলিমুল্লাইভাইকাল থেকে সব বেসামরিক লোককে উদ্ধার করা হয়েছে। সেনারা এখনও এলটিটিই'র সঙ্গে লড়াই করছে। বৃহস্পতিবার থেকে প্রায় ৫০,০০০ লোককে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।" সেনাবাহিনী জানিয়েছে, উপকূল ঘিরে ফেলার পর মাত্র এক বর্গকিলোমিটারের মধ্যে আটকাপড়া টাইগাররা শেষ অস্ত্র হিসেবে আত্মঘাতী হামলা চালায়। আত্মসমর্পণের বদলে আত্মঘাতী স্কোয়াডের গেরিলাদের সেনাবাহিনীর দিকে ঠেলে দিয়ে একের পর এক আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটায় তারা। অবশেষে পরাজয় স্বীকার করলেও টাইগাররা সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, এর মধ্য দিয়ে শ্রীলংকায় অর্থনৈতিক দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যস্থলগুলোতে গেরিলা সংঘর্ষের নতুন অধ্যায় শুরু হবে। এটি পর্যটন খাতে টাইগারদের পরোক্ষ হামলার হুমকি। যুদ্ধ অবসানের পর এ হামলা বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছে সরকার। তারপরও তামিল টাইগারদের পরাজয়ের আনন্দে মেতে উঠেছে লোকজন। কলোম্বোর রাস্তায় নেমে আতশবাজি করে উল্লাস করেছে তারা। সরকার এদিন জনগণকে জাতীয় পতাকা উড়িয়ে আনন্দ উদযাপনের আহ্বান জানায়। টিভিতে দেখা গেছে, জর্ডান সফর করে রোববার প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসে শ্রীলংকায় ফিরেই দেশের মাটি চুম্বন করেছেন। মঙ্গলবার সেনাবাহিনীর জয় নিয়ে পার্লামেন্টে ভাষণ দেবেন রাজাপাকসে।
কলোম্বো, মে ১৭ ডটকম/রয়টার্স-- শ্রীলংকার ২৫ বছরের রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধে রোববার পরাজয় স্বীকার করে নিয়েছে তামিল টাইগাররা। কয়েকদফা আত্মঘাতী হামলার মধ্য দিয়ে সেনাদের সঙ্গে শেষ লড়ায়েই পর তারা পরাজয় স্বীকার করেছে। 'লিবারেশন টাইগার্স অব তামিল ইলম'(এলটিটিই) এর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক শাখার প্রধান সেলভারাজা পাথমানাথন বলেছেন, "তিক্ত লড়াইয়ের অবসান হয়েছে।" তামিল টাইগারপন্থী 'তামিলনেটডটকম' ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে তিনি একথা বলেন। পাথমানাথন আরও বলেন, "আমাদের এখন একটি পথই আছে। আর তা হল, শত্র"রা যাতে আমাদের লোকজনকে মারার আর কোনও অজুহাত দেখাতে না পারে। আমরা অস্ত্রের ব্যবহার বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।" সেনাবাহিনী এ ব্যাপারে তাৎক্ষণিক কোনও মন্তব্য করেনি। যুদ্ধে ৩ হাজার লোক নিহত হয়েছে এবং ২৫ হাজারেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন পাথমানাথন। বছরের পর বছর ধরে তিনি ছিলেন এলটিটিই'র অস্ত্র চোরাচালানের হোতা। ইন্টারপোল পাথমানাথনকে খুঁজছে। ওদিকে, এলটিটিই প্রধান ভেলুপিল্লাই প্রভাকরণের ভাগ্যে কি ঘটেছে তা জানা যায়নি। তার মতো দেখতে একজনের লাশ পাওয়া গেছে এবং তা সনাক্ত করার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে সেনাবাহিনী। তামিল টাইগাররা পরাজয় স্বীকার করার আগেই যুদ্ধে জয় ঘোষণা করেন প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপাকসে। শ্রীলংকার সেনাবাহিনী বলেছে, যুদ্ধাঞ্চলে মানবঢাল হিসেবে আটকে রাখা সব বেসামরিক তামিলকে সরিয়ে নিয়েছে তারা। সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার উদয় নানায়েক্কারা বলেছেন, "ভেলিমুল্লাইভাইকাল থেকে সব বেসামরিক লোককে উদ্ধার করা হয়েছে। সেনারা এখনও এলটিটিই'র সঙ্গে লড়াই করছে। বৃহস্পতিবার থেকে প্রায় ৫০,০০০ লোককে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।" সেনাবাহিনী জানিয়েছে, উপকূল ঘিরে ফেলার পর মাত্র এক বর্গকিলোমিটারের মধ্যে আটকাপড়া টাইগাররা শেষ অস্ত্র হিসেবে আত্মঘাতী হামলা চালায়। আত্মসমর্পণের বদলে আত্মঘাতী স্কোয়াডের গেরিলাদের সেনাবাহিনীর দিকে ঠেলে দিয়ে একের পর এক আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটায় তারা। অবশেষে পরাজয় স্বীকার করলেও টাইগাররা সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, এর মধ্য দিয়ে শ্রীলংকায় অর্থনৈতিক দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যস্থলগুলোতে গেরিলা সংঘর্ষের নতুন অধ্যায় শুরু হবে। এটি পর্যটন খাতে টাইগারদের পরোক্ষ হামলার হুমকি। যুদ্ধ অবসানের পর এ হামলা বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছে সরকার। তারপরও তামিল টাইগারদের পরাজয়ের আনন্দে মেতে উঠেছে লোকজন। কলোম্বোর রাস্তায় নেমে আতশবাজি করে উল্লাস করেছে তারা। সরকার এদিন জনগণকে জাতীয় পতাকা উড়িয়ে আনন্দ উদযাপনের আহ্বান জানায়। টিভিতে দেখা গেছে, জর্ডান সফর করে রোববার প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসে শ্রীলংকায় ফিরেই দেশের মাটি চুম্বন করেছেন। মঙ্গলবার সেনাবাহিনীর জয় নিয়ে পার্লামেন্টে ভাষণ দেবেন রাজাপাকসে।
তামিল টাইগার প্রধান প্রভাকরণ 'মৃত'
কলম্বো, মে ১৮ (বিবিসি) - লিবারেশন টাইগার্স অফ তামিল ইলম (এলটিইি) এর প্রতিষ্ঠাতা প্রধান ভেলুপিল্লাই প্রভাকরণকে সোমবার সকালে হত্যা করেছে শ্রীলংকার সেনাবাহিনীর বিশেষ কমান্ডো সেনারা। যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালানোর চেষ্টার সময় তাকে হত্যা করা হয়। দেশটির সেনাসূত্রগুলো এ দাবি করেছে। আত্মঘাতী হামলার কৌশলে এলটিটিইকে গড়ে তোলা ৫৪ বয়সী এই র্দুর্ধষ গেরিলা নেতা অঙ্গীকার করেছিলেন যে, তিনি কখনোই জীবিত অবস্থায় ধরা পড়বেন না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সেনাবাহিনীর একটি সূত্র রয়টার্সকে জানায়, "এটা নিশ্চিত যে ভোরের আগে আগে একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে পালিয়ে যাওয়ার সময় প্রভাকরণকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা প্রেসিডেন্টের আনুষ্ঠানিক ঘোষণার জন্য অপেক্ষা করছি।" অন্যান্য চারটি সূত্রও এ খবর নিশ্চিত করেছে। তবে সেনাবাহিনীর কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি পাওয়া যায়নি। শ্রীলংকার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সোমবার প্রথমবারের মতো প্রভাকরণের ছেলে এবং অন্যান্য শীর্ষ নেতাদের নিহত হওয়ার খবর ও ছবি প্রকাশ করার পরপরই এলটিটিই প্রধানের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। রোববার ২৫ বছরের এ যুদ্ধে পরাজয় স্বীকার করে নেয় এলটিটিই। অবশ্য এর একদিন আগেই সেনারা পুরো উপকূলীয় এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেওয়ার পর এলটিটিই-কে সামরিকভাবে পরাস্ত ঘোষণা করেন শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট মহিন্দা রাজাপাকসে। ২০০২ সালের অস্ত্রবিরতি ভেঙ্গে পড়ার পর লাগাতার অভিযান চালিয়ে তামিল টাইগারদের নিয়ন্ত্রণে থাকা উত্তরপূর্বাঞ্চলের প্রায় ১৫,০০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা পুনর্দখল করে নেয় সেনাবাহিনী। সোমবার সকালে সেনাবাহিনী জানায় এলটিটিইর চার শীর্ষ নেতা যুদ্ধে নিহত হয়েছেন এবং তাদের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এদের মধ্যে এলটিটিই প্রধানের ছেলের মৃতদেহও রয়েছে। দেশটির এক সেনা মুখপাত্র জানায় এখন ছোট্ট একটি জঙ্গল এলাকায় অবশিষ্ট টাইগার গেরিলাদের নির্মূল করে 'চূড়ান্ত অভিযান' পরিচালনা করছে এবং গেরিলা ঘাঁটিটি 'পরিস্কার' করছে সেনারা। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র কেহেলিয়া রামবুকওয়ালা বলেছেন, একটি মৃতদেহ পাওয়া গেছে যা প্রভাকরণের ছেলে চার্লস এন্টনির বলে ধারণা করা হচ্ছে। তিনি জানান উদ্ধার করা অপর তিনটি মৃতদেহের একটি এলটিটিই'র রাজনৈতিক শাখার প্রধান বলসিঙ্গম নাদেসানের, একটি তাদের শান্তি সচিবালয়ের প্রধান শিবরত�ম পুলিদেভানের এবং সবশেষটি তাদের সামরিক নেতা রামেশের। সেনাবাহিনী জানায়, উত্তর উপকূলের ৩০০ বর্গ মিটারের একটি বালুকাময় জঙ্গল এলাকায় বাঙ্কারের ভেতর থেকে লড়াইয়ের চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া এলটিটিই'র অবশিষ্ট সেনাদের নির্মূল করছে তারা। সেনাবাহিনীর দাবির বিষয়ে এলটিটিই'র কাছ থেকে কোনো মন্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি এবং যুদ্ধাঞ্চলে বাইরের পর্যবেক্ষকদের যাওয়া নিষিদ্ধ থাকায় তা নিরপেক্ষ কেনো সূত্র থেকে অন্য কোনোভাবে যাচাই করা যায়নি।
কলম্বো, মে ১৮ (বিবিসি) - লিবারেশন টাইগার্স অফ তামিল ইলম (এলটিইি) এর প্রতিষ্ঠাতা প্রধান ভেলুপিল্লাই প্রভাকরণকে সোমবার সকালে হত্যা করেছে শ্রীলংকার সেনাবাহিনীর বিশেষ কমান্ডো সেনারা। যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালানোর চেষ্টার সময় তাকে হত্যা করা হয়। দেশটির সেনাসূত্রগুলো এ দাবি করেছে। আত্মঘাতী হামলার কৌশলে এলটিটিইকে গড়ে তোলা ৫৪ বয়সী এই র্দুর্ধষ গেরিলা নেতা অঙ্গীকার করেছিলেন যে, তিনি কখনোই জীবিত অবস্থায় ধরা পড়বেন না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সেনাবাহিনীর একটি সূত্র রয়টার্সকে জানায়, "এটা নিশ্চিত যে ভোরের আগে আগে একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে পালিয়ে যাওয়ার সময় প্রভাকরণকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা প্রেসিডেন্টের আনুষ্ঠানিক ঘোষণার জন্য অপেক্ষা করছি।" অন্যান্য চারটি সূত্রও এ খবর নিশ্চিত করেছে। তবে সেনাবাহিনীর কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি পাওয়া যায়নি। শ্রীলংকার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সোমবার প্রথমবারের মতো প্রভাকরণের ছেলে এবং অন্যান্য শীর্ষ নেতাদের নিহত হওয়ার খবর ও ছবি প্রকাশ করার পরপরই এলটিটিই প্রধানের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। রোববার ২৫ বছরের এ যুদ্ধে পরাজয় স্বীকার করে নেয় এলটিটিই। অবশ্য এর একদিন আগেই সেনারা পুরো উপকূলীয় এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেওয়ার পর এলটিটিই-কে সামরিকভাবে পরাস্ত ঘোষণা করেন শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট মহিন্দা রাজাপাকসে। ২০০২ সালের অস্ত্রবিরতি ভেঙ্গে পড়ার পর লাগাতার অভিযান চালিয়ে তামিল টাইগারদের নিয়ন্ত্রণে থাকা উত্তরপূর্বাঞ্চলের প্রায় ১৫,০০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা পুনর্দখল করে নেয় সেনাবাহিনী। সোমবার সকালে সেনাবাহিনী জানায় এলটিটিইর চার শীর্ষ নেতা যুদ্ধে নিহত হয়েছেন এবং তাদের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এদের মধ্যে এলটিটিই প্রধানের ছেলের মৃতদেহও রয়েছে। দেশটির এক সেনা মুখপাত্র জানায় এখন ছোট্ট একটি জঙ্গল এলাকায় অবশিষ্ট টাইগার গেরিলাদের নির্মূল করে 'চূড়ান্ত অভিযান' পরিচালনা করছে এবং গেরিলা ঘাঁটিটি 'পরিস্কার' করছে সেনারা। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র কেহেলিয়া রামবুকওয়ালা বলেছেন, একটি মৃতদেহ পাওয়া গেছে যা প্রভাকরণের ছেলে চার্লস এন্টনির বলে ধারণা করা হচ্ছে। তিনি জানান উদ্ধার করা অপর তিনটি মৃতদেহের একটি এলটিটিই'র রাজনৈতিক শাখার প্রধান বলসিঙ্গম নাদেসানের, একটি তাদের শান্তি সচিবালয়ের প্রধান শিবরত�ম পুলিদেভানের এবং সবশেষটি তাদের সামরিক নেতা রামেশের। সেনাবাহিনী জানায়, উত্তর উপকূলের ৩০০ বর্গ মিটারের একটি বালুকাময় জঙ্গল এলাকায় বাঙ্কারের ভেতর থেকে লড়াইয়ের চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া এলটিটিই'র অবশিষ্ট সেনাদের নির্মূল করছে তারা। সেনাবাহিনীর দাবির বিষয়ে এলটিটিই'র কাছ থেকে কোনো মন্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি এবং যুদ্ধাঞ্চলে বাইরের পর্যবেক্ষকদের যাওয়া নিষিদ্ধ থাকায় তা নিরপেক্ষ কেনো সূত্র থেকে অন্য কোনোভাবে যাচাই করা যায়নি।
প্রভাকরণ: এক দুর্ধর্ষ যোদ্ধার সমাপ্তি
কলম্বো, মে ১৮ (বিডিনিউজ বিবিসি)--- অনুসারীদের কাছে ভেলুপিল্লাই প্রভাকরণ তামিল জনগোষ্ঠীর অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ের একজন বীর যোদ্ধা। বিরোধীদের কাছে তিনি এক ভয়ঙ্কর ক্ষমতাধর ব্যক্তি, মানুষের জীবনকে যিনি এক কানাকড়িও মূল্য দেন না। তার নেতৃত্বে তামিল টাইগাররা হয়ে উঠেছিল বিশ্বের সবচেয়ে সুশৃঙ্খল এবং দৃঢ় মনোবলসম্পন্ন গেরিলা বাহিনী। তবে গত কয়েক মাসে তারা শ্রীলংকার সেনাবাহিনীর কাছে একের পর এক ভূখণ্ড হারাতে থাকে। সেইসঙ্গে মিলিয়ে যেতে থাকে দেশের উত্তর ও পূর্ব অংশে তাদের স্বাধীন আবাসভূমি গড়ার স্বপ্ন। প্রভাকরণ ১৯৫৪ সালের ২৬ নভেম্বর জাফনা উপদ্বীপের উত্তরের উপকূলীয় শহর ভেলভেত্তিয়াথুরাই-তে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা-মা'র চার সন্তানের মধ্যে তিনি সবার ছোট। বলা হয়ে থাকে ছোটবেলায় তিনি লাজুকপ্রকৃতির এবং বইয়ের পোকা ছিলেন। তামিলদের প্রতি শ্রীলংকার সংখ্যাগুরু সিংহলি জনগোষ্ঠীর বৈষম্য দেখে দেখে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন এবং যোগ দেন প্রতিবাদ আন্দোলনে। দুর্লভ এক সাক্ষাৎকারে প্রভাকরণ জানিয়েছিলেন, ভারতের দ'ুজন নেতার জীবন তাকে প্রভাবিত করে। এরা হলেন সুভাষ চন্দ্র বসু ও ভগত সিং। দুজনই ব্রিটেন থেকে ভারতের স্বাধীনতার জন্য সশস্ত্র সংগ্রামের পথ বেছে নিয়েছিলেন। আলেক্সান্ডার দ্য গ্রেট ও নেপোলিয়ানের জীবনও তাকে মুগ্ধ করেছিল। সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, এই দুুই যোদ্ধার ওপর লেখা অনেক বই তিনি পড়েছেন। ধারণা করা হয় ১৯৭৩ অথবা ১৯৭৪ সালে প্রভাকরণ 'তামিল নিউ টাইগারস' প্রতিষ্ঠা করেন। উপনিবেশ-পরবর্তী শ্রীলংকায় তামিলদের প্রান্তিক অবস্থার প্রতিবাদকারী আরও কয়েকটি সংগঠনের মতোই এটিও শুরুতে চাপসৃষ্টিকারী সংগঠনের মতোই ছিল। পরে এলটিটিই নামে গড়ে ওঠা এই সংগঠনটির প্রতিষ্ঠার সঠিক তারিখ অবশ্য জানা যায়নি। ১৯৭৫ সালে প্রভাকরণের বিরুদ্ধে জাফনার মেয়রকে হত্যার অভিযোগ ওঠে। একটি হিন্দু মন্দিরে প্রবেশের মুহূর্তে খুব কাছ থেকে গুলি করে মেয়রকে হত্যা করা হয়। আগের বছর জাফনায় পুলিশের হামলায় ৭ ব্যক্তি নিহত হওয়ার প্রতিশোধ নিতেই মেয়রকে হত্যার ঘটনা ঘটে বলে মনে করা হয়। এক বছর পর প্রভাকরণের সংগঠনটির নাম হয় লিবারেশন টাইগারস অব তামিল ইলম (এলটিটিই)। তামিল টাইগার নামেই পরিচিত হয়ে এটি। টাইগাররা ১০ হাজারেরও বেশি সদস্যদের দুর্ধর্ষ এক বাহিনীতে পরিণত হয়। অনেক নারী ও শিশুকেও এর সদস্য করা হয়। প্রবাসী তামিলদের অর্থসহায়তায় আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রও জোগাড় করতে সক্ষম হয় টাইগাররা। কয়েকটি প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী টাইগারদের প্রতি সহানুভূতিশীল ভারতের তামিলরাও অস্ত্রশস্ত্র সংগ্রহে সাহায্য করেছিল। শ্রীলংকার সেনাবাহিনীর তুলানায় সংখ্যায় কম হওয়ায় প্রভাকরণ তার বাহিনীকে গেরিলাকায়দায় পরিচালনা করে বেশ কয়েকটি লক্ষ্যস্থলে হামলা চালায়। তিনি অনুসারীদের মধ্যে শহীদী-স্পৃহা জাগিয়ে আত্মঘাতী হামলাকারী দল গড়ে তোলেন। এরপর বিশ্বের কোনো দেশে প্রথমবারের মতো বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুতে নিয়মিত আত্মঘাতী হামলার ঘটনা শুরু হয়। ১৯৯১ সালে চেন্নাইয়ের কাছে আত্মঘাতী হামলা চালিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীকে হত্যার জন্য প্রভাকরণকে দায়ী করা হয়। বলা হয়, ১৯৮০ দশকের মাঝামাঝিতে শ্রীলংকায় ভারতীয় শান্তিরক্ষী মোতায়েনের প্রতিশোধ নিতে রাজীবকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রভাকরণ। ভারতের একটি আদালত তার ওপর মৃত্যুপরোয়ানা জারি করে এবং সন্ত্রাসবাদ, খুন ও সুসংগঠিত-অপরাধের অভিযোগে ইন্টারপোলের 'ওয়ান্টেড' তালিকায় তার নাম উঠে। অনেক দেশ এলটিটিই-কে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে কালো তালিকাভুক্ত করে। প্রভাকরণ মাত্র কয়েকবার সংবাদ সম্মেলনে হাজির হয়েছিলেন। ২০০২ সালে সাংবাদিকদের সামনে এরকম একটি উপস্থিতিতে তিনি রাজিব গান্ধীর হত্যা নিয়ে প্রশ্নের জবাব দিতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি শুধু বলেন, ওটি একটি 'মর্মান্তিক দুর্ঘটনা'। প্রভাকরণ বারাবারই তামিলদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের কথা তুলে ধরে বলেন, এই অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে তিনি জীবন দিতে প্রস্তুত। টাইগারদের সবচেয়ে ভয়াবহ হামলাটি সংগঠিত হয় ১৯৯৬ সালে কলম্বোয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকে। এক আত্মঘাতী হামলাকারী ট্রাকভর্তি বিস্ফোরক নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ফটক ভেঙে ভেতরে ঢুকে বিস্ফোরণ ঘটায়। নিহত হয় ৯০ জন। আহত হয় ১৪ শয়েরও বেশি। হতাহতদের বেশিরভাগই ছিল বেসামরিক মানুষ। কয়েকজন বিদেশিও নিহত হয়। এই হামলার ঘটনায় ২০০২ সালে শ্রীলংকার একটি আদালত প্রভাকরণের অনুপস্থিতিতে বিচার করে তাকে ২০০ বছরের কারাদণ্ড দেয়। ২০০৬ সালে সর্বশেষ শান্তি আলোচনার উদ্যোগ ব্যর্থ হলে শ্রীলংকার সেনাবাহিনী টাইগারদের অবস্থানের ওপর সাঁড়াশি আক্রমণ শুরু করে এবং একটি পর একটি টাইগারঘাঁটির পতন ঘটতে থাকে। এ বছরের গোড়ার দিকে টাইগারদের প্রশাসনিক রাজধানী কিলিনোচ্ছি হাতছাড়া হলে শোচনীয় অবস্থায় পড়েন প্রভাকরণ। গুজব ছড়িয়ে পড়ে তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। প্রভাকরণের জীবনের প্রায় পুরোটা কেটেছে গোপনে, জঙ্গলের আস্তানায়। ১৯৯০ দশকের শেষের দিকে, তার শক্তিমত্তার সবচেয়ে ভালো সময়ে শ্রীলংকার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ এলটিটিই'র দখলে চলে গিয়েছিল। তবে শেষপর্যন্ত তিনি তার ক্ষমতাকে স্বপ্নপূরণের কাছে নিয়ে যেতে পারেননি। স্বশাসিত তামিল আবাসভূমির স্বপ্ন তার অধরাই থেকে গেল। একটিই ছিল তার লক্ষ্য। একচুলও কেউ নড়াতে পারেনি তাকে সেই লক্ষ্য থেকে। যদি কখনো তামিল রাষ্ট্রের দাবি থেকে সরে যান তবে তাকে যেন গুলি করে হত্যা করা হয়. একবার এই আদেশ দিয়েছিলেন তিনি তার সহযোদ্ধাদের। শ্রীলংকার সেনারা সোমবার ভেলুপিল্লাই প্রভাকরণকে হত্যা করে ২৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলতে থাকা গৃহযুদ্ধে জয়ী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
কলম্বো, মে ১৮ (বিডিনিউজ বিবিসি)--- অনুসারীদের কাছে ভেলুপিল্লাই প্রভাকরণ তামিল জনগোষ্ঠীর অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ের একজন বীর যোদ্ধা। বিরোধীদের কাছে তিনি এক ভয়ঙ্কর ক্ষমতাধর ব্যক্তি, মানুষের জীবনকে যিনি এক কানাকড়িও মূল্য দেন না। তার নেতৃত্বে তামিল টাইগাররা হয়ে উঠেছিল বিশ্বের সবচেয়ে সুশৃঙ্খল এবং দৃঢ় মনোবলসম্পন্ন গেরিলা বাহিনী। তবে গত কয়েক মাসে তারা শ্রীলংকার সেনাবাহিনীর কাছে একের পর এক ভূখণ্ড হারাতে থাকে। সেইসঙ্গে মিলিয়ে যেতে থাকে দেশের উত্তর ও পূর্ব অংশে তাদের স্বাধীন আবাসভূমি গড়ার স্বপ্ন। প্রভাকরণ ১৯৫৪ সালের ২৬ নভেম্বর জাফনা উপদ্বীপের উত্তরের উপকূলীয় শহর ভেলভেত্তিয়াথুরাই-তে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা-মা'র চার সন্তানের মধ্যে তিনি সবার ছোট। বলা হয়ে থাকে ছোটবেলায় তিনি লাজুকপ্রকৃতির এবং বইয়ের পোকা ছিলেন। তামিলদের প্রতি শ্রীলংকার সংখ্যাগুরু সিংহলি জনগোষ্ঠীর বৈষম্য দেখে দেখে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন এবং যোগ দেন প্রতিবাদ আন্দোলনে। দুর্লভ এক সাক্ষাৎকারে প্রভাকরণ জানিয়েছিলেন, ভারতের দ'ুজন নেতার জীবন তাকে প্রভাবিত করে। এরা হলেন সুভাষ চন্দ্র বসু ও ভগত সিং। দুজনই ব্রিটেন থেকে ভারতের স্বাধীনতার জন্য সশস্ত্র সংগ্রামের পথ বেছে নিয়েছিলেন। আলেক্সান্ডার দ্য গ্রেট ও নেপোলিয়ানের জীবনও তাকে মুগ্ধ করেছিল। সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, এই দুুই যোদ্ধার ওপর লেখা অনেক বই তিনি পড়েছেন। ধারণা করা হয় ১৯৭৩ অথবা ১৯৭৪ সালে প্রভাকরণ 'তামিল নিউ টাইগারস' প্রতিষ্ঠা করেন। উপনিবেশ-পরবর্তী শ্রীলংকায় তামিলদের প্রান্তিক অবস্থার প্রতিবাদকারী আরও কয়েকটি সংগঠনের মতোই এটিও শুরুতে চাপসৃষ্টিকারী সংগঠনের মতোই ছিল। পরে এলটিটিই নামে গড়ে ওঠা এই সংগঠনটির প্রতিষ্ঠার সঠিক তারিখ অবশ্য জানা যায়নি। ১৯৭৫ সালে প্রভাকরণের বিরুদ্ধে জাফনার মেয়রকে হত্যার অভিযোগ ওঠে। একটি হিন্দু মন্দিরে প্রবেশের মুহূর্তে খুব কাছ থেকে গুলি করে মেয়রকে হত্যা করা হয়। আগের বছর জাফনায় পুলিশের হামলায় ৭ ব্যক্তি নিহত হওয়ার প্রতিশোধ নিতেই মেয়রকে হত্যার ঘটনা ঘটে বলে মনে করা হয়। এক বছর পর প্রভাকরণের সংগঠনটির নাম হয় লিবারেশন টাইগারস অব তামিল ইলম (এলটিটিই)। তামিল টাইগার নামেই পরিচিত হয়ে এটি। টাইগাররা ১০ হাজারেরও বেশি সদস্যদের দুর্ধর্ষ এক বাহিনীতে পরিণত হয়। অনেক নারী ও শিশুকেও এর সদস্য করা হয়। প্রবাসী তামিলদের অর্থসহায়তায় আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রও জোগাড় করতে সক্ষম হয় টাইগাররা। কয়েকটি প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী টাইগারদের প্রতি সহানুভূতিশীল ভারতের তামিলরাও অস্ত্রশস্ত্র সংগ্রহে সাহায্য করেছিল। শ্রীলংকার সেনাবাহিনীর তুলানায় সংখ্যায় কম হওয়ায় প্রভাকরণ তার বাহিনীকে গেরিলাকায়দায় পরিচালনা করে বেশ কয়েকটি লক্ষ্যস্থলে হামলা চালায়। তিনি অনুসারীদের মধ্যে শহীদী-স্পৃহা জাগিয়ে আত্মঘাতী হামলাকারী দল গড়ে তোলেন। এরপর বিশ্বের কোনো দেশে প্রথমবারের মতো বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুতে নিয়মিত আত্মঘাতী হামলার ঘটনা শুরু হয়। ১৯৯১ সালে চেন্নাইয়ের কাছে আত্মঘাতী হামলা চালিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীকে হত্যার জন্য প্রভাকরণকে দায়ী করা হয়। বলা হয়, ১৯৮০ দশকের মাঝামাঝিতে শ্রীলংকায় ভারতীয় শান্তিরক্ষী মোতায়েনের প্রতিশোধ নিতে রাজীবকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রভাকরণ। ভারতের একটি আদালত তার ওপর মৃত্যুপরোয়ানা জারি করে এবং সন্ত্রাসবাদ, খুন ও সুসংগঠিত-অপরাধের অভিযোগে ইন্টারপোলের 'ওয়ান্টেড' তালিকায় তার নাম উঠে। অনেক দেশ এলটিটিই-কে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে কালো তালিকাভুক্ত করে। প্রভাকরণ মাত্র কয়েকবার সংবাদ সম্মেলনে হাজির হয়েছিলেন। ২০০২ সালে সাংবাদিকদের সামনে এরকম একটি উপস্থিতিতে তিনি রাজিব গান্ধীর হত্যা নিয়ে প্রশ্নের জবাব দিতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি শুধু বলেন, ওটি একটি 'মর্মান্তিক দুর্ঘটনা'। প্রভাকরণ বারাবারই তামিলদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের কথা তুলে ধরে বলেন, এই অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে তিনি জীবন দিতে প্রস্তুত। টাইগারদের সবচেয়ে ভয়াবহ হামলাটি সংগঠিত হয় ১৯৯৬ সালে কলম্বোয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকে। এক আত্মঘাতী হামলাকারী ট্রাকভর্তি বিস্ফোরক নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ফটক ভেঙে ভেতরে ঢুকে বিস্ফোরণ ঘটায়। নিহত হয় ৯০ জন। আহত হয় ১৪ শয়েরও বেশি। হতাহতদের বেশিরভাগই ছিল বেসামরিক মানুষ। কয়েকজন বিদেশিও নিহত হয়। এই হামলার ঘটনায় ২০০২ সালে শ্রীলংকার একটি আদালত প্রভাকরণের অনুপস্থিতিতে বিচার করে তাকে ২০০ বছরের কারাদণ্ড দেয়। ২০০৬ সালে সর্বশেষ শান্তি আলোচনার উদ্যোগ ব্যর্থ হলে শ্রীলংকার সেনাবাহিনী টাইগারদের অবস্থানের ওপর সাঁড়াশি আক্রমণ শুরু করে এবং একটি পর একটি টাইগারঘাঁটির পতন ঘটতে থাকে। এ বছরের গোড়ার দিকে টাইগারদের প্রশাসনিক রাজধানী কিলিনোচ্ছি হাতছাড়া হলে শোচনীয় অবস্থায় পড়েন প্রভাকরণ। গুজব ছড়িয়ে পড়ে তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। প্রভাকরণের জীবনের প্রায় পুরোটা কেটেছে গোপনে, জঙ্গলের আস্তানায়। ১৯৯০ দশকের শেষের দিকে, তার শক্তিমত্তার সবচেয়ে ভালো সময়ে শ্রীলংকার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ এলটিটিই'র দখলে চলে গিয়েছিল। তবে শেষপর্যন্ত তিনি তার ক্ষমতাকে স্বপ্নপূরণের কাছে নিয়ে যেতে পারেননি। স্বশাসিত তামিল আবাসভূমির স্বপ্ন তার অধরাই থেকে গেল। একটিই ছিল তার লক্ষ্য। একচুলও কেউ নড়াতে পারেনি তাকে সেই লক্ষ্য থেকে। যদি কখনো তামিল রাষ্ট্রের দাবি থেকে সরে যান তবে তাকে যেন গুলি করে হত্যা করা হয়. একবার এই আদেশ দিয়েছিলেন তিনি তার সহযোদ্ধাদের। শ্রীলংকার সেনারা সোমবার ভেলুপিল্লাই প্রভাকরণকে হত্যা করে ২৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলতে থাকা গৃহযুদ্ধে জয়ী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
ভেলুপিল্লাই প্রভাকরণ: নায়ক না ভিলেন
ভেলুপিল্লাই প্রভাকরণ, ২০০২ সালের মে মাসে তোলা ছবি
প্রভাকরণকে তাঁর সমর্থকরা 'সুর্যদেবতা' বলে উল্লেখ করলেও, বিরোধীরা কিন্তু নির্দয়' বলেই অভিহিত করতেন৷ একদিকে বীর যোদ্ধা হিসেবে নাম, অন্যদিকে ভয়ঙ্কর ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে অপনাম - ইতিহাসের পাতায় ঠিক এভাবেই থেকে গেলেন তিনি৷
আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা বা ইন্টারপোল প্রভাকরনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করার সময় বলেছিল, প্রভাকরণ এমন এক ব্যক্তি যিনি যে কোন মুহূর্তে ছদ্মবেশ ধারণ করতে সক্ষম এবং আধুনিক সমরাস্ত্র ও বিস্ফোরক ব্যবহারে অত্যন্ত পারদর্শী৷ এ কথা বলার মূল কারণ বোধ হয় এটাই যে, প্রভাকরণকে খুব কমই প্রকাশ্যে দেখা গেছে৷ অবশ্য নিহত এলটিটিই বিদ্রোহীদের স্মরণে প্রতি বছর নভেম্বর মাসে একটি বারের জন্য জন সমক্ষে আসতেন প্রভাকরণ৷ দিতেন ভাষণ৷ যেমন গত বছর নভেম্বরে তিনি তাঁর সর্বশেষ ভাষণে বলেছিলেন, 'দখলদার সিংহলি বাহিনীকে আমাদের ভূমি থেকে উচ্ছেদ না করা পর্যন্ত সংগ্রাম চলবে'৷ আর মৃত্যুর আগ-মুহূর্ত পর্যন্ত সেই ব্যর্থ সংগ্রামই করে গেলেন প্রভাকরণ৷ অজানা অস্তানায় এলটিটিই গেরিলাদের সঙ্গে ভেলুপিল্লাই প্রভাকরণ৷ ২০০৭ সালের মার্চে তোলা ছবি
জন্ম ও ছোটবেলা
১৯৫৪ সালের ২৬-শে নভেম্বর জাফনা উপদ্বীপের উত্তরে অবস্থিত উপকূলীয় শহর ভেলভেত্তিয়াথুরাই-তে জন্মগ্রহণ করেন প্রভাকরণ৷ মা-বাবার চার সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন সবচেয়ে ছোট৷ শোনা যায়, প্রভাকরণ ছোটবেলায় নাকি অত্যন্ত লাজুক প্রকৃতির ছিলেন৷ কিন্তু, বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বই-এর পোকা প্রভাকরণ তামিলদের প্রতি শ্রীলংকার সংখ্যাগুরু সিংহলি জনগোষ্ঠীর বৈষম্য দেখে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন এবং প্রতিবাদ আন্দোলনে যোগ দেন৷ প্রভাকরণের কথায়, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের দুই গুরুত্বপূর্ণ প্রবাদ পুরুষ সুভাষ চন্দ্র বসু এবং ভগত সিং তাঁকে প্রভাবত করেছিল৷ এছাড়া, আলেক্সান্ডার দ্য গ্রেট ও নেপোলিয়ানের জীবনও মুগ্ধ করেছিল প্রভাকরণকে৷
লিবারেশন টাইগার্স অফ তামিল ইলাম
১৯৭৩ অথবা ১৯৭৪ সালে প্রভাকরণ 'তামিল নিউ টাইগারস' প্রতিষ্ঠা করেন৷ প্রথম দিকে এই সংগঠনটি তামিলদের প্রান্তিক অবস্থার প্রতিবাদকারী একটি সংগঠনের মতো কাজ করছিল৷ এক বছর পর যা লিবারেশন টাইগার্স অফ তামিলএলাম বা এলটিটিই নামে গড়ে ওঠে৷ ১৯৭৫ সালে প্রভাকরণের বিরুদ্ধে জাফনার মেয়রকে হত্যার অভিযোগ ওঠে৷ আর তারপরেই টাইগাররা ১০ হাজারেরও বেশি সদস্যদের দুর্ধর্ষ এক বাহিনীতে পরিণত হয়৷ পুরুষদের পাশাপাশি বহু নারী ও শিশুও যোগ দেয় প্রভাকরণের সঙ্গে৷ ফলত খুব শীঘ্রই অর্থ সংগ্রহের জন্য একটি আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে সক্ষম হন প্রভাকরণ৷ গড়ে তোলেন লিবারেশন টাইগার্স অফ তামিল এলাম-এর নিজস্ব স্থল, নৌ ও বিমান বাহিনী৷ অর্থাৎ, প্রভাকরণের নেতৃত্বে তামিল টাইগাররা হয়ে ওঠে বিশ্বের সবচেয়ে সুশৃঙ্খল এবং দৃঢ় মনোবলসম্পন্ন গেরিলা বাহিনী৷
রাজীব গান্ধী হত্যা
১৯৯১ সালে চেন্নাইয়ের কাছে আত্মঘাতী হামলা ১৯৯১ সালে চেন্নাইয়ের কাছে আত্মঘাতী হামলা চালিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীকে হত্যার জন্য প্রভাকরণকে দায়ী করা হয়৷ চালিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীকে হত্যার জন্য প্রভাকরণকে দায়ী করা হয়৷ বলা হয়, ১৯৮০ দশকের মাঝামাঝিতে শ্রীলংকায় ভারতীয় শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েনের প্রতিশোধ নিতে রাজীবকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রভাকরণ৷ এরপর ভারতের একটি আদালত তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে এবং সন্ত্রাসবাদ, খুন ও সংগঠিত-অপরাধের অভিযোগে ইন্টারপোলের 'ওয়ান্টেড' তালিকায় নাম উঠে প্রভাকরণের৷ কিন্তু, এতেও ক্ষান্ত হন না প্রভাকরণ৷ ১৯৯৩ সালে শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট রানাসিংহে প্রেমাদাসা, ১৯৯৬ সালে কলম্বোয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আত্মঘাতী বোমা হামলা, ২০০৫ সালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী লক্ষণ কাদির গামারসহ অসংখ্য মেয়র, পুলিশ ও সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করে এলটিটিই বাহিনী৷ আর এভাবে দেশের উত্তরাঞ্চলে তামিল বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রিত একটি স্বতন্ত্র অঞ্চল গড়ে তুলতেও সক্ষম হন প্রভাকরণ৷
সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিক বিশ্ব
শ্রীলংকা সরকার যুদ্ধের পরিবর্তে কূটনৈতিক উপায়ে তামিল বিদ্রোহ সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেয় এরপর৷ একবিংশ শতাব্দির গোড়ার দিকে দেশটিতে কিছুটা শান্তিও ফিরে আসে৷ ২০০৭ সালে নরওয়ের মধ্যস্থতায় শান্তি আলোচনা ভেঙ্গে গেলে, চূড়ান্তভাবে এলটিটিই বিদ্রোহ দমনের সিদ্ধান্ত নেয় কলম্বো সরকার৷ তারপর থেকে শ্রীলংকা সরকার উত্তর ও পূর্বাঞ্চলে সাঁড়াশি আক্রমণ শুরু করলে, একের পর এক এলাকা তামিল বিদ্রোহীদের হাতছাড়া হতে থাকে৷ ২০০৯ সালের গোড়ার দিকে টাইগারদের প্রশাসনিক রাজধানী কিলিনোচ্ছি হাতছাড়া হলে, শোচনীয় অবস্থায় পড়েন প্রভাকরণ৷ তবে গত কয়েক মাসে শ্রীলংকার সেনাবাহিনীর কাছে একের পর এক ভূখণ্ড হারাতে থাকে তামিল টাইগাররা৷ গুজব ছড়ায় যে প্রভাকরণ দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন৷
যবনিকা পতন
শ্রীলংকার উত্তর ও পূর্বাঞ্চলে তামিলদের জন্য একটি পৃথক আবাসভূমি গঠনের লক্ষ্যে তিন দশক ধরে লড়াই করছিলেন প্রভাকরণ৷ এর জন্য তাঁর জীবনের প্রায় পুরোটাই কেটেছে গোপন আস্তানায়, জঙ্গলে-জঙ্গলে৷ কিন্তু, শেষ পর্যন্ত তিনি তাঁর ক্ষমতাকে স্বপ্নপূরণের কাছে নিয়ে যেতে পারেননি৷ স্বশাসিত তামিল আবাসভূমির স্বপ্ন তাঁর অধরাই থেকে যায়৷ সোমবার ভেলুপিল্লাই প্রভাকরণকে হত্যা করে ২৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলতে থাকা গৃহযুদ্ধে জয়ী হওয়ার ঘোষণা দেয় শ্রীলংকার সেনাবাহিনী৷ প্রেসিডেন্ট মহিন্দা রাজাপাকসে পার্লামেন্টে দেওয়া একটি ভাষণে এলটিটিই-র বিরুদ্ধে যুদ্ধে বিজয়ের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করেন মঙ্গলবার৷ দেশটির সেনাপ্রধান জেনারেল সারাথ ফোনসেকা জানান যে, মঙ্গলবার সকালে প্রভাকরণের মৃতদেহ উদ্ধার করেছে সেনাবাহিনী৷ যদিও, তামিল টাইগারপন্থি একটি ওয়েবসাইট একইদিনে এলটিটিই প্রধান ভেলুপিল্লাই প্রভাকরণের মৃত্যুর খবর নাকচ করে দিয়ে দাবি করে, যে তিনি এখনও জীবিত ও নিরাপদ৷
প্রভাকরণের অন্যতম জীবনী লেখক এম.আর নারায়ন স্বামীর কথায়, সংগ্রাম করে মৃত্যুবরণকারী প্রভাকরণ তাঁর সমর্থকদের কাছে চীরদিন একজন কিংবদন্তি হয়েই থাকবেন৷
ভেলুপিল্লাই প্রভাকরণ, ২০০২ সালের মে মাসে তোলা ছবি
প্রভাকরণকে তাঁর সমর্থকরা 'সুর্যদেবতা' বলে উল্লেখ করলেও, বিরোধীরা কিন্তু নির্দয়' বলেই অভিহিত করতেন৷ একদিকে বীর যোদ্ধা হিসেবে নাম, অন্যদিকে ভয়ঙ্কর ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে অপনাম - ইতিহাসের পাতায় ঠিক এভাবেই থেকে গেলেন তিনি৷
আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা বা ইন্টারপোল প্রভাকরনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করার সময় বলেছিল, প্রভাকরণ এমন এক ব্যক্তি যিনি যে কোন মুহূর্তে ছদ্মবেশ ধারণ করতে সক্ষম এবং আধুনিক সমরাস্ত্র ও বিস্ফোরক ব্যবহারে অত্যন্ত পারদর্শী৷ এ কথা বলার মূল কারণ বোধ হয় এটাই যে, প্রভাকরণকে খুব কমই প্রকাশ্যে দেখা গেছে৷ অবশ্য নিহত এলটিটিই বিদ্রোহীদের স্মরণে প্রতি বছর নভেম্বর মাসে একটি বারের জন্য জন সমক্ষে আসতেন প্রভাকরণ৷ দিতেন ভাষণ৷ যেমন গত বছর নভেম্বরে তিনি তাঁর সর্বশেষ ভাষণে বলেছিলেন, 'দখলদার সিংহলি বাহিনীকে আমাদের ভূমি থেকে উচ্ছেদ না করা পর্যন্ত সংগ্রাম চলবে'৷ আর মৃত্যুর আগ-মুহূর্ত পর্যন্ত সেই ব্যর্থ সংগ্রামই করে গেলেন প্রভাকরণ৷ অজানা অস্তানায় এলটিটিই গেরিলাদের সঙ্গে ভেলুপিল্লাই প্রভাকরণ৷ ২০০৭ সালের মার্চে তোলা ছবি
জন্ম ও ছোটবেলা
১৯৫৪ সালের ২৬-শে নভেম্বর জাফনা উপদ্বীপের উত্তরে অবস্থিত উপকূলীয় শহর ভেলভেত্তিয়াথুরাই-তে জন্মগ্রহণ করেন প্রভাকরণ৷ মা-বাবার চার সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন সবচেয়ে ছোট৷ শোনা যায়, প্রভাকরণ ছোটবেলায় নাকি অত্যন্ত লাজুক প্রকৃতির ছিলেন৷ কিন্তু, বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বই-এর পোকা প্রভাকরণ তামিলদের প্রতি শ্রীলংকার সংখ্যাগুরু সিংহলি জনগোষ্ঠীর বৈষম্য দেখে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন এবং প্রতিবাদ আন্দোলনে যোগ দেন৷ প্রভাকরণের কথায়, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের দুই গুরুত্বপূর্ণ প্রবাদ পুরুষ সুভাষ চন্দ্র বসু এবং ভগত সিং তাঁকে প্রভাবত করেছিল৷ এছাড়া, আলেক্সান্ডার দ্য গ্রেট ও নেপোলিয়ানের জীবনও মুগ্ধ করেছিল প্রভাকরণকে৷
লিবারেশন টাইগার্স অফ তামিল ইলাম
১৯৭৩ অথবা ১৯৭৪ সালে প্রভাকরণ 'তামিল নিউ টাইগারস' প্রতিষ্ঠা করেন৷ প্রথম দিকে এই সংগঠনটি তামিলদের প্রান্তিক অবস্থার প্রতিবাদকারী একটি সংগঠনের মতো কাজ করছিল৷ এক বছর পর যা লিবারেশন টাইগার্স অফ তামিলএলাম বা এলটিটিই নামে গড়ে ওঠে৷ ১৯৭৫ সালে প্রভাকরণের বিরুদ্ধে জাফনার মেয়রকে হত্যার অভিযোগ ওঠে৷ আর তারপরেই টাইগাররা ১০ হাজারেরও বেশি সদস্যদের দুর্ধর্ষ এক বাহিনীতে পরিণত হয়৷ পুরুষদের পাশাপাশি বহু নারী ও শিশুও যোগ দেয় প্রভাকরণের সঙ্গে৷ ফলত খুব শীঘ্রই অর্থ সংগ্রহের জন্য একটি আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে সক্ষম হন প্রভাকরণ৷ গড়ে তোলেন লিবারেশন টাইগার্স অফ তামিল এলাম-এর নিজস্ব স্থল, নৌ ও বিমান বাহিনী৷ অর্থাৎ, প্রভাকরণের নেতৃত্বে তামিল টাইগাররা হয়ে ওঠে বিশ্বের সবচেয়ে সুশৃঙ্খল এবং দৃঢ় মনোবলসম্পন্ন গেরিলা বাহিনী৷
রাজীব গান্ধী হত্যা
১৯৯১ সালে চেন্নাইয়ের কাছে আত্মঘাতী হামলা ১৯৯১ সালে চেন্নাইয়ের কাছে আত্মঘাতী হামলা চালিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীকে হত্যার জন্য প্রভাকরণকে দায়ী করা হয়৷ চালিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীকে হত্যার জন্য প্রভাকরণকে দায়ী করা হয়৷ বলা হয়, ১৯৮০ দশকের মাঝামাঝিতে শ্রীলংকায় ভারতীয় শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েনের প্রতিশোধ নিতে রাজীবকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রভাকরণ৷ এরপর ভারতের একটি আদালত তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে এবং সন্ত্রাসবাদ, খুন ও সংগঠিত-অপরাধের অভিযোগে ইন্টারপোলের 'ওয়ান্টেড' তালিকায় নাম উঠে প্রভাকরণের৷ কিন্তু, এতেও ক্ষান্ত হন না প্রভাকরণ৷ ১৯৯৩ সালে শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট রানাসিংহে প্রেমাদাসা, ১৯৯৬ সালে কলম্বোয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আত্মঘাতী বোমা হামলা, ২০০৫ সালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী লক্ষণ কাদির গামারসহ অসংখ্য মেয়র, পুলিশ ও সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করে এলটিটিই বাহিনী৷ আর এভাবে দেশের উত্তরাঞ্চলে তামিল বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রিত একটি স্বতন্ত্র অঞ্চল গড়ে তুলতেও সক্ষম হন প্রভাকরণ৷
সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিক বিশ্ব
শ্রীলংকা সরকার যুদ্ধের পরিবর্তে কূটনৈতিক উপায়ে তামিল বিদ্রোহ সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেয় এরপর৷ একবিংশ শতাব্দির গোড়ার দিকে দেশটিতে কিছুটা শান্তিও ফিরে আসে৷ ২০০৭ সালে নরওয়ের মধ্যস্থতায় শান্তি আলোচনা ভেঙ্গে গেলে, চূড়ান্তভাবে এলটিটিই বিদ্রোহ দমনের সিদ্ধান্ত নেয় কলম্বো সরকার৷ তারপর থেকে শ্রীলংকা সরকার উত্তর ও পূর্বাঞ্চলে সাঁড়াশি আক্রমণ শুরু করলে, একের পর এক এলাকা তামিল বিদ্রোহীদের হাতছাড়া হতে থাকে৷ ২০০৯ সালের গোড়ার দিকে টাইগারদের প্রশাসনিক রাজধানী কিলিনোচ্ছি হাতছাড়া হলে, শোচনীয় অবস্থায় পড়েন প্রভাকরণ৷ তবে গত কয়েক মাসে শ্রীলংকার সেনাবাহিনীর কাছে একের পর এক ভূখণ্ড হারাতে থাকে তামিল টাইগাররা৷ গুজব ছড়ায় যে প্রভাকরণ দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন৷
যবনিকা পতন
শ্রীলংকার উত্তর ও পূর্বাঞ্চলে তামিলদের জন্য একটি পৃথক আবাসভূমি গঠনের লক্ষ্যে তিন দশক ধরে লড়াই করছিলেন প্রভাকরণ৷ এর জন্য তাঁর জীবনের প্রায় পুরোটাই কেটেছে গোপন আস্তানায়, জঙ্গলে-জঙ্গলে৷ কিন্তু, শেষ পর্যন্ত তিনি তাঁর ক্ষমতাকে স্বপ্নপূরণের কাছে নিয়ে যেতে পারেননি৷ স্বশাসিত তামিল আবাসভূমির স্বপ্ন তাঁর অধরাই থেকে যায়৷ সোমবার ভেলুপিল্লাই প্রভাকরণকে হত্যা করে ২৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলতে থাকা গৃহযুদ্ধে জয়ী হওয়ার ঘোষণা দেয় শ্রীলংকার সেনাবাহিনী৷ প্রেসিডেন্ট মহিন্দা রাজাপাকসে পার্লামেন্টে দেওয়া একটি ভাষণে এলটিটিই-র বিরুদ্ধে যুদ্ধে বিজয়ের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করেন মঙ্গলবার৷ দেশটির সেনাপ্রধান জেনারেল সারাথ ফোনসেকা জানান যে, মঙ্গলবার সকালে প্রভাকরণের মৃতদেহ উদ্ধার করেছে সেনাবাহিনী৷ যদিও, তামিল টাইগারপন্থি একটি ওয়েবসাইট একইদিনে এলটিটিই প্রধান ভেলুপিল্লাই প্রভাকরণের মৃত্যুর খবর নাকচ করে দিয়ে দাবি করে, যে তিনি এখনও জীবিত ও নিরাপদ৷
প্রভাকরণের অন্যতম জীবনী লেখক এম.আর নারায়ন স্বামীর কথায়, সংগ্রাম করে মৃত্যুবরণকারী প্রভাকরণ তাঁর সমর্থকদের কাছে চীরদিন একজন কিংবদন্তি হয়েই থাকবেন৷