সৌদি আরবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ডঃ এ কে এ মোমেন
মধ্যপ্রাচ্যের বিনিয়োগকারিদেরকে বাংলাদেশ মুখী করা এবং সৌদি আরবে কর্মরত বাংলাদেশীদের স্বার্থ সংরক্ষণে সচেষ্ট থাকবোঃ সৌদি আরবে নয়া রাষ্ট্রদূত ডঃ মোমেন
এনা, নিউইয়র্ক থেকে সৌদি আরবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ডঃ এ কে এ মোমেন।সামরিক জানতার ফরমানে চাকরি হারিয়ে দেশত্যাগের ২৭ বছর পর দিন বদলের সনদপ্রাপ্ত সরকারের ডাকে প্রত্যাবর্তন করলেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ডঃ এ কে এ মোমেন। ২১ মে ডঃ মোমেন ঢাকার উদ্দেশ্যে নিউইয়র্ক ত্যাগ করেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগদান করবেন তিনি। এরপর তিনি দায়িত্ব নেবেন সৌদি আরবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে। ডঃ মোমেন বস্টনে ফ্রেমিংহ্যাম স্টেট কলেজে অর্থনীতি ও ব্যবসা প্রশাসন বিভাগের চেয়ারম্যান হিসেবে শিক্ষকতা করছিলেন। লোভনীয় চাকরি থেকে দীর্ঘকালিন ছুটিতে যাচ্ছেন কর্মজীবী স্ত্রী সেলিনা মোমেনকেও সাথে নিয়ে। এজন্যে তাদের উভয়কেই স্টেট ডিপার্টমেন্টের অনুমতি নিতে হয়।বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়ার প্রাক্কালে নিউইয়র্কে বার্তা সংস্থা এনাকে ২২ মে ডঃ মোমেন বলেন, বিদেশে থাকলেও সবসময় দেশের জন্যে মায়া হয়েছে। বাংলাদেশের সার্বিক কল্যাণে সবসময় কাজ করার চেষ্টা করেছি। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহবানকে সাদরে গ্রহণ করেছি এবং বিশেষ একটি চ্যালেঞ্জ নিয়েই সৌদি আরবে দায়িত্ব নেব। আর সে চ্যালেঞ্জটি হচ্ছে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার আগ্রহ অনুযায়ী মধ্যপ্রাচ্যের বিনিয়োগকারিদেরকে বাংলাদেশ মুখী করা এবং সৌদি আরবে কর্মরত বিরাটসংখ্যক বাংলাদেশীর স্বার্থ সংরক্ষণে সচেষ্ট থাকা। ডঃ মোমেন বলেন, সৌদি আরবে বর্তমানে যতজন বিদেশী কাজ করছেন, তার মধ্যে একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশ শীর্ষে রয়েছে। এ সংখ্যা ২৪ লাখের বেশী। প্রতি বছর সারাবিশ্ব থেকে যত বিলিয়ন ডলার প্রবাসীরা বাংলাদেশে পাঠাচ্ছেন তার অর্ধেক আসে সৌদি আরব থেকে। এজন্যেই সৌদি প্রবাসীদের সুখ-দুখের ব্যাপারে সরকারকে অধিকতর মনোযোগী হওয়ার বিকল্প নেই। ডঃ মোমেন বলেন, সৌদি আরবে এতবেশী সংখ্যক বাংলাদেশী কাজ করছেন বিধায় শ্রম রপ্তানীকারক কয়েকটি দেশের নিতেবাচক প্রচারণার শিকার হয়েছে বাংলাদেশ। সৌদি প্রশাসনেও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নানা মিথ্যা তথ্য দেয়া হতে পারে। ডঃ মোমেন বলেন, ইতিপূর্বে সৌদি প্রশাসনের সাথে বেশ কয়েক বছর কাজের অভিজ্ঞতাকে পূঁজি করে আমি নবউদ্যমে বাংলাদেশের ইমেজ বিল্ডআপের চেষ্টা করবো। একইভাবে বাংলাদেশেও সৌদি আরবের ইমেজ সংকট রয়েছে। আমি সে অবস্থার পরিবর্তন করে এ দুটি দেশের মধ্যে সম্পর্কোন্নয়ন ঘটাতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সে দায়িত্ব আমাকে দিয়েছেন এবং আমি তাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করেছি সানন্দচিত্তে। ডঃ মোমেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় এক ট্রিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ রয়েছে সৌদি আরবের ব্যবসায়ীদের। বিশ্বে তৃতীয় বৃহত্তম বিনিয়োগকারী রাষ্ট্র হচ্ছে সৌদি আরব। আমি চেষ্টা করে যাবো সম্পর্কোন্নয়নের মাধ্যমে তাদেরকে বাংলাদেশমুখী করার জন্যে। ডঃ মোমেন বলেন, এগুলো হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী ও দিন বদলের সনদের রূপকার শেখ হাসিনার এজেন্ডা। এগুলো আমাকেও বেশ উৎফুল্ল করেছে। কেননা আমি চাচ্ছিলাম মাতৃভূমির জন্যে কিছু করতে। ডঃ মোমেন বলেন, সৌদি আরবে কর্মরত বাংলাদেশীরা বর্তমানে প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলার করে পাঠাচ্ছেন। এর বাইরে আরো প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার করে আসছে অবৈধভাবে অর্থাৎ হুন্ডির মাধ্যমে। এটা ঘটছে সৌদি প্রশাসনের কোন কোন পর্যায়ের আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে। আমি সে পরিস্থিতির অবসান ঘটাতে পারবো। সৌদি ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তাদের বুঝাতে হবে যে, বাংলাদেশীরা আয়ের চেয়ে বেশী অর্থ কোন কোন মাসে পাঠিয়ে থাকেন বিশেষ প্রয়োজনে এবং অন্যের কাছে ধার নিয়ে। ডঃ মোমেন বলেন, ১৯৯৮ থেকে ২০০৩ সাল পর্যনত আমি সৌদি আরবে ছিলাম। সে সময় সৌদি সরকারের শিল্পায়ন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পক্ষ থেকে উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছি। সেটি ছিল যৌথ প্রোগ্রাম। তখন আমি সৌদি প্রশাসনের হালচাল জানতে সক্ষম হয়েছি। আমার সাথে তাদের সুন্দর একটি সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। সে সম্পর্ককে কাজে লাগাতে চাই বাংলাদেশের স্বার্থে।ডঃ মোমেন বলেন, ১৯৮২ সালের এপ্রিল মাসে সামরিক ফরমান জারি করে আমাকে চাকরি থেকে জোরপূর্বক অবসরে পাঠানো হয়। তারপর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন প্রকল্পে কাজ করেছি। বস্টনের বর্তমান কর্মস্থলের পাশাপাশি বাংলাদেশের পক্ষে কোন সভা-সমাবেশ হলেই নিউইয়র্ক অথবা ওয়াশিংটন ডিসিতে ছুটে গেছি। প্রাণটা সবসময় দেশের মায়ায় পড়ে থাকতো। অবশেষে দেশের জন্যে সরাসরি কিছু করার সুযোগ পেলাম। এ সুযোগের পুরো সদ্ব্যবহার করে মাতৃভূমির জন্যে নিজের দায়বদ্ধতা লাঘব করতে চাই। এজন্যে প্রবাসীদের অকুন্ঠ সমর্থন লাগবে। প্রবাসীদের সহায়তা ব্যতিত আমি সফল হতে পারবো না বলে সৌদি আরবের প্রবাসীদের পাশে থেকেই দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট থাকবো।