কালজয়ী সাংবাদিক
এক কালজয়ী সাংবাদিক
মানিক মিয়ার আজ ৪০তম মৃত্যুদিবস
নির্ভীক সাংবাদিকতার কিংবদনত্মী পুরম্নষ, সংবাদপত্রে আধুনিকতার রূপকার, সাহসী কলম সৈনিক এবং কালজয়ী কলাম ‘মোসাফির’ খ্যাত তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার আজ ৪০তম মৃত্যু দিবস। ১৯৬৯ সালের পহেলা জুন মাত্র ৫৮ বছর বয়সে বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের এই অন্যতম যোদ্ধা অসংখ্য প্রিয় মানুষকে শোকা"ছন্ন করে ইহলোক ত্যাগ করেন। ১৯৬৯-এর ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের প্রেড়্গাপটে এবং ৭০-এর নির্বাচনের প্রাক্কালে মানিক মিয়ার অকাল মৃত্যুতে সমগ্র জাতির অপূরণীয় ড়্গতি হয়। দেশবাসী হারায় তাদের প্রিয় মানিক ভাইকে। তিনি জাগতিক অর্থে ইহলোক ত্যাগ করে অননত্ম জীবনের পথে পাড়ি জমালেও তাঁর হাতেগড়া গণমানুষের মুখপত্র এবং স্বাধিকার আন্দোলনের চেতনার ধারক দৈনিক ইত্তেফাক মানিক মিয়ার আদর্শ ও চেতনাকে সমুন্নত রেখে চলেছে। কালের আবর্তে ঘটনাবহুল বাংলাদেশের নীরব সাড়্গী ইত্তেফাকের ৫ শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী-সাংবাদিকের পড়্গ থেকে আমরা উপমহাদেশের এই মহান পুরম্নষের বিদেহী আত্মার শানিত্ম ও মাগফেরাত কামনা করছি। প্রার্থনা করি সৃষ্টিকর্তার অপার মহিমায় তাঁর মত নির্লোভ-নিরহংকার মানুষ নিশ্চয়ই পারলৌকিক জীবনে অননত্ম শানিত্ম লাভ করবেন। আজকের নতুন প্রজন্ম মানিক মিয়ার সান্নিধ্য লাভ এবং তার কালজয়ী লেখনী থেকে বঞ্চিত হলেও তিনি বার বার নতুন করে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মানত্মরে ফিরে আসছেন নবচেতনার আধার হয়ে। তাই এখনো প্রয়োজন অনুভূত হয় মোসাফির-এর মত দিন বদলের ড়্গুরধার সাংবাদিকতার। এভাবেই হাজারো বাঙালির হৃদয়ের মণিকোঠায় বেঁচে থাকবেন মানিক মিয়া।
তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া শুধু দৈনিক ইত্তেফাকের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন না, তিনি ছিলেন বাঙালির আশা-আকাঙড়্গার প্রতিভূ। তৎকালীন পাকিসত্মানের কেন্দ্রীয় সরকারের বৈষম্যমূলক নীতি ও শোষণ-বঞ্চনা এবং বিমাতাসুলভ আচরণের বিরম্নদ্ধে তিনি ইত্তেফাকে ‘মোসাফির’ ছদ্মনামে ‘রাজনৈতিক মঞ্চ’ লিখে সচেতন করে তোলেন দেশবাসীকে। অর্থনৈতিক শোষণ ও মানুষের অধিকার আদায়ের সপড়্গে মানিক মিয়ার কলম সব সময় ছিল সমুন্নত। কোন ভয়-ভীতি, প্রলোভন এবং জানত্মার রক্তচড়্গু তাঁকে অবদমিত করতে পারেনি। সৎ, বসত্মুনিষ্ঠ, আপসহীন সাহসী সাংবাদিকতার পথিকৃৎ হিসেবে তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া যে উজ্জ্বল দৃষ্টানত্ম রেখে গেছেন তা আপন মহিমায় ভাস্বর হয়ে থাকবে। এই নশ্বর পৃথিবীতে তাঁর জীবন ও কর্ম হয়ে থাকবে অবিনশ্বর। সাংবাদিকতাকে কখনোই তিনি জীবিকা নির্বাহের মাধ্যম হিসেবে বিবেচনায় আনেননি, বরং সংবাদপত্রকে সাধারণ মানুষের মুখপত্র হিসেবে পরিচালনাই ছিল তার স্বপ্ন। সংবাদপত্রই ছিল তার জীবনের সাধ-সাধনা। দেশের অনেক বরেণ্য রাজনীতিকের হাতেখড়ি হয়েছিল মানিক মিয়ার হাতে। তাঁর বিশাল হৃদয়ের মাঝে ঠাঁই করে নিয়েছিলেন অনেক রাজনীতিবিদ, লেখক, সাহিত্যিক, সাংবাদিক। জীবদ্দশাতেই তিনি পরিণত হন বিশাল মহীরম্নহে। তার দেশপ্রেম, মানবতাবোধ, দরদী মন, সদা হাস্যোজ্জ্বল নিষ্পাপ অবয়ব তাঁর সহযোদ্ধাদের কাছে এখনো স্মৃতিতে অমস্নান।
দেশাত্মবোধ, মানবকল্যাণ আর সামাজিক দায়িত্ব চেতনায় উদ্বুদ্ধ মানিক মিয়া কলমকে ব্যবহার করেছেন সংগ্রামের হাতিয়াররূপে। ‘অসি নয়, মসি’কে অধিকতর শক্তিশালী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সড়্গম হয়েছিলেন এই সাহসী কলমযোদ্ধা। তিনি কখনো অন্যায়-অবিচার-অনাচারের সঙ্গে আপস করেননি। দেশপ্রেম, আত্মমর্যাদা, মুক্তচিনত্মা, গণতন্ত্রই ছিল তার জীবনদর্শন। আগেই বলা হয়েছে ইত্তেফাকে ‘মোসাফির’ ছদ্মনামে তাঁর জনপ্রিয় কলাম ‘রাজনৈতিক মঞ্চ’ ছিল এদেশের গণমানুষের মনের প্রতিফলন। তদানীনত্মন পাকিসত্মানী শাসকগোষ্ঠীর জেল-জুলুম, রক্তচড়্গু উপেড়্গা করে গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে তিনি যে সাহসিকতার স্বাড়্গর রেখে গেছেন তা অনাদিকাল অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে। তাঁর প্রিয় প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ছিল তার অতি আপন, অতি কাছের। তিনি ছিলেন সকলের প্রেরণা ও আশ্রয়স'ল। ছোট-বড়, ধনী-দরিদ্র সকলকে তিনি কাছে টেনে নিতেন। ‘মোর নাম এই বলে খ্যাত হোক আমি তোমাদেরই লোক’- এই ছিল মানবদরদী এই মহান মানুষটির আমরণ সাধনা। মানবতার কল্যাণই ছিল তাঁর একমাত্র ব্রত। রাষ্ট্রড়্গমতা, পদ-পদবি কোন কিছুই কখনো তাঁকে প্রভাবিত অথবা প্রলুব্ধ করতে পারেনি। সময় এসেছে আজ মানিক মিয়ার আদর্শ ও প্রেরণাকে ধারণ করে সামনে এগিয়ে চলার। এটাই হোক তাঁর ৪০তম মৃত্যুবার্ষিকীতে আমাদের অঙ্গীকার।
যথাযোগ্য মর্যাদায় সশ্রদ্ধচিত্তে জাতি আজ স্মরণ করবে কালজয়ী সাংবাদিক মরহুম তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার পুণ্যস্মৃতি। ইত্তেফাক পরিবারের প্রতিটি সদস্য শ্রদ্ধাভরে কৃতজ্ঞচিত্তে তাঁর রম্নহের মাগফিরাত কামনা করবেন। বিভিন্ন সামাজিক-রাজনৈতিক সংগঠনও এ উপলড়্গে বিসত্মারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
আজ সোমবার আজিমপুরস' মাজার প্রাঙ্গণে ভোর সাড়ে ৬টা থেকে কোরানখানি ও সকাল ৯টায় মোনাজাত, মরহুমের জ্যেষ্ঠ পুত্র ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের বারিধারাস' বাসভবনে কোরানখানি, মরহুমের কনিষ্ঠ পুত্র আনোয়ার হোসেনের ধানমন্ডিস' বাসভবনে কোরানখানি ও কাঙ্গালীভোজ, মরহুমের জ্যেষ্ঠ কন্যা মরহুমা আখতারম্নন্নাহারের (বেবী) বাসভবনে বাদ এশা মিলাদ মাহফিল এবং মরহুমার কনিষ্ঠ কন্যা সুলতানা হোসেনের (রম্নবী) বাসভবনে বাদ জোহর কাঙ্গালীভোজ, কোরানখানি ও বাদ মাগরিব মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া আজ ইত্তেফাক ভবনে সকাল থেকে কোরানখানি ও বাদ জোহর মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।
নির্ভীক সাংবাদিকতার কিংবদনত্মী পুরম্নষ, সংবাদপত্রে আধুনিকতার রূপকার, সাহসী কলম সৈনিক এবং কালজয়ী কলাম ‘মোসাফির’ খ্যাত তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার আজ ৪০তম মৃত্যু দিবস। ১৯৬৯ সালের পহেলা জুন মাত্র ৫৮ বছর বয়সে বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের এই অন্যতম যোদ্ধা অসংখ্য প্রিয় মানুষকে শোকা"ছন্ন করে ইহলোক ত্যাগ করেন। ১৯৬৯-এর ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের প্রেড়্গাপটে এবং ৭০-এর নির্বাচনের প্রাক্কালে মানিক মিয়ার অকাল মৃত্যুতে সমগ্র জাতির অপূরণীয় ড়্গতি হয়। দেশবাসী হারায় তাদের প্রিয় মানিক ভাইকে। তিনি জাগতিক অর্থে ইহলোক ত্যাগ করে অননত্ম জীবনের পথে পাড়ি জমালেও তাঁর হাতেগড়া গণমানুষের মুখপত্র এবং স্বাধিকার আন্দোলনের চেতনার ধারক দৈনিক ইত্তেফাক মানিক মিয়ার আদর্শ ও চেতনাকে সমুন্নত রেখে চলেছে। কালের আবর্তে ঘটনাবহুল বাংলাদেশের নীরব সাড়্গী ইত্তেফাকের ৫ শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী-সাংবাদিকের পড়্গ থেকে আমরা উপমহাদেশের এই মহান পুরম্নষের বিদেহী আত্মার শানিত্ম ও মাগফেরাত কামনা করছি। প্রার্থনা করি সৃষ্টিকর্তার অপার মহিমায় তাঁর মত নির্লোভ-নিরহংকার মানুষ নিশ্চয়ই পারলৌকিক জীবনে অননত্ম শানিত্ম লাভ করবেন। আজকের নতুন প্রজন্ম মানিক মিয়ার সান্নিধ্য লাভ এবং তার কালজয়ী লেখনী থেকে বঞ্চিত হলেও তিনি বার বার নতুন করে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মানত্মরে ফিরে আসছেন নবচেতনার আধার হয়ে। তাই এখনো প্রয়োজন অনুভূত হয় মোসাফির-এর মত দিন বদলের ড়্গুরধার সাংবাদিকতার। এভাবেই হাজারো বাঙালির হৃদয়ের মণিকোঠায় বেঁচে থাকবেন মানিক মিয়া।
তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া শুধু দৈনিক ইত্তেফাকের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন না, তিনি ছিলেন বাঙালির আশা-আকাঙড়্গার প্রতিভূ। তৎকালীন পাকিসত্মানের কেন্দ্রীয় সরকারের বৈষম্যমূলক নীতি ও শোষণ-বঞ্চনা এবং বিমাতাসুলভ আচরণের বিরম্নদ্ধে তিনি ইত্তেফাকে ‘মোসাফির’ ছদ্মনামে ‘রাজনৈতিক মঞ্চ’ লিখে সচেতন করে তোলেন দেশবাসীকে। অর্থনৈতিক শোষণ ও মানুষের অধিকার আদায়ের সপড়্গে মানিক মিয়ার কলম সব সময় ছিল সমুন্নত। কোন ভয়-ভীতি, প্রলোভন এবং জানত্মার রক্তচড়্গু তাঁকে অবদমিত করতে পারেনি। সৎ, বসত্মুনিষ্ঠ, আপসহীন সাহসী সাংবাদিকতার পথিকৃৎ হিসেবে তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া যে উজ্জ্বল দৃষ্টানত্ম রেখে গেছেন তা আপন মহিমায় ভাস্বর হয়ে থাকবে। এই নশ্বর পৃথিবীতে তাঁর জীবন ও কর্ম হয়ে থাকবে অবিনশ্বর। সাংবাদিকতাকে কখনোই তিনি জীবিকা নির্বাহের মাধ্যম হিসেবে বিবেচনায় আনেননি, বরং সংবাদপত্রকে সাধারণ মানুষের মুখপত্র হিসেবে পরিচালনাই ছিল তার স্বপ্ন। সংবাদপত্রই ছিল তার জীবনের সাধ-সাধনা। দেশের অনেক বরেণ্য রাজনীতিকের হাতেখড়ি হয়েছিল মানিক মিয়ার হাতে। তাঁর বিশাল হৃদয়ের মাঝে ঠাঁই করে নিয়েছিলেন অনেক রাজনীতিবিদ, লেখক, সাহিত্যিক, সাংবাদিক। জীবদ্দশাতেই তিনি পরিণত হন বিশাল মহীরম্নহে। তার দেশপ্রেম, মানবতাবোধ, দরদী মন, সদা হাস্যোজ্জ্বল নিষ্পাপ অবয়ব তাঁর সহযোদ্ধাদের কাছে এখনো স্মৃতিতে অমস্নান।
দেশাত্মবোধ, মানবকল্যাণ আর সামাজিক দায়িত্ব চেতনায় উদ্বুদ্ধ মানিক মিয়া কলমকে ব্যবহার করেছেন সংগ্রামের হাতিয়াররূপে। ‘অসি নয়, মসি’কে অধিকতর শক্তিশালী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সড়্গম হয়েছিলেন এই সাহসী কলমযোদ্ধা। তিনি কখনো অন্যায়-অবিচার-অনাচারের সঙ্গে আপস করেননি। দেশপ্রেম, আত্মমর্যাদা, মুক্তচিনত্মা, গণতন্ত্রই ছিল তার জীবনদর্শন। আগেই বলা হয়েছে ইত্তেফাকে ‘মোসাফির’ ছদ্মনামে তাঁর জনপ্রিয় কলাম ‘রাজনৈতিক মঞ্চ’ ছিল এদেশের গণমানুষের মনের প্রতিফলন। তদানীনত্মন পাকিসত্মানী শাসকগোষ্ঠীর জেল-জুলুম, রক্তচড়্গু উপেড়্গা করে গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে তিনি যে সাহসিকতার স্বাড়্গর রেখে গেছেন তা অনাদিকাল অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে। তাঁর প্রিয় প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ছিল তার অতি আপন, অতি কাছের। তিনি ছিলেন সকলের প্রেরণা ও আশ্রয়স'ল। ছোট-বড়, ধনী-দরিদ্র সকলকে তিনি কাছে টেনে নিতেন। ‘মোর নাম এই বলে খ্যাত হোক আমি তোমাদেরই লোক’- এই ছিল মানবদরদী এই মহান মানুষটির আমরণ সাধনা। মানবতার কল্যাণই ছিল তাঁর একমাত্র ব্রত। রাষ্ট্রড়্গমতা, পদ-পদবি কোন কিছুই কখনো তাঁকে প্রভাবিত অথবা প্রলুব্ধ করতে পারেনি। সময় এসেছে আজ মানিক মিয়ার আদর্শ ও প্রেরণাকে ধারণ করে সামনে এগিয়ে চলার। এটাই হোক তাঁর ৪০তম মৃত্যুবার্ষিকীতে আমাদের অঙ্গীকার।
যথাযোগ্য মর্যাদায় সশ্রদ্ধচিত্তে জাতি আজ স্মরণ করবে কালজয়ী সাংবাদিক মরহুম তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার পুণ্যস্মৃতি। ইত্তেফাক পরিবারের প্রতিটি সদস্য শ্রদ্ধাভরে কৃতজ্ঞচিত্তে তাঁর রম্নহের মাগফিরাত কামনা করবেন। বিভিন্ন সামাজিক-রাজনৈতিক সংগঠনও এ উপলড়্গে বিসত্মারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
আজ সোমবার আজিমপুরস' মাজার প্রাঙ্গণে ভোর সাড়ে ৬টা থেকে কোরানখানি ও সকাল ৯টায় মোনাজাত, মরহুমের জ্যেষ্ঠ পুত্র ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের বারিধারাস' বাসভবনে কোরানখানি, মরহুমের কনিষ্ঠ পুত্র আনোয়ার হোসেনের ধানমন্ডিস' বাসভবনে কোরানখানি ও কাঙ্গালীভোজ, মরহুমের জ্যেষ্ঠ কন্যা মরহুমা আখতারম্নন্নাহারের (বেবী) বাসভবনে বাদ এশা মিলাদ মাহফিল এবং মরহুমার কনিষ্ঠ কন্যা সুলতানা হোসেনের (রম্নবী) বাসভবনে বাদ জোহর কাঙ্গালীভোজ, কোরানখানি ও বাদ মাগরিব মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া আজ ইত্তেফাক ভবনে সকাল থেকে কোরানখানি ও বাদ জোহর মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।
আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী
[ আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী। সাংবাদিকতাই তাঁর একমাত্র পেশা। এই পঁচাত্তর বছর বয়সেও তাঁর কলম থেমে নেই। এখন তিনি কলাম লিখে আলোচিত। কিন্তু আরো বেশি পরিচিত একুশের গান দিয়ে। ফেব্রম্নয়ারির অমর সেই গান - ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রম্নয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি’ । এখন এই গান অবশ্য আর নিজের সম্পত্তি হিসেবে দাবি করেন না তিনি। মনে করেন এটা সবার গান। ১৯৩৪ সালের ১২ই ডিসেম্বর বরিশালে জন্ম। পরতে পছন্দ করেন লুঙ্গি, জামা আর শার্ট প্যান্ট। আর পছন্দ নীল রং। খাবার চাইনিজ। প্রিয় মানুষ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। থাকেন লন্ডনে। মার্চ মাসে এসেছিলেন দেশে । সে সময় একটি দীর্ঘ সাড়্গাৎকার নিয়েছিলেন ইত্তেফাক প্রতিনিধি রফিকুল বাসার। সেখান থেকে মানিক মিয়ার অংশটুকু পত্রস্থ করা হলো। ]
ইত্তেফাক : আপনি যেহেতু পত্রিকা জগতের মানুষ সে জন্য আপনার কাছে পত্রিকার কথা বেশি শুনবো। শঙ্কা দুশ্চিনত্মা নিয়ে পরে কথা বলব। বাংলাদেশের বর্তমান দৈনিক পত্রিকার স্থপতিদের সঙ্গে আপনি কাজ করেছেন। এই ভূখন্ডে পত্রিকা দাঁড় করানোটা যদি আন্দোলন বলি তবে সেই আন্দোলনের আপনি একজন অংশীদার। এবিষয়ে কিছু বলেন।
আগাচৌ : আমি ঠিক অংশীদার না, একজন সহযোগী বলা চলে। বাংলাদেশে সংবাদপত্র শিল্প প্রতিষ্ঠার জন্য যাদের অবদান তারা হলেন, মাওলানা আকরাম খাঁ, হামিদুল হক চৌধুরী, তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া। এদের অবদান আসলেই স্মরণ করার মতো। ভারত ভাগ হওয়ার পরে ঢাকা কেন্দ্রিক যে সংবাদপত্র শিল্প গড়ে উঠে তাতে প্রধানত এই তিন পুরম্নষের অবদান বেশি। কিন্তু আর একজনেরও অবদান আছে। তিনি কিন্তু আজাদ পত্রিকা কলকাতা থেকে ঢাকা আসার আগে, ইত্তেফাক, অবজারভার বেরম্নবার আগেই একটি দৈনিক পত্রিকা বের করেছিলেন। তার নাম কাজী আফসার উদ্দিন আহমদ। তারপর পূর্ব পাকিসত্মান হওয়ার পরে ঢাকা থেকে প্রথম যে দৈনিক পত্রিকা বের হয় তার নাম দৈনিক জিন্দেগী। সংবাদ বের হওয়ার আগেই আর একটি পত্রিকা বের হয়। সরকার বিরোধী দৈনিক কাগজ হিসেবে সেটি ছিল প্রথম। তখন অবশ্য দৈনিক আজাদ বেরিয়ে গেছে। তার নাম দৈনিক ইনসাফ। এর সম্পাদক ছিলেন নোয়াখালি না কুমিলস্নার এক ভদ্রলোক, মহিউদ্দিন আহমেদ। অসাধারণ সম্পাদক ছিলেন। পরবর্তীকালে কাজী আফসার উদ্দিনও তার ( ইনসাফ) সম্পাদক হন। বলিয়াদি প্রিন্টিং প্রেস, বংশাল থেকে বের হতো। এই মহিউদ্দিন আহমদ আর একটি পত্রিকা বের করেছিলেন। সরকার বিরোধী পত্রিকা, দৈনিক আমার দেশ। চার পাতার একটি কাগজ। ভাষা আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্যায়ে এর খুব ভাল ভূমিকা ছিল। দৈনিক আজাদ পরে কলকাতা থেকে ঢাকায় চলে আসে। তখন এটা সরকার সমর্থক কাগজ ছিল। ছিল মানে এখনতো বন্ধ হয়ে গেছে। তার অনেক দিন পর সাপ্তাহিক ইত্তেফাক বের হয়। এটা আওয়ামী লীগের কাগজ ছিল। ১৯৫৫ কি ৫৪ সালে মনে নেই এখন।
ইত্তেফাক: মাওলানা ভাসানীর সঙ্গে ইত্তেফাকের কী সম্পর্ক ছিল।
আগাচৌ : মাওলানা ভাসানী সাপ্তাহিক ইত্তেফাক বের করতেন। দৈনিক যখন হয় তখন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর টাকা এবং ব্যাংক থেকে কিছু ঋণ নিয়ে মানিক মিয়া এটা বের করেছিলেন। বলা হয়, কাগজটা তিনি ছিনিয়ে নিয়েছেন। এটা ঠিক না। পরে যখন মাওলানা ভাসানী ইত্তেফাক দাবি করেন তখন তিনি সাপ্তাহিক ইত্তেফাক তাকে ফেরত দেন। এবং মাওলানা ভাসানী সাপ্তাহিক ইত্তেফাক আবার বের করেছিলেন। ফজলুর রহমান তার সম্পাদক ছিলেন। কিন্তু সেই কাগজটি চলেনি। ইত্তেফাক মানিক মিয়ারই অবদান। তার রাজনৈতিক মঞ্চর গুণেই জনপ্রিয় হয়। আমৃত্যু তিনি এই কাগজের সম্পাদক ও প্রকাশক ছিলেন।
ইত্তেফাক: ব্যাংক ঋণ নিয়েই তাহলে ইত্তেফাক বের হয়েছে।
আগাচৌ : হ্যাঁ তাই। ব্যাংক ঋণ নিয়েছেন। শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেখ মুজিবুর রহমান, আতাউর রহমান খান অল্প কিছু সহায়তা করেছেন। আরো অনেকে সহায়তা করেছেন। মূলত কয়েকটা ব্যাংক থেকে বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জ কোঅপারেটিভ ব্যাংক থেকে আরো দু-একটা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ইত্তেফাক বের করেছেন। প্রথমে চার পাতার একটা কাগজ বের হতো। এভাবেই ইত্তেফাক প্রতিষ্ঠা। সব মিলিয়ে ইত্তেফাকের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মানিক মিয়ার নাম খুবই শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করা যায়। তিনি শূন্য অবস্থা থেকে ইত্তেফাক তৈরী করেছেন। আজাদ কাগজটা আগে থেকেই প্রতিষ্ঠিত ছিল। হামিদুল হক চৌধুরী প্রথমে একটি বাংলা কাগজ বের করার চেষ্টা করেছিলেন। দৈনিক আল হেলাল নামে। এই জন্য তার প্রেসের নামও ছিল আল হেলাল প্রিন্টিং প্রেস। কিন্তু নুরম্নল আমিন সরকার এটার অনুমতি দেয়নি। তার আগেই বোধ হয় পাকিসত্মান অবজারভার শুরম্ন হয়ে যায়। মূলত আকরাম খাঁ, আমিনুল হক চৌধুরী, তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া, কাজী আফসার উদ্দিন আহমেদ, মহিউদ্দিন আহমদ, এস এম বদরম্নল রহমান নামে আর এক ভদ্রলোক, তিনি অনেক টাকা ঢেলেছেন সংবাদপত্র শিল্প প্রতিষ্ঠায়। এদেরকে বলা চলে আমাদের সংবাদপত্র শিল্পের পথিকৃত। আমি তখন খুব ছোট। কলেজের ছাত্র। আমি এসে এদের সঙ্গে কাজ করেছি মাত্র। বিভিন্ন কাগজে কাজ করেছি।
ইত্তেফাক: সাপ্তাহিক ইত্তেফাক এ তো মুসলিম লীগ বিরোধী লেখা বেশি ছাপা হতো। দৈনিক হলেও কি সে ধারা বজায় ছিল?
আগাচৌ : তখনও ধারাটি বজায় ছিল। যদিও ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের বিজয়ের পর কাগজটি আওয়ামী লীগের সমর্থক হয়, কিন্তু কিছুদিনের মধ্যে যুক্তফ্রন্ট ভাগ হয়ে যায়। ফলে কাগজটির বিরোধীদলীয় চরিত্র সব সময় বজায় ছিল।
ইত্তেফাক: আবার ইত্তেফাকে আসি। আপনি ’৫৫ সালে যদি ইত্তেফাকে যোগ দিয়ে থাকেন তবে তো মানিক মিয়ার গ্রেফতারের সময়গুলোতে তাঁর পাশে ছিলেন? আমরা জানি যে, ১৯৫৯ সালের ২৮শে সেপ্টেম্বর আইয়ুব খানের সামরিক শাসনের সমালোচনা করায় প্রথম গ্রেফতার হয়েছিলেন মানিক মিয়া। এরপর ১৯৬২ সালের ৬ই ফেব্রম্নয়ারি। সেটা ছিল আইয়ুব বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সমর্থনের কারণে। ‘রাজনৈতিক মঞ্চ’ লেখার কারণে ১৯৬৬ সালের ১৫ই জুন আবার গ্রেফতার হন এবং ইত্তেফাক বন্ধ করা হলো। এসব দিনগুলো আপনি কিভাবে তাকে দেখেছেন।
আগাচৌ : তিনি তো একেবারে সাংবাদিকদের মধ্যে ফাইটিং ফিগার ছিলেন। আপোষহীন এবং যে কোন ত্যাগ স্বীকার করতে পারতেন। সম্পত্তি নিয়ে যাক, কাগজ নিয়ে যাক। কোন সমস্যা নেই। আপোষহীন সংগ্রামী সাংবাদিক ছিলেন।
ইত্তেফাক: আপনারাতো অনেক ছোট ছিলেন। তবু তাঁর সঙ্গে আপনাদের কেমন সম্পর্ক ছিল।
আগাচৌ : এখনতো একে অন্যের মধ্যে ব্যবসায়িক সম্পর্ক। তখন আত্নীয়তার সম্পর্ক ছিল। আমরা ছোট বড় সকলে তাকে মানিক ভাই বলে ডাকতাম। শেখ মুজিবতো বঙ্গবন্ধু হয়েছেন অনেক পরে। আমরা তাকে মুজিব ভাই বলে ডাকতাম। এখন যেমন দলের নেতা-কর্মীরা জননেত্রী বলে। মাননীয় জননেত্রী বলে। শেখ মুজিবুর রহমান যখন মন্ত্রী হলেন, প্রধানমন্ত্রী হলেন তখনও আমরা তাকে মুজিব ভাই ডেকেছি। মানিক মিয়াকে একেবারে অফিসের পিয়ন থেকে শুরম্ন করে সবাই মানিক ভাই বলে ডাকতো। দু-একজন যে স্যারটার বলত না তা না। মানিক ভাই ছিল তার পরিচয়। একটা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিল। কারো অসুখ হলে ইনি দেখতে যেতেন। পারিবারিক অসুবিধা হলে উনার সাধ্যের ভেতর থাকলে তিনি সহায়তা করতেন। এখনতো সেটা নেই।
ইত্তেফাক: তিনি যে লেখাটার জন্যে আলোচিত হয়েছেন সেই ‘রাজনৈতিক মঞ্চ’ নিয়ে কিছু বলেন।
আগাচৌ : এটা প্রথমে ছিল ‘রাজনৈতিক ধোঁকাবাজি’। তীব্র আক্রমণ চালাতেন মুসলিম লীগ সম্পর্কে। গালাগালি দিয়ে নয়। তথ্য প্রমাণ দিয়ে তিনি লিখতেন। ভাষাটা ছিল জনগণের কাছে অত্যনত্ম বোধ্য ভাষা। ফলে এটা চাপরাশি থেকে চিফ সেক্রেটারি সকলের কাছে পাঠ্য ছিল। ভোর বেলা উঠে প্রতি সপ্তাহে এটা না পড়লে আমাদের ঘুম হতো না। আর দৈনিক হওয়ার পরে রাজনৈতিক মঞ্চ না পড়লে মনেই হতো না আজ একটা খবরের কাগজ পাঠ করেছি। এটা একেবারে শত্রম্ন-মিত্র সবাই পাঠ করত। দেখা যেত বাইরের টুলে বসে চাপরাশি পড়তেছে, আবার ভেতরে সেক্রেটারি।
ইত্তেফাক: ইত্তেফাক তো আওয়ামী দলীয় মুখপত্র হিসেবে প্রথমে বের হয়েছিল। কিন্তু পত্রিকা হিসেবে সাধারণ মানুষের নিয়ে কথা বলার যে বিষয় সেটা পারতো কিনা ?
আগাচৌ : সেটা পারতো। এখনকার থেকে বোধ হয় তখন আরো বেশি পারতো। এখন আপনাদের কতটা স্বাধীনতা আছে জানি না। আমাদের সময় অবাধে লিখতে পারতাম। এমনকি মানিক মিয়ার মতের বিরম্নদ্ধে লিখলেও তা ছাপা হতো। আমরা লিখে জমা দিয়ে পালিয়ে যেতাম। বলাবলি করতাম, নিশ্চয় বকা শুনতে হবে। পরে দেখা যেত উনি ছেপে দিয়েছেন। এমনও হতো তিনি নিজেই আর একটি লেখা লিখেছেন। কিন্তু ছাপতেন সবকিছু। পাক মার্কিন মৈত্রী চুক্তির উনি সমর্থক ছিলেন। আমরা এটার বিরোধিতা করতাম। আমি, হামিদুর রহমান, মইদুল হাসান এর বিরম্নদ্ধে লিখতাম। তিনি কখনো বন্ধ করেননি।
[ আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী। সাংবাদিকতাই তাঁর একমাত্র পেশা। এই পঁচাত্তর বছর বয়সেও তাঁর কলম থেমে নেই। এখন তিনি কলাম লিখে আলোচিত। কিন্তু আরো বেশি পরিচিত একুশের গান দিয়ে। ফেব্রম্নয়ারির অমর সেই গান - ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রম্নয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি’ । এখন এই গান অবশ্য আর নিজের সম্পত্তি হিসেবে দাবি করেন না তিনি। মনে করেন এটা সবার গান। ১৯৩৪ সালের ১২ই ডিসেম্বর বরিশালে জন্ম। পরতে পছন্দ করেন লুঙ্গি, জামা আর শার্ট প্যান্ট। আর পছন্দ নীল রং। খাবার চাইনিজ। প্রিয় মানুষ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। থাকেন লন্ডনে। মার্চ মাসে এসেছিলেন দেশে । সে সময় একটি দীর্ঘ সাড়্গাৎকার নিয়েছিলেন ইত্তেফাক প্রতিনিধি রফিকুল বাসার। সেখান থেকে মানিক মিয়ার অংশটুকু পত্রস্থ করা হলো। ]
ইত্তেফাক : আপনি যেহেতু পত্রিকা জগতের মানুষ সে জন্য আপনার কাছে পত্রিকার কথা বেশি শুনবো। শঙ্কা দুশ্চিনত্মা নিয়ে পরে কথা বলব। বাংলাদেশের বর্তমান দৈনিক পত্রিকার স্থপতিদের সঙ্গে আপনি কাজ করেছেন। এই ভূখন্ডে পত্রিকা দাঁড় করানোটা যদি আন্দোলন বলি তবে সেই আন্দোলনের আপনি একজন অংশীদার। এবিষয়ে কিছু বলেন।
আগাচৌ : আমি ঠিক অংশীদার না, একজন সহযোগী বলা চলে। বাংলাদেশে সংবাদপত্র শিল্প প্রতিষ্ঠার জন্য যাদের অবদান তারা হলেন, মাওলানা আকরাম খাঁ, হামিদুল হক চৌধুরী, তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া। এদের অবদান আসলেই স্মরণ করার মতো। ভারত ভাগ হওয়ার পরে ঢাকা কেন্দ্রিক যে সংবাদপত্র শিল্প গড়ে উঠে তাতে প্রধানত এই তিন পুরম্নষের অবদান বেশি। কিন্তু আর একজনেরও অবদান আছে। তিনি কিন্তু আজাদ পত্রিকা কলকাতা থেকে ঢাকা আসার আগে, ইত্তেফাক, অবজারভার বেরম্নবার আগেই একটি দৈনিক পত্রিকা বের করেছিলেন। তার নাম কাজী আফসার উদ্দিন আহমদ। তারপর পূর্ব পাকিসত্মান হওয়ার পরে ঢাকা থেকে প্রথম যে দৈনিক পত্রিকা বের হয় তার নাম দৈনিক জিন্দেগী। সংবাদ বের হওয়ার আগেই আর একটি পত্রিকা বের হয়। সরকার বিরোধী দৈনিক কাগজ হিসেবে সেটি ছিল প্রথম। তখন অবশ্য দৈনিক আজাদ বেরিয়ে গেছে। তার নাম দৈনিক ইনসাফ। এর সম্পাদক ছিলেন নোয়াখালি না কুমিলস্নার এক ভদ্রলোক, মহিউদ্দিন আহমেদ। অসাধারণ সম্পাদক ছিলেন। পরবর্তীকালে কাজী আফসার উদ্দিনও তার ( ইনসাফ) সম্পাদক হন। বলিয়াদি প্রিন্টিং প্রেস, বংশাল থেকে বের হতো। এই মহিউদ্দিন আহমদ আর একটি পত্রিকা বের করেছিলেন। সরকার বিরোধী পত্রিকা, দৈনিক আমার দেশ। চার পাতার একটি কাগজ। ভাষা আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্যায়ে এর খুব ভাল ভূমিকা ছিল। দৈনিক আজাদ পরে কলকাতা থেকে ঢাকায় চলে আসে। তখন এটা সরকার সমর্থক কাগজ ছিল। ছিল মানে এখনতো বন্ধ হয়ে গেছে। তার অনেক দিন পর সাপ্তাহিক ইত্তেফাক বের হয়। এটা আওয়ামী লীগের কাগজ ছিল। ১৯৫৫ কি ৫৪ সালে মনে নেই এখন।
ইত্তেফাক: মাওলানা ভাসানীর সঙ্গে ইত্তেফাকের কী সম্পর্ক ছিল।
আগাচৌ : মাওলানা ভাসানী সাপ্তাহিক ইত্তেফাক বের করতেন। দৈনিক যখন হয় তখন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর টাকা এবং ব্যাংক থেকে কিছু ঋণ নিয়ে মানিক মিয়া এটা বের করেছিলেন। বলা হয়, কাগজটা তিনি ছিনিয়ে নিয়েছেন। এটা ঠিক না। পরে যখন মাওলানা ভাসানী ইত্তেফাক দাবি করেন তখন তিনি সাপ্তাহিক ইত্তেফাক তাকে ফেরত দেন। এবং মাওলানা ভাসানী সাপ্তাহিক ইত্তেফাক আবার বের করেছিলেন। ফজলুর রহমান তার সম্পাদক ছিলেন। কিন্তু সেই কাগজটি চলেনি। ইত্তেফাক মানিক মিয়ারই অবদান। তার রাজনৈতিক মঞ্চর গুণেই জনপ্রিয় হয়। আমৃত্যু তিনি এই কাগজের সম্পাদক ও প্রকাশক ছিলেন।
ইত্তেফাক: ব্যাংক ঋণ নিয়েই তাহলে ইত্তেফাক বের হয়েছে।
আগাচৌ : হ্যাঁ তাই। ব্যাংক ঋণ নিয়েছেন। শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেখ মুজিবুর রহমান, আতাউর রহমান খান অল্প কিছু সহায়তা করেছেন। আরো অনেকে সহায়তা করেছেন। মূলত কয়েকটা ব্যাংক থেকে বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জ কোঅপারেটিভ ব্যাংক থেকে আরো দু-একটা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ইত্তেফাক বের করেছেন। প্রথমে চার পাতার একটা কাগজ বের হতো। এভাবেই ইত্তেফাক প্রতিষ্ঠা। সব মিলিয়ে ইত্তেফাকের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মানিক মিয়ার নাম খুবই শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করা যায়। তিনি শূন্য অবস্থা থেকে ইত্তেফাক তৈরী করেছেন। আজাদ কাগজটা আগে থেকেই প্রতিষ্ঠিত ছিল। হামিদুল হক চৌধুরী প্রথমে একটি বাংলা কাগজ বের করার চেষ্টা করেছিলেন। দৈনিক আল হেলাল নামে। এই জন্য তার প্রেসের নামও ছিল আল হেলাল প্রিন্টিং প্রেস। কিন্তু নুরম্নল আমিন সরকার এটার অনুমতি দেয়নি। তার আগেই বোধ হয় পাকিসত্মান অবজারভার শুরম্ন হয়ে যায়। মূলত আকরাম খাঁ, আমিনুল হক চৌধুরী, তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া, কাজী আফসার উদ্দিন আহমেদ, মহিউদ্দিন আহমদ, এস এম বদরম্নল রহমান নামে আর এক ভদ্রলোক, তিনি অনেক টাকা ঢেলেছেন সংবাদপত্র শিল্প প্রতিষ্ঠায়। এদেরকে বলা চলে আমাদের সংবাদপত্র শিল্পের পথিকৃত। আমি তখন খুব ছোট। কলেজের ছাত্র। আমি এসে এদের সঙ্গে কাজ করেছি মাত্র। বিভিন্ন কাগজে কাজ করেছি।
ইত্তেফাক: সাপ্তাহিক ইত্তেফাক এ তো মুসলিম লীগ বিরোধী লেখা বেশি ছাপা হতো। দৈনিক হলেও কি সে ধারা বজায় ছিল?
আগাচৌ : তখনও ধারাটি বজায় ছিল। যদিও ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের বিজয়ের পর কাগজটি আওয়ামী লীগের সমর্থক হয়, কিন্তু কিছুদিনের মধ্যে যুক্তফ্রন্ট ভাগ হয়ে যায়। ফলে কাগজটির বিরোধীদলীয় চরিত্র সব সময় বজায় ছিল।
ইত্তেফাক: আবার ইত্তেফাকে আসি। আপনি ’৫৫ সালে যদি ইত্তেফাকে যোগ দিয়ে থাকেন তবে তো মানিক মিয়ার গ্রেফতারের সময়গুলোতে তাঁর পাশে ছিলেন? আমরা জানি যে, ১৯৫৯ সালের ২৮শে সেপ্টেম্বর আইয়ুব খানের সামরিক শাসনের সমালোচনা করায় প্রথম গ্রেফতার হয়েছিলেন মানিক মিয়া। এরপর ১৯৬২ সালের ৬ই ফেব্রম্নয়ারি। সেটা ছিল আইয়ুব বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সমর্থনের কারণে। ‘রাজনৈতিক মঞ্চ’ লেখার কারণে ১৯৬৬ সালের ১৫ই জুন আবার গ্রেফতার হন এবং ইত্তেফাক বন্ধ করা হলো। এসব দিনগুলো আপনি কিভাবে তাকে দেখেছেন।
আগাচৌ : তিনি তো একেবারে সাংবাদিকদের মধ্যে ফাইটিং ফিগার ছিলেন। আপোষহীন এবং যে কোন ত্যাগ স্বীকার করতে পারতেন। সম্পত্তি নিয়ে যাক, কাগজ নিয়ে যাক। কোন সমস্যা নেই। আপোষহীন সংগ্রামী সাংবাদিক ছিলেন।
ইত্তেফাক: আপনারাতো অনেক ছোট ছিলেন। তবু তাঁর সঙ্গে আপনাদের কেমন সম্পর্ক ছিল।
আগাচৌ : এখনতো একে অন্যের মধ্যে ব্যবসায়িক সম্পর্ক। তখন আত্নীয়তার সম্পর্ক ছিল। আমরা ছোট বড় সকলে তাকে মানিক ভাই বলে ডাকতাম। শেখ মুজিবতো বঙ্গবন্ধু হয়েছেন অনেক পরে। আমরা তাকে মুজিব ভাই বলে ডাকতাম। এখন যেমন দলের নেতা-কর্মীরা জননেত্রী বলে। মাননীয় জননেত্রী বলে। শেখ মুজিবুর রহমান যখন মন্ত্রী হলেন, প্রধানমন্ত্রী হলেন তখনও আমরা তাকে মুজিব ভাই ডেকেছি। মানিক মিয়াকে একেবারে অফিসের পিয়ন থেকে শুরম্ন করে সবাই মানিক ভাই বলে ডাকতো। দু-একজন যে স্যারটার বলত না তা না। মানিক ভাই ছিল তার পরিচয়। একটা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিল। কারো অসুখ হলে ইনি দেখতে যেতেন। পারিবারিক অসুবিধা হলে উনার সাধ্যের ভেতর থাকলে তিনি সহায়তা করতেন। এখনতো সেটা নেই।
ইত্তেফাক: তিনি যে লেখাটার জন্যে আলোচিত হয়েছেন সেই ‘রাজনৈতিক মঞ্চ’ নিয়ে কিছু বলেন।
আগাচৌ : এটা প্রথমে ছিল ‘রাজনৈতিক ধোঁকাবাজি’। তীব্র আক্রমণ চালাতেন মুসলিম লীগ সম্পর্কে। গালাগালি দিয়ে নয়। তথ্য প্রমাণ দিয়ে তিনি লিখতেন। ভাষাটা ছিল জনগণের কাছে অত্যনত্ম বোধ্য ভাষা। ফলে এটা চাপরাশি থেকে চিফ সেক্রেটারি সকলের কাছে পাঠ্য ছিল। ভোর বেলা উঠে প্রতি সপ্তাহে এটা না পড়লে আমাদের ঘুম হতো না। আর দৈনিক হওয়ার পরে রাজনৈতিক মঞ্চ না পড়লে মনেই হতো না আজ একটা খবরের কাগজ পাঠ করেছি। এটা একেবারে শত্রম্ন-মিত্র সবাই পাঠ করত। দেখা যেত বাইরের টুলে বসে চাপরাশি পড়তেছে, আবার ভেতরে সেক্রেটারি।
ইত্তেফাক: ইত্তেফাক তো আওয়ামী দলীয় মুখপত্র হিসেবে প্রথমে বের হয়েছিল। কিন্তু পত্রিকা হিসেবে সাধারণ মানুষের নিয়ে কথা বলার যে বিষয় সেটা পারতো কিনা ?
আগাচৌ : সেটা পারতো। এখনকার থেকে বোধ হয় তখন আরো বেশি পারতো। এখন আপনাদের কতটা স্বাধীনতা আছে জানি না। আমাদের সময় অবাধে লিখতে পারতাম। এমনকি মানিক মিয়ার মতের বিরম্নদ্ধে লিখলেও তা ছাপা হতো। আমরা লিখে জমা দিয়ে পালিয়ে যেতাম। বলাবলি করতাম, নিশ্চয় বকা শুনতে হবে। পরে দেখা যেত উনি ছেপে দিয়েছেন। এমনও হতো তিনি নিজেই আর একটি লেখা লিখেছেন। কিন্তু ছাপতেন সবকিছু। পাক মার্কিন মৈত্রী চুক্তির উনি সমর্থক ছিলেন। আমরা এটার বিরোধিতা করতাম। আমি, হামিদুর রহমান, মইদুল হাসান এর বিরম্নদ্ধে লিখতাম। তিনি কখনো বন্ধ করেননি।
নূরে আলম সিদ্দিকী
মানিক ভাই এদেশের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে শামিল সকল রাজনৈতিক নেতা-কর্মীর প্রেরণাস্থল ছিলেন। ১নং রামকৃষ্ণ মিশন রোডের সেই পুরনো দোতলা দালানের নীচের একটি কড়্গে ইজি চেয়ারে গা হেলান দিয়ে বসে তিনি তার কালজয়ী কলাম ‘রাজনৈতিক মঞ্চের’ ডিক্টেশন যখন দিতেন তখন একজন সত্যনিষ্ঠ জনদরদী ও অসীম সাহসী ব্যক্তিত্বের স্পষ্ট ছাপ তার চোখে মুখে ফুটে উঠতো। আপাত দৃষ্টিতে তাকে বেশ রাশভারী ও রাগী বলে মনে হলেও অনত্মরে তিনি ছিলেন কুসুমের মতই কোমল।
আমার সৌভাগ্য যে, আমি ইত্তেফাকের মানিক ভাই ও সিরাজ ভাইয়ের স্নেহচ্ছায়ায় বেড়ে উঠেছিলাম। ষাটের দশক এদেশের রাজনীতিতে একটি টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে দেখা দিয়েছিল; কিন্তু এর পটভূমি রচনায় শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের অনেক ত্যাগ আর অক্লানত্ম পরিশ্রম করতে হয়েছিল। যাহোক ষাটের দশকে সিরাজুদ্দীন হোসেন আমাকে মানিক ভাইয়ের হাওলা করে দেন।
মানিক ভাই তখন এ অঞ্চলের রাজনৈতিক গগনে মধ্যাহ্নের সূর্যের মতই জ্বল জ্বল করছেন। দৈনিক ইত্তেফাকে রাজনীতির অসাধারণ নৈপুণ্যপূর্ণ বিশেস্নষণ এবং আপামর জনসাধারণের করণীয় কর্তব্য সম্পর্কে দিক-নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন।
সত্য ও সুন্দরের সাধক মানিক ভাই ছিলেন আপাদমসত্মক মানবদরদী ও মহৎপ্রাণ। শত প্রলোভনের ও হাজারো রক্ত চড়্গুর সামনে তিনি সর্বদাই ছিলেন হিমালয়ের মত কটল। মানিক ভাই প্রবীণ ও নবীনের মধ্যে এবং প্রগতিশীল ও রড়্গণশীলদের মধ্যে একটি সেতুর মতন ছিলেন। আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক দার্শনিক ছিলেন তিনি। তার লেখনী, চিনত্মাধারা আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের কাছে রাজনৈতিক দর্শন ও নির্দেশ হিসেবেই প্রতিভাত হত। “মোসাফির” এর “রাজনৈতিক মঞ্চ” না পড়ে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা দিনের কাজ শুরম্ন করতেন না। কেননা, তার মধ্যেই থাকত তাদের জন্য প্রকৃত দিক-নির্দেশনা।
মানিক ভাইদের আমলে তারা সাংবাদিকতায় ও রাজনীতিতে অকুতোভয়, আদর্শবাদী, জনমুখী, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে কাজ করেছেন। আদর্শ ও নীতির প্রশ্নে মানিক ভাই, সিরাজ ভাইরা কখনো আপোষ করেননি। তারা সব সময় দেশ ও মানুষকে সাথে নিয়ে এগিয়ে গেছেন অভীষ্ঠ লড়্গ্যে। এর বিনিময়ে তারা পেয়েছেন মানুষের অপরিসীম ভালবাসা-শ্রদ্ধা। সেসব দিনগুলোতে রাজনীতিকের প্রতি, সাংবাদিকের প্রতি মানুষের কোন ভালবাসা, শ্রদ্ধাবোধের অভাব ছিলো না। আজ রাজনীতিকদের প্রতি, সাংবাদিকতার প্রতি সেই শ্রদ্ধা-ভালবাসা মানুষ আর বজায় রাখতে পারছে না। একটি কথা খুব জোরের সঙ্গেই বলতে পারি, তা হোল: এমন- অনেক ঘটনা আছে যেখানে ইত্তেফাকের মানিক ভাই ও সিরাজ ভাই হসত্মড়্গেপ না করলে বাংলাদেশের ইতিহাস অন্যরকম হতো। ছেষট্টিতে গোলটেবিল বৈঠকের পর বঙ্গবন্ধু যখন ৬ দফা দিলেন তখন আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটি ৬ দফা মেনে নেয়নি। আবুল মনসুর আহমেদ, নান্না মিয়া প্রমুখ মানিক ভাইকে বুঝানোর চেষ্টা করেন যে, শেখ মুজিব ৬ দফা দিয়ে একটা ঐক্যবদ্ধ গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে থমকে দেবার চেষ্টা করছেন। মানিক মিয়া প্রথমে ৬ দফার মধ্যে যেতে চাননি। তখন পাকিসত্মানের সব পত্রিকা ৬ দফার ঘোর বিরোধিতা শুরম্ন করে। রংপুরের মশিউর রহমান যাদুমিয়া পার্লামেন্টে বঙ্গবন্ধুর ফাঁসির দাবি তুলেছেন। কমিউনিষ্টরাও বঙ্গবন্ধুকে সিআইয়ের দালাল বলছে এই অবস্থায় শেখ মুজিব মানিক মিয়াকে বলেন, আপনি কলম ধরেন, আরতো বাঁচি না। উলেস্নখ্য, বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ বন্ধু সিরাজুদ্দীন হোসেন ৬ দফার পড়্গে অবস্থান নেওয়ায় মানিক ভাইকে ৬ দফার পড়্গে নিয়ে আসা সহজতর হয়ে ওঠে। মুজিব ভাই মানিক ভাইকে ৬ দফার পড়্গে কলম ধরতে বললেন, তখন পর্যনত্ম মানিক ভাই ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে আগে আইউবকে তাড়ানোর পড়্গপাতী ছিলেন।
রাজহংসের মতো গায়ে পানি না লাগিয়ে হংসরাজ সাজা আর কোন কিছুকে ভাল করে না বুঝে দূর থেকে বড় বড় মনত্মব্য করা এখনকার কোন কোন কলামনিষ্টের কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু মানিক ভাই এ ধরনের কলামনিষ্ট ছিলেন না। তিনি যা করতেন সমসত্মটাতেই তার বিশ্বাস ছিলো। কোন কিছু করার আগে তার বিশ্বাস স্থাপিত হতো। আর যেটা একবার বিশ্বাস করতেন মাথায় কাফনের কাপড় পরে তা করতেন। তাই তিনি রাজনৈতিক নেতা না হয়েও ত্যাগের ড়্গেত্রে পিছপা হননি। ইত্তেফাক বন্ধ করে দেয়া হলেও তিনি ছিলেন তাঁর লড়্গ্যে দৃঢ়। এখন অনেকে বলে থাকেন তখনকার দিনে সাংবাদিকতা সহজ ছিলো। কিন্তু বিষয়টি তলিয়ে দেখলে তার উল্টোটাই প্রমাণিত হবে। মানিক ভাই ও সিরাজ ভাই যে ধারায় সাংবাদিকতা করেছেন, সে ধারায় লোভ-লালসা, প্রলোভন-রক্তচড়্গুকে পরোয়া করা বা কাউকে খুশি বা তোষামোদ করার সামান্যতম মনোবৃত্তিই ছিল না তাদের।
চারিত্রিক দৃঢ়তা, নৈতিক বল, অসীম সাহস এবং কর্তব্যের প্রতি নিষ্ঠা ও অসহায় জনগণের পাশে অকুতোভয়ে থাকার জন্য তারা সদা ব্যাকুল থাকতেন। তাই জনগণ তাদেরকে বিশ্বাস করতো এবং তারাও জনগণের বিশ্বাস ধরে রাখতে সমর্থ হয়েছিলেন। মানিক ভাইর সাংবাদিকতার আদর্শ ছিলো বাংলাদেশের স্বাধিকার ও গণতান্ত্রিক অধিকারকে প্রতিষ্ঠিত করা। মানিক ভাই রাজনীতির জন্য সাংবাদিকতা করেছিলেন। পাকিসত্মান টাইমসের সাংবাদিক জেড এ সুলেরীকে লড়্গ্য করে মানিক ভাই একবার লিখেছিলেন “আপনি সাংবাদিকতার জন্য রাজনীতি করেন আর আমি রাজনীতির জন্য সাংবাদিকতা করি।”
মানিক ভাইয়ের ইত্তেফাক তখন শুধু একটা অসাধারণ খবরের কাগজ ছিলো না। এটি ছিলো গণতান্ত্রিক ধারায় বাঙালী জাতীয়তাবাদ এবং লড়্গ্য অর্জনের খবরের কাগজ। তাই ছাত্রলীগের রাজনীতিতে বিশ্বাসীরা ফেরি করে ইত্তেফাক বিক্রি করতো। আমরা ইত্তেফাক বিক্রি করতাম।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন এক ধারাবাহিক সংগ্রামের ফসল। সাতচলিস্নশে পাকিসত্মান অর্জিত হবার অব্যবহিত পর থেকে সামরিক এবং বেসামরিক ব্যুরোক্রেসি দেশটি থেকে গণতন্ত্রকে নির্বাসনে পাঠাবার পাঁয়তারা শুরম্ন করে। শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেরেবাংলা, মাওলানা ভাসানী, বঙ্গবন্ধুসহ বাঙালিদের হয়ে কথা বলতে চাওয়া রাজনীতিক, শিল্পী-সাহিত্যিক সাংবাদিকদের উপর খড়গ নেমে আসতে থাকে। বাঙালিরা পাকিসত্মানকে একটি সবল ও সফল রাষ্ট্র বানানোর জন্য নিজেদের বিভিন্ন ন্যায্য পাওনাও ত্যাগ করতে পরামুখ হয়নি অথচ বাঙালিদের উপর বারবারই মিথ্যা ইলজাম চাপিয়ে দিয়েছে শাষকবর্গ। যখনই মানিক ভাই, সিরাজ ভাইরা আমাদের স্বায়ত্ত্বশাষণের দাবী কিংবা অন্যান্য গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কলম ধরেছেন কিংবা হক ভাসানী সোহরাওয়ার্দী মুজিবরা আন্দোলনের সূচনা ঘটিয়েছেন তখনই তাদেরকে ‘ভারতের চর’ অভিধায় অভিহিত করেছে ঐ গণবিরোধী সব শাষক। রবীন্দ্রনাথকে এখানকার বাঙালির চেতনা থেকে অপসারণের সে কি ব্যর্থ প্রয়াস; সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধিয়ে আমাদেরকে সংকটে নিড়্গেপ করতে ওরা কতই না কসরত করেছে সেদিন, এমনি হাজারো উপায়ে পশ্চিম পাকিসত্মানের গণবিরোধী শাষকেরা পাকিসত্মানের সংখ্যাগুরম্ন বাঙালিদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে। কিন্তু মানিক মিয়া ও তার ইত্তেফাক এসব ড়্গেত্রেই ছিল সোচ্চারকণ্ঠ। সকল ভ্রূকুটিকে উপেড়্গা করে মানিক ভাই-সিরাজ ভাই গণমানুষের মনে প্রত্যয়ের ও সংগ্রামী চেতনার বীজ বপণ করে দিয়েছিলেন। আর নিজেরা হয়ে উঠেছিলেন আমাদের সকলের কাছে অনির্বাণ দীপশিখাতুল্য। আমরা মানিক ভাই-এর সেই আলোর রশ্মিতে পথ চলছি আজও।
[লেখক : স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি]
মানিক ভাই এদেশের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে শামিল সকল রাজনৈতিক নেতা-কর্মীর প্রেরণাস্থল ছিলেন। ১নং রামকৃষ্ণ মিশন রোডের সেই পুরনো দোতলা দালানের নীচের একটি কড়্গে ইজি চেয়ারে গা হেলান দিয়ে বসে তিনি তার কালজয়ী কলাম ‘রাজনৈতিক মঞ্চের’ ডিক্টেশন যখন দিতেন তখন একজন সত্যনিষ্ঠ জনদরদী ও অসীম সাহসী ব্যক্তিত্বের স্পষ্ট ছাপ তার চোখে মুখে ফুটে উঠতো। আপাত দৃষ্টিতে তাকে বেশ রাশভারী ও রাগী বলে মনে হলেও অনত্মরে তিনি ছিলেন কুসুমের মতই কোমল।
আমার সৌভাগ্য যে, আমি ইত্তেফাকের মানিক ভাই ও সিরাজ ভাইয়ের স্নেহচ্ছায়ায় বেড়ে উঠেছিলাম। ষাটের দশক এদেশের রাজনীতিতে একটি টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে দেখা দিয়েছিল; কিন্তু এর পটভূমি রচনায় শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের অনেক ত্যাগ আর অক্লানত্ম পরিশ্রম করতে হয়েছিল। যাহোক ষাটের দশকে সিরাজুদ্দীন হোসেন আমাকে মানিক ভাইয়ের হাওলা করে দেন।
মানিক ভাই তখন এ অঞ্চলের রাজনৈতিক গগনে মধ্যাহ্নের সূর্যের মতই জ্বল জ্বল করছেন। দৈনিক ইত্তেফাকে রাজনীতির অসাধারণ নৈপুণ্যপূর্ণ বিশেস্নষণ এবং আপামর জনসাধারণের করণীয় কর্তব্য সম্পর্কে দিক-নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন।
সত্য ও সুন্দরের সাধক মানিক ভাই ছিলেন আপাদমসত্মক মানবদরদী ও মহৎপ্রাণ। শত প্রলোভনের ও হাজারো রক্ত চড়্গুর সামনে তিনি সর্বদাই ছিলেন হিমালয়ের মত কটল। মানিক ভাই প্রবীণ ও নবীনের মধ্যে এবং প্রগতিশীল ও রড়্গণশীলদের মধ্যে একটি সেতুর মতন ছিলেন। আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক দার্শনিক ছিলেন তিনি। তার লেখনী, চিনত্মাধারা আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের কাছে রাজনৈতিক দর্শন ও নির্দেশ হিসেবেই প্রতিভাত হত। “মোসাফির” এর “রাজনৈতিক মঞ্চ” না পড়ে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা দিনের কাজ শুরম্ন করতেন না। কেননা, তার মধ্যেই থাকত তাদের জন্য প্রকৃত দিক-নির্দেশনা।
মানিক ভাইদের আমলে তারা সাংবাদিকতায় ও রাজনীতিতে অকুতোভয়, আদর্শবাদী, জনমুখী, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে কাজ করেছেন। আদর্শ ও নীতির প্রশ্নে মানিক ভাই, সিরাজ ভাইরা কখনো আপোষ করেননি। তারা সব সময় দেশ ও মানুষকে সাথে নিয়ে এগিয়ে গেছেন অভীষ্ঠ লড়্গ্যে। এর বিনিময়ে তারা পেয়েছেন মানুষের অপরিসীম ভালবাসা-শ্রদ্ধা। সেসব দিনগুলোতে রাজনীতিকের প্রতি, সাংবাদিকের প্রতি মানুষের কোন ভালবাসা, শ্রদ্ধাবোধের অভাব ছিলো না। আজ রাজনীতিকদের প্রতি, সাংবাদিকতার প্রতি সেই শ্রদ্ধা-ভালবাসা মানুষ আর বজায় রাখতে পারছে না। একটি কথা খুব জোরের সঙ্গেই বলতে পারি, তা হোল: এমন- অনেক ঘটনা আছে যেখানে ইত্তেফাকের মানিক ভাই ও সিরাজ ভাই হসত্মড়্গেপ না করলে বাংলাদেশের ইতিহাস অন্যরকম হতো। ছেষট্টিতে গোলটেবিল বৈঠকের পর বঙ্গবন্ধু যখন ৬ দফা দিলেন তখন আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটি ৬ দফা মেনে নেয়নি। আবুল মনসুর আহমেদ, নান্না মিয়া প্রমুখ মানিক ভাইকে বুঝানোর চেষ্টা করেন যে, শেখ মুজিব ৬ দফা দিয়ে একটা ঐক্যবদ্ধ গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে থমকে দেবার চেষ্টা করছেন। মানিক মিয়া প্রথমে ৬ দফার মধ্যে যেতে চাননি। তখন পাকিসত্মানের সব পত্রিকা ৬ দফার ঘোর বিরোধিতা শুরম্ন করে। রংপুরের মশিউর রহমান যাদুমিয়া পার্লামেন্টে বঙ্গবন্ধুর ফাঁসির দাবি তুলেছেন। কমিউনিষ্টরাও বঙ্গবন্ধুকে সিআইয়ের দালাল বলছে এই অবস্থায় শেখ মুজিব মানিক মিয়াকে বলেন, আপনি কলম ধরেন, আরতো বাঁচি না। উলেস্নখ্য, বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ বন্ধু সিরাজুদ্দীন হোসেন ৬ দফার পড়্গে অবস্থান নেওয়ায় মানিক ভাইকে ৬ দফার পড়্গে নিয়ে আসা সহজতর হয়ে ওঠে। মুজিব ভাই মানিক ভাইকে ৬ দফার পড়্গে কলম ধরতে বললেন, তখন পর্যনত্ম মানিক ভাই ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে আগে আইউবকে তাড়ানোর পড়্গপাতী ছিলেন।
রাজহংসের মতো গায়ে পানি না লাগিয়ে হংসরাজ সাজা আর কোন কিছুকে ভাল করে না বুঝে দূর থেকে বড় বড় মনত্মব্য করা এখনকার কোন কোন কলামনিষ্টের কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু মানিক ভাই এ ধরনের কলামনিষ্ট ছিলেন না। তিনি যা করতেন সমসত্মটাতেই তার বিশ্বাস ছিলো। কোন কিছু করার আগে তার বিশ্বাস স্থাপিত হতো। আর যেটা একবার বিশ্বাস করতেন মাথায় কাফনের কাপড় পরে তা করতেন। তাই তিনি রাজনৈতিক নেতা না হয়েও ত্যাগের ড়্গেত্রে পিছপা হননি। ইত্তেফাক বন্ধ করে দেয়া হলেও তিনি ছিলেন তাঁর লড়্গ্যে দৃঢ়। এখন অনেকে বলে থাকেন তখনকার দিনে সাংবাদিকতা সহজ ছিলো। কিন্তু বিষয়টি তলিয়ে দেখলে তার উল্টোটাই প্রমাণিত হবে। মানিক ভাই ও সিরাজ ভাই যে ধারায় সাংবাদিকতা করেছেন, সে ধারায় লোভ-লালসা, প্রলোভন-রক্তচড়্গুকে পরোয়া করা বা কাউকে খুশি বা তোষামোদ করার সামান্যতম মনোবৃত্তিই ছিল না তাদের।
চারিত্রিক দৃঢ়তা, নৈতিক বল, অসীম সাহস এবং কর্তব্যের প্রতি নিষ্ঠা ও অসহায় জনগণের পাশে অকুতোভয়ে থাকার জন্য তারা সদা ব্যাকুল থাকতেন। তাই জনগণ তাদেরকে বিশ্বাস করতো এবং তারাও জনগণের বিশ্বাস ধরে রাখতে সমর্থ হয়েছিলেন। মানিক ভাইর সাংবাদিকতার আদর্শ ছিলো বাংলাদেশের স্বাধিকার ও গণতান্ত্রিক অধিকারকে প্রতিষ্ঠিত করা। মানিক ভাই রাজনীতির জন্য সাংবাদিকতা করেছিলেন। পাকিসত্মান টাইমসের সাংবাদিক জেড এ সুলেরীকে লড়্গ্য করে মানিক ভাই একবার লিখেছিলেন “আপনি সাংবাদিকতার জন্য রাজনীতি করেন আর আমি রাজনীতির জন্য সাংবাদিকতা করি।”
মানিক ভাইয়ের ইত্তেফাক তখন শুধু একটা অসাধারণ খবরের কাগজ ছিলো না। এটি ছিলো গণতান্ত্রিক ধারায় বাঙালী জাতীয়তাবাদ এবং লড়্গ্য অর্জনের খবরের কাগজ। তাই ছাত্রলীগের রাজনীতিতে বিশ্বাসীরা ফেরি করে ইত্তেফাক বিক্রি করতো। আমরা ইত্তেফাক বিক্রি করতাম।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন এক ধারাবাহিক সংগ্রামের ফসল। সাতচলিস্নশে পাকিসত্মান অর্জিত হবার অব্যবহিত পর থেকে সামরিক এবং বেসামরিক ব্যুরোক্রেসি দেশটি থেকে গণতন্ত্রকে নির্বাসনে পাঠাবার পাঁয়তারা শুরম্ন করে। শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেরেবাংলা, মাওলানা ভাসানী, বঙ্গবন্ধুসহ বাঙালিদের হয়ে কথা বলতে চাওয়া রাজনীতিক, শিল্পী-সাহিত্যিক সাংবাদিকদের উপর খড়গ নেমে আসতে থাকে। বাঙালিরা পাকিসত্মানকে একটি সবল ও সফল রাষ্ট্র বানানোর জন্য নিজেদের বিভিন্ন ন্যায্য পাওনাও ত্যাগ করতে পরামুখ হয়নি অথচ বাঙালিদের উপর বারবারই মিথ্যা ইলজাম চাপিয়ে দিয়েছে শাষকবর্গ। যখনই মানিক ভাই, সিরাজ ভাইরা আমাদের স্বায়ত্ত্বশাষণের দাবী কিংবা অন্যান্য গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কলম ধরেছেন কিংবা হক ভাসানী সোহরাওয়ার্দী মুজিবরা আন্দোলনের সূচনা ঘটিয়েছেন তখনই তাদেরকে ‘ভারতের চর’ অভিধায় অভিহিত করেছে ঐ গণবিরোধী সব শাষক। রবীন্দ্রনাথকে এখানকার বাঙালির চেতনা থেকে অপসারণের সে কি ব্যর্থ প্রয়াস; সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধিয়ে আমাদেরকে সংকটে নিড়্গেপ করতে ওরা কতই না কসরত করেছে সেদিন, এমনি হাজারো উপায়ে পশ্চিম পাকিসত্মানের গণবিরোধী শাষকেরা পাকিসত্মানের সংখ্যাগুরম্ন বাঙালিদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে। কিন্তু মানিক মিয়া ও তার ইত্তেফাক এসব ড়্গেত্রেই ছিল সোচ্চারকণ্ঠ। সকল ভ্রূকুটিকে উপেড়্গা করে মানিক ভাই-সিরাজ ভাই গণমানুষের মনে প্রত্যয়ের ও সংগ্রামী চেতনার বীজ বপণ করে দিয়েছিলেন। আর নিজেরা হয়ে উঠেছিলেন আমাদের সকলের কাছে অনির্বাণ দীপশিখাতুল্য। আমরা মানিক ভাই-এর সেই আলোর রশ্মিতে পথ চলছি আজও।
[লেখক : স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি]