পুলিশ প্রশাসনে নীরব অস্থিরতা
পুলিশ প্রশাসনে নীরব অস্থিরতা
অধীনস্তদের দাপটে তটস্থ পদস্থরা, বদলি বাণিজ্য চলছে অবাধে কামর"জ্জামান খান : বর্তমান সরকার ড়্গমতায় আসার পর থেকেই পুলিশ প্রশাসনে নীরব অস্থিরতা বিরাজ করছে। একই সঙ্গে এর চেইন অব কমান্ড অনেকাংশেই ভেঙে পড়েছে। পেশাদার কর্মকর্তাদের মধ্যে কাজ করছে চরম হতাশা। আর সিনিয়র কর্মকর্তাদের মধ্যে একদিকে যেমন বদলি এবং ওএসডি আতঙ্ক বিরাজ করছে অন্যদিকে বিরাজ করছে ড়্গোভ। বেড়ে গেছে তদবির পার্টির দাপট। পুলিশ সদর দপ্তর থেকে শুর" করে সকল মেট্রোপলিটন সদর দপ্তর, ডিআইজি ও এসপি অফিসে তদবির পার্টির নিয়মিত দৌড়ঝাঁপে ব্যাহত হ"েছ পুলিশের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড। এরই মধ্যে রাজধানীসহ সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বেহাল চিত্র ফুটে উঠেছে। অপরাধীদের ধরতে নানা নামে অভিযানেও মিলছে না সফলতা। এলিট ফোর্স র্যাবের কাজেও ভাটা পড়েছে। কার্যত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সংকট উত্তরণে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর নানা উদ্যোগ গ্রহণ এবং পুলিশকে ঢেলে সাজানোর ঘোষণা সত্ত্বেও তাদের কাজে যেন কোনোভাবেই গতি আসছে না। মাঠে কর্মরত পুলিশের মতে তাদের যেটুকু তৎপরতা রয়েছে তার সবই চাকরি টিকিয়ে রাখার জন্য মাত্র! খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমান সরকার ড়্গমতায় আসার পর পুলিশ আগের রেওয়াজে আপনা আপনিই তার রঙ বদলে আওয়ামী লীগার বনে গেছে। বিশেষ করে গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের বিপুল বিজয়ের পর কনস্টেবল থেকে শুর" করে ওপরের কর্মকর্তারা নিজ নিজ এলাকার সাংসদ ও নেতাদের আত্মীয় পরিচয়ে তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে ড্যাম কেয়ার করে চলছেন। অনেকে রেঞ্জ ও ডিআইজি অফিসে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার অজ্ঞাতসারেই চলছে বদলি কার্যক্রম। সাব ইন্সপেক্টর থেকে এসপি পদমর্যাদার অনেক কর্মকর্তার দৌড় এখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পর্যন্ত। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে পুলিশ সদর দপ্তরকে না জানিয়েও ঘটছে অনেক অদল-বদলের কাজ।পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বদলি বাণিজ্যে ছাত্রলীগের ইউনিয়ন কমিটির নেতৃবৃন্দ থেকে শুর" করে আওয়ামী লীগের অনেক কেন্দ্রীয় নেতাই তৎপর রয়েছেন। বদলির আবেদনে থাকছে স্থানীয় সাংসদের ‘জোর সুপারিশ।’ আর অনেক থানার ওসি (ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার কর্মকর্তা) নিজেদের বেশ কয়েকজন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছের লোক পরিচয়ে তার পদস্থ কর্মকর্তাকে পাশ কাটিয়ে চলছেন। এর মধ্যে রাজধানীর ৩৫ থানার মধ্যে ১৮ থানার ওসির বাড়ি গোপালগঞ্জে হওয়ায় পুলিশের মধ্যে নানা শোরগোল রয়েছে। একই সঙ্গে বদলি বাণিজ্যের প্রক্রিয়ায় কন্ট্রাক্টে লাখ লাখ টাকা নেয়া হ"েছ বলেও সর্বত্র কানাঘুষা রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীর কাছের লোক পরিচয়ে বদলি বাণিজ্যে নেমেছে একটি মহল। তারা দিনভর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ঘুরে বেড়ায়! পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, গত বিএনপি-জামাত জোট সরকারের সময় দাপুটে অনেক কর্মকর্তা ভোল পাল্টে ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগ নেতা ছিলেন বলে জোর দাবি করছেন।সূত্র মতে, পুলিশের ইন্সপেক্টর থেকে ডিআইজি পর্যন্ত পদে এরই মধ্যে ৪ দফায় বড় ধরনের রদবদল হয়েছে। ওএসডি করা হয়েছে ৫ কর্মকর্তাকে। কনস্টেবল থেকে সাব ইন্সপেক্টর পর্যন্ত রদবদলের ইয়ত্তা নেই। এ অবস্থায় পুলিশের সবাই নিজের পছন্দসই স্থানে বদলির চেষ্টায় ব্যস্ত! আর এসব বদলির ঘটনা কন্ট্রাক্টে ঘটছে বলে পুলিশের মধ্যে চাউর রয়েছে। আর লাখ লাখ টাকা ‘ব্যয়’ করে পছন্দের স্থানে বদলি হয়েই ঐ পুলিশ সদস্য সেই টাকা তোলার চেষ্টায় ব্যস্ত হয়ে পড়ায় একদিকে যেমন এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে অন্যদিকে তার তদন্তাধীন থাকা মামলাগুলোর ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হ"েছ।নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন, পুলিশের বেতন-ভাতাসহ সুযোগ-সুবিধা যতোই বাড়ানো হোক না কেন যতোদিন কাজের স্বাধীনতা না মিলবে ততোদিন পুলিশের দুর্নাম ঘুচবে না। রাজনৈতিক দলগুলোকে মুখে অস্বীকার করলেও কার্যত পুলিশকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করার কারণেই পুলিশ রাজনৈতিক নেতাদের দাপটে চলে! অন্যদিকে গত জোট সরকারের সময় রাজনৈতিক বিবেচনায় পদোন্নতি ও পোস্টিং পাওয়া কর্মকর্তারা চাকরি হারানো, ওএসডি বা শাস্তি আতঙ্কে রয়েছেন। সংশ্লিষ্টদের মতে, পুলিশের ভেতরকার অবস্থা ভালো নয়।এদিকে অতিরিক্ত আইজিপিদের মধ্যে পদোন্নতি এবং সিনিয়র-জুনিয়র নিয়ে রয়েছে নীরব ড়্গোভ। পরবর্তী আইজিপি হওয়ার লবিং-এ রয়েছেন বেশ কয়েকজন। এড়্গেত্রে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘনের কানাকানিও চলছে। একাধিক পুলিশ সুপার নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ প্রতিবেদককে জানান, কনস্টেবল বদলির ড়্গেত্রেও সাংসদের লিখিত ও মৌখিক সুপারিশ থাকছে! গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় কর্মকর্তারা অনেকটা স্বস্তিতে কাজ করেছেন দাবি করে এসপিরা অভিযোগ করেন - অনেক ওসির দাপটে চাকরি করাই দুষ্কর হয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে ৫ পুলিশ কর্মকর্তা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন।