শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণের আশ্বাস প্রধানমন্ত্রীর


শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণের আশ্বাস প্রধানমন্ত্রীর
Dial 2324 from your mobile for latest news
ঢাকা, মে ০১ - শ্রমিকদের সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাজার দরের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা হবে। তিনি বলেন, "সব বন্ধ কল-কারখানা খুলে দেওয়ারও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে আমরা চট্টগ্রাম কেমিকেল কমপ্লেক্স খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা নিয়েছি।" শুক্রবার বিকেলে পল্টন ময়দানে জাতীয় শ্রমিক লীগের শ্রমিক-জনসভায় প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। তিনি বলেন, "এ দেশে কেউ খাবে কেউ খাবে না- তা হবে না। শ্রমিক ও দিন মজুরদের অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে।" উৎপাদন বাড়াতে শ্রমিক, মালিক ও সরকারের সমন্বয়ে ত্রিপক্ষীয় কমিটি গঠন করা হবে বলে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী জানান। একইসঙ্গে শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণে মজুরি কমিশন গঠনের ব্যবস্থাও নেওয়া হবে বলে জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, "শ্রমিকদের পরিবারের জন্য বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষাসহ সব ব্যবস্থা করা হবে।" হাসিনা বলেন, "মহাজোট সরকার কল-কারখানা বন্ধ করায় বিশ্বাস করে না। এ সরকার বন্ধ কল-কারখানা চালু করতে চায়। বন্ধ শিল্প কল-কারখানা যেনো শ্রমিকদের অংশীদারিত্বে চালু হয় সে ব্যবস্থা করা হবে।" গণতন্ত্রকে সুসংহত করতে দেশবাসীর সহযোগিতা চেয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, "দেশে অনেক ষড়যন্ত্র চলছে। আমি আপনাদের সহযোগিতা চাই। এ ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে গণতন্ত্রকে সুসংহত করতে হবে। দেশকে এগিয়ে নিতে হবে।" বিগত বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের সমালোচনা করে হাসিনা বলেন, "জোট সরকার দুর্নীতি ও অপশাসনের মাধ্যমে দেশে নানা সমস্যার সৃষ্টি করেছে। অনেক শিল্প কারখানা তারা বন্ধ করে দিয়েছে। বিদ্যুৎসহ নানাবিধ সমস্যা তাদেরই সৃষ্টি।" এ সব সমস্যা সমাধানে প্রধানমন্ত্রী জনগণের কাছে সময় চান। প্রধানমন্ত্রী বিকেল ৫ টা ১০ মিনিটে সভাস্থলে এসে পৌঁছান। ৫টা ৫১ মিনিট থেকে ৬টা ১০ মিনিট পর্যন্ত তিনি ভাষণ দেন। চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি সরকার গঠনের পর এ প্রথম শেখ হাসিনা কোনো জনসভায় ভাষণ দিলেন। সরকার গঠনের পরপরই পল্টন ময়দানে ছাত্রলীগের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে তিনি প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন। তবে সেটি জনসভা ছিলো না। এর আগে সর্বশেষ গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর পল্টনে একটি নির্বাচনী মহাসমাবেশে ভাষণ দিয়েছিলেন তিনি। হাসিনা তার বক্তব্যের শুরুতেই জানান, সরকার ধান ও চালের মুল্য নির্ধারণ করেছে। এবার ১২ লাখ মেট্রিক টন ধান ও চাল সংগ্রহ করা হবে। বিডিআর সদর দপ্তরে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে তিনি বলেন, "গত চার মাসে আমাদের অনেক সমস্যার সমাধান করতে হয়েছে। অনেক অনাকাঙ্খিত ঘটনা মোকাবেলা করতে হয়েছে।" ২৫ ফেব্র"য়ারি পিলখানার ঘটনার পর প্রধান বিরোধীদল বিএনপি'র কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, "সারাদেশে বিডিআরের ১২ টি সেক্টরে বিদ্রোহ মোকাবেলা করতে হয়েছিল। দেশকে গৃহযুদ্ধের হাত থেকে আমরা রক্ষা করেছি। প্রত্যেকটি পরিবারকে রক্ষা করা হয়েছিল। তারপরও আমরা ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাকে রক্ষা করতে পারিনি। কিন্তু আমাদের বিরোধীদল এতে খুশী না। গৃহযুদ্ধ হলে আরও লাশ পড়লে বিরোধীদল খুশী হতো।" আওয়ামী লীগ প্রতিশোধে বিশ্বাস করে না- এ মত ব্যক্ত করে হাসিনা বলেন, "সরকার শান্তিপূর্ণভাবে দেশ পরিচালনা করতে চায়।" প্রধানমন্ত্রী বিদ্যুৎ এবং রাজধানীর পানি সমস্যার জন্য বিগত জোট সরকারকে দায়ী করেন। জোট সরকার বিদ্যুতের নামে বিশ হাজার কোটি টাকা লুটপাট করেছে বলেও তিনি আভিযোগ করেন। তিনি বলেন, "জোট সরকার বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান করতে পারেনি। দিয়েছে শুধূ খাম্বা। তারাই বিদ্যুতের এ সমস্যা সৃষ্টি করেছে। সায়েদাবাদে একটি পানি শোধনাগার ছিল। কিন্তু তারা আরেকটি শোধনাগার করেনি। কারণ তাতে লুটপাট করা যাবে না।" প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে ধৈর্য ধরার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, "সমস্যার সমাধান হবে। বিদ্যুত তো আর রাতারাতি হয় না।" হাসিনা বলেন, "বিদ্যুতের নামে জোট সরকার জনগণের যে টাকা-পয়সা লুটপাট করেছে, তা ফেরত দিতে হবে।" জনগণের জীবনমানের উন্নয়নে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসার আহবান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, "জনগণের কল্যাণে সরকারের নির্বাচিত প্রতিনিধি ও উপজেলা চেয়ারম্যানরা যে যার জায়গা থেকে কাজ করবে। সরকার সে কাজে সবাইকে সহায়তা দিয়ে যাবে।" দেশে জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করে বিগত জোট সরকার বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ� করেছে বলেও প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, "২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ও দশ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানের সঙ্গে ওই সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা যে জড়িত ছিলেন তা এখন বেরিয়ে আসছে। তারা শুধু জঙ্গিবাদ, দলীয়করণ, দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের সৃষ্টি করেছে। দেশবাসী ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে এর জবাব দিয়েছে।" শ্রমিক লীগের সভাপতি আব্দুল মতিন মাস্টারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শ্রমিক-জনসভায় আরও বক্তব্য রাখেন, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক, শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন, শ্রম প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এ আজিজ ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলামসহ শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। জনসভা পরিচালনা করেন, শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক রায় রমেশ চন্দ্র। সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন- আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য তোফায়েল আহমদ, সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রমুখ। ধর্মগ্রন্থ পাঠের মধ্য দিয়ে বিকেল সাড়ে তিনটায় শ্রমিক লীগের শ্রমিক-জনসভা শুরু হয়। জনসভা উপলক্ষে পল্টন ময়দানসহ আশপাশের এলাকায় ছিল কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

Popular posts from this blog

THE CONSTITUTION OF THE BANGLADESH AWAMI LEAGUE

ইতিহাসবন্ধনী

ব্রিগেডিয়ার বারীর যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা