তরুণ প্রজন্মের প্রতি নজরুলের ওপর গবেষণার আহ্বান রাষ্ট্রপতির

তরুণ প্রজন্মের প্রতি নজরুলের ওপর গবেষণার আহ্বান রাষ্ট্রপতির
ঢাকা, বাংলাদেশ, ২৫ মে (বাসস) : রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের বহুমুখী কর্ম মানবজাতির অনুপ্রেরণার চিরন্তন উৎস হওয়ায় এসবের ওপর আরো গবেষণার জন্য তরুণ প্রজন্মের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। আজ ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১১০তম জন্মজয়ন্তী উদযাপনে রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানের উদ্বোধনকালে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘মানবতার কল্যাণে তাঁর ক্ষুরধার লেখনী আমাদের প্রেরণার চিরন্তন উৎস।’ তথ্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এবং অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী এবং কবি নাতনী বেগম খিলখিল কাজী।রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশের ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধসহ বাঙালির প্রতিটি আন্দোলনে, সংগ্রামে তাঁর গান ও কবিতা অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে আমাদের শক্তি ও সাহস যুগিয়েছে। তিনি বলেন, নজরুল জাতির আলোর দিশারী এবং তাঁর কবিতা ও গান আমাদের সকলের মূল্যবান সম্পদ। রাষ্ট্রপতি বলেন, স্বাধীনতার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যথাযোগ্য মর্যাদায় মুক্ত স্বাধীন বাংলাদেশে কবিকে নিয়ে এসেছিলেন। ভারতে কলকাতার এক জীর্ণ পরিবেশে ১৯৪২ সাল থেকে বাকহীন ও সম্বিতহীন কবিকে ৩০ বছর কাটাতে হয়েছিল। রাষ্ট্রপতি আরো বলেন, স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশ সরকার কবি ও কবি পরিবারের যাবতীয় দায়দায়িত্ব গ্রহণ করে। সরকার তাঁদের বসবাসের জন্য ঢাকার ধানমন্ডিতে একটি বাড়িও প্রদান করে। ১৯৭৬ সালে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত কবি এখানেই ছিলেন। কবি নজরুলকে বাংলা সাহিত্যের উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে বর্ণনা করে রাষ্ট্রপতি বলেন, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে আমাদের চিন্তা ও বিশ্বাসে কবি বেঁচে থাকবেন। তিনি বলেন, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অপ্রতিদ্বন্দ্বী যুগে যে কয়েকজন গগণস্পর্শী কবি স্বমহিমায় ভাস্বর তাঁদের মধ্যে কবি নজরুলের স্থান শীর্ষে। তিনি আরো বলেন, নজরুলের কবিতা তারুণ্য ও উচ্ছ্বাসের প্রতীক। রাষ্ট্রপতি বলেন, নজরুলের জন্ম তৎকালীন বৃটিশ ভারতে। ঔপনেশিক শাসন শোষণ আর বর্ণ বিভেদের বেড়াজালে এ অঞ্চলের মানুষ তখন দিশেহারা। শোষণের শৃঙ্খল থেকে বেরিয়ে আসার জন্য মানুষ যখন মুক্তির নেশায় উন্মুখ, তখনই ধুমকেতুর মত কবি নজরুলের আর্বিভাব। তিনি বলেন, নজরুল সামপ্রদায়িকতা, ধর্মান্ধতা ও ঔপনিবেশিক শাসনের প্রাচীরে আঘাত হানেন এবং সংগ্রামী চেতনায় মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে সাম্যের বাণী ছড়িয়ে দেন চারদিকে। রাষ্ট্রপতি বলেন, তাঁর সেই দ্রোহ মিশ্রিত বাণী জলোচ্ছ্বাসের মত প্লাবিত করে সমগ্র জাতিকে। সকল বাধা-বিপত্তি ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হওয়ার জন্য আমরা তাই আশ্রয় খুঁজি নজরুলে।রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান বলেন, ‘কাজী নজরুল ইসলাম শেকল ভাঙতে চেয়েছিলেন। বাঙালির পরাধীনতার গ্লানি মুছে ফেলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু কবি অকালে রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ায় তাঁর সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি। তাঁর লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়নে এগিয়ে আসেন আরেক মহাপুরুষ। তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এই দু’জনের জীবনাচার, চিন্তার গভীরতা ও কর্মে কি অপূর্ব মিল- যেন একই বৃন্তে দু’টি ফুল।’জিল্লুর রহমান বলেন, ‘একজন জাতীয় কবি, আরেকজন জাতির স্থপতি। দু’জনই সাধারণ মানুষের মুক্তির সংগ্রামে শাসকগোষ্ঠীর নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।’তিনি বলেন, ‘কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মদিনে তাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকেও শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করতে হয়।’আবুল কালাম আজাদ বলেন, নজরুল বাংলা সাহিত্যে নতুন ধারা ও শৈলী নিয়ে এসেছিলেন, যা বাঙালি জাতি গঠনে প্রভূত সহায়ক হয়েছে।আজাদ বলেন, নজরুলের শক্তিশালী গান ও কবিতা আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধসহ সকল জাতীয় আন্দোলনে ছিল প্রেরণার উৎস।তিনি বলেন, আমাদের অনেকের বিশ্বাস মুক্তিযুদ্ধের সময় বহু তেজোদ্দীপ্ত ‘জয় বাংলা’ স্লোগান নজরুলের সৃষ্টিকর্ম থেকেই এসেছে।তিনি সকল কবি-লেখককে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগ্য ও গতিশীল নেতৃত্বে ‘দিন বদলের সনদ’ বাস্তবায়নে বর্তমান সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টায় সামিল হওয়ার আহ্বান জানান।প্রফেসর জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী নজরুলের জীবন ও সৃষ্টি সম্পর্কে এক সারগর্ভ বর্ণনা উপস্থাপন করেন।খিলখিল কাজী বিশ্ব সাহিত্য অঙ্গনে যথাযথ মূল্যায়নের জন্য নজরুলের বিভিন্ন রচনা অনুবাদের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।মন্ত্রিসভার সদস্য, কবি-লেখক, সুপ্রিমকোর্টের বিচারক, কূটনীতিক, তিন বাহিনীর প্রধানগণ, সচিব, সংসদ সদস্য ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।পরে রাষ্ট্রপতি একটি বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।

Popular posts from this blog

THE CONSTITUTION OF THE BANGLADESH AWAMI LEAGUE

ইতিহাসবন্ধনী

ব্রিগেডিয়ার বারীর যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা