খালেদা জিয়ার নির্বাচনী ব্যয়ের অর্ধকোটি টাকার হিসাব নেই ২২ জানুয়ারির বাতিল নির্বাচন
খালেদা জিয়ার নির্বাচনী ব্যয়ের অর্ধকোটি টাকার হিসাব নেই ২২ জানুয়ারির বাতিল নির্বাচন
আকতার ফারুক শাহিন, বরিশাল থেকে২২ জানুয়ারির বাতিল নির্বাচনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নির্বাচনী ব্যয় বাবদ হাওয়া ভবন থেকে বরিশালে আসা প্রায় অর্ধকোটি টাকার কোন হদিস মিলছে না। ওয়ান-ইলেভেনকালীন জটিলতায় মাঝখানে প্রায় ২ বছর চাপা থাকার পর বিষয়টি নিয়ে আবার মাথা ঘামাতে শুরু করেছে কেন্দ ীয় বিএনপির নীতিনির্ধারক মহল। ইতিমধ্যে একাধিকবার টাকা ফেরত অথবা ব্যয়ের হিসাব চাওয়া হলেও সন্তোষজনক কোন উত্তর দিতে পারেনি স্থানীয় নেতারা। কোথায় কি অবস্থায় ওই টাকা রয়েছে সে সম্পর্কেও কিছুই বলতে পারছেন না তারা। আপাতদৃষ্টিতে পুরো টাকাটাই আতসাৎ হয়ে গেছে বলে মনে করছেন নেতাকর্মীরা। ২২ জানুয়ারির নির্বাচনের পূর্বে বরিশাল সদর আসনে বিএনপির প্রার্থী হতে মাঠে নামেন বেশ কয়েকজন শক্তিশালী প্রার্থী। তৎকালীন সিটি মেয়র জেলা বিএনপি সভাপতি মজিবর রহমান সরোয়ারও ছিলেন এই লাইনে। একপর্যায়ে বিষয়টি জটিল আকার ধারণ করলে বিরোধ এড়াতে বরিশালে দলীয় প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। ঘোষণা অনুযায়ী তার পক্ষে মনোনয়নপত্র দাখিল করে দলের নেতাকর্মীরা। মনোনয়ন দাখিল হলেও মান-অভিমানের পালায় আটকে থাকে নির্বাচনী প্রচারণা। নেতৃস্থানীয় বেশ কয়েকজন হয়ে থাকেন চুপচাপ। এ অবস্থায় ঢাকায় হাওয়া ভবনে বরিশালের বিএনপি নেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসেন দলের তৎকালীন সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব তারেক রহমান। ২০০৭ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে গঠন করা হয় চেয়ারপারসনের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি। এর আহ্বায়ক মনোনীত হন তৎকালীন সিটি মেয়র মজিবর রহমান সরোয়ার। নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠনের পাশাপাশি নির্বাচনী ব্যয়ের একটি সম্ভাব্য হিসাব চাওয়া হয় তার কাছে। নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে ক্যাম্প স্থাপনসহ সবকিছু মিলিয়ে প্রায় কোটি টাকার একটি ব্যয়ের হিসাব দেন তিনি। পরিচয় গোপন রাখার শর্তে জেলা ও মহানগর বিএনপির একাধিক নেতা বলেন, ‘দলীয় চেয়ারপারসনের নির্বাচনী ব্যয়ের ক্ষেত্রে স্থানীয়ভাবে অর্থের সংস্থান করার ইচ্ছা থাকলেও স্থানীয় এক শীর্ষ নেতার বিরোধিতার কারণে তা সম্ভব হয়নি। ফলে সারাদেশে থাকা বেগম জিয়ার ৫টি নির্বাচনী এলাকার মধ্যে একমাত্র বরিশাল থেকেই মোটা অংকের অর্থের দাবি উঠে কেন্দে র কাছে। পুরো বিষয়টি নিয়ে অসন্তুষ্ট হলেও যথাসময়ে টাকা পাঠিয়ে দেয়ার কথা জানান তারেক রহমান।’পরিচয় গোপন রাখার শর্তে বিএনপির সাবেক এক এমপি জানান, ‘প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ৮ জানুয়ারি নির্বাচনী ব্যয়ের প্রথম কিস্তি বাবদ ৫০ লাখ টাকা বরিশালে পাঠায় হাওয়া ভবন। নগরীর মুনছুর কোয়ার্টার এলাকার বাসিন্দা হাওয়া ভবনের এক কর্মকর্তার মাধ্যমে টাকা বুঝে পায় বরিশালের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি। টাকা পাওয়ার পর দিন ৯ জানুয়ারি নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পসংক্রান্ত একটি বৈঠক বসে সদর রোডের জেলা বিএনপি কার্যালয়ে। বৈঠকে নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে নির্বাচনী ক্যাম্প স্থাপন এবং এর দু’দিনের ব্যয়বাবদ মোট ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা বিতরণ করেন স্থানীয় নেতারা। প্রয়োজন অনুযায়ী পরবর্তী সময়ে আরও টাকা পৌঁছে দেয়ার কথাও বলেন তারা। এভাবে কার্যক্রম শুরু হওয়ার মাত্র ১ দিন পর দেশে ঘটে যায় ওয়ান-ইলেভেনের ঘটনা। নির্বাচন বাতিল হওয়ার পাশাপাশি যে যার মতো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়েন দলীয় নেতারা। সেই সঙ্গে অব্যয়িত থেকে যায় প্রায় অর্ধকোটি টাকা।’ ঢাকায় বিএনপির কেন্দ ীয় রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দক্ষিণাঞ্চলের সাবেক এক মন্ত্রী বলেন, ‘ওয়ান-ইলেভেন পরবর্তী সময়ে ওই টাকা ফেরত চেয়ে একাধিকবার যোগাযোগ করেন হাওয়া ভবন কর্মকর্তারা। সরাসরি ফোন করা হয় বরিশালের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়কের কাছে। এমনকি অর্থ প্রদানের সিদ্ধান্ত দেয়া শীর্ষ নেতা পর্যন্ত ফেরত চান টাকা। কিন্তু এ ব্যাপারে কোনরকম সাড়া দেয়নি এখানকার বিএনপি। বেকায়দা পরিস্থিতিতে থাকায় তখন আর এ নিয়ে খুব একটা বাড়াবাড়ি করেনি বিএনপির হাইকমান্ড। টানা ২ বছর কোন উচ্চবাচ্য না হলেও সাম্প্রতিক সময়ে আবার শুরু হয়েছে ওই অর্ধকোটি টাকার আলোচনা। ব্যয় হলে তার হিসাব অথবা বেঁচে যাওয়া টাকা ফেরত পাঠানোর জন্য চাপ দিতে শুরু করেছে দলের নীতিনির্ধারক মহল। তবে বিষয়টিকে খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছেন না এখানকার নেতারা। হিসাব কিংবা বেঁচে যাওয়া টাকা-কোন কিছুই কেন্দে পাঠাচ্ছেন না তারা। এ ব্যাপারে জানতে যোগাযোগ করা হলে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম খান রাজন বলেন, ‘যথাযথভাবেই খরচ করা হয়েছে ঢাকা থেকে নির্বাচনী ব্যয় বাবদ পাঠানো টাকা। তবে ওই ব্যয়ের হিসাব সম্পর্কে এই মুহূর্তে কিছু বলা সম্ভব নয়। দু’বছর আগের এই বিষয় এবং মাঝে ওয়ান-ইলেভেন পরবর্তী অন্যরকম পরিস্থিতিতে এলোমেলো হয়ে গেছে সবকিছু।’ মাত্র দু’দিনের মধ্যে কি করে ৫০ লাখ টাকা খরচ করা হল সে বিষয়ে জানতে চাইলে অবশ্য কোন সদুত্তর দিতে পারেননি এই বিএনপি নেতা।