ইয়াজউদ্দিন পাগল হয়ে যাচ্ছেন !

ইয়াজউদ্দিন পাগল হয়ে যাচ্ছেন !
ঢাকা থেকে রাষ্ট্রপতি পদে আসীন থাকাকালে (২০০৮ সাল) মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন ছিলেন সাবেক রাষ্ট্রপতি ড. ইয়াজউদ্দিন আহমেমদ। ক্ষমতা ত্যাগের ছয় মাস আগে তার মানসিক রোগ শনাক্ত হয়। ওই সময় তাকে মানসিক রোগের চিকিৎসা ও ওষুধপত্র দেয়া হয়। এখনও তার একই রোগের চিকিৎসা চলছে। রাষ্ট্রপতির তৎকালীন ও বর্তমান মনোরোগ চিকিৎসক কর্নেল (অব.) ডা. এম নুুরুল আজিম এ তথ্য জানিয়েছেন। বৃহসপতিবার এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ক্ষমতা ছাড়ার ছয় মাস আগে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তার মানসিক রোগ শনাক্ত করা হয়। সংবিধান অনুযায়ী শারীরিক ও মানসিক অসমর্থের কারণে রাষ্ট্রপতিকে তার পদ থেকে অপসারিত করার বিধান রয়েছে। সংবিধানের ৫৩ অনুচ্ছেদে এ ব্যাপারে সপষ্ট দিকনির্দেশনা রয়েছে। সংবিধান বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার রফিক উল হক বলেন, সংবিধান অনুযায়ী একজন শারীরিক ও মানসিক অসমর্থ ব্যক্তি রাষ্ট্রপতি থাকতে পারেন না। কিন্তু তিনি কি করে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেছিলেন, সেটাই আশ্চর্যের ব্যাপার। তিনি বলেন, ২৪ মে একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে সাবেক রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহমেমদের সাক্ষাৎকার প্রচারিত হওয়ার পরই তার বিরুদ্ধে সংবিধান লংঘনের অভিযোগ এনে যে কেউ মামলা করতে পারে। কারণ তিনি নিজেই নিজের দোষ স্বীকার করে নিয়েছেন। কিন্তু সংবিধান লংঘনের অভিযোগ আসার আগেই তার স্ত্রী ওই সাক্ষাৎকারের প্রতিবাদ করেছেন। কিন্তু যতদুর জানা যায়, সাক্ষাৎকার গ্রহণের সময় তার স্ত্রী তার পাশের কক্ষেই অবস্থান করছিলেন। কিন্তু তিনি তো তখন টেলিভিশনের কর্মকর্তাদের কাছে তার স্বামীর শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতার কথা জানাননি বা সাক্ষাৎকার গ্রহণে বাধা দেননি। অপর সংবিধান বিশেষজ্ঞ এম জহির বলেন, রাষ্ট্রপতি থাকাকালে প্রফেসর ইয়াজউদ্দিন শারীরিক ও মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন কিনা তা তো কেউ চ্যালেঞ্জ করেনি। তাই এ নিয়ে প্রশ্ন তোলা এখন অবান্তর। সাবেক এ রাষ্ট্রপতির চিকিৎসক ডা. নুরুল আজিম জানান, ২০০৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একজন ভিআইপির চিকিৎসার জন্য তাকে হাসপাতালে ডেকে নেন। ওই সময় ড. ইয়াজউদ্দিন কেবিনে ভর্তি ছিলেন। ডা. নুরুল আজিমের ভাষায়, কেবিনে প্রবেশের পর তিনি রাষ্ট্রপতিকে দেখতে পান। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে রোগ শনাক্ত করেন এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ সেবনের পরামর্শ দেন। এর আগে বড় ধরনের হার্টঅ্যাটাকের কারণে তার মস্তিষেক সমস্যা দেখা দেয়। এছাড়া তিনি ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, হারকিনসনস, চিত্তভ্রংশ ও মতিভ্রমজনিতে সমস্যায় ভুগছিলেন। তিনি জানান, ইয়াজউদ্দিনের চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ড তার দেয়া প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির মানসিক রোগের ওষুধ সেবন বন্ধ করেছিল। কি কারণে তা বন্ধ করা হয়েছিল তা তিনি জানতে পারেননি। বঙ্গভবনে অবস্থানকালে প্রফেসর ড. ইয়াজউদ্দিনের মানসিক রোগ ধরা পড়ে। রাষ্ট্রপতির ব্যক্তিগত স্টাফরা ওই সময় ডা. নুরুল আজিমকে জানিয়েছিলেন, রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন গুরত্বপূর্ণ সভায় রাষ্ট্রপতি অসংলগ্ন কথাবার্তা বলতেন। ওই সময় দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করায় এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা নির্বিঘ্নে হস্তান্তরের জন্যই ইচ্ছেকৃতভাবে তার শারীরিক ও মানসিক রোগের কথা গোপন করা হয়েছিল। ২০০৮ সালে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার পর তার চোখের রেটিনা নষ্ট হয়ে যায়। বার্ধক্য ও নানা রোগের কারণে মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন রাষ্ট্রপতি। পরে চলতি বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতির পদ ছেড়ে দেয়ার কিছুদিন পর তার পরিবারের লোকজন আবার ডা. আজিমের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর দেখা দেয়া সাবেক রাষ্ট্রপতির চার্লস বোনেল সিনড্রম (সিবিএস-জটিল দৃশ্যমান মতিভ্রম, যা বড় ধরনের রেটিনাল ক্ষতির কারণে হয়) মানসিক রোগ ধরা পড়ে। বর্তমানে সাবেক রাষ্ট্রপতি ডা. আজিমের অধীনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ডা. আজিম বলেন, আগের ওষুধ সেবনে ধীরে ধীরে তিনি সুস্থ হয়ে উঠছেন। রাষ্ট্রপতির স্ত্রীর বক্তব্যগত মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতির স্ত্রী প্রফেসর আনোয়ারা বেগম প্রথমবারের মতো রাষ্ট্রপতি গত দু’মাস ধরে মানসিক অসুস্থতায় ভুগছেন- এমন তথ্য জনসমক্ষে প্রকাশ করেন। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তিনি জানান, ২৪ মে টিভি চ্যানেল বাংলা ভিশনে প্রচারিত সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রফেসর ড. ইয়াজউদ্দিন আহমেমদের সাবেক ছাত্র ড. কবির হোসেন তালুকদারের যোগসাজশে উদ্দেশ্যমূলক সাক্ষাৎকারের বিষয়ে তার সহধর্মিণী হিসেবে গণমাধ্যমে প্রকৃত অবস্থা তুলে ধরেন। তিনি জানান, ২৪ মে ২০০৯ বিকালে প্রফেসর ড. ইয়াজউদ্দিন আহমেমদের সাবেক ছাত্র ড. কবির হোসেন তালুকদারের সঙ্গে বাংলাভিশনের দু’জন কর্মকর্তা তাদের গুলশানের বাসভবনে আসেন এবং একজন বিজ্ঞ শিক্ষাবিদ হিসেবে প্রফেসর ড. ইয়াজউদ্দিনের একটি সাক্ষাৎকার নেয়া হবে বলে অবগত করেন। এমতাবস্থায় শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ থাকায় তিনি অপারগতা (আনোয়ারা বেগম) প্রকাশ করেন। বলা বাহুল্য, প্রফেসর ড. ইয়াজউদ্দিন আহমেমদ বিগত দুই মাস ধরে শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ, যার ফলশ্রুতিতে তিনি ঢাকার প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট (বনানী) হাসপাতালের চিকিৎসক কর্নেল (প্রফেসর) নুরুল আজিমের (অব.) অধীনে চিকিৎসাধীন। অতঃপর তাদের অনুরোধে টিভি সেন্টারে যান এবং তিনি বাইরে অপেক্ষা করেন। ওই সময়ে তার কাছ থেকে শিক্ষাবিদ হিসেবে কোন সাক্ষাৎকার না নিয়ে সাবেক রাষ্ট্রপতি হিসেবে দেশের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা নিয়ে উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিভিন্ন প্রশ্ন করে তাকে বিভ্রান্ত করা হয়েছে। শারীরিক ও মানসিকভাবে অনেকটা ভারসাম্যহীনভাবে কী উত্তর দিয়েছেন তা তিনি নিজেও জানেন না বা বলতেও পারেন না। তিনি বিবৃতিতে বলেন, পরিবারের পক্ষ থেকে তারা নিশ্চিত, সাবেক রাষ্ট্রপতিকে দুরভিসন্ধিমূলকভাবে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির মুখে ঠেলে দেয়া, বিতর্কিত ও দেশবাসীর কাছে হেয় প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে এ ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ একজন বর্ষীয়ান সাবেক রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে এ ধরনের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে লিপ্ত ব্যক্তিদের বিচারের জন্য তিনি সরকার ও দেশবাসীর কাছে অনুরোধ জানান। যা বলেছিলেন সেদিনের সাক্ষাৎকারেগত ২৪ মে একটি বেসরকারি টেলিভিশনে দেয়া সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠান সম্প্রচারের পর প্রফেসর আনোয়ারা বেগমের বিবৃতিতে এ তথ্য বেরিয়ে আসে। ওই সাক্ষাৎকারে রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহমেমদ বলেন, দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা ও পরবর্তী সময়ে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতির পদ থেকে তার পদত্যাগ সবই ‘আল্লাহর ইচ্ছায়’ হয়েছে বলে মন্তব্য করেন। উপস্থাপক তার কাছে জানতে চেয়েছিলেন, তিনি কোন চাপের মুখে জরুরি অবস্থা জারি করেছিলেন বা কোন লিখিত কাগজ তার সামনে উপস্থাপন (তিনবাহিনী সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী প্রধান যখন বঙ্গভবনে তার সঙ্গে দেখা করেছিলেন) করা হয়েছিল কিনা? এর জবাবে তিনি বলেন, জরুরি অবস্থা জারির ব্যাপারে তিনি তাদের সঙ্গে সমমত হয়েছিলেন। তৎকালীন সাবেক দুই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া এবং রাজনৈতিক নেতাদের কোন ধরনের ওয়ারেন্ট ছাড়া দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অফিসারদের গ্রেফতারের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কোন কিছুই তার অজানা ছিল না। সাবেক এই রাষ্ট্রপতির মনোরোগ চিকিৎসক ডা. নুরুল আজিম বলেন, টেলিভিশনে তার সাক্ষাৎকার দেখার কথা শুনে তিনি আশ্চর্যান্বিত হয়েছেন। তার মতে, হৃদরোগসহ বিভিন্ন ধরনের জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার ফলে তার মস্তিষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি আংশিক স্মৃতিশক্তি হারিয়েছেন। এ ধরনের লোকের বক্তব্য বিশ্বাস করা বোকার কাজ হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক, মৃত্তিকা বিজ্ঞানী ও সাবেক রাষ্ট্রপতি ড. ইয়াজউদ্দিন ২০০২ সালের ২ সেপ্টেম্বর দেশের ১৮তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা গ্রহণের আগে পর্যন্ত তিনি রাষ্ট্রপতি ছিলেন।

Popular posts from this blog

THE CONSTITUTION OF THE BANGLADESH AWAMI LEAGUE

ইতিহাসবন্ধনী

Justice order of the day