প্রখ্যাত নারী নেত্রী ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কেন্দ্রীয় কমিটির প্রবীণ সদস্য হেনা দাস মারা গেছেন

চলে গেলেন হেনাদি


নারী নেত্রী হেনা দাস মারা গেছেন

ঢাকা, জুলাই ২০ টোয়েন্টিফোর ডটকম- প্রখ্যাত নারী নেত্রী, কমিউনিস্ট ও প্রগতিশীল আন্দোলনের নেত্রী, নানকার বিদ্রোহের অন্যতম সংগঠক, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কেন্দ্রীয় কমিটির প্রবীণ সদস্য কমরেড হেনা দাস মারা গেছেন। সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটির সংগঠক হাসান তারিক চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, সোমবার সকাল ১১টা ৩৫ মিনিটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে প্রবীণ এই বিপ্লবী শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর। তিনি বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। মৃত্যুকালে হেনা দাস দুই মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তিনি পাকিস্তান আমল থেকেই এদেশের সব সামরিক স্বৈরাচার বিরোধী, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনে প্রথম সারিতে ছিলেন। কমরেড হেনা দাসের মৃত্যুর খবর পেয়ে সিপিবি'র সাধারণ সম্পাদক মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যান্য সদস্য, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও গণসংগঠনের নেতারা হাসপাতালে ছুটে যান। গত ১৮ জুলাই হেনা দাস মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ল্যাবএইডে তিনি চিকিৎসাধী ছিলেন দীর্ঘদিন। রোববার তার অবস্থার অবনতি হলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে তাকে স্থানান্তর করা হয়। সিপিবি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রুহিন হোসেন প্রিন্স বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমককে জানান, হেনা দাসের এক মেয়ে জার্মানিতে থাকেন। তিনি আসার পর তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হবে। হেনা দাসের মরদেহ হিমঘরে রাখা হবে। রুহিন আরও জানান, হেনা দাস সিপিবি'র কন্ট্রোল কমিশনের সদস্য ছিলেন। এর আগে তিনি পার্টির পলিটব্যুরো'র সদস্য ছিলেন। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে অসা�প্রদায়িক আন্দোলন ও গণতান্ত্রিক সব আন্দোলনেই ছিল তার অগ্রণী ভূমিকা। নারী মুক্তি আন্দোলনেও তিনি ছিলেন সামনের সারিতে । তিনি একজন শিক্ষকও ছিলেন।
সিপিবি'র এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, হেনা দাসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া আগামী ২৩ জুলাই অনুষ্ঠিত হবে। ওইদিন সকাল ১০টায় তার মরদেহ শেষ শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য সিপিবি কার্যালয়ে, ১০টা ৪৫ মিনিটে সেগুনবাগিচা শিক্ষক সমিতি কার্যালয়ে, ১১টায় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ও বেলা ১২টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে রাখা হবে। পরে তার মরদেহ নারায়নগঞ্জ নিয়ে যাওয়া হবে।
১৯২৪ সালের ১২ ফেব্র"য়ারি সিলেটের এক সম্ভ্রান্ত জমিদার পরিবারে হেনা দাসের জন্ম। বাবা রায় বাহাদুর সতীশ চন্দ্র দত্ত এবং মা মনোরমা দত্তের সাত সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ। পারিবারিকভাবেই তিনি একটি রাজনৈতিক আবহের মধ্যে বেড়ে ওঠেন। কৈশোরেই তিনি অগ্নিযুগের বিপ্লবীদের সংস্পর্শে আসেন। ১৯৩৮ সালে প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠন ছাত্র ফেডারেশনের সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯৪২ সালে কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ লাভ করেন। ১৯৪৮ সালে আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় কমিউনিস্ট কৃষকনেতা রোহিনী দাসের সঙ্গে হেনা দাস বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।
১৯৪৮-'৪৯ সালে 'নানকার আন্দোলনে' তিনি নানকার মেয়েদের সংগঠিত করেন। হেনা দাস সিলেটে চা শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের আন্দোলন সংগঠিত করতে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন। একজন উচ্চ শিক্ষিত নারী হয়েও তিনি শ্রমিকদের বস্তিতে থেকে তাদেরই একজন হয়ে শ্রমিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। খুব অল্প বয়সেই তিনি মার্কসবাদ ও লেলিনবাদকে নিজের রাজনৈতিক মতাদর্শ হিসেবে গ্রহণ করেন। ১৯৫৮ সালে হেনা দাস শিক্ষক সমিতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন এবং বহু আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ভারতে উদ্বাস্তু শিক্ষকদের সঙ্গে ত্রাণ তৎপরতায় অংশ নেন। তিনি দীর্ঘদিন শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
কবি সুফিয়া কামালের মৃত্যুর পর কমরেড হেনা দাস ২০০০ সালের ২২ জানুয়ারি মহিলা পরিষদের সভানেত্রী নির্বাচিত হন। তিনি বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভানেত্রী হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৯ সালে তিনি চাকরি থেকে অবসর নেন। তার প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে- স্মৃতিময় দিনগুলো, স্মৃতিময় একাত্তর, উজ্জ্বল স্মৃতি, আমার শিক্ষা ও শিক্ষকতা জীবন, চার পুরুষের কাহিনী এবং নারী আন্দোলন ও কমিউনিস্ট পার্টির ভূমিকা।
হেনা দাসের মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শোক প্রকাশ করেছেন। এক শোকবাণীতে তিনি বলেন, হেনা দাসের মৃত্যুতে দেশ একজন ত্যাগী ও আদর্শবান রাজনৈতিক নেত্রীকে হারালো। বিএনপির সাবেক মহাসচিব আবদুল মান্নান ভুঁইয়া, সিপিবি'র সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান খান, সাধারণ সম্পাদক মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শিরীন সুলতানা, মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়শা খানম, সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু পৃথক বিবৃতিতে শোক প্রকাশ করে তার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেন। এছাড়া ছাত্র ইউনিয়ন, যুব ইউনিয়ন, কৃষক সমিতি, ক্ষেতমজুর সমিতি, গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতি, জাতীয় শ্রমিক জোট, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটসহ বিভিন্ন সংগঠন তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে।

Popular posts from this blog

THE CONSTITUTION OF THE BANGLADESH AWAMI LEAGUE

ইতিহাসবন্ধনী

Justice order of the day