জাতির পিতার পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা আইন ২০০৯ অনুমোদন
মন্ত্রিসভায় জাতির পিতার পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা আইন ২০০৯ অনুমোদন
ঢাকা, বাংলাদেশ, ৬ জুলাই (বাসস) : মন্ত্রিসভা জাতির পিতার পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা আইন-২০০৯-এর অনুমোদন দিয়েছে।আজ সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভা কক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে এর অনুমোদন দেয়া হয়।এছাড়া মন্ত্রিসভা মোবাইল কোর্ট আইন-২০০৯, জাতীয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নীতিমালা-২০০৯ এবং মৎস্য খাদ্য ও পশু খাদ্য আইন-২০০৯-এর চূড়ান্ত অনুমোদন করে।
একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) সংশোধনী আইন-২০০৯ মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হয়।ভারত সরকার ঘোষিত শুল্কমুক্ত ট্যারিফ প্রেফারেন্সের (ডিএফটিটি) সুবিধা গ্রহণ ও লেটার অব ইনটেন্ট স্বাক্ষরের বিষয়টি মন্ত্রিসভায় অনুমোদন দেয়া হয়। জাতির পিতার পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা আইন-২০০৯ আইনটি অবিলম্বে কার্যকর করা হবে। মন্ত্রিসভা বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ জানান, জাতির পিতার পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা আইনে বলা হয়েছে, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি যিনি দীর্ঘ সংগ্রাম, আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছেন তার অনন্য অবদান জাতি চিরদিন কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করবে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কুচক্রী মহল ও ষড়যন্ত্রকারীরা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করে। সেদিনও যেমন সারা বিশ্ব এ হত্যাকাণ্ডকে ধিক্কার জানিয়েছিল আজও তেমনি সারা বিশ্বে এ হত্যাকাণ্ড ধিকৃত ও নিন্দিত। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর তাঁর পরিবারের সদস্যদের জীবনের নিরাপত্তা আজ মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন। তাঁর জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা বর্তমানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনার জীবননাশের জন্য বহুবার চেষ্টা হয়েছে, যা এখনও অব্যাহত রয়েছে।
২০০৪ সালে শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গ্রেনেড হামলা করা হয়। এ হামলায় বর্তমান রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভি রহমানসহ ২৪জন নিহত হন। সামপ্রতিককালেও শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা হয়েছে। এর প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্র বঙ্গবন্ধুর পরিবারের নিরাপত্তা রক্ষার্থে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য বঙ্গবন্ধুর পরিবার সদস্যদের নিরাপত্তা আইন উত্থাপন করে। এ আইনের অধীনে বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্যদের জন্য নিরাপদ আবাসন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হবে। উল্লেখ্য, ২০০১ সালের বঙ্গবন্ধু পরিবারের নিরাপত্তার জন্য অনুরূপ একটি আইন সংসদে পাস করা হয়। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আইনটি বাতিল করে দেয়। মোবাইল কোর্ট আইন-২০০৯-এর অনুমোদনে বলা হয়েছে, জনস্বার্থে আইন-শৃংখলা রক্ষা এবং অপরাধ প্রতিরোধ কার্যক্রম অধিকতর দক্ষতার সাথে সম্পাদনের জন্য ম্যাজিস্ট্রেটদের কতিপয় অপরাধ ঘটনাস'লেই আমলে গ্রহণ করে দণ্ড প্রদান ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি বিচার বিভাগ থেকে নির্বাহী বিভাগ পৃথক করার ফলে আইন-শৃংখলা রক্ষা ও অপরাধ দমনে যে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছিল এ আইনের ফলে তা নিরসন হবে। মন্ত্রিসভা কিছু সংশোধনীসহ জাতীয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নীতিমালা-২০০৯ চূড়ান্ত অনুমোদন করেছে। দেশের যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নয়নের লক্ষ্যে উপযুক্ত নীতিমালা প্রণয়নের জন্য অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীকে আহ্বায়ক করে ১৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। পরবর্তীতে জামিলুর রেজাকেই আহ্বায়ক করে ১৭ সদস্য বিশিষ্ট একটি পর্যালোচনা কমিটি গঠন করা হয়। তারই ভিত্তিতে এ আইনটি মন্ত্রিসভা চূড়ান্ত অনুমোদন করে। এ আইনটি অনুমোদন করায় ২০২১ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা সুগম হবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়। ভারত সরকার ঘোষিত শুল্কমুক্ত ট্যারিফ প্রেফারেন্সের সুবিধা গ্রহণ ও স্বাক্ষরের বিষয়টি মন্ত্রিসভায় অনুমোদন করে বলা হয়, ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশনের আওতাধীন উন্নয়নশীল দেশসমূহের বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদানের জন্য স্বল্প উন্নত দেশসমূহের দাবিতে ভারত সরকার ঘোষিত ডিএফটিটি সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে ভারত যেসব শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদান করবে তার বিনিময়ে ভারতকে অনুরূপ সুবিধা প্রদানে কোন বাধ্যবাধকতা নেই।মন্ত্রিসভায় আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) সংশোধন আইন-২০০৯ অনুমোদন করে বলা হয়, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশের বিভিন্ন স্থানে যারা মানবতা বিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেছে তাদের বিচারের ব্যবস্থা করার জন্যই এ আইনটি করা হয়েছে। নরহত্যা, নারী ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগসহ মানবতা বিরোধী অপরাধের সাথে জড়িতদের বিচারের জন্য ১৯৭৩ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন করা হয়। ওই আইনের আলোকেই মন্ত্রিসভায় আইনটি উত্থাপন করা হয়েছে। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে কিছু সংশোধনীসহ আইনটি সময়োপযোগী করে মন্ত্রিসভায় অনুমোদন দেয়া হয়। বৈঠকে মন্ত্রিসভার সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাগণ, প্রতিমন্ত্রী, মন্ত্রী পরিষদ সচিব, সংশ্লিষ্ট সচিব এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ উপস্থিত ছিলেন।