স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পংকজ দেবনাথ
স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পংকজ দেবনাথের
একান্ত সাক্ষাতকার জিজ্ঞাসাবাদের নামে অজ্ঞাত স্থানে দু’দিন ধরে চলে নির্মম নির্যাতন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কারাগারে দুঃসহ স্মৃতি-১৬ সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে নির্যাতিত হন বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পংকজ দেবনাথ। তার গোটা পরিবার যৌথবাহিনীর রোষানলে পড়ে। তার সনৱানসম্ভবা স্ত্রী, বৃদ্ধ মা, বোন, ভগ্নিপতি, শ্যালক, গাড়ির ড্রাইভার, বাড়ির কেয়ারটেকার কেউ যৌথবাহিনীর নির্যাতনের হাত থেকে রৰা পায়নি। কোন প্রকার গ্রেফতারি পরোয়ানা ছাড়াই বাসায় ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। রাতের আধারে তাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। অজ্ঞাতস্থানে একটি ছোট রম্নমে রেখে দুদিনব্যাপী চলে জিজ্ঞাসাবাদের নামে মারাত্মক নির্যাতন। খাবার দেয়া হতো দরজার নিচ দিয়ে যেভাবে কুকুরকে খাবার দেয়া হয়। সেই সব দিনগুলোর কথা বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। তিনি বলেন, ছাত্রজীবনে অনেকবার গ্রেফতার হয়েছি। কারাবরণ করেছি কিন্তু এরকম নির্যাতনের শিকার হইনি। পুরো পরিবার, আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধব কেউ তাদের রোষানল থেকে বাঁচতে পারেনি। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল ছাত্র সংসদের ভিপি এবং ছাত্র লীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ’৯০-এর এরশাদ বিরোধী আন্দোলনসহ বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে তিনি সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। তিনি তার গ্রামের বাড়ি বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন স্কুল-কলেজ, রাসৱাঘাট, ব্রীজ-কালভার্ট নির্মাণসহ নদীভাঙা মানুষের সেবায় কাজ করেছেন। স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বসে দিনকালকে দেয়া সাৰাৎকারে তার নির্যাতনের সেই দিনগুলোর কথা বর্ণনা দেন দৈনিক দিনকাল-এর কাছে। দিনকাল : কবে, কখন কিভাবে গ্রেফতার হলেন? পংকজ দেবনাথ : ৩ ফেব্রম্নয়ারি ২০০৮ গভীর রাতে যৌথবাহিনী আমার বাড়ি ঘেরাও করে। আমার আর স্ত্রীর মোবাইল, বাসার ফোন, কলিং বেল, ইন্টারকম সব এক সাথে বাজিয়ে একটি ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। আমার স্ত্রী তখন সনৱানসম্ভবা। বড় মেয়েটির বয়স মাত্র আড়াই থেকে তিন বছর। বাসায় বৃদ্ধ অসুস্থ মা। ঠিক এমন অবস্থায় তারা আমার বাসার কেয়ারটেকার একরামুল, দেলোয়ার, জাকিরকে মারধর করে আমার বাসায় প্রবেশ করে। অস্ত্র উঁচিয়ে পুরো বাসা তছনছ করে ভীতিকর অবস্থার সৃষ্টি করে। আমি তাদের আমার বাসায় আসার কারণ জানতে চাইলে বলে, তোকে নিয়ে যেতে এসেছি। তুই অবৈধভাবে অনেক টাকার মালিক। বাসার সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে আমি তড়িঘড়ি করে বের হয়ে চলে আসি। আমাকে গাড়িতে উঠানোর পর আমার চোখ বেঁধে ফেলে। চোখ বেঁধে কোথায় নিয়ে গেছে কিছুই জানি না। অনেক জায়গায় ঘোরাঘুরি করে একটি ছোট অন্ধকার রম্নমের ভিতর আটকে রাখে। ২ দিন পর জানলাম এটা বিডিআর ক্যাম্প। রম্নমটির দরজা জানালা সবই বন্ধ রাখা হয়। এ যেন এক অন্ধকার কবরের মতো অবস্থা। সেখানে তারা আমাকে ২দিন রেখে বিভিন্ন কায়দায় নির্যাতন করেও ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে। প্রচণ্ড টর্চার ও মানসিক চাপ দেয়া হয়। আমাকে খাবার দেয়া হতো দরজার নিচ দিয়ে যেভাবে কুকুরকে খাবার দেয়া হয়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের সময় আমি বার বার বলি, পিস্নজ আপনারা ৰমতা নিবেন না। দেশটিতে সামরিক শাসন জারি করে ধ্বংস করবেন না। আমি কোন দোষ করিনি, আমি কোন অবৈধ আয় করিনি। মানুষের সেবায় রাজনীতি করেছি মাত্র। তারা আমার কথায় কান দেয়নি। দিনকাল : বিডিআর ক্যাম্প থেকে আপনাকে কোথায় নেয়া হলো? পংকজ দেবনাথ : ২ দিন জিজ্ঞাসাবাদের পর ৫ ফেব্রম্নয়ারি আমাকেসহ আমান উলস্নাহ আমান, সালমান এফ রহমান, ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা, মোহাম্মদ নাসিম, ইকবাল হাসান টুকুকে ধানমন্ডি থানায় হসৱানৱর করে। সেখান থেকে এক একজনকে একেক গাড়িতে করে কোর্সে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে ধানমন্ডি ২৭ নম্বর হয়ে সংসদ ভবনের সামনে দিয়ে সোজা নিয়ে যায় ক্যান্টনমেন্ট থানায়। সেখানে গিয়ে দেখা হয় সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, ড. মহিউদ্দিন খান আলমগীর, মঞ্জুরম্নল আহসান মুন্সি, মীর নাসির, ড. আওলাদ হোসেন, শেখ হাসিনার পিএস জাহাঙ্গীর সাত্তার টিংকু, ম. রাজ্জাক ও টিএন্ডটি নেতা ফিরোজ ভাইয়ের সাথে। সেখানে সারাদিন অপেৰার পর সন্ধ্যায় সিএমএম কোর্টে নিয়ে যাওয়া হয়। কোর্ট ১ মাসের ডিটেনশন দিয়ে জেলখানায় পাঠিয়ে দেয়। দিনকাল : জেলখানায় আপনাকে ডিভিশন দেয়া হয়েছিল কিনা? পংকজ দেবনাথ : না। আমাদের একসাথে ১৯ জনকে জেলখানায় নেয়া হয়। এর মধ্যে ১১ জন সাবেক এমপি, মন্ত্রী। এদেরকে ভিআইপি সেল কর্ণফুলিতে নিয়ে যাওয়া হয়। আমিসহ বাকী ৮ জনকে বকুল সেলে রাখা হলো যাকে কেউ কেউ ফাঁসির সেল বলে। ছোট রম্নমে ৪ জন করে থাকতাম। বিছানার কোন বেড সিট ছিল না। কম্বল বিছিয়ে ঘুমাতে হতো। আমাদের গোয়েন্দা নজরদারীতে রাখা হতো। সাদা পোশাকের লোকেরা সারাৰণ পাহারায় থাকত। কারা রৰীদের কখনও দেখা যায়নি। ৯ ফেব্রম্নয়ারি সেনাবাহিনীর একজন মেজর, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রেষণে নিয়োজিত দুদকের সহকারী পরিচালক আব্দুল লতিফসহ ৪-৫ জন কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রধান ফটকের পাশে একটি রম্নমে নিয়ে ৩-৪ ঘণ্টা ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করেন। জিজ্ঞাসাবাদের পূর্বে আমাকে কোন প্রকার নোটিশ প্রদান করা হয়নি। কিংবা আমার আইনজীবীকে সাথে রাখা হয়নি। তারা আমাকে বিভিন্ন উল্টাপাল্টা প্রশ্ন করে মানসিকভাবে হয়রানি করে। ১০ ফেব্রম্নয়ারি গভীর রাতে আমাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে নারায়ণগঞ্জ কারাগারে নিয়ে যায়। জেল গেটে বের হয়ে দেখি সেনা, র্যাবসহ গোয়েন্দা সংস্থাদের গাড়ি। এতো রাতে নিয়ে যাওয়ার সময় আমি প্রচণ্ড ভয় ভাই। নারায়ণগঞ্জ কারাগারে আমাকে সাধারণ কয়েদিদের সাথে থাকতে দেয়া হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ কারাগারে দুদকের সেই টিম আবার আমাকে ৪-৫ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করে। এর মধ্যে আমার সাথে কোন আত্মীয়-স্বজনকে দেখা করতে দেয়নি। আমি কোথায় আছি, কিভাবে আছি, আত্মীয়-স্বজনরা জানত না। এরই মধ্যে জেল সুপার দুদকের একটি নোটিশ আমার হাতে তুলে দেন। দুদকের সাবেক সচিব দেলোয়ার হোসেনের স্বাৰরে এক মাসের পূর্বের তারিখে নোটিশটি ইস্যু করা হয়। নোটিশ পাওয়ার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সম্পদের হিসেব চাওয়া হয়। চারদিকে অথৈ সমুদ্র, কারো সাথে কোন যোগাযোগ নেই- ঠিক যেন হাত পা বেঁধে সাতার কাটার অবস্থা। জেলার সাহেব আমার কাছ থেকে নোটিশে স্বাৰর করিয়ে নোটিশটি পারিবারিক লোকের কাছে পাঠিয়ে দেয়। এর মধ্যে ১৩ ফেব্রম্নয়ারি আমার দ্বিতীয় কন্যা সনৱানের জন্ম হয়। পুরো পরিবার জিম্মি করে ভীতিকর অবস্থায় রাখা হয়। আমাকে গ্রেফতারের পর কোন খোঁজ না পাওয়ায় এবং আমাকে গ্রেফতারের পরও যৌথ বাহিনী একাধিকবার বাসায় তলস্নাশি, ভয়ভীতি দেখনোর ফলে আমার স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়ে। এ কারণে নির্ধারিত তারিখের পূর্বেই সনৱান প্রসব করে। দিনকালঃ আপনাকে গ্রেফতারের পর আপনার স্ত্রী ও পরিবারকে নির্যাতন করা হয় কিনা? পংকজ দেবনাথ ঃ আমাকে গ্রেফতারের পর আমার স্ত্রী, বৃদ্ধ মা, বোন, ভগ্নিপতি আমার ছোট ভাই, শ্যালকদের বিভিন্নভাবে হয়রানি ও নির্যাতন করা হয়। আমার ড্রাইভারকে পর্যনৱ হয়রানি ও নির্যাতন করা হয়। আমাকে গ্রেফতারের ২-৩ দিন পর যৌথবাহিনী আমার বাসায় গিয়ে আমার স্ত্রীকে বিভিন্ন অবানৱর প্রশ্নসহ ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে। আমার স্ত্রী অসুস্থ হয়ে শুয়ে পড়লেও তাকে জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রাখে। দিনব্যাপী জিজ্ঞাসাবাদের সময় আমার আড়াই-তিন বছরের বাচ্চাকে পর্যনৱ খাওয়ানোর সুযোগ দেয়নি। দুদকের সহকারী পরিচালক আব্দুল লতিফ আমার স্ত্রীকে চরম অপমান করে। যতটুকু খারাপ করা যায় তাই করে। যখন তখন বাসায় প্রায়ই যৌথবাহিনী আসত। রাত ২টার সময় পর্যনৱ ফোন করে অশানিৱ দিত। বাসায় আমার স্ত্রী সারাৰণ আতংকে থাকতো। তারা আমার সারা ঘর তছনছ করে। বাসা থেকে আমার গাড়ির কাগজপত্র উত্তরার পস্নটের কাগজপত্র, ফ্ল্যাটের কাগজপত্র সব নিয়ে গেছে। কাগজপত্রের ফটোকপি চাইলে তারা আমার ড্রাইভারকে ফটোকপি দিবে বলে সারাদিন আটকে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তাকে মারধরও করে। সেদিন আমার স্ত্রীর ডাক্তার দেখানো তারিখ ছিল, তারা আমার স্ত্রীকে ডাক্তারের কাছে যেতে দেয়নি। আমার বড় বোন, ছোট ভাইয়ের দেয়া আমার মার একাউন্টে ২ লাখ ৮০ হাজার টাকার জন্য তারা আমার মায়ের সাথে খারাপ ব্যবহার করে। আমার বড় ভগ্নিপতি মার্কেণ্টাইল ব্যাংকের ডিএমডি মনিন্দ্র কুমার নাথ, বড় বোন, বৃদ্ধ মা, জাফলংয়ের ব্যবসায়ী আমার শ্যালককে তারা বিভিন্ন সময় সেনাক্যাম্পে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে মানসিকভাবে হয়রানি করে। আমার বিপদের সময় আমার ছোট ভাই তৎকালীন বাগেরহাটে কর্মরত ম্যাজিস্ট্রেট স্বরোজকুমার নাথ আমাকে একবার দেখতে এসেছিল। এ অপরাধে তাকে দুবছর ওএসডি করে রাখে। ডিজিএফআই-এর লোকজন তাকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করে। বঙ্গ বাজারের কাপড় ব্যবসায়ী সোহরাব ভাইয়ের আমাদের সাথে পারিবারিক সম্পর্ক ছিল। বিভিন্ন সময় আমরা তার দোকান থেকে কেনাকাটা করতাম। আমার বিপদের দিনে আমার পরিবারকে সাহায্য করতে আসলে টাস্কফোর্সের লোকজন তাকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করে। দুদকের সহকারী পরিচালক লতিফ বলে, সে আমার নামে চাঁদা কালেকশন করত। তার মাধ্যমে আমি ভারতে খবর পৌঁছাতাম। তার বিরম্নদ্ধ বিভিন্ন অভিযোগ এনে তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাকে ব্যবসায়িকভাবেও হয়রানি করা হয়। সেনাবাহিনীর একজন কর্মকর্তার সাথে পরিচয় থাকায় সে মামলা থেকে রৰা পায়। আমার স্ত্রী এবি ব্যাংকে চাকরি করতো। সনৱান সম্ভবা থাকায় তখন ছুটিতে ছিলো। যৌথ বাহিনী আমার স্ত্রীর অফিসে গিয়েও তলস্নাশি চালায়। সেখানে আমার স্ত্রীর নামে খারাপ কথাবার্তা বলে এবং সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করে। দীর্ঘদিন পলাতক থাকায় আমার স্ত্রীর চাকরি চলে যায়। দিনকাল ঃ আপনার বিরম্নদ্ধে কি কি মামলা দেয়া হয়? পংকজ দেবনাথ ঃ ৭২ ঘন্টার নোটিশ দিয়ে আমার কাছ থেকে সম্পদের হিসাব নেয়ার পর লোকদেখানো তদনৱ করে আমার বিরম্নদ্ধে ৬৪ লাখ টাকার সম্পদ গোপন করার মামলা দেয়। তখন আমাকে নারায়ণগঞ্জ কারাগার থেকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। ৬ জুন তারিখে দুদকের মামলার চার্জশীট দেয়। তার আগে মামলার তদনৱ কর্মকর্তা আব্দুল লতিফকে পরিবর্তন করে সাইদুর রহমানকে নতুন তদনৱ কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়। তিনিও আমাকে বিনা নোটিশে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করেন। মামলা রম্নজুর সময় আমার স্ত্রীর নাম না থাকলেও চার্জসীটে আমার স্ত্রী মনিকা নাথের নাম দেয়া হয়। আমার ছোট মেয়ের বয়স তখন ৩ মাস। বড় মেয়ের বয়স ৩ বছর। এ অবস্থায় বাচ্চাদের কথা বিবেচনা করে আত্মীয়-স্বজনদের অনুরোধে আমার স্ত্রী আত্মগোপন করে। আমার পরিবারের সবাই যৌথ বাহিনীর নজরদারিতে থাকায় স্ত্রী পালিয়ে থাকাও ছিল কষ্টের। কারণ স্ত্রীর সন্ধান যেখানে পাবে তাদেরও নির্যাতনের শিকার হতে হবে। এ ভয় ছিল সব সময়। আর এমন একটা সময় ছিল যে আমার বাচ্চার দুধ কেনার পয়সা পর্যনৱ ছিল না। কেউ সাহায্য করতে ভয় পেত। পলাতক জীবনে আমার স্ত্রীকে দুঃসহ জীবন যাপন করতে হয়েছে। এর মধ্যে আমাকে শাসিৱমূলক বদলী করে মুন্সিগঞ্জে কারাগারে পাঠায়। সেখানে আমাকে সাধারণ ওয়ার্ডে থাকতে দেয়। ১৫-১৬ দিন পর আবার ঢাকায় নিয়ে আসে। সংসদ ভবন এলাকায় স্থাপিত বিশেষ আদালতে মামলার ট্রায়াল চলতে থাকে। ট্রায়াল কোর্টে আমার বড় ভগ্নিপতিসহ অন্যান্য স্বাৰীদের ডিজিএফআই-এর কথা মতো সাৰ্য দিতে বাধ্য করা হয়। বিশেষ অবস্থায়, বিশেষ আদালতে, বিশেষ ব্যবস্থায়, বিশেষ বাহিনীর নজরদারিতে সেনাসমর্থিত সরকার আমাকে ১৩ বছর, আমার স্ত্রীকে ৩ বছরের সাজা দেয়। তারা আমার বিরম্নদ্ধে ৬৪ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ আয়ের মামলা করে সাজা প্রদান করে। অথচ আমার স্ত্রী ব্যাংকে চাকরি করে প্রায় ৩০ হাজার টাকা বেতন পেত। ১৭ বছর চাকরি করে প্রায় ৩০ লাখ টাকা আয় করে। ৭ লাখ টাকা আমার মায়ের সম্পদ, ভোলা থেকে বড় ভগ্নিপতি আমাকে ১৫ লাখ টাকা দেয়, তার প্রমাণ আছে। আমার গাড়ির মূল্য ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা, ৫ লাখ টাকা আমার বড় ভগ্নিপতি দিয়েছে। তাহলে আমার অবৈধ সম্পদ কোথায়? আসলে তারা ৰমতা দখল করার জন্য দৰ রাজনীতিবিদদের শায়েসৱা করার জন্যই এ ব্যবস্থা করে। দুদকের মামলার রায় হওয়ার কয়েকদিনের মাথায় জাতীয় রাজস্ববোর্ড আমার বিরম্নদ্ধে আয়কর ফাঁকি দেয়ার আরোও একটি মামলা দায়ের করে। মহামান্য হাইকোর্ট মামলাটি খারিজ করে দিলে তৎকালীন সরকার মামলাটি আবার উচ্চ আদালতে আপিল করে। দিনকালঃ বর্তমানে মামলাগুলো কি অবস্থায় আছে? পংকজ দেবনাথঃ দুদকের মামলাটি উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিত আছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মামলাটি সুপ্রিম কোর্টর আপিল বিভাগে বিচারাধীন আছে। দিনকালঃ আপনি কবে মুক্তি পেলেন? পংকজ দেবনাথঃ দীর্ঘ ২২ মাস কারাভোগের পর ৭ ডিসেম্বর ২০০৮ সালে উচ্চ আদালতের নির্দেশে আমি মুক্তি লাভ করি। দিনকালঃ ১/১১ সম্বন্ধে আপনার মনৱব্য কি? পংকজ দেবনাথঃ জাতীয় ও আনৱর্জাতিক চক্রানেৱর অংশ হিসেবে এক শ্রেণীর দালাল রাজনীতিবিদ, যারা বার বার প্রত্যাখ্যাত সেই লোকগুলো, সেনাবাহিনী উচ্চাভিলাসি কিছু অফিসার, সাবেক সেনাপ্রধান হাসান মশহুদ চৌধুরী, মেজর জেনারেল (অব.) আবদুল মতিন, ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার মইনুলসহ একটি চক্র ৰমতা গ্রাস করতে চেয়েছিল। তাদের লৰ্য অর্জনের জন্য তাদের প্রতিপৰ রাজনীতিবিদদের চরিত্র হরণ করা হয়েছে। দেশের মানুষকে ৪৫ টাকা কেজি চাল খেতে হয়েছে। আটা, চিনি, লবণ, তেলসহ সকল প্রকার নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য মানুষের ক্রয়সীমার বাইরে চলে গিয়েছিল। এসব টাকা তারা লুট করে নিয়ে গেছে। ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদরা কালো টাকা সাদা করেছেন, অথচ অন্যদের জেল খাটানো হয়েছে। র্যাংগস ভবন ভাঙলেও ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের মুসাফির টাওয়ার ভাঙা হয়নি। তাদের রাজনীতি ছিল অস্বচ্ছ। তারা গত ২ বছর শ শ কোটি টাকা লুটপাট করেছে। তারা যেনতেন প্রক্রিযায় ৰমতায় গিয়ে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করার অপসংস্কৃতিতে ব্যসৱ ছিল। জনগণ তাদের উদ্দেশ্য বুঝতে পেরেছিল। জনগণের আন্দোলনের কারণে তাদের ছিটকে পড়তে হয়েছে। দিনকাল ঃ আপনি তাদের অত্যাচারের বিচার চান কি না? পংকজ দেবনাথ ঃ অবশ্যই আমি তাদের বিচার চাই। তারা ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ, ছাত্র-শিৰক-চাকরিজীবীদের ধরে নিয়ে নির্যাতন করেছে। দেশের সম্পদ লুটপাট করেছে। মিথ্যা মামলা দিয়ে জেল খাটিয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের নাম করে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করেছে। বিশেষ বাহিনী বিশেষ কায়দায় মানুষকে অত্যাচার করেছে। মানুষকে ৪৫ টাকা কেজি দরে চাল, ১৫০ টাকা কেজি দরে ডাল, ৪০ টাকা কেজি চিনি খাইয়েছে। তাদের অবশ্যই বিচার চাই। তৎকালীন সময়ে নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত সকল ব্যক্তির বিচার হতে হবে। দিনকাল ঃ আপনি নিজে বাদী হয়ে তাদের বিরম্নদ্ধে মামলা করবেন কিনা? পংকজ দেবনাথ ঃ আমার বিরম্নদ্ধে একটি মামলা উচ্চ আদালতে বিাচরাধীন আছে। মামলাটি শেষ হলে আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। দিনকাল ঃ দীর্ঘৰণ সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। পংকজ দেবনাথ ঃ আমার এবং আমার পরিবারের পৰ্য থেকে আপনাদেরকেও ধন্যবাদ।