পদত্যাগের ঘোষণা জলিলের

পদত্যাগের ঘোষণা জলিলের
ঢাকা, জুলাই ২১ দলীয় কাউন্সিলের তিন দিন আগে মঙ্গলবার পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিল। তিনি বলেছেন, কাউন্সিলে সম্পৃক্ত না করার বেদনা থেকেই তার এই সরে দাঁড়ানো। তবে সাধারণ সম্পাদকের পদ ছাড়লেও আওয়ামী লীগে থেকে যাবেন বলেই জানিয়েছেন এই সাংসদ। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গুলশানে নিজের বাড়িতে এক সংবাদ সম্মেলনে পদত্যাগের ঘোষণা দেন জলিল। পদত্যাগপত্র মঙ্গলবারই দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো হবে বলে জানান তিনি। একটি লিখিত বক্তব্যে জলিল বলেন, দলীয় কাউন্সিলে সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ পাব বলে আশা করছিলাম। কিন্তু তা থেকে বঞ্চিত হওয়ায় সরে দাঁড়ানো ছাড়া আমার কাছে বিকল্প ছিল না। আগামী ২৪ জুলাই আওয়ামী লীগের কাউন্সিল হবে। তাতে সম্পৃক্ত করা হয়নি জলিলকে। কাউন্সিলের কার্যক্রমে সম্পৃক্ত না করায় জলিল সংবাদ মাধ্যমের কাছে নিজের অসন্তোষের কথাও জানিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী গত ১৭ জুলাই সাংবাদিকদের বলেন, অসুস্থতার কারণে আব্দুল জলিলকে কাউন্সিল প্রস্তুতি কমিটিতে রাখা হয়নি। সাংসদ আব্দুল জলিল সাধারণ সম্পাদকের পদে থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে দলীয় মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করছেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। জলিল বলেন, "প্রত্যাশা করেছিলাম যে, শেষ পর্যন্ত আমি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক কাউন্সিল অধিবেশনে সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ পাব। কিন্তু শেষ সুযোগ থেকেও আমি বঞ্চিত হলাম। এ অবস্থায় আমার সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে সরে দাঁড়ানো ছাড়া বিকল্প কোনও পথ নেই। তাই আমি আজ থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে সরে দাঁড়ালাম।"

তিনি জানান, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একজন কর্মী হিসেবে তিনি যতদিন বাঁচবেন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ করে যাবেন। এক পৃষ্ঠার লিখিত বক্তব্যের বাইরে সাংবাদিকদের কোনও প্রশ্নের উত্তর দেননি জলিল। তিনি বলেন, "আমি আজ কোনও প্রশ্নের জবাব দেব না। দলের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে পদত্যাগ করেছি। তবে আমৃত্যু দলকে শক্তিশালী ও সমৃদ্ধ করার চেষ্টা করব।" পদত্যাগের কারণ ব্যাখ্যা করে জলিল বলেন, "গঠনতন্ত্র মোতাবেক সাধারণ সম্পাদক কাউন্সিল অধিবেশন আহ্বান করেন। দাওয়াত পত্র তার নামেই হওয়া বাঞ্ছনীয়। সাধারণ সম্পাদক কাউন্সিল অধিবেশনে সাধারণ সম্পাদকের রির্পোট পেশ করেন। সে সুযোগও আমার নেই। "চেয়েছিলাম পিস এক্সিট (শান্তিপূর্ণভাবে সরতে), কিন্তু তা হল না।" সংবাদ সম্মেলনের সময় জলিলের বাড়িতে ছিলেন তার নির্বাচনী এলাকার আওয়ামী লীগ নেতারা। নওগাঁর সাংসদ এমাজউদ্দীন পারমানিক , ইসরাফিল আলম, সাধন মজুমদার, শহীদুজ্জামান সরকার বাবুল ছিলেন জলিলের সঙ্গে। জরুরি অবস্থার সময় গ্রেপ্তার হওয়ার পর জলিলের উদ্ধৃতি দিয়ে বিভিন্ন সংবাদপত্রে শেখ হাসিনার সমালোচনা করে সংবাদ প্রকাশ হয়। তবে মুক্তির পর জলিল তা অস্বীকার করেন। স�প্রতি মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাদের উপস্থিতি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা জারির পর সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় অনেক রাজনীতিকের মতো জলিলও গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। কারাবন্দি অবস্থায় পাঠানো একটি চিঠিতে সাধারণ সম্পাদকের পদ ছাড়ার ঘোষণা দেন তিনি। ২০০৮ সালে জামিনে মুক্তির পর জলিল সাধারণ সম্পাদক পদে ফেরার ঘোষণা দেন। কিন্তু এ নিয়ে দলে জটিলতা দেখা দেয়। পরে সাধারণ সম্পাদকের পদ থাকলেও দায়িত্ব পালন করতে পারেননি তিনি। ২০০৭ সালের ২৮ মে জলিলকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২০০৮ সালের ২ মার্চ প্যারোলে মুক্তি পাওয়ার পর চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর যান। ছয় মাস পর ৩১ আগস্ট তিনি দেশে ফেরেন। দেশে ফেরার পর অবৈধভাবে সম্পত্তি অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের করা মামলায় ২০ অক্টোবর হাইকোর্ট জলিলকে জামিন দেয়। কারাবন্দি জলিল দেশে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাজনীতি থেকে অবসরের সিদ্ধান্ত জানিয়ে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টাকে চিঠি দিয়েছিলেন। আব্দুল জলিলের স্বাক্ষর সম্বলিত ওই চিঠি গত ৫ জুলাই তার স্ত্রী রেহানা জলিল সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রকাশ করেন। ওই চিঠির সূত্র ধরেই জলিলকে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে না ফিরিয়ে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করতে বলেন আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকরা। দেশের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জলিলের যে চিঠি তার স্ত্রী প্রকাশ করে, তাতে রাজনীতি ছেড়ে দেওয়ার জন্য শারীরিক অসুস্থতা ও পারিবারিক বিষয়কে কারণ হিসাবে দেখানো হয়। পাশাপাশি ওই চিঠিতে দলে গণতন্ত্রের চর্চা নেই অভিযোগ করে এর জন্য সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে দায়ী করা হয়। চিঠিতে বলা হয়, "আওয়ামী লীগ একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হওয়া সত্ত্বেও এটি এখন একনায়ককেন্দ্রিক দলে পরিণত হয়েছে। দলের সবাই মিলে সভানেত্রীকে তোষণ করে তাকে সর্বময় কর্তৃত্ব দেওয়ার ফলে তার সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার কোনও পরিবেশ বা সুযোগ ছিলো না। তার একক নেতৃত্বে দল চলার ফলে আজ এই অবস্থা ও বিপর্যয় হয়েছে।" তবে জামিন পাওয়ার জলিল দাবি করেন, বাধ্য হয়ে তিনি ওই চিঠি লিখেছিলেন। ওই চিঠির বক্তব্য অস্বীকার করে জলিল বলেছিলেন, "কারাবন্দি থাকা অবস্থায় কী চিঠি কোথায়-কীভাবে এসেছে, তা আপনারা সবাই বোঝেন। এ নিয়ে কেন খোঁচাচ্ছেন?" জলিল দাবি করেন, চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশ পাঠাতে তার স্ত্রী সরকারের কাছে আবেদন করেছিলেন। রাজনীতি ছেড়ে দেওয়া সম্পর্কিত কোনও চিঠি তার স্ত্রী পড়েননি। আব্দুল জলিল ২০০২ সালের ডিসেম্বরে দলের ১৯ তম কাউন্সিলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এর আগে ১৯৯৬-২০০১ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

Popular posts from this blog

THE CONSTITUTION OF THE BANGLADESH AWAMI LEAGUE

ইতিহাসবন্ধনী

Justice order of the day