আওয়ামী লীগের ১৮তম কাউন্সিল আজ

আওয়ামী লীগের ১৮তম কাউন্সিল আজ যোগ দিচ্ছেন সাড়ে ৫ হাজার ডেলিগেট
।। সাইদুল ইসলাম ।।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ১৮তম কেন্দ্রীয় কাউন্সিল আজ শুক্রবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আনৱর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে (বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্র) অনুষ্ঠিত হবে। সংগ্রাম এবং সাফল্যের ৬০ বছরের ঐতিহ্যকে ধারণ করে দলটি এবারের কাউন্সিল অনুষ্ঠান করতে যাচ্ছে। ৰুধা, দারিদ্র্য, নিরৰরতা, সন্ত্রাস ও শোষণমুক্ত এবং উন্নত ও সমৃদ্ধ ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ের কথা উলেস্নখ করে কাউন্সিলে উদ্বোধনী ভাষণ দেবেন দলের সভানেত্রী এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উৎসবমুখর পরিবেশে সকাল সাড়ে ৯টায় জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্যদিয়ে সম্মেলনের সূচনা হবে। পৌনে ১০টায় উদ্বোধনী পর্ব শুরম্ন হবে। বিকাল ৩টায় শুরম্ন হবে কাউন্সিল অধিবেশন। দলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিল পদত্যাগ করায় ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সাধারণ সম্পাদকের রিপোর্ট উপস্থাপন করবেন।
বাংলাদেশে তৃতীয় মেয়াদে ৰমতায় আসার পর এ কাউন্সিল আওয়ামী লীগের জন্য অত্যনৱ তাৎপর্যপূর্ণ। প্রতি তিনবছর পর পর দলের ত্রিবার্ষিক কাউন্সিল অনুষ্ঠানের কথা থাকলেও এবার তা অনুষ্ঠিত হচ্ছে দীর্ঘ সাড়ে ৬ বছর পর। সর্বশেষ ২০০২ সালের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন এবং বৃহৎ এ দলটির কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছিলো। এরপর নানা কারণে দলটি কাউন্সিল করতে পারেনি। বিশেষ করে ওয়ান ইলেভেনের পর দেশে জরম্নরি অবস্থা বলবৎ থাকায় অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মতো আওয়ামী লীগও তাদের কাউন্সিল অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নিতে পারেনি। কাউন্সিলে বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, বরেণ্য কবি, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, সংস্কৃতিসেবী, পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন কূটনৈতিক মিশনের প্রধানদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তবে যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে জড়িত কোন রাজনৈতিক দল বা সংগঠনের নেতাদের কেউ কাউন্সিলে আমন্ত্রিত হননি বলে দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম জানান।
কাউন্সিলকে ঘিরে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ, উদ্দীপনা আর কৌতূহল লৰ্য করা যাচ্ছে। দলের ধানমন্ডিস্থ কার্যালয়ে নেতা-কর্মীরা এসে ভীড় জমাচ্ছেন। কাউন্সিল স্থল শেরেবাংলাস্থ বঙ্গবন্ধু আনৱর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে সকল আয়োজন সম্পন্ন হয়েছে। সেখানে বিরাজ করছে সাজসাজ রব। ভেতরের অডিটরিয়ামে স্থান সংকুলান না হওয়ায় বাইরে সামিয়ানা টাংগিয়ে কাউন্সিলরদের বসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কাউন্সিলকে ঘিরে সেখানে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এবারের কাউন্সিলে ৭৩টি সাংগঠনিক জেলা থেকে কাউন্সিলররা যোগ দেবেন। তবে সাড়ে ৫ হাজার ডেলিগেট এতে যোগ দিলেও মূল কাউন্সিলে কাউন্সিলরের সংখ্যা হবে সাড়ে ৫শ’। জানা গেছে, কাউন্সিলররা ১০০ টাকা দিয়ে প্রবেশাধিকার কুপন সংগ্রহ করবেন এবং খাবারের জন্য আরো অতিরিক্ত ১০০ টাকা দেবেন। এ আয় থেকে কাউন্সিলের ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়ার জন্য আওয়ামী লীগ তাদের গঠনতন্ত্র এবং ঘোষণাপত্রে যে পরিবর্তন এনেছে তা অনুমোদনের জন্য তড়িঘড়ি করে এবারের কাউন্সিল ডাকা হয়েছে। কাউন্সিলের অপর উদ্দেশ্য হচ্ছে আগামী তিনবছরের জন্য নেতৃত্ব নির্বাচন। নির্বাচন পরিচালনার জন্য আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা এমএ মান্নানকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি নির্বাচন কমিশনও গঠন করা হয়েছে। ব্যালট বক্স এবং ব্যালট পেপারও প্রসৱুত রাখা হয়েছে। অবশ্য দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক স্থানীয় সরকার পলস্নী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ইত্তেফাককে বলেছেন, রেওয়াজ অনুযায়ী দলের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক পদে একজন করে প্রার্থী থাকেন। এবারও তাই থাকবে বলে তিনি মনে করেন। তবে একাধিক প্রার্থী থাকলে সেৰেত্রে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে। এছাড়া দলের অন্য পদগুলোতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে তিনি জানান।
এদিকে কাউন্সিলকে ঘিরে আওয়ামী লীগের সর্বসৱরের নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিপুল উৎসাহ দেখা দিয়েছে। কাউন্সিলররা ইতিমধ্যে ঢাকায় এসে পৌঁছেছেন। দলের সর্বসৱরের নেতা-কর্মী ছাড়াও রাজনীতি সচেতন মহলের দৃষ্টিও রয়েছে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের দিকে। বিশেষ করে দলের গুরম্নত্বপূর্ণ পদ সাধারণ সম্পাদকের পদ কে পাচ্ছেন সেদিকে সবার দৃষ্টি। ওয়ান ইলেভেনের পর যেসব নেতার ভূমিকা বিতর্কিত ছিল তাদের অবস্থান কি হবে তা নিয়েও জল্পনা রয়েছে। বঙ্গবন্ধুর ছোট কন্যা শেখ রেহেনা এবং দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনার পুত্র ও বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র সজিব ওয়াজেদ জয়কে এবার দলের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করার কথাও শোনা যাচ্ছে। এছাড়া কার্যকরী সভাপতি এবং কার্যকরী সাধারণ সম্পাদক নামে দুটি পদ সৃষ্টি করার কথাও আলোচিত হয়েছে।
গৌরবের অতীত
৬০ বছরের প্রাচীন দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলন, ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানসহ সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেয় দলটি। বিভিন্ন গৌরবময় ইতিহাসের সাৰী দলের অনেক প্রবীণ নেতা এবং দেশবাসী। নারায়ণগঞ্জের খান সাহেব ওসমান আলীর বাসভবন বায়তুল আমানে তৎকালীন পূর্ব পাকিসৱান আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার প্রাথমিক প্রসৱুতি ও গঠন প্রক্রিয়া কয়েকটি বৈঠকের মাধ্যমে সমাপ্ত হয়। ১৯৪৯ সালে ঢাকায় রোজ গার্ডেনে দলটি আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করে। মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী সভাপতি, শামসুল হক সাধারণ সম্পাদক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং ইয়ার মোহাম্মদ খান কোষাধ্যৰ নির্বাচিত হন। সমগ্র পাকিসৱানে দলটির নেতৃত্ব দেন হোসেন শহীদ সোহওয়ার্দী। ১৯৫৩ সালে দলের দ্বিতীয কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী সভাপতি এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এই নেতৃত্ব ১৯৫৫ সালের কাউন্সিলেও বহাল থাকে। দলকে সর্বজনীন করার লৰ্যে ১৯৫৬ সালে দলের নাম থেকে মুসলিম শব্দটি বাদ দেয়া হয়। এরপর নতুন নামকরণ করা হয় পূর্ব পাকিসৱান আওয়ামী লীগ। ১৯৫৭ সালে অনুষ্ঠিত কাগমারি সম্মেলনে বৈদেশিক নীতি নিয়ে দলে দ্বিধা-বিভক্তি দেখা দেয়। এরপর মওলানা ভাসানী দলত্যাগ করে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি গঠন করেন। এসময় আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব নেন মওলানা আব্দুর রশীদ তর্কবাগিশ। ১৯৬৬ সালে কারাগারে অনৱরীণ অবস্থায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সভাপতি এবং তাজউদ্দিন আহমদ সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৬৯ সালের কাউন্সিলে এ নেতৃত্ব বহাল থাকে। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের কাউন্সিলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সভাপতি এবং জিলস্নুর রহমান সাধারণ সম্পাদক, ১৯৭৪ সালের কাউন্সিলে কামরম্নজ্জামান সভাপতি, জিলস্নুর রহমান সাধারণ সম্পাদক, ১৯৭৫ সালের (বাকশাল) কাউন্সিলে বঙ্গবন্ধু চেয়ারম্যান এবং এম মুনসুর আলী সেক্রেটারী জেনারেল, ১৯৭৮ সালে আবদুল মালেক উকিল সভাপতি ও আব্দুর রাজ্জাক সাধারণ সম্পাদক, ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনা সভানেত্রী এবং আব্দুর রাজ্জাক সাধারণ সম্পাদক, ১৯৮৭ সালে শেখ হাসিনা সভাপতি এবং সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী সাধারণ সম্পাদিকা, ১৯৯২ সালে শেখ হাসিনা সভানেত্রী এবং জিলস্নুর রহমান সাধারণ সম্পাদক, ২০০০ সালের বিশেষ কাউন্সিলে শেখ হাসিনা সভাপতি এবং জিলস্নুর রহমান সাধারণ সম্পাদক এবং ২০০২ সালের কাউন্সিলে শেখ হাসিনা সভাপতি এবং আব্দুল জলিল সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। আজ শুক্রবারের কাউন্সিলে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের মধ্য দিয়ে শুরম্ন হবে ২০২১ সালের রূপকল্প বাসৱবায়নের কঠিন চ্যালেঞ্জ। দীর্ঘ দুই বছর দেশে জরম্নরি অবস্থা চলার পর গত ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেৰ নির্বাচনের মাধ্যমে তিন-চতুর্থাংশ আসনে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। দেশবাসীর কাছে প্রদত্ত অঙ্গীকার বাসৱবায়নই দল ও সরকারের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ বলে পর্যবেৰক মহল মনে করছে।
কার্যনির্বাহী সংসদের মুলতবী সভা
গতকাল বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের মুলতবী সভা বিকাল ৬টায় দলের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। ধানমন্ডিস্থ দলের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভাশেষে দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, সভায় কাউন্সিলরদের তালিকা চূড়ানৱ করা হয়েছে। তিনি বলেন, উৎসবমুখর পরিবেশে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। কাউন্সিলর এবং আমন্ত্রিত অতিথি মিলে ১০ হাজার লোক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নিবেন। এর জন্য সম্মেলন কেন্দ্রের বাইরেও সামিয়ানা টাঙ্গিয়ে বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগের কাউন্সিল হবে গণতন্ত্রের মহাউৎসব, দিন বদলের এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার উৎসব।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা
আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলে নিরাপত্তায় র‌্যাবের শতাধিক সদস্য নিয়োজিত থাকবে। থাকবে ডগ স্কোয়াডও । এছাড়া থাকছে মহানগর পুলিশ, এসবি, এনএসআই ও পুলিশের প্রটেকশন বিভাগের সদস্যরা। ডিএমপির প্রায় ৭শ’ সদস্য মোতায়েন থাকবে। র‌্যাব ঘটনাস্থলে ২৪টি সিসি টিভি বসানো হচ্ছে। প্রতিটি ক্যামেরার দৃশ্যধারণ ৰমতা ৯০ মিটার পর্যনৱ। কাউন্সিলের পাশে একটি কৰ থেকে র‌্যাব গোটা এলাকা মনিটর করবে। মূল কাউন্সিল স্থলে যারা যাবেন তাদের প্রত্যেকেকে তলস্নাশি করে ঢোকানো হবে। যারা মূল কাউন্সিল স্থল যেতে পারবেন না তাদের জন্য বাণিজ্য কেন্দ্রের মাঠে আরেকটি প্যান্ডেল তৈরি হয়েছে। এই এলাকাটিও নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় থাকবে।
পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে মূলত ২টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হওয়ায় তার জন্য বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থার পাশাপাশি সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

Popular posts from this blog

THE CONSTITUTION OF THE BANGLADESH AWAMI LEAGUE

ইতিহাসবন্ধনী

Justice order of the day