প্রাথমিক শিক্ষাকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত করার সুপারিশ
প্রাথমিক শিক্ষাকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত করার সুপারিশ
মোশতাক আহমেদ প্রতিবেদক ঢাকা, জুলাই ১২ - প্রাথমিক শিক্ষাকে ধাপে ধাপে আটবছর মেয়াদী করার সুপারিশ করতে যাচ্ছে জাতীয় শিক্ষা নীতি কমিটি। অর্থাৎ প্রাথমিক শিক্ষা হবে প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত। এতে ইংরেজি এবং ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষাকে তৃতীয় শ্রেণী থেকে বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব করা হয়েছে। জাতীয় শিক্ষানীতি ২০০৯ এর খসড়ায় এসব সুপারিশ করা হয়েছে। বর্তমানে প্রাথমিক শিক্ষা পাঁচ বছর মেয়াদী পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত। জাতীয় শিক্ষা নীতি কমিটির যুগ্ম চেয়ারম্যান ড. খলীকুজ্জমান আহমদ রোববার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,"শিক্ষানীতির একটি খসড়া তৈরি করা হয়েছে। ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে এর ওপর মতামত দেওয়ার জন্য সদস্যদের বলা হয়েছে। মতামত পাওয়ার পর এটি ঠিক করে তা নিয়ে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। তার আলোকে চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরি করা হবে।" গত ৮ এপ্রিল জাতীয় অধ্যাপক কবীর চৌধুরীর নেতৃত্বে শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটি ঘোষণা করা হয়। এ কমিটিতে লেখক ও অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল, অর্থনীতি সমিতির নেতা ড. কাজী খলীকুজ্জামান আহমদসহ ১৬ জন সদস্য রয়েছেন। পরে দু'জন সদস্যকে কো-অপ্ট করা হয়। বেশ কয়েকটি সভা করে কমিটি এ খসড়া প্রতিবেদন তৈরি করেছে। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের অনুসন্ধানে জানা গেছে প্রতিবেদনের খসড়ায় প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ শিক্ষা, কারিগরী ও মাদ্রাসাসহ দেশের প্রচলিত বিভিন্ন শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর আলাদা আলাদা অধ্যায় রয়েছে। এতে প্রাথমিক শিক্ষার মেয়াদের বিষয়ে বলা হয়েছে, এর মেয়াদ ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি করে ২০১২ সালের মধ্যে ছয় বছর, ২০১৫ সালের মধ্যে সাত বছর এবং ২০১৮ সালের মধ্যে আট বছর করা হবে। আট বছর করার অর্থ হলো বর্তমানে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত থাকা প্রাথমিক শিক্ষা স্তর হবে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় বিষয়ক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী রোববার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরকে তার প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, প্রাথমিক শিক্ষাকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত করাকে তিনি সমর্থন করেন। " অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত মৌলিক কিছু বিষয়ে অভিন্ন শিক্ষাক্রম হলে বিভিন্ন ধারার শিক্ষার বৈষম্য কিছুটা হলেও দূর হবে। তবে এটা বড় চ্যালেঞ্জ হবে। এজন্য মানসম্মত শিক্ষক নিয়োগ, শ্রেণীকক্ষসহ পর্যাপ্ত বিনিয়োগ করতে হবে," বলেন রাশেদা কে চৌধুরী। প্রাথমিক শিক্ষার মেয়াদ আট বছরে উন্নীত করা বাস্তবায়নের জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভৌত সুযোগ-সুবিধা এবং শিক্ষকের সংখ্যা পর্যায়ক্রমে বাড়ানোর পাশাপাশি প্রয়োজনীয় অর্থ যোগানের দিকে নজর দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। সাংবিধানিক তাগিদের কথা উল্লেখ করে শিক্ষানীতির খসড়ায় 'বৈষম্যহীন' শিক্ষা ব্যবস্থা চালুর করার লক্ষ্যে সমগ্র দেশে প্রাথমিক স্তরে নির্ধারিত বিষয়ে এক ও অভিন্ন শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচি চালুর সুপারিশ করা হয়েছে। এসব মৌলিক বিষয়ের মধ্যে রয়েছে বাংলা, নৈতিক শিক্ষা, বাংলাদেশ স্টাডিজ, গণিত, জলবায়ু পরিবর্তনের ধারণাসহ প্রাকৃতিক পরিবেশ ও সামাজিক পরিবেশ পরিচিতি এবং তথ্য প্রযুক্তি ও বিজ্ঞান। এসব বিষয় বাধ্যতামূলকভাবে পড়তে হবে। প্রাথমিক শিক্ষার বিভিন্ন ধারা যেমন সরকারি, বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কিণ্ডারগার্টেন, ইবতেদায়ী (মাদ্রাসা) ও বিভিন্ন এনজিও পরিচালিত বিদ্যালয়ের মধ্যে সমন্বয় ঘটানো প্রস্তাবিত নীতির অন্যতম লক্ষ্য। নির্ধারিত বিষয়গুলো ছাড়া অন্যান্য নিজস্ব বিষয় বিভিন্ন ধারায় সন্নিবেশ করা যাবে। যে সব কিণ্ডারগার্টেন ও-লেভেল, এ লেভেলসহ ইংরেজি মাধ্যমভিত্তিক শিক্ষা দেবে সেগুলো সরকারের অনুমতি সাপেক্ষে ইংরেজি মাধ্যমে পাঠ্যদান করতে পারবে। এতে আরও বলা হয়, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীতে ইংরেজি অতিরিক্ত বিষয় হিসেবে পড়ানোর ব্যবস্থা থাকবে। তবে তৃতীয় শ্রেণী থেকে তা বাধ্যতামূলক হবে। তৃতীয় শ্রেণী থেকে বাধ্যতামূলক ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষার ব্যবস্থা থাকবে। প্রাথমিক (নতুন) স্তরের শেষ তিন শ্রেণীতে অর্থাৎ ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের জীবন উপযোগী প্রাক-বৃত্তিমূলক এবং তথ্য প্রযুক্তি (আইসিটি) শিক্ষা দেওয়া হবে যাতে যারা আর উচ্চতর পর্যায়ে পড়বে না এ শিক্ষার ফলে তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ হতে পারে। প্রাথমিক স্তুরে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর অনুপাত হবে ১ অনুপাত ৩৫। এ লক্ষ্য পর্যায়ক্রমে পাঁচ বছরে অর্জন করতে হবে। অষ্টম শ্রেণী শেষে পাবলিক পরীক্ষা হবে। অর্থাৎ অষ্টম শ্রেণী সমাপ্তকারী সব ছাত্র-ছাত্রী এ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে। এ পাবলিক পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে বৃত্তি দেওয়া যেতে পারে বলে খসড়ায় সুপারিশ করা হয়। প্রতিবেদনে পাঁচ বছরের ওপরের শিশুদের এক বছর মেয়াদী প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালুরও সুপারিশ করা হয়েছে।