হয় কিডনি, নয় সন্তান

হয় কিডনি, নয় সন্তান

ঋণে বিদীর্ণ জীবন নিয়ে আর কিচ্ছুই করার নেই মোহাম্মদ ইকবালের৷ ধার শোধের আর কোনো উপায়ও জানা নেই তার৷ বাধ্য হয়ে তাই মানুষের মুখে শোনা কিডনি বিক্রির গল্পের বাস্তব রূপায়ণ ঘটাচ্ছেন মাঝ বয়সে এসে পড়া দরিদ্র এই পাকিস্তানী৷

জমিদারের পাওনা মেটাতে হলে সন্তান বিক্রি করতে হবে ইকবালকে৷ কিন্তু বাবা হয়ে সেকাজ করা যে একেবারেই অসম্ভব৷ বেআইনী হলেও নিরুপায় ইকবালের একমাত্র সম্বল নিজের একটি প্রত্যঙ্গ, কিডনি৷ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হলেও অর্থের বিনিময়ে সেই কিডনিই বিক্রি করে দিচ্ছেন তিনি৷ অবৈধ এই বিকিকিনির বাজারে ইকবাল একা নন৷ পাকিস্তানের প্রত্যন্ত দরিদ্র গ্রামগুলোতে এরকম ইকবালের আরো সন্ধান পেয়েছে সিএনএন৷
টেলিভিশনটির সংবাদদাতা নিক রবার্টসন এ অঞ্চল ঘুরে এসে বলছেন, অবিশ্বাস্য শোনালেও সত্য হচ্ছে, ২০০৭ সালে আইন করে সরকার যেটি নিষিদ্ধ করেছিল সেই অস্ত্রোপচারের প্রস্তুতি নিচ্ছেন ইকবাল৷ কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রাক-পরীক্ষা নিরীক্ষাও সেরে নিয়েছেন তিনি৷ বিনিময়ে পাবেন এক থেকে দেড়লাখ রুপি৷ অর্থের বিনিময়ে প্রত্যঙ্গ বিক্রি নিষিদ্ধ হওয়ায় চিকিৎসকরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন বৈধতার মোড়ক দিতে৷ সে অনুযায়ী ইকবালকে পরামর্শ-উপদেশও দিয়েছন তারা৷
অনেক ইকবালদের একজনের নাম রাব নওয়াজ৷ নিজের বিয়ে ও পরবর্তীতে স্ত্রী-ছয় বাচ্চার চিকিৎসার খরচ সবই হয়েছে মহাজনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে৷ বছর খানেক আগে খেয়াল করেন বোঝাটা বড্ড ভারী হয়ে গেছে৷ এবোঝা টেনে নিয়ে যাওয়া আর সম্ভব নয়৷ দেনা শোধের একটাই উপায় তারও কাছে৷ স্ত্রী আর সন্তান তো আর বেচতে পারবেন না, তাই বেঁচে থাকতে হলে উপায় একটাই কিডনি বিক্রি৷
অসহায় নওয়াজ বলেন, কী করবো আমি? বাচ্চা বেচে দেবো? কিডনিটাই তাই বিক্রি করে দিয়েছি৷ কারণ অর্থ আমাকে ফেরত দিতেই হবে৷ আরো অনেকের মতো নওয়াজেরও পেট থেকে পিঠ হয়ে লম্বা একটা দাগ হয়ে গেছে৷ অস্ত্রোপচারের দাগ৷
এক হিসেবে দেখা গেছে, পাকিস্তানে ফি বছর এরকম দুই হাজার কিডনি প্রতিস্থাপন হয়৷ এরকম প্রত্যঙ্গ বেচাকেনার হাট হিসেবে সারা দুনিয়ায় দুর্নাম কুড়ানোর কারণে ২০০৭ সালে সরকার অর্থের বিনিময়ে এধরণের কারবার আইন করে বন্ধ করে দেয়৷ সে আইন হওয়ার পর কিডনি বেচেছেন নওয়াজ৷ রাওয়ালপিন্ডির একটি হাসপাতালে তার অস্ত্রোপচার হয়েছিল৷ ঠিক কোথায় তার অপারেশন হয়েছিল সিএনএন কে তা দেখিয়ে দিতে বলা হলে তিনি বলেন, চিকিৎসকরা তাকে সমস্ত কাগজপত্র ফেলে দিতে বলেছিল যাতে এর কোনো প্রমাণ না থাকে৷ রাওয়ালপিন্ডি কিডনি সেন্টার নামের ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে জানানো হয়, আইন মেনেই সব কিছু করে তারা৷
তবে নওয়াজকে নিয়ে আরো বিস্তারিত প্রতিবেদন তৈরিতে যাননি সিএনএন প্রতিবেদক রবার্টসন৷এতে করে বিপদ হতে পারে নওয়াজের-এই মন্তব্য করে মার্কিন ওই প্রভাবশালী টেলিভিশনের সাংবাদিকটি বলেন, এই দেশে তার অধিকার যকটুকু আছে, নিরাপত্তা আছে তারও অনেক কম৷
প্রতিবেদক: নাসিরুদ্দিন খোকন
সম্পাদনা: আবদুস সাত্তার

Popular posts from this blog

THE CONSTITUTION OF THE BANGLADESH AWAMI LEAGUE

ইতিহাসবন্ধনী

Justice order of the day