ভারতের আসিফ রেজা কমান্ডো ফোর্সের অন্যতম সংগঠক মোস্ট ওয়ান্টেড জঙ্গি নেতা মুফতি ওবায়দুল্লাহ গ্রেফতার
ভারতের আসিফ রেজা কমান্ডো ফোর্সের অন্যতম সংগঠক মোস্ট ওয়ান্টেড জঙ্গি নেতা মুফতি ওবায়দুল্লাহ গ্রেফতার বাংলাদেশে
আশ্রয় নেয়া মুফতি হাবিবুল্লাহ সহ আরো ৪ জনকে খুঁজছে গোয়েন্দারা
শাহজাহান আকন্দ শুভ ও সম্পা রায়: রাশিয়ার সৈনিকদের বিরুদ্ধে আফগান যুদ্ধে অংশ নেয়া ভারতের জঙ্গি সংগঠন আসিফ রেজা কমান্ডো ফোর্সের অন্যতম সংগঠক ভারতীয় নাগরিক মুফতি শেখ ওবায়দুল্লাহ ওরফে আবু জাফরকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। ভারতীয় পুলিশ ও গোয়েন্দাদের কাছে তিনি মোস্ট ওয়ান্টেড। গ্রেফতার এড়াতে ১৯৯৫ সালে ভারত থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন মুফতি ওবায়দুল্লাহ। এরপর থেকেই বাংলাদেশে অবস্থান করছিলেন তিনি। মাদারীপুরের শিবচরের জামিয়াতুস সুন্নাহ মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করছিলেন তিনি। শেখ ওবায়দুল্লাহ জানান, সৌদি আরব ও পাকিস-ানভিত্তিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী আল আমীনের সদস্য তিনি। পাকিস-ানের কারী নিয়ামত উল্লাহ হলেন এই সংগঠনের অন্যতম প্রধান সংগঠক। তবে সংগঠনটির কার্যক্রম বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। ঢাকার পুলিশ কমিশনার একেএম শহীদুল হক বলেছেন, মাফিয়া ডন দাউদ ইব্রাহিম চক্রের অনুসন্ধান করতে গিয়েই আমরা ভারতীয় জঙ্গি ওবায়দুল্লাহ’র খোঁজ পাই। এরপরই গত ১৬ আগস্ট ঢাকার বাবুবাজার ব্রিজের কাছ থেকে তাকে আটক করা হয়। আমরা বাংলাদেশে জঙ্গিবাদে তার জড়িত থাকার কোনো তথ্য এখন পর্যন- পায়নি। অবৈধভাবে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ এবং পাসপোর্ট না থাকায় তার বিরুদ্ধে পাসপোর্ট আইনে মামলা হবে।জানা গেছে, গ্রেফতারের সময় মুফতি ওবায়দুল্লাহ পুলিশের কাছে নিজেকে মাওলানা মো. আবু জাফর হিসেবে পরিচয় দেন এবং মাদারীপুর জেলার শিবচর থানাস্থ জামিয়াতুল সুন্নাহ মাদ্রাসার একজন শিক্ষক বলে দাবি করেন। তিনি জানান তার স্থায়ী ঠিকানা যশোর জেলার ঝিকড়গাছা থানাস্থ শ্রীরামকাঠি গ্রামে। পরবর্তীসময়ে পুলিশের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেন, মাওলানা আবু জাফর হচ্ছে তার ছদ্মনাম এবং তার প্রকৃত নাম হচ্ছে মুফতি শেখ ওবায়দুলাহ। গ্রেফতারের পর তাকে মাদারীপুর জামিয়াতুস সুন্নাহ মাদ্রাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে একজন শিক্ষক হিসেবে তার পরিচয় নিশ্চিত হয় গোয়েন্দা পুলিশ। কিন্তু বাংলাদেশি হিসাবে তিনি যশোরের যে ঠিকানা দেন সেখানে গিয়ে তার কোনো সত্যতা পায়নি তারা। পরে শেখ ওবায়দুল্লাহ নিজেকে একজন ভারতীয় নাগরিক বলে স্বীকার করেন। তিনি জানান, তার স্থায়ী ঠিকানা সাং- বেলেশিজ বেড়িয়া, থানা-উলুবেড়িয়া, জেলা-হাওড়া, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত। ভারতীয় আইন-শৃঙ্ক্ষলা বাহিনীর কাছে মোস্ট ওয়ান্টেড হওয়ায় পরিচয় গোপন করার চেষ্টা করেন।শেখ ওবায়দুল্লাহ জানান, ৯৫ সালে পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া জেলার খুশবান মাদ্রাসার মাওলানা ফজলুর রহমানের সহযোগিতায় তিনি বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। বাংলাদেশে আসার পর মাওলানা ফজলুর রহমানের দুলাভাই পচুর (মুন্সিপুর হাটখোলা, দামুড়হুদা চুয়াডাঙ্গা) বাড়িতে রাত্রীযাপন করেন। অতঃপর তিনি যশোরে এসে মুড়লী মোড় মসজিদ মাদ্রাসায় এসে খুররম খৈয়ামের সঙ্গে দেখা করে ১০ দিন অবস্থান করেন। অতঃপর সাতক্ষীরার শ্যামনগরের মাওলানা ওবায়দুল্লার বাসায় ৩/৪ মাস অবস্থান করেন। ঢাকায় এসে আবার যশোরে ফিরে গিয়ে মনিরামপুরের মাছনা মাদ্রাসায় ২/৩ বছর শিক্ষকতা করেন। সেখান থেকে তিনি ঢাকায় নবাবগঞ্জের (টিকরপুর) জামেয়া মাহমুদীয়া মাদ্রাসায় ২/৩ বছর শিক্ষকতা করেন। তিনি মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল মাদা্রসায়ও ২/৩ বছর ছিলেন। সর্বশেষে ২০০৩ সাল থেকে মাদারীপুরে শিবচরস্থ জামিয়াতুস সুন্নাহ মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করে আসছিলেন। শিবচরে স্ত্রী নাসিমা বেগমকে নিয়েই বসবাস করছিলেন। মুফতি শেখ ওবায়দুল্লাহ ভারতের দেওবন্দ মাদ্রাসা থেকে ফতোয়া বিভাগ থেকে ডক্টরেট ডিগ্রী অর্জন করেন। রাশিয়ার সৈনিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে এই জঙ্গি নেতা ৪ বার ভারত থেকে পাকিস-ান হয়ে আফগানিস-ানে যান। সেখানে ভারী ও হালকা অস্ত্রের ওপর প্রশিক্ষণ নেন এবং যুদ্ধ করেন। মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার বাহাদুরপুর জামিয়াতুস সুন্নাহ মাদ্রাসার কিতাব শাখার শিক্ষক মুফতি শেখ ওবায়দুল্লাহ মাদ্রাসায় দাদা হুজুর নামে অধিক পরিচিত। তিনি তার স্ত্রী ও ২ ছেলে ৩ মেয়েকে নিয়ে শিবচর উপজেলার পাচ্চর ইউনিয়নের রঘুনাথপুর গ্রামের সেকান্দার ফকিরের বাড়িতে সাড়ে ৪শ’ টাকায় ভাড়া থাকেন। গতকাল ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় ভাড়া করা বাড়িতে মহিলা ছাড়া অপরিচতদের প্রবেশ নিষেধ। বাড়ির বাইরের গেটে পর্দা লাগানো। বেড়ার আড়ালে দাঁড়িয়ে তার স্ত্রী নাসিমা বেগম সাক্ষাত দেন। তারা এলাকার কারো সঙ্গে তেমন কোনো কথা বলতেন না। অন্য কারো বাড়িতে স্ত্রী ও সন-ানদের যাতায়াতও ছিল না। মাথা নিচু করে তিনি আসা যাওয়া করতেন তাই সবাই তাকে সৎজন বলেই জানতো। এদিকে এ ঘটনা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে উক্ত মাদ্রাসাসহ এলাকায় আতংক বিরাজ করছে। পার্শ্ববর্তী ভাড়াটিয়া নুরু শেখের স্ত্রী নাসিমা আক্তার বলেন, আবু জাফরের পরিবারের অভাব অনটনের কারণে তার বন্ধুরা তাকে অনেক সাহায্য করতেন। মাঝে মধ্যে অচেনা বন্ধুরাও এই বাড়িতে আসতেন। তবে এরা সবাই অন্য এলাকার। আমরা চিনতাম না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক দোকানী বলেন, মাদ্রাসা শিক্ষককে গভীর রাতে ও কাকডাকা ভোরে আসা যাওয়া করতে দেখা যেতো। ওবায়দুল্লাহর স্ত্রী নাসিমা বেগম বলেন, আমরা দু’জনেই ভারতের হাওড়া জেলার উলুবেরিয়ায় সিজবেরিয়া জন্মগ্রহণ করেছি। তিনি (স্বামী) ভারতের দেওবন্দ মাদ্রাসায় লেখাপড়া করেছেন। ৭ বছর ধরে শিবচরের এই মাদ্রাসায় চাকরি করছেন। তিনি এর আগে মাদারীপুর, রাজৈর ও ঢাকায় ১২ বছর শিক্ষকতা করেছেন। ৩ ছেলে ও ২ মেয়ে নিয়ে ৭ হাজার টাকা বেতনে (চলতি বছর থেকে) অভাব অনটনের মধ্যেই সংসার চলে। তবে তার ঢাকার এক বন্ধু মুফতি জাকির মাঝে মধ্যে আর্থিক সহযোগিতা করতো। তার অপর ৩ ভাইও মাদ্রাসা শিক্ষক। ওবায়দুল্লাহর বড় ছেলে মতিউর বলেন, আমার বাবা এ পর্যন- একবার মাদ্রাসার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সৌদি আরব গেছেন। আমি আব্বার সঙ্গে গতকাল ডিবি অফিসে ঢাকায় দেখা করেছি। জামিয়াতুস সুন্নাহ মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা হোসাইন আহম্মেদ বলেন, আটককৃত শিক্ষক গত ২০০৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি এই মাদ্রাসায় যোগদান করেন। তাকে বারবার চাপ দেয়ার পরও আমাদের সার্টিফিকেট ও ছবি দেননি। টালবাহনা করেছেন। তবে ২০০৬ সালে তার কাছ থেকে আমরা অঙ্গীকারনামা নিয়েছি যে, কোনো রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত না। শিবচর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুৃল জলিল বলেন, গত রোববার রাতে মহানগর ডিবি পুলিশ শেখ ওবায়দুল্লাহ ওরফে আবু জাফরকে ২টি মোবাইল সেট ও ৫টি সিম, ব্যবহৃত ডায়েরি, বেশ কিছু কাগজপত্রসহ গ্রেফতার করে ঢাকায় নিয়ে যায়।