‘যারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকে অপব্যবহার করে মিথ্যা মামলা দেয় তারাই সবচে বড় দুর্নীতিবাজ’


‘যারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকে অপব্যবহার করে মিথ্যা মামলা দেয় তারাই সবচে বড় দুর্নীতিবাজ’
মহীউদ্দিন খান আলমগীরের ১৩ বছরের সাজা বাতিল


মিলটন আনোয়ার ও হিরা তালুকদার: অবৈধ সম্পদ অর্জন সংক্রানৱ দুর্নীতির মামলায় বিচারিক আদালতে সাজাপ্রাপ্ত সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ও বর্তমানে সরকারি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কীত সংসদীয় কমিটির সভাপতি মহীউদ্দিন খান আলমগীরকে বেকসুর খালাস দিয়েছে হাইকোর্ট। গতকাল সোমবার বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দসৱগীর ও মো. রইস উদ্দীনের হাইকোর্ট বেঞ্চ আওয়ামী লীগের এ নেতার আপিল আবেদনের ওপর পূর্ণাঙ্গ শুনানি শেষে এ রায় দেন। হাইকোর্টের এই রায়ের ফলে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে প্রথম যে ৫০ জনকে দুর্নীতির অভিযোগে সাজা দেয়া হয়েছিল তাদের প্রত্যেকের মামলা ও সাজা বাতিলযোগ্য হবে বলে আইনজীবীরা জানিয়েছেন। এদিকে হাইকোর্টর এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে বলে জানিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন।
ঢাকার বিশেষ জজ আদালত ২০০৭ সালের ২৬ জুলাই অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলায় মহীউদ্দিন খান আলমগীরকে ১৩ বছর সাজা দেয়। এই সাজার বিরুদ্ধে তিনি আপিল করেন। আপিলের আবেদনে মখার আইনজীবী রফিক উল হক বলেন, মহীউদ্দিন খান আলমগীরসহ ৫০ জনকে ২০০৭ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি সম্পদের হিসাব চেয়ে দুদক যে নোটিস দিয়েছিল সেই নোটিসটি ছিল অবৈধ। তিনি নোটিসটির বৈধতার বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, দুদকের আইন অনুযায়ী এই সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিস দেয়ার এখতিয়ার কেবল কমিশনের রয়েছে। আইন অনুযায়ী কমিশন বলতে এর চেয়ারম্যান ও অপর দুই কমিশনারকে বোঝায়। কিন্তু ২০০৭ সালের ১৮ ফেব্রয়ারি ৫০ জনের সম্পদের হিসাব চেয়ে যে নোটিস দেয়া হয়েছে তা দিয়েছেন কমিশনের তৎকালীন সচিব দেলোয়ার হোসেন। তৎকালীন চেয়ারম্যানসহ অপর দুই কমিশনার পদত্যাগ করায় ৭ ফেব্রয়ারি থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যনৱ কমিশন ছিল না। ফলে এই সময়ের মাঝখানে সচিব আইনত কমিশনের হয়ে নোটিস দিতে পারেন না। বিষয়টি বুঝতে পেরে তৎকালীন সরকার একটি অধ্যাদেশ জারি করে সচিবের কাজের বৈধতা দেয়। কিন্তু বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর সচিবের কাজের বৈধতা দিয়ে জারি করা অধ্যাদেশটি বাতিল করে। ফলে সম্পদের হিসাব চেয়ে ৫০ জনকে দেয়া নোটিস অবৈধ হয়ে যায়। যেহেতু নোটিসটি অবৈধ সেহেতু নোটিসের ভিত্তিতে যে মামলা ও সাজা হয়েছে তাও অবৈধ। এই বিবেচনায় আদালত মহীউদ্দিন খান আলমগীরের সাজা বাতিল করে দিয়েছে বলে ব্যারিস্টার হক জানান।
ড. মহিউদ্দিন খান আলমগীরের প্রতিক্রিয়া
ড. মহিউদ্দিন খান আলমগীর তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, এ রায় দিয়ে উচ্চ আদালত আইনকে সমুন্নত করেছেন। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মিথ্যা বিবৃতি দিতে রাজি না হওয়ায় আমি, আমার স্ত্রী ও ২ ছেলের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছিল। তবুও এধরনের প্রসৱাব আমি ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছি। কেউ আমাকে দিয়ে মিথ্যা কথা বলাতে পারেনি। তিনি বলেন, যারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকে অপব্যবহার করে এ ধরনের মিথ্যা মামলা দেয় তারাই সবচে বড় দুর্নীতিবাজ। তাদের বিচার হবে। যৌথবাহিনী, তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং ওই সময়ে তাদের তাবেদার দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এ ধরনের ঘৃণিত কাজ করেছে। তিনি আরো বলেন, আমি মনে করি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে রাজনীতিবিদদের গণহারে সাজা দেয়া- বিশেষ জজ আদালতের বিচারকরা এখন অনুধাবন করবেন, তারা কি করেছেন। কারো চাপে হোক আর ইচ্ছাকৃতভাবে হোক, তারা কাজগুলো ঠিক করেননি।
রায়ের প্রতিক্রিয়ায় ব্যারিস্টর রফিক উল হক বলেন, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের এটি একটি ঐতিহাসিক রায়। এর ফলে সত্যের জয় হয়েছে। সত্যিকারের আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে চলা গায়ের জোরের কর্মকাণ্ড আজ থেকে অবসান হলো।
গ্রেফতার, মামলা এবং জামিন
২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর ৩ ফেব্রুয়ারি মখা আলমগীরকে আটক করে যৌথবাহিনী। ওই বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি দুদক দেশের ৫০ জন রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, আমলা ও অন্যান্যদের একটি তালিকা প্রকাশ করে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে তাদের নিজের ও স্ত্রী-সনৱানদের নামে থাকা স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির হিসাব জমা দিতে বলে। ওই তালিকায় আলমগীরের নামও ছিল।
এরপর ২২ ফেব্রুয়ারি আলমগীরের ভাই অধ্যাপক বোরহান উদ্দিন খান জাহাঙ্গীর এবং ভাইপো অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন দুুদক কার্যালয়ে গিয়ে মহীউদ্দীন খান আলমগীরের সম্পত্তির হিসাব জমা দেন। সম্পত্তির হিসাব বিবরণীতে তথ্য গোপন ও অবৈধভাবে সম্পত্তি অর্জনের অভিযোগে ৬ মার্চ আলমগীরের বিরুদ্ধে কমিশনের উপ-পরিচালক জীবন কৃষ্ণ রায় বাদি হয়ে তেজগাঁও থানায় মামলা করেন।
২০০৮ এর ২৮ আগস্ট হাইকোর্ট থেকে এ মামলায় জামিন পান আলমগীর। এরপর ২০০৯ সালের ২২ জানুয়ারি হাইকোর্ট এ মামলায় তার সাজা স্থগিত করে।

Popular posts from this blog

THE CONSTITUTION OF THE BANGLADESH AWAMI LEAGUE

ইতিহাসবন্ধনী

Justice order of the day