অনুসরণ করে ইউরোপও এগোচ্ছে জোর কদমে৷ সত্যিই কি তাই?

চন্দ্রে অবতরণ নিয়ে ইউরোপীয়দের নতুন স্বপ্ন

মহাকাশ যাত্রায় খুব বড় সাফল্যের সম্ভাবনা দেখছে ইউরোপ৷ সোমবারই চাঁদে পা রাখার ৪০ বছর পূর্তি উদযাপন করছে যুক্তরাষ্ট্র৷ আর সেই মার্কিনিদের পথ অনুসরণ করে ইউরোপও এগোচ্ছে জোর কদমে৷ সত্যিই কি তাই?
বাজ অলড্রিনকে সঙ্গে নিয়ে নিল আর্মস্ট্রং চাঁদে গিয়েছিলেন ১৯৬৯ সালের ২০শে জুলাই৷ অর্থাৎ, আজ থেকে ৪০ বছর আগে৷ চাঁদে মানুষের এই প্রথম অবতরণের ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য তো বটেই, বিশ্বের জন্যও ছিল এক অবিশ্বাস্য প্রাপ্তি৷ তাই এবার, যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি এমনই একটি প্রাপ্তির সন্ধানী ইউরোপ৷ কারণ, ইউরোপও এবার নিজস্ব ভাবে চাঁদে তাদের পা রাখতে চায়, করতে চায় ইউরোপীয় চন্দ্রাভিযান৷ আর হবে নাই বা কেন ? বিজ্ঞান আর প্রযুক্তিতে যে বহুদূর এগিয়ে গেছে বিশ্ব৷ মানুষ মর্ত্য ছেড়ে পাড়ি দিচ্ছে মহাকাশে৷ এমনকি চাঁদের দেশেও বসত গড়তে চলেছে প্রস্তুতি৷ তাই ইউরোপীয়রাও যে আর পিছনে থাকতে চান না৷

অটোমেটেড ট্রান্সফার ভেইকেল বা এটিভি
ইউরোপের চাঁদে পাড়ি দেওয়ার স্বপ্নের মূল জোর তাদের তৈরি সাম্প্রতিকতম এক মহাকাশযান৷ যার নাম - অটোমেটেড ট্রান্সফার ভেইকেল বা এটিভি৷ এই যেমন জুল ভার্ন৷ যা গত বছর আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন আইএসএস থেকে আবার ফিরে আসে পৃথিবীতে৷ চাঁদে যাওয়ার স্বপ্ন দেখে জার্মান নভোচারীরাও কিন্তু দুঃখের বিষয়, ইউরোপীয়দের তৈরী ঐ যানটি এখনও চন্দ্রাভিযানের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত নয়৷ কারণ, এ মুহূর্তে এটিভি বা মালবাহী নভোযানগুলি মহাকাশে সর্বোচ্চ ১০ টন পর্যন্ত ওজন বয়ে নিয়ে যেতে পারলেও, পৃথিবীতে ফিরে আসতে পারে না৷
এ সমস্যা অবশ্য নতুন কিছু নয়
কিছু দিন আগে পর্যন্তও মহাকাশে মানুষ পাঠাতে হলে রাশিয়ার সোয়ুজ ও মার্কিন মহাকাশযানের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছিল সকলের৷ আর সে অবস্থা বদলাতেই আসরে নেমেছিল ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা এসা৷ তাদের লক্ষ্য ছিল ২০১৭ সাল থেকে নিজস্ব উদ্যোগে মহাকাশে মানুষ পাঠানো৷ এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণে জার্মানির মহাকাশ সংস্থা ডিএলআর এবং এয়ারবাস বিমানের নির্মাতা ইএডিএস, এসার সঙ্গে একযোগে কাজ করতে শুরু করেছিল৷ অর্থাৎ, বর্তমানে মহাকাশে যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম পাঠাতে এটিভি নামের যে যান ব্যবহার করা হয়ে থাকে, সেই যানের উন্নতিসাধনে বদ্ধপরিকর ছিল তারা৷ আগে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করার পর, বাতাসের সঙ্গে ঘর্ষণের ফলে যে মারাত্মক উত্তাপের সৃষ্টি হয় - তা প্রতিরোধ করার জন্য প্রয়োজনীয় বিশেষ স্তরটি সাধারণ এটিভি-গুলিতে ছিল না৷ সে জন্যই তৈরি করা হয়েছিল এটিভি ইভোলিউশন৷ তারই নাম রাখা হয়েছিল জুল ভার্ন৷ কিন্তু, দেখা গেল জুল ভার্ন-ও শুধুমাত্র ১০ টন পর্যন্ত ওজন বইতে সক্ষম৷ মানুষ তো দূরের কথা !
আশাবাদী ইএডিএস-এর প্রেসিডেন্ট এভার্ট ডুডক
এয়ারবাস বিমানের নির্মাতা ইএডিএস-এর প্রেসিডেন্ট এভার্ট ডুডক অবশ্য আশাবাদী যে শীঘ্রই এ সমস্যা দূর হবে৷ তিনি জানান, নতুন প্রযুক্তির এটিভি-গুলি যাতে পৃথিবীতে নিরাপদে ফিরে আসতে পারে সে ব্যবস্থা করতে, তার আকারেও কিছুটা পরিবর্তন আনার কথা ভাবা হচ্ছে৷

১৯৬৯ সালের ২০ জুন, চাঁদে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পতাকাসে অনুযায়ী কাজ শেষ হলে, ক্যাপসুল আকারের বর্তমান এটিভি এক সময় হয়ত হয়ে যাবে সিলিন্ডার আকৃতির৷ আর তখন এটিভির ভূ-পৃষ্ঠে ফিরে আসতে কোন অসুবিধা হবে না৷ ডুডক জানান, আরো কিছু সমস্যার কথা ভেবে এটিভি-র চারপাশে এমন একটা আবরণ তৈরি করা হবে, যা অতিরিক্ত তাপে পুড়ে যাওয়ার আশঙ্কাও দূর করবে৷
এসা-র ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
শোনা যাচ্ছে, এসা তার পরবর্তী এটিভি মহাকাশে পাঠাতে চলেছে ২০১০ সালে৷ পাঠাবে পর পর চার-চারটি মালবাহী যান৷ যার জন্য খরচ হবে প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ইউরো৷ দ্বিতীয় পর্যায়ে অবশ্য ইউরোপের এটিভি-কে মহাকাশচারী বহনের উপযুক্ত করে তোলা হবে৷ আর তখন এমন একটি ব্যবস্থাও চালু রাখা হবে, যাতে এটিভি-কে বহনকারী রকেট প্রয়োজনে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারে৷ অর্থাৎ, কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে মহাকাশচারীদের প্রাণ বাঁচাতে এটিভি ক্যাপসুল যাতে ঠিক সময়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে৷
সুতরাং, যুক্তরাষ্ট্রকে অনুসরণ করে খুব শীঘ্রই যে ইউরোপীয়রা চাঁদে পা রাখতে চলেছে - সে আশা করতে আর দোষ কোথায় ?
প্রতিবেদক: দেবারতি গুহ

Popular posts from this blog

THE CONSTITUTION OF THE BANGLADESH AWAMI LEAGUE

ইতিহাসবন্ধনী

Justice order of the day