ওয়াশিংটন টাইমসের প্রতিবেদনে হুমকিঃ একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকলে লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় নামবে
ওয়াশিংটন টাইমসের প্রতিবেদনে হুমকিঃ একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকলে লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় নামবে
এনা, নিউইয়র্ক থেকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকলে লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় নামবে। কেননা এটি করা হচ্ছে বিরোধী দলকে নিশ্চিহ্ন করে বাংলাদেশে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা চালুর অভিপ্রায়ে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সংবাদপত্রগুলোর অন্যতম ওয়াশিংটন টাইমসে ১৫ জুলাই প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ হুমকি দেন মুসলিম উমমাহ অব নর্থ আমেরিকা (মুনা) নামক একটি সংগঠনের মুখপাত্র আকতার হোসেন । ’বাংলাদেশ প্রোব টার্গেটস ’৭১ ফ্যোজ’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদে মুনা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের জামাতে ইসলামীর সিনিয়র কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রে এলেই কংগ্রেসের সদস্য এবং স্টেট ডিপার্টমেন্ট/হোয়াইট হাউজের কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠকের আয়োজন করে থাকে এই সংগঠনটি। খবরে বলা হয়েছে, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী জামাতে ইসলাম চেয়েছিল পাকিস্তানকে অখন্ড রাখতে। আকতার হোসেন আরো উল্লেখ করেন, মুক্তিযুদ্ধের সময়ে সংঘটিত ক্রাইমের ব্যাপারটির নিষ্পত্তি ঘটেছে ১৯৭৩ সালেই। এতদসত্বেও এখন যদি সেই মিমাংসিত ঘটনাকে আবারো সামনে আনা হয় তাহলে তা হতে হবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সামনে। ঐ সংবাদে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হুমায়ূন কবির বলেন, ’১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধী আইনের সংশোধন এনে গত সপ্তাহে জাতীয় সংসদে একটি প্রস্তাব পাশ করা হয়েছে। ঐ সংশোধনী অনুযায়ী একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের ঘটনাবলী পুনরুজ্জীবিত হবে।’ রাষ্ট্রদূত হুমায়ূন কবির ওয়াশিংটন টাইমসকে আরো বলেছেন, একাত্তরের ঘটনাবলীর ব্যাপারে যাবতীয় তদন্ত এবং বিচার প্রক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক রীতি অনুসরণ করতে সরকার বদ্ধ পরিকর। নিউইয়র্কভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ’হিউম্যান রাইটস ওয়াচ’র পক্ষ থেকে গত সপ্তাহে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর নিকট একটি পত্র দেয়া হয়েছে। সে পত্রে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়ায় যাবতীয় সহায়তা প্রদানের অঙ্গিকার ব্যক্ত করা হয়। পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে যে, বিচার হতে হবে স্বচ্ছ এবং নিরপেক্ষতার সাথে। টাইমসের সংবাদে উল্লেখ করা হয়েছে, একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধিতা করে যারা অস্ত্র হাতে নিয়েছিলো তারা ৩০ লাখ মানুষ হত্যা এবং ২ লাখ নারীকে ধর্ষণ করেছে। রাষ্ট্রদূত হুমায়ূন কবির ওয়াশিংটন টাইমসের সম্পাদক ও সংবাদদাতাগণকে আনুষ্ঠানিকভাবে আরো জানিয়েছেন যে, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিটি অনেক পুরনো। যারা মুক্তিযুদ্ধের পর জন্মেছে বা যারা সে সময় একেবারেই ছোট ছিল-তেমন প্রজন্মের সকলেই একাত্তরের ঘাতকদের বিচার চাচ্ছে। আর এ দাবি জোরালো হয় রুয়ান্ডা এবং বসনিয়ায় গণহত্যার বিচার শুরুর পরই। হুমায়ূন কবির বলেছেন, অপরাপর গণহত্যার ঘটনাগুলো আমাদের স্মৃতিতে একাত্তরকে জাগ্রত করেছে এবং এখন আমরা সে কাজটি সম্পন্ন করে যেতে চাই। রাষ্ট্রদূত কবির বলেন, এ বিচার প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক কোন প্রভাব নেই এবং বিশেষ কোন রাজনৈতিক দলকে টার্গেট করেও বিচারের প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। একাত্তরের ঘাতকদের বিচার দাবিতে সারা বাংলাদেশের সিংহভাগ মানুষ যখন একাত্ম, জনগণের আকঙ্খার পরিপূরক হিসেবে মহাজোট সরকার যখন বিচারের প্রক্রিয়া অবলম্বন করেছেন, ঠিক তেমনি মুহূর্তে মুনা কর্তৃক এমন হুঙ্কার প্রদানের ঘটনাকে ’নিতান্তই হাস্যকর’ হিসেবে অভিহিত করেছেন প্রবাসী নেতৃবৃন্দ। যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি ডঃ নূরন্নবী এবং সাধারণ সম্পাদক শিতাংশু গুহ, যুক্তরাষ্ট্র মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার ডাঃ মাসুদুল হাসান ও শরাফ সরকার, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদ, যুক্তরাষ্ট্র যুবলীগের সভাপতি মিসবাহ আহমেদ এবং সেক্রেটারী আনিসুল হুদা রিপন, যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের সেক্রেটারী জেনারেল এম ফজলুর রহমান, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির যুক্তরাষ্ট্র শাখার আহবায়ক ড. মহসিন আলী, সদস্যসচিব ফাহিম রেজা নূর ও যুগ্ম সদস্য সচিব খোরশেদ খন্দকার, স্বাধীনতা চেতনামঞ্চের সেক্রেটারী হেলাল মাহমুদ প্রমুখ বার্তা সংস্থা এনাকে বলেছেন, একাত্তরের ঘাতকদের বিচার প্রক্রিয়া ব্যহত করতে যারা চাচ্ছে তারা মানবতার শত্রু হিসেবেই চিহ্নিত হবে। কেননা যারা নির্বিচারে মানুষ হত্যা করে, যারা মা-বোনদের ইজ্জত লুন্ঠন করে, যারা বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দেয়-তারা কখনোই এ সভ্য সমাজের সদস্য হতে পারে না। বিবেকসম্পন্ন মানুষেরাও এমন নরপশুদের পক্ষাবলম্বন করতে পারেন না। স্মরণ করা যেতে পারে, মুনার একটি যুব ফ্রন্ট রয়েছে এবং মুনার সাথেও নতুন প্রজন্মের সম্পৃক্ততা রয়েছে। আমেরিকা ও কানাডায় বিপুলসংখ্যক প্রবাসী মুনার সাথে সম্পৃক্ত। গুটিকতক ঘাতকের দায় নিয়ে জামাতে ইমলামীর মত একটি রাজনৈতি দল বারবার সভ্য সমাজের সামনে হেয়প্রতিপন্ন হউক-এটা চান না নতুন প্রজন্মের জামাতীরা। মুনার সাথে সম্পৃক্ত একাধিক তরুন সংগঠক এ মনোভাব পোষণ করেছেন বলে বার্তা সংস্থা এনা জানতে পেরেছে।