প্রবাসীরা দেশের অর্থনীতির হৃদপিণ্ড : পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী
প্রবাসীরা দেশের অর্থনীতির হৃদপিণ্ড : পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী
ঢাকা, বাংলাদেশ, ৩ জুলাই (বাসস) : পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ প্রবাসীদের দেশের অর্থনীতির হৃদপিণ্ড হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, বিশ্ব মন্দা সত্ত্বেও বিদেশ থেকে ৯শ’ ২০ কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে।তিনি আশা করেন, চলতি বছরের শেষনাগাদ তা এক হাজার কোটি মার্কিন ডলারে দাঁড়াবে। বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বর্তমানে শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়েছে।তিন দিনব্যাপী প্রথম অনাবাসী বাংলাদেশী মানবসম্পদ উন্নয়ন ও সম্ভাবনা সম্মেলন ২০০৯-এর দ্বিতীয় দিনে আজ ‘অভিবাসন নীতিমালা ও সচেতনতা সৃষ্টি’ শীর্ষক সেমিনারে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।তিনি বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মরত ৬৫ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশী মাস হিসেবে গত মে মাসে সর্বোচ্চ ৮৯ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে।এ প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী বলেন, পুরো রেমিট্যান্স বৈধ পথে এলে এ পর্যন- যা এসেছে সরকার তার চেয়ে আরো ৩০ ভাগ বৈদেশিক মুদ্রা বেশি পেত।প্রবাসীদের কল্যাণে বর্তমান সরকারের গৃহীত বিভিন্ন কার্যক্রমের উল্লেখ করে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, প্রবাসী ব্যাংক প্রতিষ্ঠা এখন স্বপ্ন নয় সময়ের বাস্তবতা। অচিরেই এ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম শুরু হবে। এ ব্যাংকের অংশীদার হবে শুধুমাত্র প্রবাসীরাই।তিনি বলেন, সারা বিশ্বে কর্মরত বাংলাদেশীদের সিংহভাগ এককভাবে সৌদি আরবে কর্মরত। এখানে শ্রমিকদের নানা সমস্যা ছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত উদ্যোগে সৌদি সরকার বাংলাদেশী শ্রমিকদের আকামা পরিবর্তন করার সুবিধা চালু করেছে।বিদেশে কর্মরতদের স্বার্থ সুরক্ষায় সরকার ১৯৮৩ সালে প্রণীত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অর্গানোগ্রাম পরিবর্তন করে হালনাগাদ করার উদ্যোগ নিয়েছে।প্রতিমন্ত্রী নিরাপদ অভিবাসনের জন্য সরকারের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সকল মহলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে জাল ভিসা এবং প্রতারক জনশক্তি রফতানিকারকদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার পরামর্শ দেন।বিভিন্ন দেশে নতুন শ্রমবাজার সৃষ্টিতে সরকারের প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরে ড. হাছান বলেন, পূর্ব ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পুরুষ শ্রমিকের পাশাপাশি এখন মহিলা শ্রমিকদের নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। এ ছাড়া লিবিয়ায় কর্মসংস্থানে ৩ থেকে ৪শ’ বাংলাদেশীকে প্রতিদিন ভিসা দেয়া হচ্ছে। মরিশাসে বন্ধ হয়ে যাওয়া শ্রমবাজারও পুনরায় চালু হবে।তিনি বলেন, বিশ্ব মন্দার কারণে যেখানে ফিলিপাইনে শ্রমিক ফিরে আসার সংখ্যা লাখের ঘরে সেখানে এ পর্যন্ত মাত্র ২৭ হাজার বাংলাদেশী ফেরত এসেছে। অথচ চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ২ লাখ বাংলাদেশীর বিদেশে কর্মসংস্থান হয়েছে।পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, সরকারের দায়িত্ব মানুষকে প্রণোদিত করা। মানুষ স্বপ্রণোদিত না হলে দেশ সমৃদ্ধ হবে না। নিরাপদ অভিবাসনের জন্য তিনি বিদেশগামীদেরও সচেতন হওয়ার তাগিদ দিয়ে বলেন, শ্রমিকদের স্বার্থে সকল দিক বিবেচনা করে সরকার শ্রমনীতি প্রণয়ন করবে। এছাড়া শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে সরকার আন্তর্জাতিক অভিবাসন সনদে অনুস্বাক্ষরের বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করছে।সেমিনারে অন্যান্যের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন অভিবাসী অধিকার সংরক্ষণে নিয়োজিত বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আরএমএমআরইউ’র প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর ড. রোজানা রশিদ, বিওএমএমএ’র প্রোগ্রাম ডিরেক্টর সুমাইয়া ইসলাম, ব্র্যাকের প্রশিক্ষণ পরিচালক শিপা হাফিজা, ওয়্যারবি.ডিএফ’র চেয়ারম্যান সৈয়দ সাইফুল হক ও বিআইডিএস’র ড. আনোয়ারা বেগম।পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব সম্পর্কে সতর্কবাণী উচ্চারণ করে বলেন, বর্তমানে অর্থনৈতিক প্রয়োজনে অভিবাসন হলেও পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে আগামীতে অনেক মানুষ পরিবেশ শরণার্থীতে পরিণত হবে।এ প্রসঙ্গে তিনি মালদ্বীপের উদাহরণ দিয়ে বলেন, পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে দেশটির জনগণকে অন্যত্র সরিয়ে নিতে সে দেশের সরকার চিন্তা-ভাবনা করছে। বাংলাদেশকেও এ বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে।সেমিনারে বক্তারা অভিবাসন নীতিমালা সময়োপযোগী করা এবং এতে নারী শ্রমিকের বৈষম্য দূর করার আহ্বান জানান।বক্তারা বিদেশে কর্মসংস্থানের জন্য যাওয়ার খরচ কমানোর পাশাপাশি বহির্গমনের আগে তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করতে সরকারকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।তারা প্রতিটি জেলায় প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের পাশাপাশি বিদেশগামী শ্রমিকদের নানা বিষয়ে সচেতন করতে সরকারি উদ্যোগের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেন।