আলোচিত জে. মইনের বিদায় আজ
আলোচিত জে. মইনের বিদায় আজ
‘দেশবাসী আমার কাজের মূল্যায়ন করবে’
১১ জানুয়ারির রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের নায়ক হিসেবে আলোচিত বিদায়ী সেনাপ্রধান জেনারেল মইন উ আহমেদের মেয়াদ শেষ হয়েছে গতকাল রোববার। বিদায়লগ্নে তিনি বলেন, ‘আমার সাফল্য-ব্যর্থতার বিচার করবে দেশবাসী।’ আজ সোমবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে দেশের ১৬ তম সেনাপ্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করছেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল আবদুল মুবীন চৌধুরী। দায়িত্ব গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে তিনি পদোন্নতি পেয়ে চার তারকা জেনারেল পদমর্যাদায় ভূষিত হবেন। সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক রাষ্ট্রপতি জিলস্নুর রহমানের উপস্থিতিতে আজ সেনাসদরে সেনাপ্রধানের দায়িত্ব হস্তান্তর ও নতুন সেনাপ্রধানকে ব্যাজ পরানো হবে। সেনাপ্রধান হিসেবে জেনারেল মইন উ আহমেদের শেষ কর্মদিবস ছিল গতকাল রোববার। রাষ্ট্রপতি জিলস্নুর রহমানের সঙ্গে গতকাল বঙ্গভবনে বিদায়ী দেখা করেছেন মইন উ আহমেদ। সাৰাৎ শেষে তিনি সাংবাদিকদের জানান, নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও তিনি দায়িত্ব পালন ও ভালো কাজ করার চেষ্টা করেছেন। দেশবাসী তার কাজের মূল্যায়ন করবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন। বিদায়ী সেনাপ্রধান বলেন, আমার সাফল্য-ব্যর্থতার বিচার করবে দেশবাসী। অবসরে কিছু করার ই"ছা আছে, তবে কি করবেন এখনই তা ভাবছেন না বহুল আলোচিত বিদায়ী এই সেনাপ্রধান।সাৰাৎকালে রাষ্ট্রপতি সেনাবাহিনীর বিশেষ করে ২০০৭ সালে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় ‘সিডর’ আক্রান্ত এলাকায় ব্যাপক উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রমে সেনাপ্রধান হিসেবে মইন উ আহমেদের ভূমিকার প্রশংসা করেন। দেশের সংকটকালে গণতন্ত্র সমুন্নত রাখার জন্য রাষ্ট্রপতি জিলস্নুর রহমানের ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেন জেনারেল মইন। সেনাপ্রধান মইন উ আহমেদকে ২০০৫ সালের ১৫ জুন তিন বছরের জন্য সেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। এরপর ২০০৮ সালের ৬ এপ্রিল তার চাকরির মেয়াদ তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার এক বছর বাড়ায় যা গত বছরের ১৫ জুন থেকে কার্যকর হয়।২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারির পটপরিবর্তনের পর দেশে-বিদেশে ব্যাপকভাবে আলোচিত হতে থাকেন মইন উ আহমেদ। সত্তর ও আশির দশকের পর জেনারেল মইন ছাড়া দেশে ও বিদেশে অন্য কোনো বাংলাদেশী সেনাপ্রধান এতো আলোচিত হননি। ২০০৬ সালের অক্টোবরে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের দায়িত্ব হস্তান্তরের পর থেকেই রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর গুর"ত্ব বেড়ে গিয়েছিল। বিশেষ করে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব ত্যাগের পরিস্থিতি সৃষ্টি করা এবং ফখর"দ্দীন আহমদের নেতৃত্বে নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর যেন সরকারের সর্বস্তরে সেনাবাহিনীর প্রভাব বেড়ে যায়। ১১ জানুয়ারির রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ঘটনার পেছনে অন্যতম নায়ক ছিলেন মইন। অভিযোগ রয়েছে, ওই পরিবর্তনের পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা ছিল সেনাপ্রধান মইন উ আহমেদের। দুই নেত্রীকে মাইনাস করার পরিকল্পনার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন তিনি। সে সময় রাজনীতি ও দেশ পরিচালনার উত্তাল সেই দিনগুলোতে রাজনীতিকদের গ্রেপ্তার থেকে শুর" করে নানা ধরনের সিদ্ধান্তও আসতো সেনাবাহিনী থেকে বলে মনে করা হয়। আর এ কারণে সর্বশেষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে সেনা সমর্থিত সরকার বলা হতো। ওই পরিস্থিতিতে জেনারেল মইন উ আহমেদ গণতান্ত্রিক পন্থায় নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক সরকারের কাছে ৰমতা হস্তান্তরের প্রতি দৃঢ় সমর্থন ব্যক্ত করেন বলেও সংশ্লিষ্ট অনেকের অভিমত। সর্বশেষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে সেনাবাহিনীর পৰ থেকে সব সহযোগিতা দেয়ার ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকাও রাখেন মইন। বিশেষ করে ভোটার আইডি কার্ড তৈরি ও নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সেনাবাহিনীর ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। কর্মজীবনকালেই তিনি ১১ জানুয়ারির পরিবর্তন পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে আত্মজীবনীমূলক বই প্রকাশ করেছেন। ‘শান্তির স্বপ্নে সময়ের স্মৃতিচারণ’ নামের এই বইয়ে মইন উ আহমেদ লিখেছেন, প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক শক্তির মুখোমুখি অবস্থানের কারণে দেশ যখন অবশ্যম্ভাবী এক গৃহযুদ্ধের কাছাকাছি উপনীত হয়েছিল, তখন রাষ্ট্রই দেশরৰার একমাত্র উপায় হিসেবে ওয়ান-ইলেভেনের ঘটনাপুঞ্জের সূত্রপাত করে। ওয়ান-ইলেভেন রাষ্ট্রীয় ৰমতা কুৰিগত করার সুপরিকল্পিত কোনো ঘটনা ছিল না। কোনো গোষ্ঠী বা দলকে ৰমতা থেকে অপসারণ কিংবা অধিষ্ঠিত করার জন্য ওয়ান-ইলেভেন মঞ্চস্থ হয়নি। ১১ জানুয়ারির পরিবর্তন ছিল দেশ ও জাতির অস্তিত্ব রৰায় অসহায় জনগণের বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর।সর্বশেষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে জেনারেল মইন উ আহমেদকে দ্বিতীয় দফা চুক্তিতে নিয়োগ পাওয়া নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়। তবে গত ২৫ ফেব্র"য়ারি বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনা সরকারের সাফল্যের সঙ্গে মোকাবেলায় জেনারেল মইনের ইতিবাচক ভূমিকা রয়েছে বলে অনেকেই মনে করে। এ ভূমিকার কারণে তার চাকরির মেয়াদ বাড়বে বলেও মনে করা হয়েছিল। আজ কোনো ধরনের আনুষ্ঠানিকতা ছাড়া মইনের বিদায়ের ঘটনায় এই ধারণার পরিসমাপ্তি ঘটবে।