হিন্দু ছেলের সঙ্গে কথা বলায় যদি কোনো অপরাধ হয়ে থাকে তাহলে আমাকে ক্ষমা করে দিন

আমাকে দোররা মারবেন না
চৌধুরী ভাসকর : আমাকে আপনারা দোররা মারবেন না। আমার ছেলেমেয়ের দিকে চেয়ে আমাকে ক্ষমা করে দিন। আমি কোনো অপরাধ করিনি। আমার পাওনা টাকা নিয়ে কথা বলেছি। হিন্দু ছেলের সঙ্গে কথা বলায় যদি কোনো অপরাধ হয়ে থাকে তাহলে আমাকে ক্ষমা করে দিন। দু’হাত জোড় করে কমলা বেগম (৪২) সালিশির মাতব্বরদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করলেও মুরব্বি নামের পাষন্ডদের মনে একটুও দয়া হয়নি। মাতব্বর সাবান মিয়া হোসেন মিয়াকে নির্দেশ দেন কমলা বেগমকে ১০১টি দোররা মারার জন্য। বৈঠকের মানুষের সামনেই বাঁশের কঞ্চি দিয়ে হোসেন মিয়ার ১০১টি বেত্রাঘাত করার বর্ণনা এভাবেই দিলেন শ্রীমঙ্গলের ভুনবীর ইউনিয়নের শাসনগ্রামের ফতোয়াবাজের শিকার কমলা বেগম।ঘটনাটি গত ৩১ মে বৃহস্পতিবার শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভুনবীর ইউনিয়নের শাসনগ্রামের। মুসলিম চল্লিশোর্ধ্ব প্রৌঢ়া কমলা বেগম বিকাশ দেব নামে হিন্দু যুবকের সঙ্গে কথা বলার অপরাধে গ্রাম্য সালিশি বৈঠকে মসজিদের ইমাম কর্তৃক ফতোয়া দিয়ে ১০১টি বেত্রাঘাত (দোররা) মারার ঘটনায় গোটা মৌলভীবাজার জেলায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। এ ঘটনায় নির্যাতিত মহিলা কমলা বেগমের সবামী নানু মিয়া ইউপি চেয়ারম্যান ও মেল্ফ্বারদের সহায়তায় শ্রীমঙ্গল থানায় ১২ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নং-৩, তারিখ ঃ ৪-৬-২০০৯ ইং। গত ৬ জুন ভোরে মামলার এজাহারভুক্ত আসামির মধ্যে রহিম মিয়ার পুত্র কানা শহীদকে থানা পুলিশ শাসনগ্রামের নিজ বাড়ি থেকে গ্রেফতার করেছে।মামলার এজাহার ও স্থানীয় একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, প্রায় ১৫-২০ দিন আগে শাসনগ্রামের নানু মিয়ার সত্রী ৩ সনতানের জননী কমলা বেগম (৪২) উপজেলার রামনগর গ্রামে বোনের বাড়িতে শ্রীমঙ্গল শহরের ভানুগাছ সড়ক দিয়ে যাওয়ার পথে শহরের ভানুগাছ রোডে পাশের গ্রামের হরেন্দ্র দেবের ছেলে বিকাশ দেবকে পেয়ে তার (কমলা বেগমের) পাওনা টাকা নিয়ে কথা বলেন। এ সময় রাসতায় দাঁড়িয়ে কথা বলতে দেখে নানু মিয়ার ভাতিজা সুরুজ মিয়ার ছেলে আলাউদ্দিন এবং বিকাশ দেব ও তার চাচি কমলা বেগমকে ১০নং ভানুগাছ রোডের গফুর মিয়ার গ্যারেজের পাশে একটি চায়ের দোকানে বসিয়ে রেখে মোবাইল ফোনে এ ঘটনার কথা নানু মিয়াকে জানায়। নানু মিয়া ভাতিজার মোবাইলে খবর পেয়ে শ্রীমঙ্গলের ভানুগাছ রোডের ওই চায়ের দোকান থেকে তার স্টপীকে বাড়িতে নিয়ে যায়।এদিকে হিন্দু ছেলের সঙ্গে কথা বলার ঘটনা নিয়ে গ্রামের মানুষের মধ্যে নানা কথা ছড়িয়ে পড়লে কয়েকজন মুরব্বি নানুকে একঘরে করার চেষটা চালায়। এক পর্যায়ে গ্রামের মাতব্বররা হিন্দু ছেলের সঙ্গে কথা বলার অপরাধে সবামী-সত্রীর বিয়ে বিচ্ছেদ হয়েছে বলে বলাবলি শুরু করেন। দরিদ্র নানু মিয়া গ্রামের মানুষের নানা কথায় বিব্রত হয়ে তার সত্রীকে শ্বশুরবাড়ি পাঠিয়ে দেন। কিন্তু ছোট ছোট ৩টি বাচ্চাকে নিয়ে নানু মিয়া পড়েন বিপাকে। অবশেষে গ্রামের মুরব্বিদের দ্বারস্থ হলে তারা জানান, যদি তার স্ত্রীকে রাখতে হয় তাহলে সালিশি বৈঠকে তওবা করতে হবে। গত ৩১ মে রাতে সালিশ বৈঠকে তওবা করানোর কথা বলা হলেও ফতোয়া দেওয়ার জন্য গ্রামের মসজিদের ইমামকে অনুরোধ করা হয়। কিন্তু গ্রামের মৌলভী এ ধরনের ফতোয়া দিতে রাজি না হওয়ায় চকগাঁও গ্রামের বাসিন্দা শাসনগ্রামের মসজিদের ইমাম মৌলভী নূরউদ্দিন দোররা মারার ফতোয়ার রায় দেন। সালিশি বৈঠকে ১০১ বেত্রাঘাত করার পর নির্যাতিত মহিলা কমলা বেগম অপমান সহ্য করতে না পেরে মানসিক বিপর্যসত হয়ে কয়েকবার আত্মহত্যার চেষটা করেন। নির্যাতনে মানসিক বিপর্যসত কমলা বেগমকে বাংলাদেশ মানবাধিকার কাউন্সিল মৌলভীবাজার জেলা শাখার মহিলা সম্পাদক রাশেদা বেগমের হেফাজতে রাখা হয়েছে। এ ব্যাপারে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ চেরাগ আলী জানান, দোররা মারার বিষয়টি জেনে আমি সরেজমিন গিয়ে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে সত্যতা পেয়েছি। এ ধরনের ঘটনা সত্যিই দুঃখজনক। এদিকে ফতোয়াবাজির ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করার পর থানা পুলিশ শাসনগ্রাম ও আশপাশ এলাকায় সাঁড়াশি অভিযান চালায়। সালিশ বৈঠকের রায় প্রদানকারী মৌলভী ও গ্রাম্য মাতব্বররা পুলিশের ভয়ে গা-ঢাকা দিয়েছেন। আসামিদের মধ্যে কানা শহীদ নামে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানান শ্রীমঙ্গল থানার ভারপ্রাপত কর্মকর্তা এনামুল মনোয়ার।

Popular posts from this blog

THE CONSTITUTION OF THE BANGLADESH AWAMI LEAGUE

ইতিহাসবন্ধনী

Justice order of the day