খালেদা - নিজামী সরকারের সিদ্ধানেত্ম অস্ত্র খালাস হয়েছে : রেজ্জাক
সরকারের সিদ্ধানেত্ম অস্ত্র খালাস হয়েছে : রেজ্জাক
যুগান্তর-রিপোর্ট: দশ ট্রাক অস্ত্র মামলায় গ্রেফতারকৃত এনএসআই’র সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী টাস্কফোর্স ইন্টারোগেশন (টিএফআই) সেলের জিজ্ঞাসাবাদে প্রথম দিন অস্ত্র চোরাচালানের দায় স্বীকার করেননি। তবে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। বলেছেন, এটা ছিল সরকারের একটি সিদ্ধান্ত। এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হলে তৎকালীন সরকারের দায়িত্বশীল অনেককে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, হাওয়া ভবন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তার জড়িত থাকার ইঙ্গিত দিয়েছেন। বলেছেন, এনএসআই কর্মকর্তা সাহাবুদ্দিন এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবেন। তার সঙ্গে নানা মহলের সরাসরি যোগাযোগ ছিল। তিনি নিজের দায় এড়াতে বারবার সাহাবুদ্দিনের নামই বলছেন। রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী ও এনএসআই’র সাবেক উপপরিচালক মেজর (অব.) লেয়াকত হোসেনকে বুধবার থেকে ঢাকার টিএফআই সেলে গোয়েন্দারা জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এর আগে এনএসআই’র আরেক সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিম ও সাবেক পরিচালক সাহাবুদ্দিনের দেয়া তথ্যের ওপর ভিত্তি করে দু’জনকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়েছে। রেজ্জাকুল হায়দার বলেছেন, ঘটনার সময় তিনি এনএসআইতে ছিলেন না। এনএসআই কর্মকর্তারা এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবেন।সূত্র জানায়, সাহাবুদ্দিনের দেয়া তথ্য এবং রেজ্জাকুল হায়দারের তথ্য সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী। এজন্য দু’জনকে একই সঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। দু’জনকে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আবার সাহাবুদ্দিনকে ৬ দিনের রিমান্ডে এনে টিএফআই সেলে জিজ্ঞাসাবাদের প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে।তদন্তকারী সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলেছে, সাবেক পরিচালক সাহাবুদ্দিন এবং ফিল্ড অফিসার আকবর হোসেন ১৬৪ ধারায় যে স্বীকারোক্তি প্রদান করেছেন, তাতে রেজ্জাকুল হায়দার ও লেয়াকত হোসেন অস্ত্র পাচারের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত বলে জানানো হয়েছে। সূত্র বলেছে, সাহাবুদ্দিনের তথ্যে নানা গরমিল রয়েছে। গোয়েন্দাদের কাছে ১৬১ ধারায় দেয়া জবানবন্দি এবং আদালতে দেয়া ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে অনেক বিষয়ে গরমিল পাওয়া গেছে। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা টিএফআই সেলের জিজ্ঞাসাবাদে যেসব তথ্য প্রকাশ করছেন, আদালতে গিয়ে তা বলছেন না। ফলে তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি এবং টিএফআই সেলের কর্মকর্তারা অনেকটা বিপাকে পড়েছেন। সূত্র বলেছে, জিজ্ঞাসাবাদে রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী অস্ত্র চোরাচালানের বিষয়টি সম্পূর্ণ তৎকালীন চারদলীয় জোট সরকারের ওপর চাপিয়েছেন। এর আগে জিজ্ঞাসাবাদে হাওয়া ভবন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একাধিক কর্মকর্তার নাম প্রকাশ করলেও তিনি গতকাল টিএফআই সেলে কারও নাম বলতে রাজি হননি। বলেছেন বিষয়টি একান্তই সরকারের সিদ্ধান্ত। এ বিষয়ে তৎকালীন সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থা বা বিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে তথ্য পাওয়া যাবে। তার সংস্থা এনএসআই’র সম্পৃক্ততা প্রশ্নে তিনি সাহাবুদ্দিনের নাম বলেছেন। জানিয়েছেন, সাহাবুদ্দিনই হাওয়া ভবন এবং বিদেশী কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করত। বিদেশী দূতাবাস এবং প্রতিবেশী রাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে তার ভালো যোগাযোগ ছিল। সাহাবুদ্দিন নিজের দোষ চাপাতে তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ফাঁসানোর চেষ্টা করেছেন।সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সরকারের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা হয়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমানের সঙ্গে তার সখ্য গড়ে তোলার বিষয়ে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের নির্দেশ ছিল। রেজ্জাক গোয়েন্দাদের বলেছেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রীর নির্দেশে তিনি তারেক রহমানের অনেক কাজ করেছেন। যা কিছু করেছেন তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে করেছেন। তিনি দাবি করেছেন, মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত পালন করতে বাধ্য হয়েছেন। রাজনৈতিক সরকারের আমলে পদস্থ অনেক কর্মকর্তাকেই এ ধরনের কাজ করতে হয়।গোয়েন্দা সূত্রগুলো বলেছে, প্রথম দিনের জিজ্ঞাসাবাদে রেজ্জাকুল হায়দারের কাছে খুব বেশি জানতে চাওয়া হয়নি। তার নিজের সম্পৃক্ততার বিষয়টি স্বীকার না করা পর্যন্ত আশানুরূপ অগ্রগতি হচ্ছে না।এদিকে সাবেক উপপরিচালক লেয়াকত টিএফআই সেলে বলেছেন, তিনি যা কিছু করেছেন তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশেই করেছেন। তিনি এক সময় রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরীর ব্যক্তিগত ফাইলপত্র দেখাশোনা করতেন। লেয়াকত জানিয়েছেন, সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরীর প্রথম দিকে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠতা ছিল। সাহাবুদ্দিন ছিলেন এনএসআই’র দাপুটে অফিসার। কিন্তু অস্ত্র চালান ধরা পড়ার পর থেকে দু’জনের সম্পর্কে ফাটল ধরে। সাহাবুদ্দিন এনএসআই’র অনেক তথ্য বিভিন্ন মহলে ফাঁস করে দেন। পরে তাকে চাকরি থেকে বাধ্যতামূলক অবসর দেয়া হয়।তদন্তকারী কর্মকর্তারা বলেছেন, এর আগে ব্রিগেডিয়ার (অব.) আবদুর রহিমও সাহাবুদ্দিনের সম্পৃক্ততার কথা বলেছেন। সাহাবুদ্দিনের দেয়া তথ্য যাচাইয়ের জন্য তাকে রিমান্ডে এনে মুখোমুখি করা হবে।সূত্র জানায়, রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরীর দেয়া তথ্যের ওপর অনেকটা নির্ভর করছে তৎকালীন সরকারের কয়েকজন রাঘব-বোয়ালের জড়িত থাকার বিষয়টি।