ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রতিনিধদলকে প্রধানমন্ত্রী : দেশে মানবধিকার নিশ্চিত, সংসদকে কার্যকর এবং দুদকের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হবে
ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রতিনিধদলকে প্রধানমন্ত্রী : দেশে মানবধিকার নিশ্চিত, সংসদকে কার্যকর এবং দুদকের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হবে
ঢাকা, বাংলাদেশ, ৯ জুন (বাসস) : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তাঁর সরকার আন্তরিকভাবেই চায় বিরোধীদল জাতীয় সংসদে ফিরে এসে সংসদকে আরো কার্যকর করতে তারা তাদের দায়িত্ব পালন করুক। চেক রিপাবলিকের এশিয়া বিষয়ক উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেলেনা বামবাসোভার নেতৃত্বে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) প্রতিনিধদল ট্রয়কা আজ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সাক্ষাত করতে গেলে তিনি এ কথা বলেন।অষ্টম পার্লামেন্টে বিএনপি’র আসন বিন্যাসের কথা উল্ল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, নিয়ম অনুযায়ী পার্লামেন্টে ৬২ জন সদস্যের বিপরীতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে সামনের সারিতে মাত্র ৬টি আসন বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল।বৈঠক শেষে শেখ হাসিনাকে উদ্ধৃত করে তাঁর প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা বিরোধী দলের প্রাপ্য তিনটি আসনের পরিবর্তে সামনের সারিতে আরো দুটি আসন বরাদ্দ দিয়েছি। কারণ আমরা কখনোই তাদের সংখ্যার ভিত্তিতে বিবেচনা করছি না।’প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিরোধী দলের অংশগ্রহণে সংসদকে সকল সমস্যা সমাধানের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করা তাঁর সরকারের লক্ষ্য। তিনি বলেন, বর্তমান সংসদের প্রথম অধিবেশনে তাঁর সরকার সকল পার্লামেন্টারী স্ট্যান্ডিং কমিটি গঠন করে দেশে নজিরবিহীন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে।শেখ হাসিনা বলেন, সাতটি স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যানের পদ বিরোধী দলকে দেয়া হয়েছে যা বাংলাদেশের সংসদীয় গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আরেকটি মাইলফলক।তিনি বলেন, তাঁর সরকার দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নয়নে এবং তাঁর সরকারের পূর্বের সময়কালে স্বাক্ষরিত পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংসদের উপনেতা সাজেদা চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে, যে কমিটি পার্বত্য চ্ট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নে পুরোদমে কাজ করে যাচ্ছে। শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৮১ সালে নির্বাসন থেকে দেশে ফেরার পর দীর্ঘদিনের এই বিরোধ নিরসনে তিনি সামরিক পন্থার চেয়ে রাজনৈতিক সমাধানের ওপর জোর দেন। পার্বত্য চট্টগ্রামবাসীর জন্য বিভিন্ন ধরনের কল্যাণমুখী কর্মসূচির উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাঁর সরকার রাঙ্গামাটিতে একটি সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের বিষয় বিবেচনা করছে।জোট সরকারের শাসনামলের অপারেশন ক্লিনহার্টের আওতায় নির্বিচারে হত্যার প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা দ্ব্যর্থহীন কন্ঠে বলেন, তিনি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের পক্ষে নন।তিনি বলেন, ওই সময়ে আমি একাই মানবতাবিরোধী এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ করেছি। তিনি আরো বলেন, তাঁর সরকার আইনবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড অনুমোদন করবেনা।দুর্নীতি দমন কমিশন প্রসংগে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বেশ কয়েকজনকে নির্বিচারে আটক এবং সরকারী তহবিল অপব্যবহারের কারণে জনগণ এর প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস হারিয়েছে।তিনি বলেন, তাঁর সরকার দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে সমাজের সকল স্তর থেকে দুর্নীতির মূলোৎপাটন করবে।প্রধানমন্ত্রী গ্রহণযোগ্য সর্বশেষ সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সমর্থন দেয়ায় উন্নয়ন অংশীদারদের ধন্যবাদ জানান।শেখ হাসিনা ত্রুটিমুক্ত ছবিসহ ভোটার তালিকা তৈরিতে ব্যাপক অবদান রাখায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনে তারা বিশাল অবদান রেখেছে।প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভোট কারচুপি ও জালিয়াতির সংস্কৃতি দীর্ঘ দিন চালূ থাকার পর জনগণ শেষ পর্যন্ত সত্যিকার গণতন্ত্রের স্বাদ পেয়েছে এবং নিজেদের নিরপেক্ষ মতামত প্রকাশ করেছে।বৈশ্বিক উষ্ণতা এবং জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এ অবস্থার জন্য মূলত উন্নত দেশগুলোই দায়ী। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মতো দরিদ্র দেশগুলো এ ব্যাপারে কম দায়ী হওয়া সত্ত্বেও প্রাকৃতিক দুর্যোগের মারাত্মক শিকার। তিনি জলবায়ুর প্রভাব মোকাবেলায় দরিদ্র দেশগুলোর সামর্থ বাড়াতে আরো সহায়তাদানের জন্য উন্নত দেশগুলোর প্রতি আহবান জানান।এ প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বড় বড় নদী খনন এবং উপকূলীয় এলাকায় সবুজ বেষ্টনী নির্মাণসহ বাংলাদেশ বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। প্রতিনিধিদলকে তিনি বলেন, এসব পদক্ষেপে ভূমি পুনরুদ্ধার, পানির মজুদ বৃদ্ধি, নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনা এবং উপকূলীয় এলাকা বন্যা ও জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষা পাবে।প্রধানমন্ত্রী বলেন, গণতন্ত্র ফিরে আসায় দেশে বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ বিরাজ করছে।তিনি বর্তমান সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজসমূহের সুবিধা গ্রহণ করে বাংলাদেশে আরো বিনিয়োগের জন্য উন্নয়ন অংশীদারদের প্রতি আহবান জানান।ত্রয়কা প্রতিনিধিদল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বে গণতন্ত্রকে সুদৃঢ় ভিত্তি দান করায় বর্তমান সরকারের প্রশংসা করেন। বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রীর বিনিয়োগ বৃদ্ধির আহবানের জবাবে ইইউ প্রতিনিধিদল বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।এ সময়ে অন্যান্যের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মোল্লা ওয়াহিদুজ্জামান, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ ও সাবেক রাষ্ট্রদূত এম জিয়াউদ্দিন উপস্থিত ছিলেন ।