নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়া আওয়ামী লীগ অফিসে এ বোমা হামলায় ২০ জন নিহত ও অর্ধশতাধিক আহত হলেও গত আট বছরে এ ঘটনা নিয়ে রাজনীতি ছাড়া কোনো বিচার হয়নি
নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়া আওয়ামী লীগ অফিসে বোমা হামলায় ২০ জন নিহত ও অর্ধশতাধিক আহত হলেও গত আট বছরে এ ঘটনা নিয়ে রাজনীতি ছাড়া কোনো বিচার হয়নি
তানভীর হোসেন নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়া আওয়ামী লীগ অফিসে ভয়াবহ বোমা হামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার কথা এ পর্যনৱ স্বীকার করেছে এক জঙ্গি নেতাসহ মোট চারজন। তারা হলো মুফতি আবদুল হান্নান, শাহাদাত উলস্নাহ জুয়েল, সহোদর আনিসুল মোরসালিন ও মুহিবুল মুত্তাকিন। এ চারজনের মধ্যে দুজনকে ভারত থেকে এবং দুজনকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ বোমা হামলায় ২০ জন নিহত ও অর্ধশতাধিক আহত হলেও গত আট বছরে এ ঘটনা নিয়ে রাজনীতি ছাড়া কোনো বিচার হয়নি। ২০০১ সালের ১৬ জুন এ বোমা হামলা হয়েছিল। এ ঘটনায় আজ নারায়ণগঞ্জে শোক দিবস পালন করা হবে। সকালে শহীদ পরিবারের পৰ থেকে যে স'ানটিতে বোমা বিস্ফোরণ ঘটেছিল সেই স'ানে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার উদ্যোগে নির্মিত স্মৃতিসৱম্ভে পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হবে। এছাড়া দিনভর চলবে কোরআন তেলাওয়াত, দোয়া মাহফিল। বিকালে শহরের ডিআইটি চত্বরে শোক সমাবেশ ও রাতে শহীদ মিনারে মোমবাতি প্রজ্বলন করা হবে। জানা গেছে, ২০০৫ সালের ১ অক্টোবর গ্রেপ্তার হয় হরকাতুল জিহাদের অন্যতম নেতা মুফতি আবদুল হান্নান। সে র্যাব ও গোয়েন্দা সংস'ার কাছে চাষাঢ়া আওয়ামী লীগ অফিসে বোমা হামলায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। শাহাদাত উলস্নাহ জুয়েলকে ২০০৭ সালের ২৭ নভেম্বর শহরের ৯/১, মিশনপাড়ার বাসভবন থেকে গ্রেপ্তার করেছিল র্যাব-১১। চাষাঢ়া বোমা হামলা ছাড়াও তার বিরম্নদ্ধে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে সভানেত্রী শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলার অর্থ জোগান দেয়ার অভিযোগও রয়েছে। আর ২০০৬ সালের ২৬ ফেব্রম্নয়ারি ভারতের রাজধানী দিলিস্নর এক রেলস্টেশন থেকে হরকাতুল জিহাদের দুই জঙ্গি সহোদর আনিসুল মোরসালিন ও মুহিবুল মুত্তাকিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের বাড়ি ফরিদপুর জেলায়। গ্রেপ্তারের পর তারা দিলিস্ন পুলিশের কাছে অন্য ঘটনার সঙ্গে চাষাঢ়া আওয়ামী লীগ অফিসে বোমা হামলার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। তারা বর্তমানে দিলিস্ন কারাগারে বন্দি রয়েছে।
তদনৱ শেষ হয়নি আট বছরেও
গত আট বছরে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুই দলই ৰমতায় থাকলেও এ বোমা হামলার ঘটনা নিয়ে তারা শুধু নিজেদের মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়ি করেছে। আওয়ামী লীগের পৰ থেকে করা দুটি মামলার চূড়ানৱ প্রতিবেদন দাখিল করে পুলিশ বিগত বিএনপি সরকারের আমলে। কিন' মামলাটি পুনঃতদনেৱর জন্য আবেদন করেছে সিআইডি। অন্যদিকে বিএনপির পৰ থেকে করা মামলাটি বর্তমানে উ"চ আদালতের নির্দেশে স'গিত রয়েছে। ২০০১ সালের ১৬ জুন রাত সাড়ে ৮টায় চাষাঢ়া শহীদ মিনার গা ঘেঁষা আওয়ামী লীগ অফিসে তৎকালীন এমপি শামীম ওসমানের গণসংযোগ কর্মসূচিতে বিকট শব্দে বোমা বিস্ফোরিত হয়েছিল। এতে ঘটনাস'লেই মারা যান তৎকালীন শহর ছাত্রলীগের সভাপতি ও ছাত্রনেতা সাইদুল হাসান বাপ্পী, সরকারি তোলারাম কলেজ ছাত্রছাত্রী সংসদের জিএস আকতার হোসেন, সঙ্গীতশিল্পী মোশারফ হোসেন মসু, সঙ্গীতশিল্পী নজরম্নল ইসলাম বা"চু, ফতুলস্না থানা আওয়ামী লীগ যুগ্ম সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন ভাসানী, নারায়ণগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এ বি এম নজরম্নল ইসলাম, স্বে"ছাসেবক লীগ নেতা সাইদুর রহমান সবুজ মোলস্না, মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী পলি বেগম, ছাত্রলীগ কর্মী স্বপন দাস, কবি শওকত হোসেন মোক্তার, পান-সিগারেট বিক্রেতা হালিমা বেগম, সিদ্ধিরগঞ্জ ওয়ার্ড মেম্বার রাজিয়া বেগম, যুবলীগ কর্মী নিধু রাম বিশ্বাস, আবদুস সাত্তার, মো. আবু হানিফ নূরম্ন, এনায়েতউলস্নাহ স্বপন, আবদুল আলীম, শুক্কুর আলী, স্বপন রায় ও অজ্ঞাতপরিচয় মহিলা। এ বোমা হামলায় শামীম ওসমানসহ অর্ধশতাধিক আহত হয়েছিল। তার ব্যক্তিগত সচিব চন্দন শীল, যুবলীগ কর্মী রতন দাসসহ ছয়-সাতজন পঙ্গু হয়ে গেছেন। নিহত এক মহিলার পরিচয় আজো থেকে গেছে অজানা। বোমা হামলায় আহত শামীম ওসমান বলেন, লং মার্চে বাধা, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবি, নারায়ণগঞ্জে খালেদা জিয়া ও নিজামীসহ যুদ্ধাপরাধীদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা, টানবাজার পতিতা পলস্নী উ"েছদে তৎকালীন যেসব গোষ্ঠীর স্বার্থ বিঘ্নিত হয়েছিল তারা তখন মৌলবাদী প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর ওই ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচারে শরিক হয়। ষড়যন্ত্র আর অপপ্রচারের পাশাপাশি ২০০১ সালের ১৬ জুন বোমা হামলা করে আমাকে হত্যার চেষ্টা করে ওই চক্রটি। ২১ আগস্ট ও ১৬ জুনের বোমা হামলা একই চক্রের এবং একই সূত্রে গাঁথা। তৈমুর আলম খন্দকার জানান, যে উদ্দেশ্য নিয়ে তাকে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল সে উদ্দেশ্যেই বোমা হামলা মামলায় আমাকে প্রধান আসামি করা হয়। তিনি চান প্রতিহিংসার রাজনীতি বন্ধ করে এ ঘটনার প্রকৃত দোষীদের বিচার হোক। জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান দিপু জানান, খোকন সাহার করা মামলার সুষ্ঠু তদনৱ না করে ফাইনাল রিপোর্ট দেয়া হয়েছে। বর্তমানে সিআইডি মামলাটি পুনঃতদনেৱর জন্য আদালতে আবেদন করেছে।
নিহতদের পরিবারের কান্না থামেনি
নৃশংস বোমা হামলায় নিহত ২০ জনের পরিবারের কান্না আজো থামেনি। আট বছরেও বোমা হামলার বিচার না হওয়ায় নিহতদের পরিবারের সদস্যরা চরম ৰোভ প্রকাশ করেছেন। বিচার পাওয়া যায় না বলে চাওয়া হয় না, এমন মনৱব্যও অনেকের। উপার্জনৰম একমাত্র সদস্যকে হারিয়ে আর্থিক দৈন্যদশায় জর্জরিত অনেক পরিবার মানবেতর জীবনযাপন করছে। প্রতিবছর ১৬ জুন এলে তাদের স্মরণ করা হলেও বছরের বাকি সময় কেউ তাদের খবর রাখে না। বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সারির নেতাকর্মীরা তাদের বাসায় গিয়ে দেখা করে সানৱ্বনার বাণী ছাড়া আর কিছুই শোনাতে পারেনি। এতো কষ্টের মধ্যেও তাদের একটি দাবি, প্রকৃত অপরাধীদের বিচার করা হোক। এবার আওয়ামী লীগ সরকার দোষীদের ফাঁসিতে ঝোলাবে- এমন প্রত্যাশা তাদের।