রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির জঙ্গি সৃষ্টির কারখানা!

রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির জঙ্গি সৃষ্টির কারখানা!
বাংলাদেশের স্থায়ী সমস্যায় পরিণত : কক্সবাজারে অবস্থানরত মায়ানমারের রোহিঙ্গা শরণার্থীরা বাংলাদেশের ঘাড়ে স্থায়ী বোঝায় পরিণত হতে চলেছে। তাদের আশ্রয় শিবিরগুলো কার্যত জঙ্গি সৃষ্টির কারখানায় পরিণত হয়েছে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী বর্তমানে মায়ানমারের ২৩ হাজার ৯৫৭ জন নাগরিক কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে বসবাস করে। তারা আশ্রয় নিয়েছে উখিয়া উপজেলার কুতুপালং ও টেকনাফ উপজেলার নয়াপাড়া শরণার্থী শিবিরে। তবে বাংলাদেশে বসবাসরত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়ে অনেক বেশি। ভাষাগত ও ধর্মীয় মিল থাকার কারণে মায়ানমারের আরাকান রাজ্যের মুসলিম নাগরিকরা বাংলাদেশের জনসাধারণের মধ্যে মিশে যাওয়ায় তাদের পৃথক করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। বর্তমানে তালিকাবহির্ভূত আরো প্রায় ১০ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী টেকনাফ উপজেলার লাডায় বসবাস করে। তারা কক্সবাজার -টেকনাফ মহাসড়কের পাশে নাফ নদীর তীরে ওই এলাকার মূল্যবান জায়গা দখল করে বাস করছে ২০০৪ সালের অক্টোবর থেকে। কর্তৃপৰের ধারণা, তারা বিভিন্ন স্থানে বিৰিপ্ত অবস্থায় বসবাস করতো। স্থানীয় কর্তৃপৰের চাপে তারা ওই স্থানে একত্রিত হয়ে বসবাস করতে শুর" করেছে। বাংলাদেশে বসবাসরত মায়ানমারের নাগরিকদের সম্পর্কে নানা রকম ওজর আপত্তি সত্ত্বেও সে দেশের সরকার অনেককে ফিরিয়ে নিয়েছে। কিন্তু যাদের নাগরিকত্ব ও ওই রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য সম্পর্কে মায়ানমার সরকারের প্রশ্ন ও সন্দেহ রয়েছে, তারাই বাংলাদেশে রয়ে গেছে। বাংলাদেশে আটকে থাকা এসব শরণার্থী জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের জঙ্গিদের দাবার ঘুঁটি এবং তাদের আশ্রয় শিবিরগুলো প্রশিৰণ কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হ"েছ বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়। জামাআতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) শীর্ষ নেতা শায়খ আব্দুর রহমান ও বাংলাভাই আইনশৃঙ্খলা রৰা বাহিনীর সদস্যদের হাতে ধরা পড়ার পর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানিয়েছিলেন যে, তারা কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে প্রশিৰণ নেন এবং তাদের কর্মীদের সেখানে প্রশিৰণ দেয়ার ব্যবস্থা করেন। সমপ্রতি রাজধানী ঢাকার মিরপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হওয়া বোমা মিজানও রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে জঙ্গি প্রশিৰণ নেয়ার কথা স্বীকার করেছেন। সাবেক বিএনপি-জামাত জোট সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশে সামপ্রদায়িক জঙ্গিদের প্রকাশ্যে ব্যাপক অপতৎপরতা শুর" হয়। তাদের অপতৎপরতা সম্পর্কে যখন প্রচার মাধ্যমে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হতে থাকে, তখন তদানীন্তন জোট সরকার বাংলাদেশে জঙ্গিদের অস্তিত্ব নেই এবং এটা মিডিয়ার সৃষ্টি বলে দাবি করে। পরবর্তীকালে জঙ্গিরা একযোগে দেশের ৬৩টি জেলার পাঁচ শতাধিক স্থানে বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে এবং আদালতে বোমা হামলা চালিয়ে বিচারক হত্যা করে তাদের অস্তিত্ব জাহির করে। ওই সরকারের অনেক প্রভাবশালী ও বিতর্কিত ব্যক্তি রোহিঙ্গাদের কল্যাণ করার নামে সংগঠন গড়ে তুলেছেন এবং রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে নিয়মিত বৈঠক করে চলেছেন। বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্রনীতির বৈশিষ্ট্য ছিল, সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে শত্র"তা নয়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবদ্দশা পর্যন্ত সে নীতিই অনুসরণ করা হয়। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের শোকাবহ রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সে প্রেৰাপট সম্পূর্ণ পাল্টে ফেলা হয়। তখন বাঙালি জাতির মুক্তিসংগ্রামের সময়কার শত্র" হয় বন্ধু এবং বন্ধুকে ঠেলে দেয়া হয় শত্র" শিবিরে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ৰেত্রে দেশ পরিচালিত হতে থাকে নতুন বন্ধু নামের শত্র" পৰের পরামর্শ অনুযায়ী। নিজের লাভ না হলেও শত্র"র ৰতি হওয়ার আনন্দে নানা রকম পদৰেপ নেয়া হতে থাকে। ঠিক এমনি একটা অবস্থা যখন দেশে বিরাজ করছিল, তখন ১৯৭৮ ও ১৯৯২ সালে মায়ানমার থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা দুই দফায় বাংলাদেশে প্রবেশ করে। রাজনৈতিক দাবার ঘুঁটি হিসেবে ব্যবহার করার ্‌অসদুদ্দেশ্যে তাদের বাংলাদেশে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করেন। ইউএনএইচসিআর (শরণার্থী সংক্রান্ত জাতিসংঘের হাই কমিশনার), ডব্লিউএফপি (জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি), বিডিআরসি (বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি ), আরটিএমআই (রিসার্চ ট্রেইনিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট ইন্টারন্যাশনাল) সহ বেশ কিছু দেশী-বিদেশী সংস্থা ত্রাণ কাজে নিয়োজিত আছে। ২০০৮ সালে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য মোট ৯ কোটি ৫৯ লাখ ৮৪ হাজার ৭৩৩ টাকা বরাদ্দ ছিল। চলতি ২০০৯ সালে ওই খাতে ৩ কোটি ৪৯ লাখ ১৩ হাজার ৩৩৫ টাকার বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে। শরণার্থী শিবিরে কাজ করার লৰ্যে অনুমতি পাওয়া ও তহবিল ছাড় করার জন্য এনজিও ব্যুরোর অনুমোদন দরকার। অনুমোদন দেয়ার আগে নিয়ম অনুযায়ী এনজিও ব্যুরো গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সংস্থার সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে থাকে। ইতিপূর্বে সরকারের আনুকূল্যের কারণে অনেক বিতর্কিত সংস্থা রোহিঙ্গাদের মধ্যে কাজ করার সুযোগ পেয়েছে। সমপ্রতি ইসলামিক রিলিফ ও মুসলিম এইড নামে দুটি আন্তর্জাতিক সংস্থা রোহিঙ্গাদের মধ্যে কাজ করা ও ত্রাণ তৎপরতা চালোনোর উদ্দেশ্যে এনজিও ব্যুরোর অনুমতি চেয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে এনজিও ব্যুরো ওই দুটি সংস্থা সম্পর্কে বিতর্কিত ভূমিকার খবর পেয়েছে। এ কারণে এনজিও ব্যুরো ওই দুটি সংস্থাকে ত্রাণ তৎপরতা চালাতে অনুমতি দি"েছ না বলে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়। উলেস্নখ করা যেতে পারে যে, ১৯৯২ সালের জুন মাস পর্যন্ত মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যের ২ লাখ ৫০ হাজার ৮৭৭ জন মুসলিম নাগরিক বাংলাদেশে প্রবেশ করে এবং শরণার্থী শিবিরে নাম তালিকাভুক্ত করে। তাদের বির"দ্ধে মায়ানমারে রাষ্ট্রদ্রোহিতামূলক কাজে অংশগ্রহণ ও গোলযোগ সৃষ্টির অভিযোগ ছিল। প্রথম দিকে মায়ানমার সরকার তাদের সে দেশের নাগরিক বলেই স্বীকার করতে চায়নি। অবশ্য যাদের বির"দ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার কোনো রকম অভিযোগ নেই, কূটনৈতিক তৎপরতার ফলে কেবলমাত্র সে সব নির্ভেজাল লোককেই মায়ানমার সরকার ফিরিয়ে নিতে রাজি হয়। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী মায়ানমারে ২ লাখ ৩৬ হাজার ৫৯৯ জন রোহিঙ্গাকে তাদের দেশে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়েছে। তালিকাভুক্ত বাকি ২৩ হাজার ৯৫৭ ব্যক্তিকে মায়ানমার সরকার এতোদিন পর্যন্ত ফেরত নিতে রাজি হয়নি। তবে সমপ্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি মায়ানমার সরকারের সঙ্গে আলাপ করে জানিয়েছেন যে, বাকি শরণার্থীকেও সে দেশের সরকার ফিরিয়ে নিতে রাজি হয়েছে। খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের একটি দায়িত্বশীল সূত্রে জানা যায়, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দেখভাল করার জন্য কক্সবাজারে রিলিফ অ্যান্ড রিপেট্রিয়েশান কমিশনার নামে সরকারের যুগ্ম-সচিব মর্যাদার একজন কর্মকর্তার অধীনে মন্ত্রণালয়ের একটি অফিস আছে। তার সঙ্গে আছেন চার জন সিনিয়র সহকারী/সহকারী সচিব। সূত্র জানায়, শিবিরে আশ্রয় গ্রহণকারী প্রত্যেক শরণার্থীকে প্রতিদিন সাড়ে ৪০০ গ্রাম চাল, ৪০ গ্রাম ডাল, ২০ গ্রাম তেল, ৫০ গ্রাম লবণ এবং ৫০ গ্রাম অন্যান্য খাবার সরবরাহ করা হয়। তালিকাবহির্ভূত ১০ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীর নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য টেকনাফের লাডা এলাকায় ২০ একর বনভূমি নির্বাচন করা হয়েছে বলে সূত্র জানায়।

Popular posts from this blog

THE CONSTITUTION OF THE BANGLADESH AWAMI LEAGUE

ইতিহাসবন্ধনী

Justice order of the day