তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্ত করতে সাংসদদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের আহবান জানিয়েছেন সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী
ঢাকা, জুন ২৮ - তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্ত করতে সাংসদদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। রোববার সংসদে বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি এ আহবান জানান। এছাড়া জাতীয় পার্টির এইচ এম এরশাদসহ কয়েকজন সাংসদও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্তির প্রস্তাব করেন। সাজেদা চৌধুরী বলেন, "নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করা হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন নেই। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্ত করার জন্য আমি সংসদ সদস্যদের প্রতি আহবান জানাচ্ছি।'' স্পিকার আবদুল হামিদের সভাপতিত্বে সংসদের বিকেলের অধিবেশনে সংসদ উপনেতা এ সব কথা বলেন। তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে 'অসাংবিধানিক' অভিহিত করে বলেন,'' তারা অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতায় বসেছিল। দেশের অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়েছে। তারা রাজনীতিবিদ, রাজনৈতিক কর্মী, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষকে নির্যাতন করেছে। পুরো দেশটাকে ওই সরকার কারাগারে পরিণত করেছে।'' যুদ্ধাপরাধীদের বিচার যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শুরু করতে সরকারের প্রতি আহবান জানিয়ে সাজেদা বলেন, এটি আওয়ামী লীগের নির্বাচনী অঙ্গীকার। যুদ্ধাপরাধের বিচার করতে হবে। এজন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ১০ কোটি টাকা বরাদ্দের জন্য অর্থমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানান তিনি। বাজেটে কালো টাকা সাদা করার প্রস্তাব নিয়ে বিরোধীদের সমালোচনার জবাবে সংসদের উপনেতা বলেন, "একটি স্বার্থান্বেষী মহল কালো টাকার কথা বলে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চায়। কথিত রাজকুমারদের বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধার করতে হবে।'' বাজেটের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কর্মসংস্থানসহ বিভিন্ন খাতে অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাবকে তিনি আওয়ামী লীগের নির্বাচনী সনদের অংশ বলে আখ্যায়িত করেন তিনি। সাজেদা অভিযোগ করেন, সীমাহীন দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে বিগত জোট সরকারের আমলে নির্বাচন কমিশন, কর্ম কমিশন, বিচার বিভাগ, নির্বাহী বিভাগ বির্তকিত হয়েছে। হাওয়া ভবনের টেলিফোনে সব কিছু চলতো। সে সময় বিচার বিভাগ ও নির্বাচন কমিশন প্রহসনে পরিণত হয়েছিল। সংসদ উপনেতার সঙ্গে সুর মিলিয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ বলেন, "তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা দেশের জন্য 'কলঙ্ক'। আমরা এ ব্যবস্থার অবসান চাই। এ থেকে আমরা মুক্তি চাই। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্ত করতে হবে।'' একই সঙ্গে তিনি দেশের উন্নয়নের স্বার্থে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে প্রাদেশিক সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করেন। এ প্রসঙ্গে জাপা চেয়ারম্যান বলেন, ''টেইক বাংলাদেশ আউট অব ঢাকা। প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাব রাখব, দেশে প্রাদেশিক সরকার প্রবর্তন করুন। সরকারকে বিকেন্দ্রীকরণ করে দেশ ও দেশের মানুষের কথা ভাবুন।'' প্রস্তাবিত টিপাইমুখ বাঁধ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ বিষয়টি ব্যাপক আলোচিত। এই বাঁধের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল ২০০১ সালে। তখন সবাই চুপ ছিলেন। তারপরও এটি আলোচিত বিষয়। এর দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। তিনি টিপাইমুখ নিয়ে সৃষ্ট সমস্যা সমাধানে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাব রাখেন। ১/১১ এর জরুরি অবস্থা জারির বিষয়টিকে সমর্থন করে সাবেক সেনা প্রধান এরশাদ বলেন, ''আমি ওই অবস্থাকে সমর্থন করি। তা না হলে তাদের (চার দল) পাতানো নির্বাচন ও সাজানো গুহা থেকে বের হয়ে আমরা ক্ষমতায় আসতে পারতাম না। তাই তারা যদি কোনো অপরাধ করে থাকে তাদের ক্ষমা করে দিন।'' উপজেলা ব্যবস্থা প্রবর্তনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সাধুবাদ জানান তিনি। বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাব সম্পর্কে এরশাদ বলেন, ''কালো টাকার বিরুদ্ধে বলার নৈতিক কোনো অধিকার আমার নেই। কারণ, আমি ক্ষমতায় থাকাকালে কালো টাকা সাদা করেছিলাম।'' কালো টাকা সাদা করার সুযোগ তিন বছরের পরিবর্তে এক বছর করার প্রস্তাব করেন তিনি। এরশাদ নিউজ প্রিন্টের ওপর প্রস্তাবিত কর প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে বলেন, এটা না হলে সংবাদপত্রে ৭ম ওয়েজ বোর্ড রোয়েদাদ বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না। সাংবাদিকরা বিপদে পড়বেন। বক্তব্যের শেষে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা দেওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।