আওয়ামী লীগের আজ ৬০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী, নতুন বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার

আওয়ামী লীগের আজ ৬০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী
আজ ২৩ জুন, আওয়ামী লীগের ৬০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ১৯৪৯ সালের এই দিনে সদ্য স্বাধীন পাকিস্তানে বাঙালির নিজস্ব রাজনৈতিক দল হিসেবে আৱপ্রকাশ করে আওয়ামী লীগ। ১৯৫৫ সালে এই দল ধর্মনিরপেক্ষতাকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করে। দলের পুনঃনামকণ হয় ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ।’ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে দীর্ঘ সংগ্রামের পর ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাঙালি লাভ করে স্বাধীনতা। পৃথিবীর মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের। ষাট বছর পূর্তি উপলক্ষে এ বছর বর্ণাঢ্য আয়োজনে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করা হচ্ছে। ১৯৪৭ সালে সম্পূর্ণ পৃথক দুটি ভূখণ্ড, স্বতন্ত্র ভাষা ও সংস্কৃতির অঞ্চল নিয়ে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার মাত্র ৪ মাস ২০ দিনের মধ্যে তরুণ যুবনেতা শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি গঠন করেন সরকারবিরোধী ছাত্র সংগঠন পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ। এরই ধারাবাহিকতায় পরের বছর ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার স্বামীবাগে কেএম দাস লেনের রোজ গার্ডেনে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর উদ্যোগে আয়োজিত কর্মী সম্মেলনে গঠন করা হয় পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ। মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী সভাপতি, টাঙ্গাইলের শামসুল হক সাধারণ সম্পাদক, শেখ মুজিবুর রহমানকে (কারাবন্দি ছিলেন) যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করে গঠিত হয় আওয়ামী লীগের প্রথম কমিটি। আওয়ামী লীগের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৬ সালে বাংলার জনগণকে বাঙালি জাতীয়তাবাদের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে স্বাধিকার আদায়ের জন্য ঐতিহাসিক ৬ দফা ঘোষণা করেন। সেই ৬ দফা আন্দোলনের পথ বেয়েই ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ’৭০-এর নির্বাচনে বাঙালির নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা ও ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের সফল নায়ক ছিলেন তৎকালীন আওয়ামী লীগ সভাপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এক বাণীতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশা প্রকাশ করে বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে বাংলাদেশ হবে একটি ক্ষুধা, দারিদ্র্য, সন্ত্রাস ও দুর্নীতিমুক্ত দেশ। বাংলাদেশ হবে একটি আধুনিক, সমৃদ্ধ ও কল্যাণমুখী রাষ্ট্র। এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে ন্যায়বিচার, আইনের শাসন, মানবাধিকার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করে একটি প্রগতিশীল, উদার, গণতান্ত্রিক এবং সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে আওয়ামী লীগ বদ্ধপরিকর বলে তিনি দৃঢ়প্রতিজ্ঞা ব্যক্ত করেন। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিল গতকাল এক বাণীতে বলেন, দল ও দেশের সামনে আজ ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার চ্যালেঞ্জ। জঙ্গিবাদ, উগ্রবাদ আর স্বাধীনতার পরাজিত শক্তিরা ২৯ ডিসেম্বর বিশাল বিজয়কে নস্যাৎ করে দেয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তিনি মুক্তিযুদ্ধের মহান চেতনায় উদ্ভাসিত হয়ে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বলীয়ান হয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তারই আদর্শে বাংলাদেশকে শক্তিশালী করে গড়ে তোলার জন্য নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান।৬০ বছরের পথপরিক্রমায় দেশের বৃহত্তম ও প্রাচীন রাজনৈতিক দলটিকে অনেক চড়াই-উৎরাই পেরুতে হয়েছে। সুদীর্ঘ রাজনৈতিক ইতিহাসে আওয়ামী লীগ ১৯৫৪ সালে (যুক্তফ্রন্ট), ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার, ১৯৯৬ সালে এবং সর্বশেষ ২০০৮ সালের নির্বাচনে জনগণের সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের স্মরণীয় অধ্যায়ের অবসান ঘটে। ১৯৮১ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের দায়িত্বে আসেন। তারই নেতৃত্বে দু’দফায় আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার সুযোগ পায়। ওয়ান-ইলেভেনের পর আওয়ামী লীগকে বিভিন্ন প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হয়। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা গ্রেফতার হয়ে জেলে যান। সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ দলের অনেক নেতাকে গ্রেফতার করা হয়। সভানেত্রী-সাধারণ সম্পাদকের অনুপস্থিতিতে প্রাচীন এ দলের হাল ধরেন সবচেয়ে সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য জিল্লুর রহমান। পরে সভানেত্রী শেখ হাসিনা, সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিলসহ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জেল থেকে মুক্ত হন। নির্বাচনে জনগণের বিশাল সমর্থন নিয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। ষাটতম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী বর্ণাঢ্য আয়োজনে উদযাপনের জন্য আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিস্তারিত কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। কর্মসূচিতে আছে- আজ ভোর সাড়ে ৫টায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারাদেশের দলীয় কার্যালয়ে দলীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ৭টায় ধানমণ্ডির বঙ্গবন্ধু ভবনে জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণের মাধ্যমে তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন, বিকাল ৩টায় রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের স্বাধীনতা স্তম্ভের ‘শিখা চিরন্তন’ থেকে বঙ্গবন্ধু ভবন পর্যন্ত বর্ণাঢ্য র‌্যালি ও সন্ধ্যা ৭টায় পল্টন ময়দানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং ২৪ জুন বেলা ২টায় বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভা ও সন্ধ্যায় একই স্থানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ সহযোগী সংগঠনগুলোও অনুরূপ কর্মসূচির আয়োজন করেছে।




প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আওয়ামী লীগের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার শপথ

ঢাকা, জুন ২৩- দিন বদলের লক্ষ্যে 'ডিজিটাল বাংলাদেশ' গড়া ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের শপথের মধ্যে দিয়ে মঙ্গলবার দলের ৬০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দেশের অন্যতম প্রাচীন ও প্রধান রাজনৈতিক দলটি প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীতে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি নেয়। বিকালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের 'শিখা চিরন্তন' থেকে শোভাযাত্রা শুরু হয়। এর আগে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের সামনে ট্রাকের ওপর উন্মুক্ত মঞ্চে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সাজেদা চৌধুরী বলেন," আজকের মিছিল (র‌্যালি) থেকে দিনবদলের লক্ষ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার শপথ নিতে হবে।" দলের মুখপাত্র সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন,"আসুন আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে একটি অসা�প্রদায়িক উন্নত বাংলাদেশ কায়েম করার শপথ নিই।" স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন বলেন,"নির্বাচনী ওয়াদা অনুযায়ী আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করব, জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ নির্মূল করব।" ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু, আবদুর রাজ্জাক, তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত, মতিয়া চৌধুরী প্রমুখ। এসময় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদসহ মন্ত্রিসভার সদস্যদের অনেকে উপস্থিত ছিলেন। সমাবেশ শেষে শোভাযাত্রা বের হয়। বিভিন্ন ব্যানার ফেস্টুন আর বাদ্য-বাজনা সহকারে শোভাযাত্রাটি ধানমন্ডির বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে সামনে এসে শেষ হয়। এর আগে সকালে ধানমন্ডির বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাসহ দলের সিনিয়র নেতারা। টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কবরে পুস্পমাল্য অর্পণ করেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় নেতারা। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বুধবার বেলা দুইটায় পল্টন ময়দানে আলোচনা সভা হওয়ার কথা থাকলেও সেটি পরিবর্তন করে বিকাল চারটায় চীনমৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে বলে শোভাযাত্রার আগে সমাবেশে ঘোষণা দেন সাজেদা চৌধুরী। এতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি থাকবেন বলেও জানান তিনি। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকায় জন্ম নেয় আজকের আওয়ামী লীগ। বাঙালির স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতার পথে নেতৃত্ব দিয়েছে এ দল। আওয়ামী লীগের এক সময়ের কর্ণধার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনা দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন এখন। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুল বিজয়ের ছয় মাসের মাথায় এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী দলটির জন্য যোগ করেছে ভিন্ন মাত্রা।

Popular posts from this blog

THE CONSTITUTION OF THE BANGLADESH AWAMI LEAGUE

ইতিহাসবন্ধনী

Justice order of the day