টিপাইমুখ বাঁধ দেশের বিপৰে গেলে মেনে নেয়া হবে না : আব্দুর রাজ্জাক, টিপাইমুখে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পই হবে অন্য কিছু নয় : পিনাক রঞ্জন

টিপাইমুখ বাঁধ দেশের বিপৰে গেলে মেনে নেয়া হবে না : আব্দুর রাজ্জাক
কাগজ প্রতিবেদক : পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, টিপাইমুখ বাঁধ যদি বাংলাদেশের বিপৰে যায় তবে কোনোভাবেই তা মেনে নেয়া হবে না। এৰেত্রে কোনো ধরনের ছাড় দেয়া হবে না। ওই ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হলে প্রয়োজনে রাষ্ট্রীয় এবং আন্তর্জাতিক সব ধরনের প্রক্রিয়ায় এ বাঁধ নির্মাণ বন্ধ করা হবে।গতকাল রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘বিশুদ্ধ পানির উৎস : নদ-নদী, খাল-বিল ও জলাশয় রৰায় করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি একথা বলেন। বেসরকারি সংগঠন ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট ও মিডিয়া ফোরাম ফর হিউম্যান রাইটস এন্ড এনভায়রনমেন্টাল ডেভেলপমেন্ট (মেড) যৌথভাবে এ বৈঠকের আয়োজন করে। আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আলোচনার মাধ্যমে আমরা ৩০ বছর ধরে চলমান সমস্যা সমাধান করে গঙ্গার পানিচুক্তি করেছিলাম। টিপাইমুখ বাঁধ নিয়েও আমরা দ্বিপৰীয় আলোচনা চালিয়ে যা"িছ। এ বিষয়ে এখন কিছু বলতে চাই না। শিগগিরই সর্বদলীয় সংসদীয় কমিটি এ বাঁধ পরিদর্শনে যাবে। তারপর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। সব দলের লোক কমিটিতে থাকবে। আমরা বিরোধী দলের পৰ থেকে একজনের নাম দিতে বলেছিলাম। তারা জামাতের একজনের নাম দিয়েছে। তবে আমরা বলেছি পানিসম্পদের সঙ্গে সম্পৃক্ত একজনের নাম দিতে। বিএনপি থেকেও একজনের নাম দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।টিপাইমুখ বাঁধ বাংলাদেশের বিপৰে গেলে কি করা হবে এ বিষয়ে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এৰেত্রে কোনো ধরনের ছাড় দেয়া হবে না। দেশের স্বার্থ পরিপন্থী কোনো কিছুই মেনে নেয়া হবে না। শেষ পর্যন্ত এ বিষয়ে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাবো। রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক যে কোনো প্রক্রিয়ায় আমরা এ কাজ করবো। তবে আমরা এখন দ্বিপৰীয় আলোচনা চালিয়ে যেতে চাই। টিপাইমুখ নিয়ে বিরোধী দলের আন্দোলনের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আলোচনা চলছে। কিন্তু আগেই যদি যুদ্ধ ঘোষণা করা হয় তবে আলোচনা সফল হবে কিভাবে। আসল অবস্থা জেনে তারপর বিরোধী দলকে আন্দোলন করার আহ্বান জানান তিনি। আব্দুর রাজ্জাক বলেন, জাতীয় সংসদকে শক্তিশালী করতে ঐকমত্য দরকার। এজন্য সরকার ও বিরোধী দলকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। আমাদের ইতিবাচক আন্দোলনের ধারায় ফিরে আসতে হবে। আর এ আন্দোলনের জায়গা হলো সংসদ।এর আগে গোলটেবিলে তিনি বলেন, ভূগর্ভস্থ পানি এতো বেশি ব্যবহার হ"েছ যে এখন পানির স্তর কমে যা"েছ। পানিতে আর্সেনিকের মাত্রা বেড়ে যা"েছ। অপরিকল্পিতভাবে নগরীতে গড়ে উঠছে বাড়িঘর, রাস্তাঘাট। সরকারি আইন প্রয়োগের ৰেত্রে দেখা যায় অনেক জায়গায় আইন আটকে গেছে। এজন্য আইনের যথাযথ প্রয়োগ দরকার। পরিবেশ দূষণ থেকে দেশকে বাঁচাতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।গোলটেবিলে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী আ স ম আব্দুর রব, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের চেয়ারম্যান আবু নাসের খান, গবেষক জি কে বরাল, সদর"ল আনাম, ডব্লিউবিবি ট্রাস্টের প্রোগ্রাম অফিসার সৈয়দ মাহাবুবুল আলম ও মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রফিকুল ইসলাম সুজন। আ স ম আব্দুর রব বলেন, নদী ও খাল-বিলসহ মাটির উপরিভাগের পানির বিষয়ে জাতিগতভাবে আমরা সচেতন না। তাই বিশুদ্ধ পানি এখন আমাদের কিনে খেতে হয়। ওয়াইজঘাট, সদরঘাট, বাদামতলীসহ বুড়িগঙ্গার পাড় দিয়ে এখন কোনো সুস্থ মানুষের পৰে হাঁটা সম্ভব না। নিজেদের বাঁচার স্বার্থেই আমাদের পানিসম্পদকে রৰা করতে হবে। আবু নাসের খান বলেন, ঢাকায় আগে ৪৩টি খাল ছিল। ঢাকা সিটি করপোরেশনই জানে না এখন কয়টি খাল আছে। খাল দখল করে হাউজিং সোসাইটি করা হ"েছ। অন্যদিকে যথাযথভাবে জলাশয় আইনের বাস্তবায়ন করা হ"েছ না। অনুষ্ঠানে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার হ্রাস ও ভূপৃষ্ঠের পানির ব্যবহার বাড়াতে প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা ও নীতি প্রণয়ন, পানি পরিশোধনে পদৰেপ গ্রহণ, নদীদূষণে কার্যকর পদৰেপ নেয়া, বৃষ্টির পানি সংরৰণ ও ব্যবহারের ব্যবস্থা করার সুপারিশ করেন বক্তারা


টিপাইমুখে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পই হবে অন্য কিছু নয় : পিনাক রঞ্জন

কাগজ প্রতিবেদক : টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ করে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করবে ভারত। আর এই প্রকল্পে কেবল জলবিদ্যুৎই উৎপাদন করা হবে, টিপাইমুখে বাঁধ দিয়ে পানির গতি পরিবর্তন করে কৃষি বা অন্য কাজে ব্যবহার করার কোনো পরিকল্পনা নেই ভারতের। ‘দৰিণ এশীয় যোগাযোগ: প্রেৰিত বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী গতকাল রোববার এসব কথা বলেন। বক্তব্যে টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে বাংলাদেশের পানি বিশেষজ্ঞরা ‘বিভ্রান্তি’ ছড়া"েছন বলে অভিযোগ করে পিনাক বলেন, টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে তথাকথিত বিশেষজ্ঞদের মতামত নয়, সরকারের উচিত সরজমিন গিয়ে এই প্রকল্পটি পর্যবেৰণ করা। কোনো অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে এ বাঁধ নির্মাণ করা হ"েছ না বলে জানান পিনাক। বাংলাদেশে টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে যখন ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে তখন পিনাক এমন মন্তব্য করলেন। হাইকমিশনার আরো বলেন, ভারত কোনো অবস্থায়ই বাংলাদেশের শত্র" নয়। বরং পরস্পর স্বার্থ সংরৰণ হয় এমন ৰেত্রে ভারত সব সময় বন্ধু ও প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশকে সহায়তা করে এবং প্রয়োজনে ছাড় দেয়। তিনি বলেন, বাংলাদেশের নতুন সরকারের সঙ্গে ভারতের নতুন সরকার কাজ করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। শুধু যোগাযোগ ব্যবস্থা নয়, ব্যবসা-বাণিজ্য ও দ্বিপৰীয় সম্পর্কের উন্নয়নের প্রতিও যথেষ্ট সচেতন তার দেশ।বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সমিতির উদ্যোগে রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে অনুষ্ঠিত এই সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি। সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি ড. এ কে আজাদ চৌধুরী। সেমিনারে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ ‘আঞ্চলিকভাবে পানি ব্যবস্থাপনা ও বিদ্যুৎ উৎপাদন’ শীর্ষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত ‘দৰিণ এশীয় যোগাযোগে অর্থনৈতিক প্রভাব’ শীর্ষক এবং ইউএন-এসকাপের সাবেক পরিচালক ড. এম রহমতউলস্নাহ ‘আঞ্চলিক পরিবহন যোগাযোগ: বাংলাদেশের জন্য সম্ভাবনা’ শীর্ষক পৃথক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। আলোচনা করেন বিটিআরসির সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ মার্গুব মোরশেদ, এফবিসিসিআই সভাপতি আনিসুল হক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের চেয়ারম্যান ড. আমেনা মোহসীন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সুবীর কুশারি। ভারতীয় হাইকমিশনারের অভিযোগের প্রেৰিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী কোনো মন্তব্য করেননি। এমনকি টিপাইমুখ বাঁধের বিষয়টিও দীপু মনি তার বক্তব্যে কোনো উলেস্নখ করেননি। তবে টেকসই উন্নয়নের জন্য আঞ্চলিক যোগাযোগ গুর"ত্বপূর্ণ মন্তব্য করে তিনি বলেন, আঞ্চলিক যোগাযোগের কথা বললেই দৰিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থাভুক্ত (সার্ক) দেশগুলোর মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনকে নির্দেশ করে। আর বাংলাদেশের ৰেত্রে ভারতের সঙ্গে যোগাযোগই দৃশ্যপটে উঠে আসে। নিকটতম প্রতিবেশী এই দেশ দুটির মধ্যে রয়েছে দীর্ঘদিনের সুসম্পর্ক। এই প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, ভৌগোলিক কারণেই বাংলাদেশ দৰিণ ও দৰিণ-পূর্ব এশিয়ার সমৃদ্ধির জন্য সেতু হতে পারে। বাংলাদেশের দুটি সমুদ্র বন্দরেরই রয়েছে আঞ্চলিক কেন্দ্র হয়ে ওঠার মতো অপার সম্ভাবনা। ডা. দীপু মনি কার্যকর আঞ্চলিক যোগাযোগের জন্য এই অঞ্চলে অবকাঠামোগত উন্নয়নের ওপর গুর"ত্ব আরোপ করেন। টিপাইমুখ বাঁধ ভারতের একদিনের সিদ্ধান্ত নয় উলেস্নখ করে পিনাক রঞ্জন বলেন, অনেকেই বলছেন ভারত বাংলাদেশকে কোনো তথ্য না দিয়ে টিপাইমুখে বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা করছে। এটি সঠিক নয়। ১৯৭২ সালে যৌথ নদী কমিশন গঠনের সময় বন্যা প্রতিরোধে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্পের কথা বলা হয়েছে। সেই প্রেৰিতে গত ৪০ বছর ধরে ভারতের কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকার টিপাইমুখ বাঁধের ডিজাইনসহ নানা বিষয়ে কাজ করছে। তিনি আরো বলেন, অনেকেই অভিযোগ করছে টিপাইমুখ বাঁধ ও পানির ন্যায্য হিস্যা বণ্টনে ভারত আন্তর্জাতিক নদী কনভেনশন লঙ্ঘন করছে। এই অভিযোগকে অযৌক্তিক উলেস্নখ করে পিনাক বলেন, বাস্তবে আন্তর্জাতিক এমন কোনো আইন নেই। ২০০০ সালে জাতিসংঘের রেজ্যুলেশনের আওতায় আন্তর্জাতিক নদী কমিশন গঠনের কথা উঠেছিল। এই কমিশন আইনে পরিণত হতে ৩৫টি দেশের স্বাৰর ও অনুমোদন লাগবে। এ পর্যন্ত মাত্র ১৭টি দেশ স্বাৰর করেছে। আর বাংলাদেশ ও ভারত এখনো এই কমিশনে স্বাৰর করেনি। পিনাক টিপাইমুখ বাঁধের গুর"ত্ব তুলে ধরে বলেন, উন্নয়নের জন্য অনেক প্রকল্প নিতে হয়। বাংলাদেশের যমুনা ব্রিজও এমনি একটি প্রকল্প। তিনি আরো বলেন, চীনে এমন কয়েক হাজার এবং ভারতে প্রায় ৪০০ বাঁধ রয়েছে। তিনি টিপাইমুখ পরিদর্শনে বাংলাদেশী সংসদীয় প্রতিনিধিদলকে আহ্বান জানান। জ্বালানি সংকট নিরসনে আঞ্চলিক উদ্যোগ গ্রহণের সুপারিশ করে কাজী খলীকুজ্জমান বলেন, জলবিদ্যুৎ বাংলাদেশের জ্বালানি সংকট নিরসন করতে সহায়ক হবে। তবে বাংলাদেশে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা নেই। সেৰেত্রে নেপাল বা ভুটান থেকে আমদানি করতে হবে। পানি ও জ্বালানির অব্যবস্থাপনার কারণে এই অঞ্চলে জলবায়ুর পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবসহ নানা দুর্যোগের শিকার হ"েছ উলেস্নখ করে তিনি আরো বলেন, পানি ও জ্বালানি ব্যবস্থাপনা আমলা ও বিশেষজ্ঞদের কাছে ছেড়ে দিলে কোনো কাজ হবে না। এৰেত্রে তিনি গঙ্গাচুক্তির উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, রাজনৈতিক পর্যায়ে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আবুল বারকাত যোগাযোগকে আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির সোপান হিসেবে উলেস্নখ করে বলেন, এই অঞ্চলের ইস্যুগুলো বহুমাত্রিক ও জটিল। তাই উদ্বেগের ইস্যুগুলো আলোচনার মাধ্যমে নিরসনে আঞ্চলিক নেতৃবৃন্দের দৰতা ও অঙ্গীকার গুর"ত্বপূর্ণ। রহমতউলস্নাহ অবকাঠামোগত উন্নয়নের ওপর গুর"ত্ব আরোপ করে বলেন, এটি এই অঞ্চলের বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করবে। বড় দেশ হিসেবে যে কোনো উদ্যোগে ভারতকে সামনে আসার আহ্বান জানিয়ে বক্তারা বলেন, পারস্পরিক সম্পর্ক ও দেশের স্বার্থ অৰুণ্ন রেখে এই অঞ্চলের সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহারের মাধ্যমে অর্থনৈতিক মহাবিপস্নব ঘটানো সম্ভব। তারা আরো বলেন, নিজেদের মধ্যে স্ব"ছতা না থাকলে আন্তঃযোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন সম্ভব হবে না।

Popular posts from this blog

THE CONSTITUTION OF THE BANGLADESH AWAMI LEAGUE

ইতিহাসবন্ধনী

Justice order of the day