একজন আব্দুল হামিদ অ্যাডভোকেট



একজন আব্দুল হামিদ অ্যাডভোকেট


আসাদুজ্জামান সম্রাট: জিল্লুর রহমান পরবর্তী আওয়ামী লীগের সর্বজন শ্রদ্ধেয় ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি কে? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে খুব বেশি চিন্তা করতে হয় না। সবাই একবাক্যে স্বীকার করেন তিনি আব্দুল হামিদ অ্যাডভোকেট। জাতীয় সংসদের স্পিকার। সদা হাস্যোজ্জ্বল ও রসিক এই মানুষটি বিরোধী দলগুলোর কাছেও সমান গ্রহণযোগ্য। নির্লোভ, সত, সাধারণ ও নিরঅহঙ্কারী জীবনযাপনই এবং চিন্তা-চেতনাই এ মানুষটির সম্পদ।
১৯৬১ সালে কলেজ ছাত্রাবস্থায় আয়ুব বিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে শুরু হয় তার সংগ্রামী জীবন। রাজনৈতিক জীবনে তিনবার কারাভোগ করেছেন। দীর্ঘ কারাভোগের ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছেন শরীরে। ১৯৪৫ কিশোরগঞ্জে জন্ম নেয়া এই ব্যক্তিটি হাওরাঞ্চলের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক। ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রামবাসীর প্রিয় মানুষটি স্বাধীনতা পরবর্তী সংসদের সর্বগ্রহণযোগ্য স্পিকারে পরিণত হয়েছেন। এমনকি বিরোধী দলহীন সংসদও তার পরিচালনায় কখনো নিষ্প্রাণ মনে হয়নি।
সিদ্ধানৱ গ্রহণের ক্ষেত্রেও আব্দুল হামিদ একজন সহজ চিনৱার মানুষ। তিনি নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে যে কোনো বিষয়কে মূল্যায়ন করতে পারেন। সংসদে বিরোধী দলকে ফেরাতে তার চেষ্টা এবং তাদের প্রতি সহমর্মী দৃষ্টিকোণের কারণে বিএনপি সংসদ বর্জনের স্বপক্ষে জোরালো কোনো যুক্তি উপস্থাপন করতে পারেনি। সংসদের সামনের সারির ৩০টি আসনে যেখানে আনুপাতিকহারে তিনটি আসন প্রাপ্য সেখানে বিএনপিকে ছয়টি আসন দিয়েছেন তিনি। সরকারি দলের প্রবল চাপ ও বিরোধিতা ম্যানেজ করেছেন নিজ গুণে।
সংসদের সর্বোচ্চ সাতবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য আব্দুল হামিদের দীর্ঘ পথচলায় কখনো স্খলনের ঘটনা ঘটেনি। মন্ত্রিত্বসহ নানা প্রলোভন কখনো তাকে আওয়ামী লীগের পথ থেকে বিচ্যুতি ঘটাতে পারেনি। জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার, স্পিকার কিংবা বিরোধী দলের উপ-নেতার দায়িত্ব পালনে অত্যনৱ আনৱরিকতার পরিচয় দিয়েছেন। ২০০১-এর বিপর্যয় পরবর্তী সারাদেশ চষে বেড়িয়েছেন তিনি। যেখানে আওয়ামী লীগের ওপর অত্যাচার, নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে সেখানেই হাজির হয়েছেন সংসদীয় প্রতিনিধি দল নিয়ে। ওয়ান ইলেভেন পরবর্তী নানা সংস্কারের মধ্যে দলের সংসদ সদস্যদের সংগঠিত করে ঐক্য ধরে রাখতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। আর দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত স্পিকারও তিনি।
দ্বিতীয় মেয়াদে স্পিকার নির্বাচিত হওয়ার পর আব্দুল হামিদ সংসদের দুর্নীতি দূর করতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছেন। সংসদে তার অফিসের দামি কার্পেট সরিয়ে ফেলেছেন। আসবাবপত্রের কোনো পরিবর্তন আনেন নি। নতুন কোনো কেনাকাটাও করেননি তিনি। বরং সংসদে বসে নামাজ পড়ার জন্য জায়নামাজটিও নিয়ে এসেছেন বাড়ি থেকে। স্পিকারের খাবারও আসে তার বাসা থেকে। তার এই ব্যয়সংকোচন নীতির কারণে সংসদের ডেপুটি স্পিকার, চিফ হুইপ ও হুইপরা আগের মতো অনির্দিষ্ট ব্যয় করতে পারছেন না।
কিশোরগঞ্জ সাব ডিভিশন ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা আব্দুল হামিদ অ্যাডভোকেট গুরুদয়াল কলেজের একাধারে ভিপি ও জিএস-এর দায়িত্ব পালন করেছেন। ময়মনসিংহ ছাত্রলীগের ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। সৈয়দ নজরুল ইসলামের অত্যনৱ ঘনিষ্ঠ এই ব্যক্তিটি ১৯৭০ সালের নির্বাচনে ময়মনসিংহ-১৮ আসন থেকে সর্বকনিষ্ঠ এমনএনএ হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধকালে মেঘালয় রিক্রুটিং ক্যাম্পের চেয়ারম্যান এবং কিশোরগঞ্জ-সুনামগঞ্জের সাব সেক্টর কমান্ডার ছিলেন। ১৯৬২ সালের ছাত্রআন্দোলন এবং ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে অংশ নিয়ে কারাভোগ করেন। বঙ্গবন্ধুর হত্যার পরে ১৯৭৬ সালে থেকে ৭৮ সাল পর্যনৱ তিনি কারানৱরীণ ছিলেন। পাঁচ বার কিশোরগঞ্জ জেলা বারের সভাপতি আব্দুল হামিদ অসংখ্য শিক্ষা ও সামাজিক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ও পৃষ্ঠপোষক। মিডিয়া ফ্রেন্ডলি এ মানুষটি জাতীয় সংসদে সংবাদিকদের কর্মক্ষেত্রের সুবিধা সম্প্রসারণে একটি দৃষ্টানৱ স্থাপন করেছেন।

Popular posts from this blog

THE CONSTITUTION OF THE BANGLADESH AWAMI LEAGUE

ইতিহাসবন্ধনী

ব্রিগেডিয়ার বারীর যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা