ওয়ান ইলেভেনের সঙ্গে বিদেশী কূটনীতিকদের সম্পৃক্ততা ছিল না

ওয়ান ইলেভেনের সঙ্গে বিদেশী কূটনীতিকদের সম্পৃক্ততা ছিল না
সংবাদ সম্মেলনে ব্রিটিশ হাইকমিশনারকাগজ প্রতিবেদক : ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারির রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সঙ্গে বিদেশী কূটনীতিকদের কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহের প্রেৰাপটেই সে সময় জর"রি অবস্থা এসেছিল। তবে জর"রি অবস্থা জারির পর দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়ায় সহায়তা করেছেন তারা। ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার স্টিফেন ইভান্স গতকাল বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি আয়োজিত (ডিআরইউ) মিট দ্য রিপোর্টার্স অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন। একইসঙ্গে ব্রিটিশ হাইকমিশনার বিরোধী দলকে জাতীয় সংসদে ফিরে গিয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ইতিহাসই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কার্যক্রমের বিচার করবে।ওয়ান ইলেভেনের মাধ্যমে জর"রি অবস্থার জারির পর সেনাবাহিনীর সমর্থন নিয়ে দায়িত্ব নিয়েছিল ড. ফখর"দ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার। সে সময় অনির্বাচিত ওই সরকার গঠনে কূটনীতিকদের ভূমিকা ছিল বলে মনে করা হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন এবং জর"রি অবস্থা জারির নেপথ্যে বিদেশী কূটনীতিকদের ভূমিকা নিয়ে ব্রিটিশ হাইকমিশনার স্টিফেন ইভান্সই প্রথম কথা বললেন। স্টিফেন ইভান্স ২০০৮ সালের ২৩ জুন বাংলাদেশে ব্রিটিশ হাইকমিশনার হিসেবে দায়িত্ব নেন। এর আগে হাইকমিশনার ছিলেন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক আনোয়ার চৌধুরী। ঢাকায় দায়িত্ব গ্রহণের বর্ষপূর্তি উপলৰে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন স্টিফেন ইভান্স। এক প্রশ্নের জবাবে ওয়ান-ইলেভেনে কূটনীতিকদের কোনো ভূমিকা ছিল না উলেস্নখ করে স্টিফেন ইভান্স বলেন, তিনি মনে করেন না, জর"রি অবস্থা জারি করে বাংলাদেশকে দুই বছর গণতন্ত্রহীন রাখার পেছনে তার পূর্বসূরি আনোয়ার চৌধুরী কিংবা অন্য কোনো দেশের কূটনীতিক কোনোভাবে জড়িত ছিল। এটি ছিল বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ঘটনা প্রবাহের প্রেৰাপটেই জর"রি অবস্থা এসেছিল। তিনি আরো বলেন, তিনি মনে করেন না, তার দেশের হাইকমিশনারসহ বিদেশী কূটনীতিকরা কূটনৈতিক সীমারেখা লঙ্ঘন করার মতো কাজ করেছেন। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুবছর ৰমতায় থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কার্যক্রমের বিচার ইতিহাসই করবে।বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ভিত শক্তিশালী হওয়ার প্রত্যাশা করে ব্রিটিশ হাইকমিশনার বলেন, যুক্তরাজ্য বরাবরই টেকসই গণতন্ত্র অব্যাহত রাখতে সহায়তা করেছে। জর"রি অবস্থা জারির পর গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়ায় তার দেশ সহায়তা করেছে। তিনি বলেন, যুক্তরাজ্য বাংলাদেশে মানবাধিকার সুরৰিত ও শক্তিশালী গণতন্ত্র দেখতে চায়। একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনর"দ্ধার গত এক বছরে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অর্জন এই মন্তব্য করে ইভান্স বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন, আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা, টেকসই গণতন্ত্র ও দারিদ্র্য বিমোচন বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় যুক্তরাজ্য সব সময় বাংলাদেশকে সহায়তা করবে। বিরোধী দলের চলমান সংসদ বর্জন প্রসঙ্গে বিরোধী দলকে সংসদে ফিরে গিয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়ে ইভান্স বলেন, জাতীয় সংসদকে কার্যকর রাখতে বিরোধী দলের অংশগ্রহণ গুর"ত্বপূর্ণ। আর জাতীয় ইস্যুগুলোর ৰেত্রে সরকারকে চাপে রাখতে বিরোধী দলের সংসদে থাকা উচিত। তিনি বলেন, সংসদকে কার্যকর করতে অবশ্যই বিরোধী দলের সংসদে যোগ দেয়া উচিত। গত ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনকে অবাধ ও নিরপেৰ মন্তব্য করে স্টিফেন্স ইভান্স বলেন, এর ফলে বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনর"দ্ধার হয়েছে। তিনি বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া স্বচৰে দেখতে পেরে আনন্দিত। ব্রিটিশ হাইকমিশনার আরো বলেন, সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশ একসঙ্গে কাজ করছে। বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে মনে করেন ইভান্স। উপযুক্ত পরিবেশ এবং যথাযথ মুনাফার নিশ্চয়তা থাকলে যুক্তরাজ্য বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী বলেও জানান তিনি।বহুল আলোচিত টিপাইমুখ বাঁধ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটি বাংলাদেশ ও ভারতের দ্বিপৰীয় ইস্যু। দুদেশের মধ্যে আলোচনা এবং আন্তর্জাতিক আইন মেনেই টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে সৃষ্ট জটিলতার সমাধান সম্ভব। এক প্রশ্নের জবাবে দুর্নীতিকে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে উলেস্নখ করে ইভান্স বলেন, এটি শুধু বাংলাদেশই নয়, উন্নয়নশীল ও উন্নত সব দেশের জন্যই চ্যালেঞ্জ। তবে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো ঠিকমতো কাজ করলে দুর্নীতি প্রতিরোধ সম্ভব। দুর্নীতি দমনে গণমাধ্যম সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।জলবায়ুর পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবেলায় বাংলাদেশকে এ ব্যাপারে জোরালো অবস্থান অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান। এই অনুষ্ঠানে কসোভোর স্বীকৃতি এবং মায়ানমারের গণতান্ত্রিক নেত্রী অং সাং সুচির মুক্তির দাবিতে বাংলাদেশের উ"চকণ্ঠ প্রত্যাশা করে ব্রিটিশ হাইকমিশনার বলেন, সুচির মুক্তির আহ্বানে বিশ্ব সমপ্রদায়ের সঙ্গে বাংলাদেশকেও যুক্ত দেখতে চায় যুক্তরাজ্য। বাংলাদেশের জনগণও সুচির মুক্তি চায়। প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসেবে মায়ানমার বাংলাদেশের কথা শুনবে বলে মনে করেন তিনি। আর এ পদৰেপ মায়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তৰেপ হবে না বলেও মনে করেন ব্রিটিশ এই কূটনীতিক। উলেস্নখ্য, মায়ানমারের গণতান্ত্রিক নেত্রী সুচি গত ১৯ বছরের মধ্যে ১৩ বছরই গৃহবন্দী আছেন। সমপ্রতি তাকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে দেশটির সামরিক সরকার। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ের আহ্বান উপেৰা করেই সুচির এই বিচার চলছে।ডিআরইউ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য দ্বিপৰীয় সম্পর্ক’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানে এসময় ডিআরইউ সভাপতি শামীম আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক পথিক সাহা উপস্থিত ছিলেন।

Popular posts from this blog

THE CONSTITUTION OF THE BANGLADESH AWAMI LEAGUE

ইতিহাসবন্ধনী

ব্রিগেডিয়ার বারীর যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা