আফগান ফেরত ২৮২ যোদ্ধার খোঁজে গোয়েন্দারা

আফগান ফেরত ২৮২ যোদ্ধার খোঁজে গোয়েন্দারা
অর্থের জোগানদাতা লস্কর-ই-তৈয়বা
কামরুজ্জামান খান : আশির দশকে এ দেশের শত শত জঙ্গি আফগানিস্তানে সোভিয়েতবিরোধী যুদ্ধে অংশ নিয়েছে। তখন সম্মুখযুদ্ধে বেশ কয়েকজন জঙ্গি নিহত হয়েছে। আবার যুদ্ধ শেষে দেশে ফিরে এসেছে অনেক জঙ্গি। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজন সেই যুদ্ধে ছিলেন প্রথম সারিতে। ‘মরলে শহীদ আর বাঁচলে গাজি’- এই স্লোগানে আফগান রণাঙ্গণে কৌশল ও পারদর্শিতার জন্য এ দেশের বেশ কয়েকজন জঙ্গি তখন ’গুর"’ বনে যান। দেশে ফিরে এরা কেউ বসে থাকেননি। নানাভাবে কথিত ইসলামী শাসন কায়েমের নামে জিহাদের জন্য তারা এখনো তৎপর রয়েছেন। বিভিন্ন মাদ্রাসাকে টার্গেট করে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্নস্থানে তারা গোপন ঘাঁটি করার পাঁয়তারা করছে। ১৯৯৯ সালে আওয়ামী লীগের সময় একটি গোয়েন্দা সংস্থা এই প্রক্রিয়ায় জড়িত সন্দেহে ২৮২ জনের একটি তালিকা তৈরি করেছিল। কিন্তু বিএনপি-জামাত জোট সরকারের সময় ঐ তালিকার আর কোনো অগ্রগতি হয়নি।এরই মধ্যে আফগানিস্তান ফেরত ভারতীয় নাগরিক ও জঙ্গি সংগঠন ইন্ডিয়ান মুজাহিদীনের সংগঠক মুফতি ওবায়দুলস্নাহ ওরফে দাদা হুজুরকে গত ২ জুলাই মাদারীপুরের শিবচরের একটি মাদ্রাসা থেকে ডিবি পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারের পর ৭ দিনের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের শুর"তে ওবায়দুলস্নাহ গোয়েন্দাদের বলেছেন আফগান ফেরত যোদ্ধাদের নেটওয়ার্কের ব্যাপারে। নেপথ্যে থেকে পাকিস্তানের জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বা তাদের অর্থের যোগান দিয়ে আসছিল বলে তিনি স্বীকার করেছেন।সূত্র মতে, দেশে নানাভাবে জঙ্গি তৎপরতার ইঙ্গিত পেয়ে এদের নেপথ্যে কারা কলকাঠি নাড়ছে এর তদন্তে নেমে গোয়েন্দারা দেশে আফগানিস্তান ফেরত জঙ্গিদের তৎপরতা আঁচ করতে পারেন। এরপর ১৯৯৯ সালে একটি গোয়েন্দা সংস্থা তাদের খোঁজে মাঠে নামে। গোয়েন্দারা খোঁজখবর করে এমন ২৮২ জনের নাম-ঠিকানাসহ একটি তালিকা তৈরি করে। যার মধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় নাম-পরিচয় পাল্টে ছদ্মনামে পরিচিত ৩৭ জনের ব্যাপারে তথ্য উঠে আসে। ২০০০ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় হেলিপ্যাডে ৭৬ কেজি ওজনের বোমা পুঁতে রাখার ঘটনায় গোয়েন্দাদের টনক নড়ে। গোয়েন্দাদের খোঁজখবরে এর সঙ্গে আফগানিস্তান ফেরত জঙ্গি হরকাতুল জিহাদের (হুজি) প্রধান মুফতি আব্দুল হান্নান মুন্সীর কানেকশন ধরা পড়ে।এ প্রসঙ্গে গতকাল রোববার সন্ধ্যায় আলাপকালে পুলিশের আইজি নূর মোহাম্মদ এ প্রতিবেদককে বলেন, আফগানিস্তান ফেরত জঙ্গিদের একটি তালিকা রয়েছে।এদিকে একটি সূত্রের দাবি, ২০০৫ সালের ১ অক্টোবর ঢাকার বাড্ডার বাসা থেকে মুফতি হান্নানকে র‌্যাব গ্রেপ্তার করলেও তৎকালীন জোট সরকার নানা কারণে তার প্রতি ছিল দুর্বল। এমনকি কোটালীপাড়ায় শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে বোমা পুঁতে রাখার মামলায় মুফতি হান্নানের মার্সি পিটিশনে জোট সরকারের প্রতিমন্ত্রী গৌতম চক্রবর্তীসহ গোপালগঞ্জের বিএনপি নেতারা লিখিতভাবে সুপারিশ করেছিলেন। তবে গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় মুফতি হান্নানকে নতুন করে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে তিনি আফগান ফেরত বেশ কয়েকজন যোদ্ধার নাম প্রকাশ করেন।সূত্র আরো জানায়, ঢাকার বনশ্রী, রামপুরা, বাড্ডা, গোড়ান, বাসাবো, ডেমরা, মোহাম্মদপুর, উত্তরা, উত্তর খান, কামরাঙ্গীরচর, মিরপুর, পলস্নবীতে বেশ কয়েকটি মাদ্রাসার আশ্রয় নিয়ে জঙ্গিরা তৎপরতা চালায়। তারা বারবার ঠিকানা পাল্টায় এবং কম ভাড়ার বাসা ভাড়া নেয়। অনেকে থাকেন মেসে। বিশেষ করে যে কোনো বড় ধরনের অঘটনের পরিকল্পনা করে তারা বাড়ি বদল করে। সূত্র মতে, আফগানিস্তান ফেরত জঙ্গিদের মধ্যে মুফতি হান্নান, ছাড়াও জেএমবি প্রধান শায়খ আব্দুর রহমান, মাওলানা আবু জাফর, মাওলানা আব্দুর রহমান, মুফতি আব্দুল হাই, মুফতি শাহ সেকেন্দার চৌধুরী, মাওলানা আব্দুর রউফ চৌধুরী এ দেশে মোস্ট ওয়ান্টেড। এদের মধ্যে হান্নান কারাবন্দী এবং শায়খ রহমানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। বাকিরা পলাতক রয়েছেন। গোয়েন্দাদের সেই ২৮২ জনের তালিকায় আফগানিস্তান ফেরত যোদ্ধাদের মধ্যে একটি ইসলামী দলের একজন সাবেক সাংসদের নামও রয়েছে।এ ব্যাপারে র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল রেজানুর রহমান খান গতকাল এ প্রতিবেদককে বলেন, দেশের ২০ থেকে ২৫ জন টপ লেভেলের জঙ্গির একটি তালিকা রয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। এদের মধ্যে কয়েকজন আফগানিস্তানে যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল বলে র‌্যাবের কাছে তথ্য রয়েছে। র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তারকৃত জঙ্গিদের দেয়া তথ্য মতে এসব জঙ্গিদের নাম ঠিকানা র‌্যাবের হাতে থাকলেও বারবার ঠিকানা বদল করায় এখন পর্যন্ত তাদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। দাদা হুজুরের সহযোগীদের খোঁজে অভিযান : মিন্টু রোডে ডিবি হেফাজতে রিমান্ডে থাকা ওবায়দুলস্নাহ ওরফে দাদা হুজুর জিজ্ঞাসাবাদের শুর"তে একই ধরনের কথা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বলছেন। তিনি ভারতে মুসলমানদের নির্যাতনকারীদের ‘হিন্দু কুত্তা’ উলেস্নখ করে তাদেরকে শেষ করতে জিহাদী ভাই তৈরির কথা বলছেন। তার দেয়া তথ্য মতে, আফগানিস্তানে তার সঙ্গে যুদ্ধে অংশ নেয়া এবং এ দেশে তৎপর মাওলানা হাবিবুলস্নাহ, মাওলানা মনসুর আলী, মুফতি জাকির ও মুফতি শাজাহানকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। তাদের খোঁজে ডিবির দুইটি টিম রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালা"েছ। এছাড়া ওবায়দুলস্নাহ কাশ্মিরের আসিম রাজা কমান্ডো ফোর্সের সঙ্গে তার নিয়মিত যোগাযোগ এবং ভারতে দাঙ্গা বাঁধাতে নানা পরিকল্পনার ব্যাপারে মুখ খুলছেন। আসিফের ছোট ভাই আমিরের সঙ্গে মোবাইল ফোনে তার যোগাযোগ ছিল এবং তিনি অবৈধভাবে ভারতে একাধিকবার গিয়ে ইন্ডিয়ান মুজাহিদীনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের কথা স্বীকার করেছেন।ডিবি সূত্র মতে, রিমান্ডে দাদা হুজুরকে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গ্রেনেড হামলা, ২০০৫ সালে ১৭ আগস্ট দেশজুড়ে সিরিজ বোমা হামলা, ব্রিটিশ হাইকমিশনার থাকাকালীন আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা এবং সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যাসহ সকল বোমা ও গ্রেনেড হামলার ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হ"েছ। আজ সোমবার তাকে টাস্কফোর্স ফর ইন্টারগেশন (টিএফআই) সেলে নেয়া হবে।

Popular posts from this blog

THE CONSTITUTION OF THE BANGLADESH AWAMI LEAGUE

ইতিহাসবন্ধনী

ব্রিগেডিয়ার বারীর যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা