সশস্ত্র বাহিনীতে গণহত্যার্‌ দুষ্প্রাপ্য ভিডিও ফুটেজ, প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় উন্মোচিত হল প্রামাণ্যচিত্রে

সশস্ত্র বাহিনীতে গণহত্যার্‌ দুষ্প্রাপ্য ভিডিও ফুটেজ, প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় উন্মোচিত হল প্রামাণ্যচিত্রে
ভিওবিডি, ঢাকা থেকে সামরিক বাহিনীতে বিভিন্ন সময়ে সংঘটিত গণহত্যা (ক্যু) নিয়ে দেশে প্রথমবারের মত একটি প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করা হয়েছে। ‘সশস্ত্র বাহিনীতে গণহত্যাঃ বাংলাদেশ (১৯৭৫-১৯৮১)’ শীর্ষক চারটি ডিভিডিতে প্রকাশিত এ প্রামাণ্য চিত্রটি নির্মাণ করেছে সাংবাদিক আনোয়ার কবির। প্রামাণ্য চিত্রটিতে ১৯৭৭ সালে সংঘটিত কু-এর দুর্লভ ভিডিও ফুটেজ, হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষাৎকার, জিয়াউর রহমান, কর্নেল তাহের ও মঞ্জুর হত্যাকাণ্ডের নেপথ্য ঘটনাবলিসহ সামরিক ক্যু সংক্রানত নানা বিষয় উঠে এসেছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকালে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে প্রামাণ্যচিত্রটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আআমস আরেফিন সিদ্দিক।
প্রকাশনা অনুষ্ঠানে ঢাবি ভিসি বলেন, একটি সভ্য ও স্বাধীন দেশে যে গণহত্যা হয়েছে তা অকল্পনীয়। এ গণহত্যায় কোন আইন-কানুন বা প্রমাণের দরকার ছিল না। মুখের হুকুমেই ফাঁসি দেয়া হতো। তিনি বলেন, একটি স্বাধীন দেশে জনগণের কাছে সকল তথ্য উন্মোচিত হওয়া উচিত। সেনাবাহিনীতে গণহত্যার নেপথ্য নায়কদের সম্পর্কেও জানার অধিকার জনগণের রয়েছে।
অনুষ্ঠানে মেজর জেনারেল (অবঃ) আইন উদ্দিন বীর প্রতীকের সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপি, ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল এমপি, মেজর জেনারেল (অবঃ) আজিজুর রহমান বীর প্রতীক, লেঃ জেঃ (অবঃ) হারুন-উর রশিদ, ব্যারিস্টার তানিয়া আমির, মেজর (অবঃ) জিয়াউদ্দিন, মেজর (অবঃ) রেজাউল করিম, অধ্যাপক ড. রফিক উল্লাহ খান, ওবায়দুল মুক্তাদির চৌধুরী, অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ, কর্পোরাল খায়রুল আনোয়ার প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক আরো বলেন, আমাদের দেশে গণতন্ত্র বার বার হোঁচট খেয়েছে। প্রগতিশীল সামাজিক, রাজনৈতিক দলগুলো সংগঠিত ছিল না বলে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি একের পর এক সহিংস ঘটনা ঘটিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, বর্তমানে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তাই গণতন্ত্রকে সুসংহত রাখার স্বার্থে তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে। কারণ সঠিক তথ্য জানা থাকলে জনগণ সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে।
হাসানুল হক ইনু এমপি বলেন, বাংলাদেশে এখনও গণতন্ত্র নিরাপদ নয়। বঙ্গবন্ধুর নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়নি বলেই দেশে একের পর এক হত্যাকাণ্ড ঘটছে। ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর বলেন, গণতন্ত্রে জনগণই সকল ক্ষমতার অধিকারী। তাই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে জাতি আজ ঐক্যবদ্ধ। পরে অতিথিরা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রামাণ্যচিত্রটির সিডির মোড়ক উন্মোচন করেন।
প্রকাশনা অনুষ্ঠানের পূর্বে প্রামাণ্য চলচ্চিত্রটির নির্মাতা আনোয়ার কবির এক সাংবাদিক সমেমলনে জানান, প্রামাণ্যচিত্রটি ৪টি ডিভিডিতে বিভক্ত। প্রথম ডিভিডিতে (পার্ট-১৯৭৬) বাংলাদেশে সামরিক আদালতে প্রথম ফাঁসি, কর্নেল তাহের ও ৭ নভেম্বরের ঘটনাবলী উঠে এসেছে। দ্বিতীয় ডিভিডিতে (পার্ট-১৯৭৭) বিমান বাহিনীর হাজার হাজার সৈনিককে হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি, তৃতীয় ডিভিডিতে (পার্ট-১৯৮১) ফাঁসির মঞ্চে ১৩ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার হত্যা এবং চতুর্থ ডিভিডিতে (পার্ট-১৯৮১-২) ৩০ মে ১৯৮১ সালে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে সাবেক রাষ্ট্রপতি জেনারেল জিয়াউর রহমান হত্যা, ১ জুন সেনা হেফাজতে জেনারেল মঞ্জুর হত্যাকাণ্ড। ক্যু প্রচেষ্টাকারী নায়ক হিসাবে সাজা হওয়া সামরিক কর্মকর্তা লেঃ কর্নেল নূরুন্নবী খান বীর বিক্রমের (অবঃ) বক্তব্য রয়েছে। গোটা প্রামাণ্যচিত্রে ৭০টি সাক্ষাৎকার রয়েছে বলে নির্মাতা জানান। এছাড়া ১৯৭৭ সালে ক্যু’র সময়ের দুর্লভ ভিডিও ফুটেজ, মুক্তিযুদ্ধের সময় কর্নেল তাহেরের ভিডিও ফুটেজ, ৭৭ সালে সশস্ত্র বাহিনী থেকে নিখোঁজ হওয়া সদস্যদের সংবাদ, জেলখানায় গণফাঁসির প্রত্যক্ষদর্শীর বক্তব্য; ৭৭ সালে নিহত সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের গণকবরের ছবি প্রভৃতি প্রামাণ্যচিত্রে অনতর্ভুক্ত করা হয়েছে।

Popular posts from this blog

THE CONSTITUTION OF THE BANGLADESH AWAMI LEAGUE

ইতিহাসবন্ধনী

ব্রিগেডিয়ার বারীর যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা