সভানেত্রী পদে শেখ হাসিনাকে পুনর্নির্বাচিত করেছে আওয়ামী লীগ। সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম

শেখ হাসিনা সভানেত্রী, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সাধারণ সম্পাদক

ঢাকা, জুলাই ২৪ সভানেত্রী পদে শেখ হাসিনাকে পুনর্নির্বাচিত করেছে আওয়ামী লীগ। সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। শুক্রবার আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল দলের শীর্ষ দুই পদে তাদের নির্বাচিত করে। পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের জন্য কাউন্সিল দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে দায়িত্ব দিয়েছে। কাউন্সিল অধিবেশন থেকে বেরিয়ে কাউন্সিলররা বিকালে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। সদ্য বিলুপ্ত কমিটির উপ-প্রচার সম্পাদক অসীম কুমার উকিল কাউন্সিল অধিবেশন শেষে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "সভানেত্রী পদে শেখ হাসিনার নাম প্রস্তাব করেন সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। তা সমর্থন করেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। "সাধারণ সম্পাদক পদে সৈয়দ আশরাফুলের নাম প্রস্তাব করেন শেখ ফজলুল করিম সেলিম এবং তা সমর্থন করেন মতিয়া চৌধুরী।" অসীম জানান, শেখ হাসিনা ও সৈয়দ আশরাফ এ দুটি পদে সর্বসম্মতভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের দায়িত্ব দলের সভানেত্রীকে দেওয়া হয়েছে বলে অসীম জানান। রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শুক্রবার আওয়ামী লীগের দিনব্যাপী কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। শেখ হাসিনা এ নিয়ে ষষ্ঠবার আওয়ামী লীগের সভানেত্রী নির্বাচিত হলেন। সাধারণ সম্পাদক পদে এই প্রথম এলেন সৈয়দ আশরাফ। তিনি গত কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তবে জরুরি অবস্থা জারির পর দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। সৈয়দ আশরাফ আওয়ামী লীগের নেতা এবং বাংলাদেশের সাবেক উপ রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের ছেলে। কাউন্সিল অধিবেশনে নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়ার জন্য দলের সংশোধিত গঠনতন্ত্র, ঘোষণাপত্র এবং বাজেট অনুমোদন করা হয় বলে জানান অসীম কুমার উকিল। সকালে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে ও শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে কাউন্সিলের উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। এসময় দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। উদ্বোধনী বক্তৃতায় শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সহনশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, "আজ আমরা সরকারে আছি, আমাদের অনেক সহনশীল হতে হবে, প্রতিহিংসা নয়।" কাউন্সিলে আওয়ামী লীগের ইতিহাস-ঐহিত্য তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, "শুরু থেকেই আওয়ামী লীগের নেতারা মানুষের জন্য নিবেদিতপ্রাণ হিসেবে থেকেছে। আগামীতেও যে যেখানে আছেন সেখান থেকে মানুষের সেবা করে যাবেন।" বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন,"আমি ভোগের জন্য রাজনীতি করতে আসিনি। যতোদিন বেঁচে থাকবো, বাংলার মানুষের জন্য সংগ্রাম করে যাব। আমার বাবা-মা,ভাই মানুষের জন্য জীবন দিয়েছেন, প্রয়োজনে আমিও মানুষের জন্য জীবন দেবো। বুলেট প্র"ফ কাঁচে ঘেরা মঞ্চ থেকে বক্তব্য দেন শেখ হাসিনা। তিনি গত দুই বছরে তাকে এবং তার দলকে নানাভাবে নির্যাতন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন। হাসিনা বলেন, "কোন অত্যাচার-নির্যাতন আওয়ামী লীগকে দমাতে পারেনি, ভবিষ্যতেও পারবে না। এবারও দুঃসময়ে অনেকে বিভ্রান্ত হয়েছে, লোভে পড়েছে। সবার চরিত্রের দৃঢ়তা সমান থাকে না। সৎসাহস থাকে না। সবাই মাথা উঁচু করে চলতে পারে না।" কাউন্সিলের মঞ্চে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছাড়াও আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী,শামসুল হক, জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমদ, এএইচএম কামরুজ্জামান ও ক্যাপ্টেন মনসুর আলীর ছবি টানানো ছিল। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে শুরু হয় কাউন্সিল অধিবেশন। প্রথমে আওয়ামী লীগের সাত সাংগঠনিক বিভাগের নেতারা প্রত্যেক বিভাগের পক্ষে বক্তব্য রাখেন। ঢাকা বিভাগের পক্ষে ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যক্ষ মতিউর রহমান, চট্টগ্রাম বিভাগের পক্ষে মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী, রাজশাহীর বিভাগ থেকে মেয়র এ এইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, সিলেট বিভাগ থেকে মেয়র বদরউদ্দিন আহমেদ কামরান, বরিশাল বিভাগের পক্ষে আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ, খুলনা বিভাগ থেকে শেখ হারুন অর রশীদ এবং রংপুর থেকে আবুল মনসুর আহমেদ বক্তব্য রাখেন। কাউন্সিলে সাধারণ সম্পাদকের প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। এসময় মঞ্চে ছিলেন তিনদিন আগে পদত্যাগ করা সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিল। আসাদুজ্জামান নূরের পরিচালনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দা সাজেদা চোধুরী। বিভাগীয় নেতাদের বক্তব্য শেষে জু'মার নামাজের বিরতি শেষে শুরু হয় মূল কাউন্সিল অধিবেশন। এ অধিবেশনেই সভানেত্রী ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করা হয়। এছাড়া দলের সংশোধিত গঠনতন্ত্র, ঘোষণাপত্র ও বাজেট অনুমোদন করা হয়। অধিবেশনে নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পালন করেন প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা এমএ মান্নান, রহমত আলী ও আমজাদ হোসেন। সম্মেলনে কাউন্সিলর, ডেলিগেট ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, কূটনীতিকসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। প্রধান বিরোধীদল বিএনপির তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলও কাউন্সিলে যোগ দেয়। তারা বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়ার একটি শুভেচ্ছাবার্তা আওয়ামী লীগের নেতাদের কাছে হস্তান্তর করেন। কাউন্সিলকে ঘিরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র ও এর আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়।
মানুষের জন্য কাজ করব, চাইব ভালবাসা: হাসিনা


বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে কাজ করে যাওয়ার অঙ্গীকার করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, চাইব শুধু বাংলার মানুষের ভালবাসা। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষের কল্যাণই হবে আওয়ামী লীগের একমাত্র লক্ষ্য। শুক্রবার দলীয় কাউন্সিলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। 'সংগ্রাম ও সাফল্যের ৬০ বছর' স্লোগান আর ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণা দিয়ে সকাল সাড়ে ১০টায় দিনব্যাপী এ কাউন্সিল শুরু হয়েছে। কাউন্সিলের উদ্বোধনী ভাষণের শুরুতেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রয়াত চার নেতা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে শহীদদের স্মরণ করেন হাসিনা। তিনি স্মরণ করেন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ও সাধারণ সম্পাদক শামসুল হককে। আওয়ামী লীগের ইতিহাস তুলে ধরে হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের জন্যই আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে। এদেশের সব অর্জনেই রয়েছে আওয়ামী লীগের অবদান। তিনি বলেন, "বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় চেষ্টা ছিল, কীভাবে আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করা যায়। কিন্তু অগণিত নেতা-কর্মীর সক্রিয়তায় সে অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। "আমি যখন বন্দি ছিলাম, চেষ্টা করা হয়েছে রাজনীতি থেকে আমাকে বিদায় দেওয়ার। নানা ধরনের ষড়যন্ত্র হয়েছে। বিদেশে থাকা অবস্থায় আমার বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে ওয়ারেন্ট জারি করা হলো। আমাকে দেশে ফিরতে বাধা দেওয়া হলো। বলা হলো, বিমানবন্দরে নামলে গুলি করা হবে। কিন্তু আমি বলেছিলাম, মরলে দেশের মাটিতেই মরব।" "আমি দেশের মাটিতে ফিরে ছিলাম। এ জন্য অগণিত কর্মী ও আর প্রবাসীদের সমর্থন ছিল। বিদেশি বন্ধুরাও সমর্থন দিয়েছিলেন।" তিনি বলেন, "আমি কারও কাছে মাথা নত করিনি, করবও না। বাংলার মানুষের জন্য সংগ্রাম করে যাব। একটাই চাইব, তা হলো বাংলার মানুষের ভালবাসা।" দেশকে এগিয়ে নিতে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সক্রিয় হওয়ার তাগিদ দিয়ে হাসিনা বলেন, "বাংলার মানুষের কল্যাণই হবে আওয়ামী লীগের একমাত্র লক্ষ্য। এ লক্ষ্যে আপনাদের কাজ করতে হবে।" রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্র) কাউন্সিল উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা। অর্ধ শতাব্দি প্রাচীন এ দলটির কাউন্সিলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সারাদেশ থেকে প্রতিনিধি-পর্যবেক্ষকরা ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও কূটনীতিকরা যোগ দিয়েছেন। জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্যদিয়ে শুরু হয় কাউন্সিল। জাতীয় সঙ্গীতের সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা। দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। এর পরপরই শান্তির প্রতীক পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে সম্মেলন উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা ওই সময় 'জয় বাংলা-জয় বঙ্গবন্ধু' স্লোগানে মুখর করে তোলে অনুষ্ঠানস্থল। সম্মেলন কেন্দ্রের মূল ভবনের ঠিক সামনে মঞ্চ করা হয়েছে। সেখানে বসেছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। মঞ্চের সামনে তৈরি করা প্যান্ডেলে আসন নিয়েছেন অতিথি এবং দল ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। সভা মঞ্চে শেখ হাসিনা যেখানে বসেন তা বুলেট প্র"ফ কাচে ঘেরা। একই ধরনের নিরাপত্তা ছিল তার বক্তৃতার ডায়াসেও। মঞ্চের পেছনে ব্যানারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছাড়া মওলানা ভাসানী, শহীদ সোহরাওয়ার্দী, তাজউদ্দিন আহমেদসহ প্রয়াত নেতাদের ছবি রয়েছে। সকাল থেকেই মাইকে শোনানো হয় বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ। অনুষ্ঠানের শুরুতেই কুরআন, গীতা, বাইবেল ও ত্রিপিটক পাঠ করা হয়। এরপর শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন দলের দপ্তর সম্পাদক আব্দুল মান্নান খান। এরপর স্বাগত ভাষণ দেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন প্রচার সম্পাদক আসাদুজ্জামান নূর। অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন অজিত রায়ের নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পীরা। কেন্দ্রীয় নেতা ফজলুল হক মিলন, সাবেক সাংসদ শিরীন সুলতানা ও শিমুল বিশ্বাস সমন্বয়ে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল উদ্বোধনী অধিবেশনে যোগ দিয়েছে। আওয়ামী লীগের পদত্যাগী সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিল বেলা সোয়া ১১টার দিকে কাউন্সিলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আসেন। সভামঞ্চে শেখ হাসিনার সঙ্গে তাকে কথা বলতেও দেখা যায়। আওয়ামী লীগের কাউন্সিল ঘিরে সম্মেলন কেন্দ্র ও আশপাশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর বিকাল ৩টায় হবে কাউন্সিল অধিবেশন। এরপর থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। গণপ্রতিনিধিত্ব আইন মেনে নির্ধারিত সময় ২৫ জুলাইয়ের মধ্যে কাউন্সিল করে গঠনতন্ত্র জমা দেওয়ার লক্ষ্যে দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দলটি স্বল্প সময়ের নোটিশে এ কাউন্সিল করছে। এটি আওয়ামী লীগের ২০তম কাউন্সিল। এর আগের কাউন্সিল হয়েছিল ২০০২ সালে। গঠনতন্ত্র অনুমোদনের বাইরেও কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচিত হবে। সভাপতি পদে আবারও শেখ হাসিনার থাকার বিষয়টি কার্যত নিশ্চিত হলেও সাধারণ সম্পাদকের পদটি নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা চলছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। দলীয় কাউন্সিলের তিন দিন আগে উপেক্ষার 'ক্ষোভ থেকে' পদত্যাগ করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিল। ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে। দলের দপ্তর সম্পাদক আব্দুল মান্নান খান জানান, এবার কাউন্সিলরের সংখ্যা ৫ হাজার ২৫৩ জন। নিয়ম অনুযায়ী কাউন্সিলররাই নির্বাচন করবেন দলের পরবর্তী নেতৃত্ব। কাউন্সিলের সফলতা কামনা করে ঢাকার বিভিন্ন প্রবেশ পথসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। সম্মেলনকে সামনে রেখে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের বিদায়ী কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সর্বশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকায় জন্ম নেয় আজকের আওয়ামী লীগ। বাঙালির স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতার পথে নেতৃত্ব দিয়েছে এ দল। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দেশের প্রথম সরকার ছিল আওয়ামী লীগের। ১৯৭৫ সালের রক্তাক্ত পটপরিবর্তনের দীর্ঘ দিন পর ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ক্ষমতায় ফেরে দলটি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে জিতে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ক্ষমতায় এলে হাসিনা দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন।
প্রতিহিংসা নয়: নেতা-কর্মীদের প্রতি হাসিনা
দলীয় নেতা-কর্মীদের সহনশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রতিহিংসাপরায়ণ হবেন না। শুক্রবার দলীয় কাউন্সিলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের প্রলোভনের ঊর্ধ্বে উঠে মানুষের কল্যাণে কাজ করার আহ্বানও জানান তিনি। 'সংগ্রাম ও সাফল্যের ৬০ বছর' স্লে�াগান আর ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণা দিয়ে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সকাল সাড়ে ১০টায় দিনব্যাপী এ কাউন্সিল শুরু হয়েছে। কাউন্সিলের উদ্বোধনী ভাষণের শুরুতেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রয়াত চার নেতা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে শহীদদের স্মরণ করেন হাসিনা। তিনি স্মরণ করেন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ও সাধারণ সম্পাদক শামসুল হককে। আওয়ামী লীগের ইতিহাস তুলে ধরে হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের জন্যই আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে। এদেশের সব অর্জনেই রয়েছে আওয়ামী লীগের অবদান। তিনি বলেন, "বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় চেষ্টা ছিল, কীভাবে আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করা যায়। কিন্তু অগণিত নেতা-কর্মীর সক্রিয়তায় সে অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। "আমি যখন বন্দি ছিলাম, চেষ্টা করা হয়েছে রাজনীতি থেকে আমাকে বিদায় দেওয়ার। নানা ধরনের ষড়যন্ত্র হয়েছে। বিদেশে থাকা অবস্থায় আমার বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে ওয়ারেন্ট জারি করা হলো। আমাকে দেশে ফিরতে বাধা দেওয়া হলো। বলা হলো, বিমানবন্দরে নামলে গুলি করা হবে। কিন্তু আমি বলেছিলাম, মরলে দেশের মাটিতেই মরব।" "আমি দেশের মাটিতে ফিরে ছিলাম। এ জন্য অগণিত কর্মী ও আর প্রবাসীদের সমর্থন ছিল। বিদেশি বন্ধুরাও সমর্থন দিয়েছিলেন।" তিনি বলেন, "আমি কারও কাছে মাথা নত করিনি, করবও না। বাংলার মানুষের জন্য সংগ্রাম করে যাব। একটাই চাইব, তা হলো বাংলার মানুষের ভালবাসা।" দেশকে এগিয়ে নিতে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সক্রিয় হওয়ার তাগিদ দিয়ে হাসিনা বলেন, "বাংলার মানুষের কল্যাণই হবে আওয়ামী লীগের একমাত্র লক্ষ্য। এ লক্ষ্যে আপনাদের কাজ করতে হবে।" বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দলীয় কর্মীদের তৎপরতার প্রশংসা করে তিনি বলেন, আপনারা সব সময় মাঠে ছিলেন। ভয়-ভীতি-প্রলোভনে কেউ কেউ পরাভূত হয়েছে। নানা ধরনের নির্যাতন হয়েছে, যা সহ্য করার দৃঢ়তাও কারও কারও ছিল না। আওয়ামী লীগ প্রধান দলের আগামী নেতৃত্বকে প্রলোভনের ঊর্ধ্বে উঠে কাজ করার আহ্বান জানান। নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, "আমরা সরকারে আছি। তাই সবাইকে সহনশীল হতে হবে। প্রতিহিংসা-প্রতিশোধ নয়।" সরকারের কার্যক্রম তুলে ধরে হাসিনা বলেন, "আমাদের নির্বাচনী ওয়াদা ছিল ক্ষমতায় গেলে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য ও মুদ্রাস্ফীতি কমানো, তা কমিয়েছি। বর্তমানে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সাত বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। "আমরা সার এবং ডিজেলের মূল্যও কমিয়েছে। বৃষ্টি না হওয়ায় খাদ্য উৎপাদন যাতে ব্যাহত না হয় সেজন্য সেচের ব্যবস্থা করছি। সীমিত আয়ের মানুষের জন্য রেশনের ব্যবস্থা করেছি। এ সরকারের আমলে কেউ না খেয়ে কষ্ট পাবে এটা হতে পারেনা, হতে দেব না।" হাসিনা বলেন, "প্রতিটি পরিবারের একজন কর্মক্ষম যুবক যাতে কাজ পায় সে কর্মসূচি হাতে নিয়েছি। এছাড়া যুবক ও যুব মহিলাদের কর্মক্ষমতা বাড়াতে একটি পাইলট প্রকল্প হাতে নিয়েছি। পথশিশুদের কর্মক্ষম হিসেবে গড়ে তোলার কর্মসূচি নিয়েছি। গত সাত মাসে দেশ ও জাতির কল্যাণে অনেক কর্মসূচি হাতে নিয়েছি, যার লক্ষ্য হলো এ দেশ ও এ জাতি যাতে মাথা উচুঁ করে দাঁড়াতে পারে।" জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্যদিয়ে শুরু হয় কাউন্সিল। জাতীয় সঙ্গীতের সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা। দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। এর পরপরই শান্তির প্রতীক পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে সম্মেলন উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা ওই সময় 'জয় বাংলা-জয় বঙ্গবন্ধু' �ে�াগানে মুখর করে তোলে অনুষ্ঠানস্থল। অর্ধ শতাব্দি প্রাচীন এ দলটির কাউন্সিলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সারাদেশ থেকে প্রতিনিধি-পর্যবেক্ষকরা ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও কূটনীতিকরা যোগ দিয়েছেন। সম্মেলন কেন্দ্রের মূল ভবনের ঠিক সামনে মঞ্চ করা হয়েছে। সেখানে বসেছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। মঞ্চের সামনে তৈরি করা প্যান্ডেলে আসন নিয়েছেন অতিথি এবং দল ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। সভা মঞ্চে শেখ হাসিনা যেখানে বসেন তা বুলেট প্র"ফ কাচে ঘেরা। একই ধরনের নিরাপত্তা ছিল তার বক্তৃতার ডায়াসেও। মঞ্চের পেছনে ব্যানারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছাড়া মওলানা ভাসানী, শহীদ সোহরাওয়ার্দী, তাজউদ্দিন আহমেদসহ প্রয়াত নেতাদের ছবি রয়েছে। সকাল থেকেই মাইকে শোনানো হয় বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ। অনুষ্ঠানের শুরুতেই কুরআন, গীতা, বাইবেল ও ত্রিপিটক পাঠ করা হয়। এরপর শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন দলের দপ্তর সম্পাদক আব্দুল মান্নান খান। এরপর স্বাগত ভাষণ দেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন প্রচার সম্পাদক আসাদুজ্জামান নূর। অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন অজিত রায়ের নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পীরা। কেন্দ্রীয় নেতা ফজলুল হক মিলন, সাবেক সাংসদ শিরীন সুলতানা ও শিমুল বিশ্বাস সমন্বয়ে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল উদ্বোধনী অধিবেশনে যোগ দিয়েছে। অন্য দলের রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে ছিলেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মনজুরুল আহসান খান, সাধারণ সম্পাদক মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়�য়া, গণতন্ত্রী পার্টির সভাপতি মোহাম্মদ আফজাল প্রমুখ। আওয়ামী লীগের কাউন্সিল ঘিরে সম্মেলন কেন্দ্র ও আশপাশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর দুপুরে কাউন্সিল অধিবেশন শুরু হয়। গণপ্রতিনিধিত্ব আইন মেনে নির্ধারিত সময় ২৫ জুলাইয়ের মধ্যে কাউন্সিল করে গঠনতন্ত্র জমা দেওয়ার লক্ষ্যে দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দলটি স্বল্প সময়ের নোটিশে এ কাউন্সিল করছে। এটি আওয়ামী লীগের ২০তম কাউন্সিল। এর আগের কাউন্সিল হয়েছিল ২০০২ সালে। গঠনতন্ত্র অনুমোদনের বাইরেও কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচিত হবে। সভাপতি পদে আবারও শেখ হাসিনার থাকার বিষয়টি কার্যত নিশ্চিত হলেও সাধারণ সম্পাদকের পদটি নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা চলছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। দলীয় কাউন্সিলের তিন দিন আগে উপেক্ষার 'ক্ষোভ থেকে' পদত্যাগ করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিল। ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে। দলের দপ্তর সম্পাদক আব্দুল মান্নান খান জানান, এবার কাউন্সিলরের সংখ্যা ৫ হাজার ২৫৩ জন। নিয়ম অনুযায়ী কাউন্সিলররাই নির্বাচন করবেন দলের পরবর্তী নেতৃত্ব। কাউন্সিলের সফলতা কামনা করে ঢাকার বিভিন্ন প্রবেশ পথসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। সম্মেলনকে সামনে রেখে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের বিদায়ী কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সর্বশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকায় জন্ম নেয় আজকের আওয়ামী লীগ। বাঙালির স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতার পথে নেতৃত্ব দিয়েছে এ দল। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দেশের প্রথম সরকার ছিল আওয়ামী লীগের। ১৯৭৫ সালের রক্তাক্ত পটপরিবর্তনের দীর্ঘ দিন পর ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ক্ষমতায় ফেরে দলটি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে জিতে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ক্ষমতায় এলে হাসিনা দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন।


কাউন্সিলে গেলেন জলিল
ঢাকা, জুলাই ২৪ - দলের কাউন্সিলে যোগ দিয়েছেন আওয়ামী লীগের পদত্যাগী সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিল। তিনি শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে দিকে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে কাউন্সিলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আসেন। এর পর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মঞ্চে উঠেন তিনি। ওই সময় একটি চেয়ার এনে দেওয়া হলে তাতে বসেন জলিল। এক পর্যায়ে তাকে চেয়ার ছেড়ে উঠে গিয়ে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলতেও দেখা যায়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে কাউন্সিলে সাধারণ সম্পাদকের রিপোর্ট পড়তে শুরু করেন ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। ওই সময়ও জলিল মঞ্চে বসে ছিলেন। কাউন্সিল অধিবেশনে যথাযথভাবে সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হওয়ার ক্ষোভ থেকে গত মঙ্গলবার পদত্যাগের ঘোষণা দেন জলিল। একদিন পর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় তা গৃহীত হয়। জরুরি অবস্থার সময় গ্রেপ্তার হওয়ার পর জলিল একটি চিঠিতে শেখ হাসিনার সমালোচনা করা হয়। তবে মুক্তির পর তিনি ওই চিঠির বক্তব্য অস্বীকার করেন। শুক্রবার কাউন্সিলের উদ্বোধনী ভাষণে শেখ হাসিনা বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় অনেক নেতা-কর্মী প্রলোভন উপেক্ষা করতে পারেনি। নানা ধরনের নির্যাতন মোকাবেলার দৃঢ়তাও সবার ছিল না। পদত্যাগের কারণ দেখিয়ে জলিল বলেছিলেন, গঠনতন্ত্র মোতাবেক সাধারণ সম্পাদক কাউন্সিল অধিবেশন আহ্বান করেন। দাওয়াত পত্র তার নামেই হওয়া বাঞ্ছনীয়। সাধারণ সম্পাদক কাউন্সিল অধিবেশনে সাধারণ সম্পাদকের রির্পোট পেশ করেন। সে সুযোগও আমার নেই। তাই সরে দাঁড়ানো ছাড়া আমার কাছে বিকল্প কিছু ছিল না। তবে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করলেও শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ করে যাওয়ার ঘোষণা দেন জলিল। ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা জারির পর সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় অনেক রাজনীতিকের মতো জলিলও গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। কারাবন্দি জলিল দেশে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাজনীতি থেকে অবসরের সিদ্ধান্ত জানিয়ে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টাকে চিঠি দিয়েছিলেন। পাশাপাশি ওই চিঠিতে দলে গণতন্ত্রের চর্চা নেই অভিযোগ করে এর জন্য সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে দায়ী করা হয়। আব্দুল জলিলের স্বাক্ষর সম্বলিত ওই চিঠি তার স্ত্রী রেহানা জলিল সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রকাশ করেন। চিঠিতে বলা হয়, "আওয়ামী লীগ একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হওয়া সত্ত্বেও এটি এখন একনায়ককেন্দ্রিক দলে পরিণত হয়েছে। দলের সবাই মিলে সভানেত্রীকে তোষণ করে তাকে সর্বময় কর্তৃত্ব দেওয়ার ফলে তার সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার কোনও পরিবেশ বা সুযোগ ছিলো না। তার একক নেতৃত্বে দল চলার ফলে আজ এই অবস্থা ও বিপর্যয় হয়েছে।" তবে মুক্তি পাওয়ার পর ২০০৮ সালে জলিল দাবি করেন, বাধ্য হয়ে তিনি ওই চিঠি লিখেছিলেন। ওই চিঠির সূত্র ধরেই জলিলকে প্রথমে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে না ফিরিয়ে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফকে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করতে বলে আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকরা। পরে সাধারণ সম্পাদক পদে জলিল থাকলেও আওয়ামী লীগের মুখপাত্র হিসেবে আশরাফই দায়িত্ব পালন করে যেতে থাকেন। আব্দুল জলিল ২০০২ সালের ডিসেম্বরে দলের ১৯ তম কাউন্সিলে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এর আগে ১৯৯৬-২০০১ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন তিনি। তিনি বর্তমানে সংসদ সদস্য।


আওয়ামী লীগের কাউন্সিল উদ্বোধন

'সংগ্রাম ও সাফল্যের ৬০ বছর' স্লোগান আর ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণা দিয়ে শুক্রবার শুরু হয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্র) সকাল সাড়ে ১০টায় কাউন্সিল উদ্বোধন করেন দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সারাদেশ থেকে প্রতিনিধি-পর্যবেক্ষকরা ছাড়াও বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মীর উপস্থিতিতে কাউন্সিলের উদ্বোধন ঘোষণা করেন হাসিনা। অর্ধ শতাব্দি প্রাচীন দলটির কাউন্সিলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারাও রয়েছেন। জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্যদিয়ে শুরু হয় দিনব্যাপী এ কাউন্সিল। জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা। দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। জাতীয় সঙ্গীতের সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। সমবেত সবাই দাঁড়িয়ে জাতীয় পতাকার প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এর পরপরই শান্তির প্রতীক পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে সম্মেলন উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা ওই সময় 'জয় বাংলা-জয় বঙ্গবন্ধু' স্লোগানে মুখর করে তোলে অনুষ্ঠানস্থল। সম্মেলন কেন্দ্রের মূল ভবনের ঠিক সামনে মঞ্চ করা হয়েছে। সেখানে বসেছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। মঞ্চের সামনে তৈরি করা প্যান্ডেলে আসন নিয়েছেন অতিথি এবং দল ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। সভা মঞ্চে শেখ হাসিনা যেখানে বসছেন তা বুলেট প্র"ফ কাচে ঘেরা। একই ধরনের নিরাপত্তা তার বক্তৃতার ডায়াসেও। মঞ্চের পেছনে ব্যানারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছাড়া মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, তাজউদ্দিন আহমেদসহ প্রয়াত নেতাদের ছবি রয়েছে। সকাল থেকেই মাইকে শোনানো হয় বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ। কেন্দ্রীয় নেতা ফজলুল হক মিলন, সাবেক সাংসদ শিরীন সুলতানা ও শিমুল বিশ্বাস সমন্বয়ে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল উদ্বোধনী অধিবেশনে যোগ দিয়েছে। বিভিন্ন বিদেশি মিশনের কূটনীতিকরাও যোগ দিয়েছেন আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। গণপ্রতিনিধিত্ব আইন মেনে নির্ধারিত সময় ২৫ জুলাইয়ের মধ্যে কাউন্সিল করে গঠনতন্ত্র জমা দেওয়ার লক্ষ্যে দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দলটি স্বল্প সময়ের নোটিশে এ কাউন্সিল করছে। এটি আওয়ামী লীগের ২০তম কাউন্সিল। এর আগের কাউন্সিল হয়েছিল ২০০২ সালে। গঠনতন্ত্র অনুমোদনের বাইরেও কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচিত হবে। সভাপতি পদে আবারও শেখ হাসিনার থাকার বিষয়টি কার্যত নিশ্চিত হলেও সাধারণ সম্পাদকের পদটি নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা চলছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। দলীয় কাউন্সিলের তিন দিন আগে উপেক্ষার 'ক্ষোভ থেকে' পদত্যাগ করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিল। ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে। সাধারণ সম্পাদক ছাড়াও অন্য কিছু পদে পরিবর্তন আসবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। দলের দপ্তর সম্পাদক আব্দুল মান্নান খান জানান, এবার কাউন্সিলরের সংখ্যা ৫ হাজার ২৫৩ জন। নিয়ম অনুযায়ী কাউন্সিলররাই নির্বাচন করবেন দলের পরবর্তী নেতৃত্ব। কাউন্সিলের সফলতা কামনা করে ঢাকার বিভিন্ন প্রবেশ পথসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর বিকাল ৩টায় হবে কাউন্সিল অধিবেশন। এরপর থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সম্মেলনকে সামনে রেখে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের বিদায়ী কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সর্বশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়। ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল সভার পর সাংবাদিকদের বলেন, "আওয়ামী লীগের কাউন্সিলকে ঘিরে ঢাকায় গণতন্ত্রের মহোৎসব হবে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার, দিনবদলের উৎসব হবে।" কাউন্সিলকে ঘিরে চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্র ও আশপাশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকায় জন্ম নেয় আজকের আওয়ামী লীগ। বাঙালির স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতার পথে নেতৃত্ব দিয়েছে এ দল। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দেশের প্রথম সরকার ছিল আওয়ামী লীগের। ১৯৭৫ সালের রক্তাক্ত পটপরিবর্তনের দীর্ঘ দিন পর ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ক্ষমতায় ফেরে দলটি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে জিতে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ক্ষমতায় এলে হাসিনা দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন।


আওয়ামী লীগের পেছনের কথা
হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও আবুল হাশেমের নেতৃত্বাধীন তৎকালীন বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের একাংশের সম্মেলনের মধ্য দিয়ে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার টিকাটুলীর কেএম দাস লেনের রোজ গার্ডেনে 'পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ' প্রতিষ্ঠিত হয়। তবে ধর্মনিরপেক্ষতার চর্চা এবং অসা�প্রদাায়িক চেতনা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সংগঠনটির নাম থেকে পরে 'মুসলিম' শব্দটি বাদ দেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠালগ্নে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের সভাপতি হন মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, সহ-সভাপতি হন আতাউর রহমান খান, শাখাওয়াত হোসেন ও আলী আহমদ। টাঙ্গাইলের শামসুল হক সাধারণ সম্পাদক এবং শেখ মুজিবুর রহমান, খন্দকার মোশতাক আহমদ ও এ কে রফিকুল হোসেনকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কোষাধ্যক্ষ হন ইয়ার মোহাম্মদ খান। কারাগারে অন্তরীণ থাকা অবস্থাতেই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান মুজিব। অন্যদিকে, পুরো পাকিস্তানের ক্ষেত্রে সংগঠনটির নাম রাখা হয় নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগ। এর সভাপতি হন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। ১৯৫২ সালে শেখ মুজিবুর রহমান সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। পরের বছর ঢাকার 'মুকুল' প্রেক্ষাগৃহে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের সম্মেলনে তাকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত ১৩ বছর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন শেখ মুজিব। আওয়ামী লীগ ছিলো তৎকালীন পাকিস্তানে প্রথম বিরোধী দল। জন্মলগ্ন থেকেই দলটি প্রাদেশিক স্বায়ত্ত্বশাসনের ওপর বিশেষ গুরুত্বসহ ৪২ দফা কর্মসূচি গ্রহণ করে। শুরুর দিকে দলটির প্রধান দাবিগুলোর মধ্যে ছিল রাষ্ট্রভাষা হিসাবে বাংলার স্বীকৃতি, একজনের এক ভোট, গণতন্ত্র, সংবিধান প্রণয়ন, সংসদীয় পদ্ধতির সরকার, আঞ্চলিক স্বায়ত্ত্বশাসন এবং তৎকালীন পাকিস্তানের দু'অঞ্চলের মধ্যে বৈষম্য বিলোপ। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে 'গণবিচ্ছিন্ন' বলে চিহ্নিত মুসলিম লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য অন্যান্য দলকে সঙ্গে নিয়ে যুক্তফ্রন্ট গঠন করতে আওয়ামী মুসলিম লীগ মুখ্য ভূমিকা পালন করে। ১৯৫৩ সালের ৪ ডিসেম্বর দলটি কৃষক শ্রমিক পার্টি, পাকিস্তান গণতন্ত্রী দল ও পাকিস্তান খেলাফত পার্টির সঙ্গে মিলে যুক্তফ্রন্ট গঠন করে। ১৯৫৪ সালের মার্চের আট থেকে ১২ তারিখ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত পূর্ব পাকিস্তান পরিষদের নির্বাচনে ২৩৭টি মুসলিম আসনের মধ্যে যুক্তফ্রন্ট ২২৩টি আসন পায়। এরমধ্যে ১৪৩টি পেয়েছিল আওয়ামী মুসলিম লীগ। ২৪ বছরের পাকিস্তান শাসনামলে আওয়ামী লীগ আতাউর রহমান খানের নেতৃত্বে দু'বছর প্রদেশে ক্ষমতাসীন ছিল এবং হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে কেন্দ্রে ১৩ মাস কোয়ালিশন সরকারের অংশীদার ছিল। ধর্মনিরপেক্ষ ও অসা�প্রদায়িক ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৫৫ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত দলের তৃতীয় সম্মেলনে দলের নাম থেকে 'মুসলিম' শব্দটি বাদ দেওয়া হয়। পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ে মতপার্থক্যের কারণে ১৯৫৭ সালে দল ভাঙনের ফলে আওয়ামী লীগ সংকটে পড়ে। ওই বছরের সাত ও আট ফেব্র"য়ারি কাগমারি সম্মেলনে দলে বিভক্তির বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এ অবস্থায় মাওলানা ভাসানী ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) নামে একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেন। প্রেসিডেন্ট আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। মুজিব তার নেতৃত্বের জন্য পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালি জনগোষ্ঠীর অবিসংবাদিত নেতায় পরিণত হন। ১৯৬৬ সালের ফেব্র"য়ারিতে লাহোরে বিরোধী দলের সম্মেলনে শেখ মুজিবুর ছয় দফা উপস্থাপন করেন। এর জবাবে আইয়ুব সরকার তিনিসহ ৩৪ জনের বিরুদ্ধে ১৯৬৮ সালে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করে। এর প্রতিক্রিয়ায় ১৯৬৯ সালের তীব্র গণআন্দোলনের মুখে আইয়ুব খানের পতন হয়। এসব আন্দোলনের এক পর্যায়ে শেখ মুজিবকে 'বঙ্গবন্ধু' উপাধিতে ভূষিত করা হয়। গণআন্দোলন ও আইয়ুবের পতনের পটভূমিতে '৭০ এর নির্বাচনে কেন্দ্রীয় আইনসভায় (জাতীয় পরিষদ) পূর্ব পাকিস্তানের ১৬২টির মধ্যে আওয়ামী লীগ ১৬০ আসনেই জয়ী হয়। অন্যদিকে প্রাদেশিক পরিষদের ৩০০ আসনের মধ্যে ২৮৮ আসন পায় দলটি। জাতীয় পরিষদের সাতটি মহিলা আসন এবং প্রাদেশিক পরিষদের দশটি মহিলা আসনের সবগুলোতেই জয়ী হয় আওয়ামী লীগ। সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও আওয়ামী লীগকে সরকার গঠনে আমন্ত্রণ জানানোর পরিবর্তে সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খান সামরিক শক্তি প্রয়োগ করে বাঙালির অধিকার নস্যাৎ করার পথ বেছে নেয়। এর ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে জন্ম নেয় বাংলাদেশ যার সংগঠনে নেতৃত্ব দিতে হয় আওয়ামী লীগকেই। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ তিন বার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পায়। ১৯৭২ থেকে '৭৫ পর্যন্ত যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনের কঠিন সমস্যা মোকাবেলা করতে হয় দলটিকে। এরমধ্যে ১৯৭৩ সালে নতুন সংবিধানের অধীনে সাধারণ নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯৩ আসন লাভ করে দলটি। আওয়ামী লীগ সম্মেলন করে প্রবাসে থাকা বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনাকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করে। ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে হাসিনা দলের দায়িত্ব নেন।

Popular posts from this blog

THE CONSTITUTION OF THE BANGLADESH AWAMI LEAGUE

ইতিহাসবন্ধনী

ব্রিগেডিয়ার বারীর যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা