যুদ্ধাপরাধ বিচারে '৭৩ এর আইন সংশোধনী বিল সংসদে পাস


যুদ্ধাপরাধ বিচারে '৭৩ এর আইন সংশোধনী বিল সংসদে পাস
ঢাকা, জুলাই ৯ একাত্তরের যুদ্ধাপরাধ বিচারে ব্যক্তিগত এবং দলবদ্ধ অপরাধের বিচারের ধারা সংযুক্ত করে ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) অ্যাক্ট সংশোধন করে বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে সর্বসম্মতভাবে 'ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস (ট্রাইব্যুনাল) (সংশোধন) আইন- ২০০৯' পাস হয়েছে। বিরোধী দলের অনুপস্থিতিতে তুমুল করতালির মধ্যে বিলটি পাস হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। এর আগে সকালে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি বিলটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দেয়। বুধবার এই বিলটি সংসদে উত্থাপন করেন আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ। গত ৬ জুলাই মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) অ্যাক্ট সংশোধনের নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। বিলটি সংসদে উত্থাপনের সময় আইনমন্ত্রী বলেন,''যুদ্ধাপরাধীর বিচারের দিকে জাতি তাকিয়ে আছে। এটা যাতে আন্তর্জাতিক মানসম্মত হয় এবং বিচার প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতেই আমরা আইনটি সংশোধন করে পাসের জন্য এনেছি।'' বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্বলিত বিবৃতিতে তিনি বলেন, " '৭৩ সালের আইনের প্রস্তাবিত সংশোধন করে যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হলে এই আইনের আওতায় বিচার প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও ন্যায়সঙ্গত হবে এবং তা আর্ন্তজাতিক অঙ্গনেও তা গ্রহণযোগ্য হবে।" ১৯৭৩ সালের আইনে এ ধরনের অপরাধের জন্য সশস্ত্র বাহিনী এবং তাদের সহযোগী বাহিনীর বিচার করার বিধান রয়েছে। উত্থাপিত বিলে এর পাশাপাশি ব্যক্তিগত এবং দলবদ্ধ অপরাধের বিচারের বিধান রাখা হয়েছে। এতে সশস্ত্র বাহিনী, প্রতিরক্ষা বাহিনী বা সহায়ক বাহিনীর সদস্য ছাড়াও একক কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠিকে বিচারের আওতায় আনার প্রস্তাব করা হয়। বিলে সুপ্রিম কোর্টের বিচারক হিসেবে কর্মরত আছেন বা সুপ্রিম কোর্টের বিচারক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার যোগ্য বা ওই কোর্টের বিচারক ছিলেন এমন ব্যক্তিকে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বা সদস্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া সংশোধনীতে বিচারিক দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনালের স্বাধীনতা ও ন্যায় বিচার নিশ্চিত করার প্রস্তাব রয়েছে। '৭৩ সালের আইনে বিচার কাজ পরিচালনার ভাষা হিসেবে ইংরেজির কথা বলা আছে। সংশোধনীতে ইংরেজির পাশাপাশি বাংলায়ও বিচার কাজ পরিচালনার সুযোগ রাখা হয়েছে। এছাড়া ঢাকার পুরনো ইংরেজি বানান 'Dacca' এর পরিবর্তে 'Dhaka' করার প্রস্তাব করা হয়। প্রচলিত আইনে অভিযুক্তদের খালাস পাওয়ার বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ নেই। সংশোধনীতে ট্রাইব্যুনালের খালাস আদেশের বিরুদ্ধে আপিলের সুযোগ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্বলিত বিবৃতিতে আরো বলা হয়, "১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত মানবতা বিরোধী বিভিন্ন অপরাধ যেমন-নরহত্যা, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ ইত্যাদির বিচার করার জন্য ওই আইনের বিধান অনুযায়ী ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি প্রতিষ্ঠা, চিফ প্রসিকিউটরসহ প্রসিকিউটর নিয়োগ ও ট্রাইব্যুনাল গঠনের মাধ্যমে উক্ত অপরাধসমূহ তদন্তপূর্বক যুদ্ধাপরাধীর বিচার করার বিধান থাকলেও আজ পর্যন্ত ওইসব অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের বিচার অনুষ্ঠিত হয়নি। বর্তমান সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে দৃঢ় অঙ্গীকারাবদ্ধ বলে '৭৩ সালের আইনটি যুগোপযোগী করতে ওইসব সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে।" নির্বাচনী প্রতিশ্র"তি অনুযায়ী বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর '৭১-এর যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেয়। এ লক্ষ্যে নবম সংসদের প্রথম অধিবেশনে একটি প্রস্তাব সর্বসম্মতভাবে গ্রহণ করা হয়।

Popular posts from this blog

THE CONSTITUTION OF THE BANGLADESH AWAMI LEAGUE

ইতিহাসবন্ধনী

ব্রিগেডিয়ার বারীর যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা