জোট নিরপেক্ষ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী কাল মিসর যাচ্ছেন

জোট নিরপেক্ষ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী কাল মিসর যাচ্ছেন

ঢাকা, বাংলাদেশ, ১৩ জুলাই : জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন (ন্যাম) শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীকাল মিসরের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।মিসরের লোহিত সাগর তীরে পর্যটন নগরী শার্ম আল শেখে আগামী ১৫ ও ১৬ জুলাই দু’দিনব্যাপী ন্যাম শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। গত ১১ জুলাই থেকে সম্মেলনের কর্মকর্তা পর্যায়ের বৈঠক শুরু হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা সরকারি পর্যায়ের বৈঠকে যোগ দিতে এখন মিসরে অবস্থান করছেন।পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী আগামী ১৬ জুলাই সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে ভাষণ দেবেন। সম্মেলনে ৬০টি দেশের সরকার প্রধান এবং রাষ্ট্রপ্রধানগণ যোগ দেবেন।পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, পররাষ্ট্র সচিব মোহাম্মদ মিজারুল কায়েস, প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানাসহ ৫০ সদস্যের প্রতিনিধিদল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে থাকবেন।স্নায়ুযুদ্ধের অবসানের পর আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ন্যাম-এর গুরুত্ব হ্রাস পেলেও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ইস্যু ও আঞ্চলিক পর্যায়ে বাংলাদেশের জন্যে এ সম্মেলন বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান।পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানানো হয়, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব, সন্ত্রাস দমন, খাদ্য নিরাপত্তা, বিশ্ব আর্থিক মন্দা, রাজনৈতিক ও সামাজিক বিষয়সহ গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক ইস্যু নিয়ে বাংলাদেশ সম্মেলনে জোরালো ভূমিকা রাখবে। সম্মেলনে নতুন নির্বাচিত সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরার পাশাপাশি ন্যামে বাংলাদেশের অবস্থান সুসংহত করা ছাড়াও জাতিসংঘের পর বিশ্বের সবচেয়ে বড় এ সংস্থা থেকে অনেক কিছু আদায় করে নেয়ার ক্ষেত্রে নতুন সরকারের রাজনৈতিক ইচ্ছা প্রতিফলিত হবে। কেননা জি-৭৭, ওআইসি, সার্ক এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন বন্ধুপ্রতিম দেশ ছাড়াও আফ্রিকা মহাদেশের ৫৩টি, এশিয়ার ৩৮টি, ল্যাটিন আমেরিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চলের ২৬টি এবং ইউরোপের ১টি দেশসহ ১১৮টি সদস্য দেশের সমন্বয়ে ন্যাম গঠিত। এ জোটে ১৬টি দেশ ও ৯টি আন্তর্জাতিক সংস্থা পর্যবেক্ষক হিসেবে রয়েছে। এবারের সম্মেলনে নতুন সদস্য দেশের অন্তর্ভুক্তি এবং পর্যবেক্ষক সংস্থার সংখ্যা বাড়ানোর এজেন্ডা রয়েছে।সম্মেলনের ‘সাইড লাইনে’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং, নেপালের প্রধানমন্ত্রী মাধব কুমার নেপাল ছাড়াও বিভিন্ন দেশের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক ও আঞ্চলিক নানা গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে আলোচনা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি কলম্বোতে অনুষ্ঠিত সার্ক পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক শেষে গতকাল মিসর গিয়েছেন। তিনি সোমবার ও মঙ্গলবার দু’দিনব্যাপী ন্যাম পররাষ্ট্র মন্ত্রীপর্যায়ের সম্মেলনে যোগ দেবেন।গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে ২০০৮ সালের জুলাইতে ইরানের রাজধানী তেহরানে অনুষ্ঠিত ন্যাম পররাষ্ট্র মন্ত্রীপর্যায়ের সম্মেলনে বাংলাদেশ ‘সর্বসম্মতভাবে ন্যামের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়। সম্মেলনের চূড়ান্ত দলিলে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে উপস্থাপিত বক্তব্য ন্যামের নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত হয়।কিউবার প্রেসিডেন্ট রাউল ক্যাস্ট্রো ১৫ জুলাই মিসরীয় সময় সকাল ১০টায় সরকার ও রাষ্ট্রধানদের অংশগ্রহণে পঞ্চদশ ন্যাম শীর্ষ সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন। ন্যাম সদস্য দেশের যেসব শীর্ষ নেতৃবৃন্দ ইতোমধ্যে মারা গেছেন তাদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হবে। এরপর ন্যামের বর্তমান সভাপতি হিসেবে কিউবার প্রেসিডেন্ট ২০০৬-২০০৯ মেয়াদে বিগত সম্মেলনের কার্যক্রম ও রিপোর্ট পেশ করবেন। নতুন সভাপতি হিসেবে মিসরের প্রেসিডেন্ট হোসনী মোবারকের দায়িত্ব গ্রহণের পর সম্মেলনে উদ্বোধনী ভাষণ দেবেন। উদ্বোধনী অধিবেশনে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনও ভাষণ দেবেন। এ ছাড়া জি-৭৭-এর চেয়ারম্যান, চীন এবং বিভিন্ন আঞ্চলিক গ্রুপের নেতৃবৃন্দ বিবৃতি প্রদান করবেন।এছাড়া উন্মুক্ত আলোচনা, নতুন সদস্য ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক সংস্থার অন্তর্ভুক্তি, ২০০৬-২০০৯ মেয়াদের রিপোর্ট অনুমোদন, কমিটি নির্বাচন হবে।পরদিন ১৬ জুলাই মিসরীয় সময় সকাল ১০টায় সম্মেলন শুরু হবে। সাধারণ বিতর্কের পর সমাপনী অধিবেশনে চূড়ান্ত ঘোষণা অনুমোদন, পরবর্তী শীর্ষ সম্মেলনের তারিখ ও স্থান নির্বাচন এবং ন্যামের নতুন সভাপতির ভাষণের মধ্যদিয়ে সম্মেলন শেষ হবে।১৯৬১ সালে তৎকালীন যুগোস্লাভিয়ার রাজধানী বেলগ্রেডে প্রথম শীর্ষ সম্মেলনের মধ্যদিয়ে ন্যাম-এর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। এরপর ১৯৬৪ সালে মিসরের রাজধানী কায়রো, ১৯৭০ সালে লুসাকা, ১৯৭৩ সালে আলজিয়ার্স, ১৯৭৬ সালে কলম্বো, ১৯৭৯ সালে হাভানা, ১৯৮৩ সালে নয়াদিল্লী, ১৯৮৬ সালে হারারে, ১৯৮৯ সালে বেলগ্রেড, ১৯৯২ সালে জাকার্তা, ১৯৯৫ সালে কার্টাজিনা ডি ইন্ডিয়াস, ১৯৯৮ সালে ডারবান, ২০০৩ সালে কুয়ালালামপুর এবং ২০০৬ সালে হাভানায় ন্যাম শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

Popular posts from this blog

THE CONSTITUTION OF THE BANGLADESH AWAMI LEAGUE

ইতিহাসবন্ধনী

ব্রিগেডিয়ার বারীর যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা