যুদ্ধাপরাধের বিচার : ‘রাজনীতিকীকরণ’ না করার আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের

যুদ্ধাপরাধের বিচার : ‘রাজনীতিকীকরণ’ না করার আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের
কাগজ প্রতিবেদক : একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচারের ইস্যুটির ‘রাজনীতিকীকরণ’ না করার জন্য বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির নবনিযুক্ত দৰিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী রবার্ট ও ব্লেক দু’দিনের ঢাকা সফরশেষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে যুদ্ধাপরাধের বিচারের ব্যাপারে এক প্রশ্নের জবাবে এই আহ্বান জানান। রবার্ট ব্লেক যুদ্ধাপরাধের বিচারের ব্যাপারে বাংলাদেশকে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেন, এদেশে মাত্র কিছুদিন হলো ইতিহাসের সবচেয়ে অবাধ ও নিরপেৰ নির্বাচন হয়েছে, শক্তিশালী হয়েছে গণতন্ত্র। তাই তিনি মনে করেন, বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে বিজয়ী দল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে এমন কিছু করবে না যাতে গণতন্ত্রের ভিত দুর্বল হতে পারে। একই সঙ্গে টেকসই গণতন্ত্রের স্বার্থে জাতীয় সংসদকে কার্যকর করতে বিরোধী দলকে সংসদে যোগ দেয়ার আহ্বান জানান তিনি। তবে গতকাল সকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এডভোকেট সাহারা খাতুনের সঙ্গে বৈঠকে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচারের ব্যাপারে মার্কিন সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন ব্লেক। বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান,যুদ্ধাপরাধের বিচারের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক ৰেত্রে বাংলাদেশকে সমর্থন দেবে।আমেরিকান ক্লাবে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টি, আমেরিকান সেন্টারের পরিচালক এমি ভ্যাম্পার্স, তথ্য কর্মকর্তা মেরিনা ইয়াসমিন উপস্থিত ছিলেন। রবার্ট ব্লেক সরকারের জবাবদিহিতার ওপর গুর"ত্ব আরোপ করে যুদ্ধাপরাধের বিচারের ইস্যুটি ‘রাজনীতিকীকরণ’ না করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন,তার দেশ একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচার ইস্যুতে জবাবদিহিতার ওপর গুর"ত্ব দি"েছ। তাই সফরকালে তিনি সরকারের সঙ্গে আলোচনায় এই ইস্যুতে স্ব"ছতা বজায় রাখার ওপর জোর দিয়েছেন। গত মে মাসে রিচার্ড বাউচারের স্থলে মার্কিন সরকারের দৰিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পান পেশাদার কূটনীতিক রবার্ট ব্লেক। দায়িত্ব গ্রহণের পর বাংলাদেশে তার প্রথম সফরে এসে দুই দেশের সম্পর্ক, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, বিডিআর পুনর্গঠন এমনকি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডসহ দ্বিপৰীয় সম্পর্ক নিয়ে কথা বলেন ব্লেক। এক প্রশ্নের জবাবে ব্লেক বলেন, গণতন্ত্রকে কার্যকর করতে সংসদে যোগ দিতে বিরোধী দলকে অনুরোধ করেছেন তিনি।অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকারের উচিত হেফাজতে থাকা বিডিআর সদস্যদের মারা যাওয়াসহ সব বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করা। ব্লেক মনে করেন বিডিআর ঘটনার সঠিক তদন্ত হওয়ার পাশাপাশি চলমান বিচার প্রক্রিয়ারও স্ব"ছতা থাকতে হবে। একই সঙ্গে তিনি বিডিআর পুনর্গঠন ও আধুনিকায়নে সহায়তার আশ্বাস দেন। ব্লেক মার্কিন প্রেসিডেণ্ট বারাক ওবামার কায়রো ভাষণের বার্তা পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, মুসলিম দেশ হিসেবে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরো সুদৃঢ় করতে আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্র। ব্লেক বাংলাদেশ প্রস্তাবিত দৰিণ এশীয় সন্ত্রাসবিরোধী টাস্কফোর্সকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, এটি এই অঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য ইতিবাচক পদৰেপ।উলেস্নখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের এই সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী গত শনিবার দুই দিনের সফরে ঢাকা আসেন। ওইদিন সন্ধ্যায় তিনি বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করেন। গতকাল সকালে তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি এবং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সঙ্গে তাদের কার্যালয়ে বৈঠক করেন। বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে সফরের অভিজ্ঞতা জানানোর পর সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাৰাৎ শেষে রবার্ট ব্লেক ঢাকা ত্যাগ করেন। গতকাল ব্লেকের সঙ্গে বৈঠকের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে সহায়তা দেয়ার আশ্বাস দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। একই সঙ্গে নিরাপত্তা ও বাণিজ্য সমপ্রসারণসহ বাংলাদেশের সীমান্ত রৰার বিষয়েও সহযোগিতার প্রতিশ্র"তি পাওয়া গেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তিনি মার্কিন প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়ে সরকার জনগণের কাছে প্রতিশ্র"তিবদ্ধ। এ বিষয়ে তাদের সমর্থন রয়েছে। সীমান্ত রৰার ৰেত্রে যুক্তরাষ্ট্র কী ধরনের সহযোগিতা দেবে জানতে চাইলে সাহারা বলেন, কোন প্রক্রিয়ায় এ সহায়তা দেয়া হবে তা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আলোচনা করবে। তিনি আরো জানান, যুদ্ধাপরাধের বিচারের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক ৰেত্রে বাংলাদশেকে সমর্থন দেবে। বৈঠকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দৰতা বাড়াতে সহায়তা দেয়ার কথাও জানান মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এরপর ব্লেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সঙ্গে তাদের কার্যালয়ে পৃথক সাৰাৎ করেন। একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য রবার্ট ব্লেক বাংলাদেশের সরকার ও জনগণকে অভিনন্দন জানান। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, রাষ্ট্র পরিচালনায় দায়িত্বপ্রাপ্ত দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এর নির্বাচনী ম্যানিফেস্টোতে জনগণের প্রতি যেসব অঙ্গীকার করেছিল তার আলোকে রাষ্ট্র পরিচালনা করবে।বৈঠকে উন্নয়ন সহযোগিতা, সুশাসন, মানবাধিকার, নারীর ৰমতায়ন, জলবায়ু পরিবর্তন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগিতা সমপ্রসারণের ব্যাপারে আলোচনা হয়।বরাট ব্লেক বলেন, সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্রের পৰ থেকে বাংলাদেশকে সব ধরনের সহযোগিতা দেয়া হবে।

Popular posts from this blog

THE CONSTITUTION OF THE BANGLADESH AWAMI LEAGUE

ইতিহাসবন্ধনী

ব্রিগেডিয়ার বারীর যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা