প্রস্তাবিত বাজেট দিনবদলের সনদ বাসত্মবায়নে সহায়ক হবে : অর্থমন্ত্রী

১ লাখ ১৩ হাজার ৮১৯ কোটি টাকার বাজেট পেশ
ঢাকা, বাংলাদেশ, ১১ জুন (বাসস) : আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার দিন বদলের সনদ বাস্তবায়নের প্রাথমিক পদক্ষেপ এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে জাতীয় সংসদে ২০০৯-’১০ অর্থবছরের জন্য ১ লাখ ১৩ হাজার ৮১৯ কোটি টাকার বাজেট পেশ করা হয়েছে।অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত আজ জাতীয় সংসদে নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পেশ করেন।২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ব্যাপকব সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে সরকার গঠনের পর এটিই প্রথম বাজেট।অর্থমন্ত্রী বেলা সাড়ে তিনটায় বাজেট বক্তৃতার শুরুতেই সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা এবং মুক্তিযুদ্ধের শহীদ অকুতোভয় বীর যোদ্ধা ও সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে আত্মদানকারী শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।তিনি বলেন, ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জাতি গণতন্ত্র পুনরুজ্জীবনের পক্ষে এবং সামপ্রদায়িক অপশক্তি, জঙ্গিবাদ ও মৌলবাদের বিপক্ষে দ্ব্যর্থহীন রায় দেয়। নির্বাচনে জনগণের বিপুল ম্যান্ডেট নিয়ে বিজয় লাভ করে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মহাজোট। দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে সংযোজিত হয় এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়।
২০০৯-১০ অর্থবছরের জন্য ১ লাখ ১৩ হাজার ৮১৯ কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেটে অনুদান ছাড়া সামগ্রিক ঘাটতি দাঁড়াবে ৩৪ হাজার ৩৫৮ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৫ শতাংশ।২০০৯-১০ নতুন অর্থবছরের বাজেটে মোট প্রাক্কলিত রাজস্ব আয় ৭৯ হাজার ৪৬১ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১১ দশমিক ৬ শতাংশ। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সূত্রে ৬১ হাজার কোটি টাকা এবং কর বহির্ভূত ও এনবিআর বহির্ভূত সূত্র থেকে যথাক্রমে ১৫ হাজার ৫০৬ কোটি ও ২ হাজার ৯৫৫ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হবে।বাজেটে ব্যয় খাতে আগামী অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আকার হবে ৩০ হাজার ৫শ’ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৪ দশমিক ৪ শতাংশ।বৈদেশিক ও অভ্যন্তরীণ উৎস্য থেকে বাজেটে ঘাটতি পূরণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বৈদেশিক সূত্র থেকে বাজেট ঘাটতির ২ শতাংশ এবং অভ্যন্তরীণ সূত্র থেকে বাজেট ঘাটতির ৩ শতাংশ পূরণ করা হবে।বাজেট বক্তৃতার আগে অর্থমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনার সঙ্গে সংসদের অধিবেশন কক্ষে প্রবেশ করেন।রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান সংসদে তার গ্যালারিতে বসে বাজেট অধিবেশন প্রত্যক্ষ করেন। বিভিন্ন বিদেশী দূতাবাসের কূটনীতিক, উন্নয়ন সহযোগী ও দাতা সংস্থার প্রতিনিধি, বিশিষ্ট আমন্ত্রিত ব্যক্তিবর্গ এবং ঊর্ধ্বতন বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তারাও বাজেট অধিবেশন প্রত্যক্ষ করেন।বিএনপির সংসদ সদস্যরা বাজেট অধিবেশনে যোগ দেয়নি।অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বাজেট বক্তৃতায় ২০০৯-১০ অর্থ বছরের সামগ্রিক বাজেট কাঠামো সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোকপাত করতে গিয়ে বলেন, সামপ্রতিক বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার প্রেক্ষাপটে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, নির্বাচনী অঙ্গীকার পূরণের জন্য কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জন এবং দারিদ্র্য নিরসণের লক্ষ্যকে উপজীব্য করে এ বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে।তিনি বলেন, সমৃদ্ধির পথে আমাদের অগ্রযাত্রা বেগবান করার অংশ হিসেবে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি, সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি, সুষম উন্নয়নের লক্ষ্যে আঞ্চলিক বৈষম্য হ্রাস, কৃষি উন্নয়নের ওপর অধিকতর গুরুত্বারোপ, বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের উপযোগী অবকাঠামো উন্নয়নকে বাজেটে অগাধিকার দেয়া হয়েছে।বিশ্ব মন্দার প্রেক্ষাপটে ২০০৯-’১০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ৫ দশমিক ৫ শতাংশ এবং বার্ষিক মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। চলতি ২০০৮-’০৯ অর্থবছর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৯ শতাংশ অর্জিত হবে বলে প্রাক্কলন করা হয়েছে।আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকারের প্রতি লক্ষ্য রেখে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি কৃষিখাতে বাজেটের ৭ দশমিক ৮ শতাংশ, স্থানীয় সরকার খাতে ২২ দশমিক ১ শতাংশ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ১৪ শতাংশ, যোগাযোগ খাতে ১৫ দশমিক ৭ শতাংশ এবং মানব সম্পদ খাতে ২৩ দশমিক ৫ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০০৯-১০ অর্থবছরের বাজেটে উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন মিলিয়ে সামগ্রিকভাবে সর্বাধিক বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে সামাজিক অবকাঠামো খাতে ৩২ দশমিক ৭ শতাংশ। এর মধ্যে সার্বিক মানব সম্পদ খাতে ১৮ দশমিক ৮ শতাংশ। ভৌত অবকাঠামো খাতে ২৭ দশমিক ৭ শতাংশ এবং এর মধ্যে সার্বিক কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন খাতে ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ, বৃহত্তর যোগাযোগ খাতে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ৩ দশমিক ৮ শতাংশ।তিনি বলেন, সাধারণ সেবা খাতে ২২ দশমিক ৬ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে ৯ দশমিক ৩ শতাংশ বরাদ্দ রয়েছে নতুন প্রস্তাবিত সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে (পিপিপি)। মন্দা মোকাবেলা এবং সমপ্রতি ঘোষিত পে-কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন ব্যয় পিপিপি’র বরাদ্দ দিয়ে মেটানো হবে।অর্থমন্ত্রী চলতি ২০০৮-’০৯ অর্থবছরের ৯৪ হাজার ১৪০ কোটি টাকার সংশোধিত বাজেটও পেশ করেন। ২০০৮-’০৯ অর্থবছরের প্রকৃত বাজেট ছিল ৯৯ হাজার ৯৬২ কোটি টাকা।তিনি বলেন, চলতি অর্থবছর মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৬৯ হাজার ৩৮২ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১১ দশমিক ৩ শতাংশ। আমদানি শুল্ক কাঠামো পুনর্বিন্যাস এবং বিশ্বমন্দার কারণে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য পূরণ হয়নি। সংশোধিত বাজেটে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা সামান্য কমিয়ে ৬৯ হাজার ১৮০ কোটি টাকায় নির্ধারণ করা হয়েছে, যা জিডিপির ১১ দশমিক ২ শতাংশ। সংশোধিত বাজেটে সামগ্রিক ঘাটতির অর্থায়ন জিডিপির ২ দশমিক ৩ শতাংশ অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে এবং ১ দশমিক ৮ শতাংশ বৈদেশিক উৎস্য থেকে নির্বাহ করা হবে।আবুল মাল আবদুল মুহিত বাজেট বক্তৃতায় ২০০৯-১০ অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব কার্যক্রমের কতিপয় মৌলিক লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য তুলে ধরে বলেন, এগুলো হচ্ছে সামাজিক সুবিচার ও ন্যায়নীতি প্রতিষ্ঠা করা, দেশীয় শিল্পকে ন্যায্য প্রতিরক্ষণ প্রদান, কৃষি ও গ্রামীণ অর্থনীতির বিকাশ সাধন এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের পৃষ্ঠপোষকতা করা, অধিকতর বিনিয়োগ আকর্ষণ ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, সামগ্রিক মানব সম্পদ উন্নয়ন, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে স্বয়ংক্রিয় কর রাজস্ব আহরণ প্রবর্তন এবং কর ভিত্তি সমপ্রসারণ ও প্রশাসনের দক্ষতা বাড়িয়ে রাজস্ব আয় বাড়ানো।ব্যক্তিশ্রেণীর করমুক্ত সীমা চলতি বাজেটের মতো অপরিবর্তিত রেখে প্রস্তাবিত বাজেটেও সর্বোচ্চ করমুক্ত সীমা ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা করা হয়েছে এবং সিনিয়র নাগরিকদের কর দেয়ার বয়সসীমা ৭০ থেকে ৬৫ বছরে নামিয়ে আনা হয়েছে। এছাড়া প্রস্তাবিত বাজেটে শর্তসাপেক্ষে অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করার সুযোগ, আমদানি শুল্ক হারে পরিবর্তন, জলবায়ু পরিবর্তনে বিশেষ বরাদ্দসহ এইচএসসি পাস তরুণ-তরণীদের কর্মসংস্থানে বিশেষ পাইলট প্রকল্পে বরাদ্দ রাখা হয়েছে।অর্থমন্ত্রী গভীর আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, নতুন বাজেট দিন বদলের সনদ বাস্তবায়নে এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন পূরণে সহায়ক হবে।অফুরন- কর্মস্পৃহা, গভীর দেশপ্রেম ও অন-র্নিহিত অসীম শক্তিকে কাজে লাগিয়ে এবং সকল সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করে উন্নত বাংলাদেশ গড়ার কাজে সকলের প্রতি এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এর মাধ্যমে বিশ্বের দরবারে এক গর্বিত জাতি হিসেবে পরিচিতি পাব।অর্থমন্ত্রী দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন, সরকার জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সকল বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে গন্তব্যে পৌঁছাতে সক্ষম হবে। তিনি বলেন, ‘ আমরা গড়ে তুলতে পারবো এমন এক বাংলাদেশ যেখানে থাকবে সমপ্রীতি আর ঐক্যের মেলবন্ধন। হতাশা ক্লিষ্টরা লাভ করবে স্বসি- আর সমৃদ্ধি, উত্তর প্রজন্ম পাবে আগামীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে দেশকে আরো সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেয়ার অনিঃশেষ অনুপ্রেরণা।’

Popular posts from this blog

THE CONSTITUTION OF THE BANGLADESH AWAMI LEAGUE

ইতিহাসবন্ধনী

ব্রিগেডিয়ার বারীর যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা