ক্রসফায়ারের বন্দিকে আগে স্নান করানো হতো, এখন সরাসরিই নেয়া হয় স্পটে

ক্রসফায়ারের বন্দিকে আগে স্নান করানো হতো, এখন সরাসরিই নেয়া হয় স্পটেগ্রিন সিগন্যালের পরই ভাগ্য নির্ধারিত হয় গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির

আমিনুর রহমান তাজ:
গত ১০ বছরে সরকারের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হেফাজতে মারা গেছে সাত শতাধিক মানুষ। এদের মধ্যে সিংহভাগই মারা গেছেন কথিত হার্ট অ্যাটাক, ক্রসফায়ার, এনকাউন্টার না হয় লাইন অব ফায়ারে। অপারেশন ক্লিনহার্টের সময় যে ৫০ জন মারা গেছেন তারা সবাই আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হেফাজতে নির্যাতনের শিকার হয়ে মারা গেছেন। এসকল মৃত্যুর ঘটনায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে যে প্রেস রিলিজগুলো ইস্যু করা হয়েছে তার সবগুলোর বক্তব্য প্রায় একরকমই। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বলা হয়েছে ,অস্ত্র উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির সহযোগীদের সঙ্গে গোলাগুলিতে মারা গেছে। সংস্থাগুলোও আত্মরক্ষার জন্য পাল্টা গুলি চালানোর যৌক্তিকতাও প্রেসরিলিজে তুলে ধরেছে।
আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর হেফাজতে কিভাবে মৃত্যু ঘটে তা নিয়ে মানবাধিকার সংস্থাগুলো বিভিন্ন সময়ে প্রকাশ্য ও গোপন অনুসন্ধান চালিয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও জনমনে কৌতুহল অবদমিত হয়নি। এসকল মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে জনমনে নানাবিধ প্রশ্ন রয়েছে।
সংশিস্নষ্ট সুত্রগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীসহ দেশের ৬৪ জেলায় ভয়ংকর সন্ত্রাসীদের প্রোফাইল রয়েছে সংস্থাগুলোর হাতে। সন্ত্রাসীর জীবন বৃত্তানৱসহ কৃত অপরাধ ও মামলার আদ্যোপানৱ বিবরণ রয়েছে ওই প্রোফাইলে। এই প্রোফাইলের সন্ত্রাসী যখন ধরা পড়ে তখন তার প্রোফাইল ঘেঁটে দেখেন সংস্থাগুলোর কর্মকর্তারা। প্রাথমিকভাবে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তথ্য আদায় করেন সংস্থার কর্মকর্তারা। যার নামে গড়ে দুইটি খুনের অভিযোগ রয়েছে এবং সন্ত্রাসী যদি পেশাদার খুনি হয় তবে তাকে ‘মাইনাস’ করার সিদ্ধানৱ নেয়া হয়। এই মাইনাস করার ব্যাপারে কর্মকর্তাদের বোর্ড মিটিং বসে। সেখানে সিদ্ধানৱ নেয়া হয় গ্রেফতারকৃত আসামির সর্বোচ্চ শাসিৱ কি হতে পারে। সিদ্ধানৱ হওয়ার পরই সরকারের উচ্চ পর্যায়ের ক্লিয়ারেন্স নেয়া হয়। সেখান থেকে গ্রিন সিগন্যাল আসার পরই শুরু হয় ক্রসফায়ারের প্রস্তুতি। সুত্রগুলো বলেছে, আগে গ্রেফতারকৃত আসামিকে গোছল করানো হতো। তওবাও পড়ানো হতো। এখন সেটা করা হয় না। গ্রেফতারকৃত আসামিকে কোথায় ক্রসফায়ার করা হবে তার স্থান নির্ধারণ করেন সংস্থার কর্তাব্যক্তিরা। বিশেষ করে নির্জন স্থানকে ক্রসফায়ারের জন্য উপযুক্ত স্থান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সাধারণত দিবাগত রাত ২টা থেকে ভোর ৪টার মধ্যে গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিকে ‘ক্রসফায়ারে হত্যা’ করা হয় করা হয়। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার শুটাররা সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করে ক্রসফায়ারের আসামিকে গাড়িতে ওঠান। তার চোখ বেঁধে ফেলা হয়। গ্রেফতারকৃত আসামি জানেন না তাকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তবে তিনি বুঝতে পারেন তার ভাগ্যে কি ঘটতে যাচ্ছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ক্রসফায়ারের আসামিকে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে দাঁড় করিয়ে গুলি করা হয়। গুলির পরেও শুটাররা বেশকিছু ফাঁকা গুলি ছোড়ে। এই গুলির শব্দে আশপাশের বাসিন্দারা মনে করেন প্রতিপক্ষের সঙ্গে গোলাগুলি হচ্ছে। পরে যেসব অস্ত্র উদ্ধার দেখানো হয় সেগুলো আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর সরবরাহকৃত অস্ত্র ও গুলি। এ পর্যনৱ ক্রসফায়ারের পর ঘটনাস্থল থেকে যত অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার দেখানো হয়েছে সেগুলো প্রায় একই ধরনের।
সুত্রগুলো আরো বলেছে, ক্রসফায়ার কিংবা এনকাউন্টারে নিহত ব্যক্তিদের ব্যাপারে ম্যাজিস্ট্র্রট যে নির্বাহি তদনৱ করেছেন তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে বিভিন্ন মহলে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নির্বাহি তদনেৱর নামে অভিযান পরিচালনাকারী দলের সদস্য এবং দু’একজন বহিরাগত ব্যক্তির সাক্ষ্য গ্রহণ করেই গুলির যৌক্তিকতা প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন ম্যাজিস্ট্রেটরা। তবে এ পর্যনৱ যেসব ব্যক্তি ক্রসফায়ার কিংবা এনকাইন্টারে মারা গেছেন তাদের বেশিরভাগই সন্ত্রাসী প্রকৃতির।

Popular posts from this blog

THE CONSTITUTION OF THE BANGLADESH AWAMI LEAGUE

ইতিহাসবন্ধনী

ব্রিগেডিয়ার বারীর যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা