প্রত্যাশা অনুযায়ী দৰিণ এশিয়ার অগ্রগতি হচ্ছে না ঃ প্রধানমন্ত্রী


প্রত্যাশা অনুযায়ী দৰিণ এশিয়ার অগ্রগতি হচ্ছে না : প্রধানমন্ত্রী সার্ক সেমিনার উদ্বোধন
।। বাসস ।।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দৰিণ এশিয়ার জনগণের কল্যাণসাধন ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ৰেত্রে সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর ওপর গুরম্নত্ব আরোপ করেছেন। গতকাল রবিবার ঢাকা শেরাটন হোটেলে দু’দিনব্যাপী সার্ক সেমিনারের উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ফলে এই অঞ্চলে গণতন্ত্রের সুবাতাস বইছে। জনগণ বিশেষ করে যুব সমাজের মধ্যে একটি উন্নত জীবন গড়ার আকাঙৰা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি বলেন, সার্ক দেশভুক্ত দেশগুলোতে প্রায় ১৪০ কোটি মানুষের বসবাস। এ বিপুল সংখ্যক জনগণের জীবনমান নিশ্চিত করতে আমাদের প্রাকৃতিক ও মানবসম্পদকে সমৃদ্ধ এবং অর্থনীতিকে করতে হবে অত্যনৱ শক্তিশালী। বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় আয়োজিত এই সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি। সভাপতিত্ব করেন বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেজ ওসমান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রকৃত সত্য হচ্ছে, আমাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী দৰিণ এশিয়ার অগ্রগতি হচ্ছে না। পাশাপাশি আসিয়ান, নাফটা এবং অন্যান্য আঞ্চলিক সংস্থা অনেক দূর এগিয়ে গেছে। এ অঞ্চলের সমৃদ্ধি ও উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে তিনি সম্মিলিত প্রয়াস নেয়ার আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশের জনগণ ও সরকার দেশের সার্বিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহারে সচেষ্ট রয়েছে। তিনি বলেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি গবেষণাকে উৎসাহিত করতে সরকার গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিশেষ অনুদান দিচ্ছে। বিজ্ঞানীদের জন্যও বিশেষ ফেলোশীপের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যোগাযোগ, ব্যবসা, স্বাস্থ্য, শিৰা ব্যবস্থাপনা এবং প্রশাসন সর্বোপরি আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের প্রতিটি সৱরে তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি মুখ্য ভূমিকা পালন করে। কর্মসংস্থানের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি একটি গুরম্নত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে বলে তিনি উলেস্নখ করেন।
বাংলাদেশ আণবিক শক্তি কমিশন বিগত ৩ দশক ধরে পরমাণু বিজ্ঞান প্রযুক্তি এবং অন্যান্য ৰেত্রে গবেষণা ও উন্নয়ন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে উলেস্নখ করে তিনি বলেন, বিভিন্ন ৰেত্রে উন্নয়নে পরমাণু শক্তি গবেষণা ও এর শানিৱপূর্ণ ব্যবহারের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বলেন, বর্তমানে গোটা বিশ্বে বিদ্যুৎ সঙ্কটের পরিপ্রেৰিতে প্রচলিত বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রক্রিয়ার পাশাপাশি আমাদেরকে পরমাণু বিদ্যুৎ উৎপাদনে মনোযোগী হতে হবে। তিনি এ ব্যাপারে তার সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার কথা বলেন।
তিনি বলেন, কৃষিৰেত্রে অভূতপূর্ব উন্নয়নের ফলে দেশে কৃষি উৎপাদন দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং জনগণের খাদ্যপ্রাপ্তিটাও বেড়েছে। দৰিণ এশিয়ার জনসংখ্যা ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় তিনি কৃষি খাতের উন্নয়নে আরো গুরম্নত্ব সহকারে কাজ করে যাওয়ার ওপর জোর দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দৰিণ এশিয়ার মধ্যে সার্কের সুফল জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে আমাদের মধ্যে আরো সংহতি সৃষ্টি করতে হবে। তিনি তার সরকারের সার্কের প্রতি দৃঢ় সমর্থন এবং বিশ্বাসের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে মন্ত্রিসভার সদস্যবৃন্দ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, বিভিন্ন কূটনৈতিক মিশনের সদস্যবৃন্দ এবং উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। ঔষধ শিল্পে চলমান মানসম্মত প্রক্রিয়াসমূহ রেডিয়েশন প্রসেসিং এবং টেকসই কৃষির জন্য কীট প্রতিরোধের শস্য এই তিনটি বিষয়ের ওপর সেমিনারে সার্ক দেশসমূহের বিশেষজ্ঞরা বক্তব্য উত্থাপন করবেন।
মার্কিন সহকারী
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাৰাৎ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও গ্যাস খাতে আরো বিনিয়োগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। সফররত যুক্তরাষ্ট্রের দৰিণ এবং মধ্য এশীয় বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্র মন্ত্রী রবার্ট ও বেস্নক গতকাল রবিবার রাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর সরকারি বাসভবন যমুনায় সাৰাৎকালে তিনি এই আহ্বান জানান।
সাৰাৎকালে তারা পারস্পরিক স্বার্থ-সংশিস্নষ্ট ব্যবসা-বাণিজ্যসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি কায়রো ইউনিভার্সিটিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার অবিস্মরণীয় ভাষণের কথা উলেস্নখ করে বলেন, তার এই ভাষণ বিশ্বে গণতন্ত্র ও শানিৱ প্রতিষ্ঠায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্টের ভাষণে বাংলাদেশকে প্রগতিশীল রাষ্ট্র হিসেবে আখ্যায়িত করায় ধন্যবাদ জানান। শেখ হাসিনা সংসদকে কার্যকর ও বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে সুসংহত করে দেশের অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখার ব্যাপারে তাঁর সরকারের অঙ্গীকারের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।
তিনি বাংলাদেশ থেকে ওষুধ, চামড়া এবং সিরামিক পণ্য আমদানি করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি অনুরোধ জানান।
শেখ হাসিনা ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে দেশের নদ-নদীগুলোকে খনন করার লৰ্যে তাঁর সরকারের পরিকল্পনার কথা উলেস্নখ করে বলেন, এর ফলে নদ-নদীর পানি ধারণ ৰমতা যেমন বৃদ্ধি পাবে, অন্যদিকে বিপুল পরিমাণ জমি উদ্ধার করাও সম্ভব হবে। দারিদ্র্যকে এ অঞ্চলের প্রধান শত্রম্ন আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য তাঁর সরকার ইতোমধ্যে ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে সম্মিলিত প্রয়াসের ওপর গুরম্নত্ব আরোপ করেন। তিনি সরকারি ও বেসরকারি অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে শিল্প-কারখানা স্থাপনের পরিকল্পনার কথাও উলেস্নখ করেন।
মানবাধিকার রৰায় তাঁর সরকারের অঙ্গীকারের কথা উলেস্নখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যে কোন হত্যাকাণ্ডসহ মানবাধিকার পরিপন্থী সকল কাজের ঘোর বিরোধী।
মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরার্ট ও বেস্নক সন্ত্রাস বিরোধী অভিযান পরিচালনায় বাংলাদেশে আইন-শৃংখলা বাহিনীকে প্রশিৰণ দেয়ার ব্যাপারে তার সরকারের আগ্রহের কথা ব্যক্ত করেন। তিনি মানবাধিকার রৰায় বাংলাদেশে কাউন্সিলিং প্রশিৰণ প্রদানেও আগ্রহ প্রকাশ করেন।
বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত জেমস মরিয়ার্টি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ ও সাবেক রাষ্ট্রদূত জিয়াউদ্দিন এসময় উপস্থিত ছিলেন।

Popular posts from this blog

THE CONSTITUTION OF THE BANGLADESH AWAMI LEAGUE

ইতিহাসবন্ধনী

ব্রিগেডিয়ার বারীর যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা