সুইডেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কার্ল বিল্ট ই.ইউ.-র সভাপতি হিসেবে তাঁর দেশের অগ্রাধিকারের একটা রূপরেখা তুলে ধরেন

EU.ই.ইউ. সম্পর্কে সুইডেনের মনোভাব বদলাচ্ছে
সুইডেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কার্ল বিল্ট ই.ইউ.-র সভাপতি হিসেবে তাঁর দেশের অগ্রাধিকারের একটা রূপরেখা তুলে ধরেন


১লা জুলাই থেকে সুইডেন ৬ মাসের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের সভাপতিত্ব গ্রহণ করছে৷ ইউরোপীয় সমন্বয় প্রক্রিয়ার প্রশ্নে সুইডেন তেমন একটা উৎসাহ দেখায় না৷ মূলত অর্থনৈতিক সঙ্কটের ফলে অবশ্য সেই মনোভাব বদলাচ্ছে৷
মানুষের প্রশ্ন
স্টকহোমের ই.ইউ. তথ্যকেন্দ্রের কর্মী সেসিলিয়া ম্যোলার আজ টেলিফোনে নানা প্রশ্নের জবাব দিয়ে থাকেন৷ একজন জানতে চাইলেন, ‘‘নির্বাচনের পর ইউরোপীয় পার্লামেন্টের অধিবেশন কবে থেকে শুরু হচ্ছে৷’’ এমন সুস্পষ্ট প্রশ্ন অবশ্য ঘনঘন শোনা যায় না৷ বেশীরভাগ মানুষই নানা দৈনন্দিন সমস্যা নিয়ে অভিযোগ করে৷ সেসিলিয়া ম্যোলার এমনই কিছু উদাহরণ তুলে ধরলেন, যেমন ‘‘বেলজিয়ামে আমার আত্মীয় সঙ্গে দেখা করতে গেলে কি সঙ্গে পাসপোর্ট নিয়ে যেতে হবে?’’ আরেকজনের প্রশ্ন, ‘‘আচ্ছা, গাড়ি আমদানি করতে হলে কী করতে হবে?’’ গতকালই এক ব্যক্তি ফোন করেছিলেন, যিনি সবে জার্মানি থেকে সুইডেনে এসে বসবাস করতে শুরু করেছেন৷ তাঁর অভিযোগ, কোনো কোম্পানি তাঁকে টেলিফোন সংযোগ দিতে রাজি হচ্ছে না৷ বলছে, কমপক্ষে ৮ মাস না থাকলে টেলিফোন সংযোগ পাওয়া যাবে না৷ তাঁর কাছে বিষয়টা অদ্ভুত লাগছে৷
বাড়তি আগ্রহ
গত বছর স্টকহোমের ই.ইউ. তথ্যকেন্দ্রের সেসিলিয়া ম্যোলার ও তাঁর ১৩ জন সহকর্মী প্রায় ৭,০০০ প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন৷ চলতি বছরের প্রথম ৫ মাসের মধ্যেই ই-মেল ও টেলিফোনের মাধ্যমে ৫,০০০ প্রশ্ন বা মন্তব্য জমা পড়েছে৷ এই বাড়তি আগ্রহ অবশ্য সুইডেনের সভাপতিত্বের দায়িত্বের সঙ্গে পুরোপুরি সম্পর্কিত নয়৷ আসলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন সম্পর্কে সামগ্রিকভাবে সুইডেনের মানুষের আগ্রহ বাড়ছে৷ তার অর্থ অবশ্য এই নয়, যে ই.ইউ. সম্পর্কে তাঁদের ধারণা আগের তুলনায় আরও ইতিবাচক হয়ে উঠেছে৷ ম্যোলার মনে করেন, ‘‘আগ্রহ বেড়ে চলেছে৷ কিন্তু আমি দেখতে পাচ্ছি, যে আগের মতো এমন সব মানুষ আর বেশী ফোন করছেন না, যাঁরা নীতিগতভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিরোধিতা করে থাকেন৷ অনেকেই সমালোচনা করছেন ঠিকই, কিন্তু আমি মনে করি এমন সুস্থ মনোভাবের প্রয়োজন রয়েছে৷’’
মনোভাবের পরিবর্তন
প্রায় ১৫ বছর আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগ দেওয়ার প্রশ্নে গণভোটে সামান্য ব্যবধানে ইতিবাচক ভোট পড়েছিল৷ ২০০৩ সালে অভিন্ন মুদ্রা ‘ইউরো’ চালু করার প্রশ্নে বিরোধীরাও সামান্য ব্যবধানে জিতে যান৷ সুইডেনে ইউরোপ সম্পর্কে এমন সংশয়ের মূল কারণ হল, কম জনসংখ্যার দেশ হিসেবে সেদেশের কণ্ঠ কতটা গুরুত্ব পাবে, তা নিয়ে অনেকের মনে সন্দেহ রয়েছে৷ কিন্তু অর্থনৈতিক সঙ্কটের ফলে সেই মনোভাব ক্রমশঃ বদলে যাচ্ছে৷ সুইডেনের সবুজ দল যেভাবে এতদিন ই.ইউ. ছেড়ে বেরিয়ে আসার পক্ষে সওয়াল করে যেত, সেই মনোভাবেও পরিবর্তন এসেছে৷ তাদের মূল আপত্তি হল, ইউরোপীয় ইউনিয়ন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ধাঁচে এক বিশাল শক্তিশালী রাষ্ট্রের মতো হওয়ার পথে চলেছে৷ সেই পথে না গিয়ে প্রকৃত অর্থে রাষ্ট্রজোট হিসেবেই এগিয়ে যাওয়া উচিত৷ কিছু ক্ষেত্রে ক্ষমতা জোটের হাতে তুলে দেওয়া যেতে পারে৷
স্টকহোমের কেন্দ্রস্থলে এক বাজারে মানুষের মনে ই.ইউ. সম্পর্কে নানা রকমের মন্তব্য শোনা গেল৷ কেউ বলছেন, ‘‘ই.ইউ. আমাদের জন্য বেশ ভালো৷ সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করলে এক ধরণের নিরাপত্তা বোধ করা যায়৷ অনেক দেশ মিলে একসঙ্গে কাজ করলে ভালো কিছু হাসিল করা যায়৷’’ আরেকজন বললেন, ‘‘আমার একেবারেই পছন্দ নয়৷ ই.ইউ.-তে ঢোকার পর থেকেই দেশে বেকারত্ব বেড়েই চলেছে৷ আগে যুবকেন্দ্রগুলির জন্য যে অর্থ বরাদ্দ করা হতো, তা কমে গেছে৷ আজ তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বেড়ে চলা অপরাধ প্রবণতা একটা বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে৷’’
বর্তমান জনমত সমীক্ষা অনুযায়ী সুইডেনের প্রায় ৪৩ শতাংশ মানুষ অভিন্ন মুদ্রা ইউরো চালু করার পক্ষে – যা গত এক বছরের তুলনায় প্রায় ১১ শতাংশ বেড়েছে৷ এর মধ্যে সুইডেনের মুদ্রার বিনিময় মূল্য ইউরোর তুলনায় প্রায় ১০ শতাংশ কমে গেছে৷

Popular posts from this blog

THE CONSTITUTION OF THE BANGLADESH AWAMI LEAGUE

ইতিহাসবন্ধনী

ব্রিগেডিয়ার বারীর যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা