ওঁরা বহাল তবিয়তে
ওঁরা বহাল তবিয়তে
০ বঙ্গবন্ধুর খুনীদের আইনজীবীরা বর্তমান সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আইন উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছেন
০ একইভাবে বর্তমান সরকারের আইন উপদেষ্টা বিএনপি জামায়াতের নেতা ও তারেক রহমানের আইনজীবী
০ বহাল তবিয়তে আছেন বিএনপি আমলের ৬ ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল ও ১৮ সহকারী এ্যাটর্নি জেনারেল
বিকাশ দত্ত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলার মৃতু্যদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের আইনজীবী বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় নিয়োগপ্রাপ্ত আইন উপদেষ্টা এখনও সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বহাল তবিয়তে রয়েছেন। ঠিক তেমনিভাবে বহাল তবিয়তে আছেন বেশ কয়েক ডেপুটি ও সহকারী এ্যাটর্নি জেনারেল। এর ফলে সরকারের গোপন তথ্য পাচার হয়ে যাচ্ছে। আইনগত দিক দিয়ে সরকার দুর্বল হয়ে পড়ছে।আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের দীর্ঘ ১১ মাসেও এ সমস্ত বিতর্কিত আইন উপদেষ্টা (লিগ্যাল এ্যাডভাইজার), সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দফতরে কাজ করে যাচ্ছেন। ঠিক একইভাবে কাজ করছেন বিএনপি-জামায়াত আমলে নিয়োগ পাওয়া ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল ও সহকারী এ্যাটর্নি জেনারেলগণ। বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকারের আদর্শ বিশ্বাস করে না অথচ তাঁরা সরকারের পক্ষ হয়ে কাজ করছেন।তাঁদের কাজের ফলে বিশেষ করে ব্যাংক, তিতাস গ্যাস, পেট্রোবাংলা, রাজউক, পাঠ্যপুস্তক বোর্ডে এখনও বিএনপি-জামায়াত ধ্যানধারণা কৌশলে ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে। কৌশলগত দিক থেকে সরকারকে ভালর চেয়ে বিপাকে পড়ার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এ সমস্ত প্রতিষ্ঠানে বিএনপি-জামায়াতের আইন উপদেষ্টা থাকাতে বিএনপি-জামায়াত লাভবান হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। তারা সরকার ক্ষতিগ্রস্ত হয় এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর খুনী লে. কর্নেল (অব) একেএম মহিউদ্দিন (ল্যান্সার) ও মেজর (অব) বজলুল হুদার আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন তিতাস, ডেসা, পেট্রো বাঙলা সহ ৫টি সরকারী মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের লিগ্যাল এ্যাডভাইজার। বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনী লে. কর্নেল (বরখাস্ত) সৈয়দ ফারুক রহমানের আইনজীবী খান সাইফুর রহমান হাউজিং সেটেলমেন্টের আইনজীবী। জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার আব্দুর রেজ্জাক বাংলাদেশ পাঠ্যপুস্তক বোর্ড ও পিডিপির লিগ্যাল এডভাইজার। জামায়াতের অপর নেতা এ্যাডভোকেট মোঃ সালেহ উদ্দিন হাউজিং সেটেলমেন্ট বিভাগের আইনজীবী। জামায়াত নেতা ব্যারিস্টার মুন্সী আহসান কবীর পল্লী বিদু্যত উন্নয়ন বোর্ড, তানজিমুল আলম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের লিগ্যাল এ্যাডভাইজার। বিএনপি নেত্রী ফেরদৌস আক্তার ওয়াহিদা ভূমি মন্ত্রণালয়ের আইনজীবী। উল্লেখ্য, এ্যাডভোকেট ফেরদৌস আক্তার বিতর্কিত ১৫ ফেব্রুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এমপি হয়েছিলেন। তীব্র আওয়ামী লীগবিরোধী ব্যারিস্টার নজরুল ইসলাম রাজউক, বিএনপির সাবেক এমপি খালেদা পান্না ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের আইনজীবী। সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতি নির্বাচনে বিএনপি প্যানেলের সম্পাদক প্রাথর্ী ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল সোনালী ব্যাংক, বেপজার লিগ্যাল এ্যাডভাইজার। বিএনপির আব্দুল কাদের তালুকদার, রাজউক, সাবেক স্পীকার ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকারের জুনিয়র ইদ্রিস খান সেকেন্ডারি এডুকেশন লিগ্যাল এ্যাডভাইজার। বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ক্রিকেট বোর্ড, বিএনপির ব্যারিস্টার আকবর আমিন বাবুল সোনালী ব্যাংক, বিএনপির মাহমুদা বেগম সোনালী ব্যাংক, খোন্দকার মাহবুব উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড এবং ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন তিতাস গ্যাসের লিগ্যাল এ্যাডভাইজার পদে রয়েছেন। তিনি খুনী মোস্তাকের সহযোগী ছিলেন। বিএনপি সরকার আমলে ডেপুটি এ্যাটর্নিগণ এখনও বহাল আছেন। এঁরা হচ্ছেন রাজিক আল জলিল, নাহিদ মাহতাব, নাহিদ ইয়াসমিন, জহিরুল হক জহির, এএসএম আব্দুল মবিন ও করুণাময় চাকমা। করুণাময় চাকমাকে বিএনপি আমলে নিয়োগ দেয়া হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় এসে তাকে বাদ দিলেও বর্তমান সরকারের সময় তাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের বিএনপির সাবেক এমপি আব্দুল ওয়াদুদ ভূঁইয়ার লোক। অপরদিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় সহকারী এ্যাটর্নি জেনারেল পদে যাদের নিয়োগ দেয়া হয়। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন এখনও কাজ করে যাচ্ছেন। এঁরা হলেন একেএম সালাউদ্দিন খান, নওয়াজীশ আরা বেগম এ এফএম জোবায়ের হোসেন, মাহফুজা বেগম, মিসেস রোনানাহারীন, মোঃ সোয়েব খান, মামুনুর রশীদ, সালমা রহমান, ফরিদা ইয়াসমিন, আব্দুল খালেক, একরামুল হক (টুটুল), এবিএম মাহবুব জিনাত হক, খন্দকার দিলুরুজ্জামান, সুচিরা হোসেন, ইসরাত জাহান, আলহাজ্ব মোঃ শহীদুল ইসলাম খান ও মোঃ মনিরুজ্জামান। অর্থাৎ বিএনপি আমলের ৬ জন ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত ১৮ জন সহকারী এ্যাটর্নি জেনারেল এখনও বহাল রয়েছেন।বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছিলেন সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবীরা। এসব আইনজীবী মনে করেন ৪ দলীয় জোট সরকারের বিদায়ের পর সরকারী দফতরে আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীরা নিয়োগ পাবেন। অথচ দীর্ঘ ১১ মাস পার হয়ে গেলেও এখনও তাঁরা দাপটের সঙ্গে কাজ করছেন। বিএনপি-জামায়াত এবং বঙ্গবন্ধুর খুনীদের আইনজীবীরা কখনও এ সরকারের স্বার্থ রক্ষা করবে না। উপরন্তু সরকারের গোপন তথ্যাদি পাচার করবে। এর ফলে আগামীতে সরকারকে বড় ধরনের ঝুঁকির মধ্যে পড়তে হবে। বেশ কিছু আইনজীবী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনকণ্ঠ প্রতিনিধিকে বলেছেন, যত দ্রুত সম্ভব বিতর্কিত লিগ্যাল এ্যাডভাইজার ও প্যানেল লইয়ারদের বাদ দিয়ে নতুন করে শূন্যস্থানে নিয়োগ দিতে হবে। তা না হলে সরকারের মারাত্মক ভুল হবে। ক্ষতিগ্রস্ত হবে সরকার পদে পদে। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সুপ্রীমকোর্টের বিশিষ্ট আইনজ্ঞগণ। দীর্ঘ ৩৪ বছর পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যা মামলার চূড়ান্ত রায় হয়েছে। আপীল বিভাগ কারাগারে আটক পাঁচ আসামির আপীল নাকচ করে দিয়েছে। হাইকোর্টের রায় বহাল রেখেছে। সেদিক থেকে হাইকোর্টের দেয়া ১২ জনের মৃতু্যদণ্ড এখন বহাল রয়েছে। রায়ের কার্যক্রম ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। অথচ খুনীদের আইনজীবীরা। বর্তমান সরকারের সময় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে লিগ্যাল এ্যাডভাইজার হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন। এর ক্ষতিকর দিক উপলব্ধির জন্য সরকারের মনোযোগ আকর্ষণ করেছেন বিশিষ্ট আইনজীবীরা।