মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানুন : নবীন সেনা কর্মকর্তাদের প্রধানমন্ত্রী বাসস

মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানুন : নবীন সেনা কর্মকর্তাদের প্রধানমন্ত্রী


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম সেনানিবাসে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টাল সেন্টারের এম আর চৌধুরী প্যারেড গ্রাউন্ডে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের একটি ইউনিটকে জাতীয় পতাকা প্রদান করেছেন -আইএসপিআর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আধুনিক সেনাবাহিনী গড়ে তুলতে তার সরকারের প্রতিশ্রম্নতির কথা উলেস্নখ করে বলেছেন, সব পর্যায়ের সদস্যদের পেশাদারিত্ব বৃদ্ধিতে বহুমুখী উন্নয়নে প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। প্রধানমন্ত্রী বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম সেনানিবাসস্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টাল সেন্টারের (ইবিআরসি) এমআর চৌধুরী প্যারেড গ্রাউন্ডে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের চারটি ইউনিটকে জাতীয় পতাকা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণকালে এ কথা বলেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে সবচেয়ে বড় ও সুসংগঠিত বাহিনী হিসেবে উলেস্নখ করে তিনি বলেন, এ বাহিনীর আধুনিকায়নে বর্তমান সরকার প্রতিশ্রম্নতিবদ্ধ। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী শুধু দেশ রড়্গায় নয়, দেশ গঠনেও গুরম্নত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী যুদ্ধবিধ্বসত্ম দেশে আর্থিক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধু একটি সার্বভৌম ও শক্তিশালী সামরিক বাহিনী গড়ে তোলার জন্য ব্যাপক পদড়্গেপ নিয়েছিলেন। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি স্বদেশের মাটিতে পা দিয়েই তিনি ভারতের মিত্রবাহিনীকে নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ জানান। পৃথিবীর ইতিহাসে আর একটি উদাহরণও খুুঁজে পাওয়া যাবে না, যেখানে যুদ্ধ জয়ের পর বিদেশি বাহিনীকে এতো অল্প সময়ে ফিরিয়ে নেয়া হয়েছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর যৌক্তিক দাবি মেনে নিয়ে দুই মাসের মধ্যে ১৯৭২ সালের মার্চ মাসেই ভারতীয় মিত্রবাহিনী স্বদেশে ফিরে যায়। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু সামরিক বাহিনীর প্রশিড়্গণের জন্য প্রথমেই প্রতিষ্ঠা করেন মিলিটারি একাডেমি, কম্বাইন্ড আর্মস স্কুল, প্রত্যেক আর্মস সার্ভিসের জন্য নিজস্ব সেন্টার ও স্কুলসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান। বিদেশ থেকে সংগ্রহ করেছিলেন আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র, যুদ্ধবিমান, ট্যাঙ্ক, কামান ইত্যাদি। এরই ধারাবাহিকতায় আজ একটি চৌকস ও পেশাদার সামরিক বাহিনী বাংলাদেশের স্বাধীনতা রড়্গায় অতন্দ্র প্রহরীর মতো কাজ করে চলেছে। প্রধানমন্ত্রী নতুন প্রজন্মের সেনানীদের উদ্দেশে বলেন, ‘যে ত্যাগ ও তিতিড়্গার বিনিময়ে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের অভ্যুদয় হয়েছে তা আপনাদের সঠিকভাবে জানতে হবে, কারণ অতীতে দেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অনেক বিকৃতি হয়েছে। পাঠ্যপুসত্মকে অসত্য তথ্য দেয়া হয়েছে যা আমাদের দেশের শিশু-কিশোর ও আপনাদের মতো তরম্নণ প্রজন্মকে বিভ্রানত্ম করেছে। অনেক সত্য গোপন করা হয়েছে, আবার অনেক অসত্যকে সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার অপচেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু দৃঢ় আস্থা ব্যক্ত করে বলেন, সঠিক ইতিহাস একদিন প্রতিষ্ঠিত হবেই।সেনাবাহিনীর সদস্যদের নিজ উদ্যোগে সঠিক ইতিহাস জানার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এতে দেশের জন্য সত্যিকারের ভালোবাসা সৃষ্টি হবে, দেশের উন্নয়নে ত্যাগের মানসিকতা তৈরি হবে। প্রবীণদের প্রতি তিনি নতুন প্রজন্মের কাছে ত্যাগ ও সুদীর্ঘ সংগ্রামের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরার আহ্বান জানান।প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে দেশের সৃষ্টির সংগ্রামে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের নাম, সে দেশের জাতীয় পতাকা বহন করার যোগ্যতা অর্জন করা যে কোনো ইউনিটের জন্য একটি বিরল সম্মান ও গৌরবের বিষয়।তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের শাহাদতবরণকারী বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহি মোসত্মফা কামাল ও বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহি হামিদুর রহমানসহ সব শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।শেখ হাসিনা বলেন, সেনাবাহিনী বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সুসংগঠিত বাহিনী। এখানে বাংলাদেশের সব অঞ্চল, শ্রেণী এবং সামাজিক সত্মরের প্রতিনিধিত্ব আছে। ধর্ম, বর্ণ ভুলে গিয়ে শুধু সৈনিক পরিচয়ে এখানে সবাই একতাবদ্ধ হয়েছে। এ সুন্দর সহাবস্থান অবশ্যই প্রশংসনীয়। নিয়ম ও শৃঙ্খলার প্রতি আপনাদের যে শ্রদ্ধা তা দেখে সবাই উদ্বুদ্ধ হোক, এটা আমার কামনা। ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর সেনাবাহিনীর জন্য তার সরকারের নেয়া বিভিন্ন ব্যবস্থার কথা উলেস্নখ করে তিনি বলেন, ওই সময় উন্নত প্রশিড়্গণ, অস্ত্রশস্ত্রের আধুনিকায়ন, সেনাবাহিনীর লোকবল বৃদ্ধি, সব সত্মরের সৈনিকদের আবাসনের সংখ্যা বৃদ্ধি, সামরিক হাসপাতালগুলোর কাছে আত্মীয়ের চিকিৎসা সুবিধা চালু, সেনানিবাসগুলোর অভ্যনত্মরে রাসত্মা-ঘাটের উন্নয়নসহ অবকাঠামো উন্নয়ন, আপামর জনগণের খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে দুপুরে রম্নটির পরিবর্তে ভাত চালু করা, চিত্তবিনোদন ভাতা ও টিফিন ভাতা চালু ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের উন্নয়নমূলক কাজ করা হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে সেই ধারা অব্যাহত থাকেনি। কিন্তু বর্তমান সরকার আধুনিক সেনাবাহিনী গড়ে তুলতে প্রতিশ্রম্নতিবদ্ধ। ইতিমধ্যেই কল্যাণমূলক উন্নয়নের নিদর্শন আপনারা দেখেছেন। আপনাদের রেশন বৃদ্ধি করে তিন বাহিনীর মধ্যে ভারসাম্য আনা হয়েছে। জাতিসংঘ মিশনগুলোয় আপনাদের অংশগ্রহণ আরো বাড়ানোর জন্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চলছে। এ মাসের ১ তারিখ থেকে অল্প টাকায় এবং কিছুড়্গেত্রে বিনামূল্যে বিদেশ থেকে সৈনিকদের পরিবার পরিজনের সঙ্গে কথা বলার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সব পর্যায়ের সদস্যদের পেশাদারিত্ব বৃদ্ধিতে বহুমুখী উন্নয়নে আমাদের প্রচেষ্টা আগামীতেও অব্যাহত থাকবে ইনশাআলস্নাহ। শেখ হাসিনা তার ভাষণের শুরম্নতেই জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।এর আগে প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রাম সেনানিবাস হেলিপ্যাডে এসে পৌঁছলে তাকে অভ্যর্থনা জানান সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল মোহাম্মদ আবদুল মুবীন, চট্টগ্রাম এরিয়া কমান্ডার ও ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল মোহাম্মদ শামিম চৌধুরী ও ইবিআরসির কমান্ড্যান্ট ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবু সোহেল।প্রধানমন্ত্রী মোটর শোভাযাত্রা সহকারে প্যারেড গ্রাউন্ডে এসে পৌঁছান। তিনি জাতীয় পতাকা প্রদান উপলড়্গে আয়োজিত মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন এবং মার্চপাস্টে সালাম গ্রহণ করেন। পরে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে ইস্ট বেঙ্গলের চারটি ইউনিট ২৮ ইস্ট বেঙ্গল, ২৯ ইস্ট বেঙ্গল, ৩০ ইস্ট বেঙ্গল ও ৩২ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টকে তাদের গৌরবোজ্জ্বল কর্মকা- ও সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ জাতীয় পতাকা প্রদান করেন। লে. কর্নেল আবদুল কাইয়ুম মোলস্না এ মনোজ্ঞ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন।পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘অজানা শহীদ সমাধি’তে পুষ্পসত্মবক অর্পণ করে একাত্তরের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে শাহাদতবরণকারী ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সদস্যদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং সেখানে একটি গাছের চারা রোপণ করেন। প্রধানমন্ত্রী ইবিআরসি কনফারেন্স হলে এক ফটোসেশনে অংশগ্রহণ করেন। তিনি সেখানে পরিদর্শন বইয়ে স্বাড়্গর করেন।এরপর ইবিআরসি কনফারেন্স রম্নমে অনুষ্ঠিত দরবারে উপস্থিত সেনা কর্মকর্তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী ভাষণ দেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৮ম টাইগার্স পুনর্মিলনী-২০০৯ উপলড়্গে আয়োজিত প্রীতিভোজে অংশগ্রহণ করেন।এ সময় অন্যান্যের মধ্যে মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টারা, প্রতিমন্ত্রী, কূটনীতিকরা, স্থানীয় সংসদ সদস্যরা, নৌবাহিনী প্রধান ভাইস অ্যাডমিরাল জেড ইউ আহমেদ ও প্রতিরড়্গা সচিব কামরম্নল হাসানসহ ঊর্ধ্বতন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা, বীরশ্রেষ্ঠ ও শহীদ পরিবারের সদস্য এবং বিপুলসংখ্যক অবসরপ্রাপ্ত ও কর্মরত সৈনিক উপস্থিত ছিলেন।

Popular posts from this blog

THE CONSTITUTION OF THE BANGLADESH AWAMI LEAGUE

ইতিহাসবন্ধনী

Justice order of the day