৭৫ থেকে ৯৬ বঙ্গবন্ধুর খুনিরা যেভাবে রাষ্ট্রীয় আনুকূল্য পান! বঙ্গবন্ধুর খুনিদের লিবিয়া নিয়ে যায় বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা শমসের মবিন চৌধুরী
৭৫ থেকে ৯৬ বঙ্গবন্ধুর খুনিরা যেভাবে রাষ্ট্রীয় আনুকূল্য পান !
বঙ্গবন্ধুর খুনিদের লিবিয়া নিয়ে যায় বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা শমসের মবিন চৌধুরী
জসীম উদ্দিন
জসীম উদ্দিন
রাষ্ট্রদূত থাকাবস্থায় ওয়াশিংটনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের একটি অনুষ্ঠানে প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত শমসের মোবিন চৌধুরী ও মিসেস চৌধুরীকে দেখা যাচ্ছে।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর ৩৪ বছরের ইতিহাসে আওয়ামী লীগ ছাড়া সব সরকারই বঙ্গবন্ধুর খুনিদের রাষ্ট্রীয়ভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করেছে। বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোতে চাকরি দিয়ে খুনিদের দেশের প্রতিনিধিত্ব করার বিরল সমমান দিয়েছেন জিয়াউর রহমান, এরশাদ ও খালেদা জিয়ার সরকার। এই তিন সরকারের আমলে দূতাবাসগুলোতে চাকরির পাশাপাশি পদোন্নতি, ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগ, রাজনীতিতে অংশগ্রহণ, দল গঠন ও সংসদ সদস্য হওয়ার সুযোগও পেয়েছে ইতিহাসের নৃশংসতম হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের প্রায় সবাই। এভাবে হত্যাকারীরা রাষ্ট্রীয় আনুকূল্য পাওয়ায় বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারও বিলম্বিত হয়েছে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের সময় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কর্মরত এবং পরবর্তীতে রাষ্টদূত ও পররাষ্ট্র সচিব হওয়া বেশ কয়েকজন কূটনীতিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ’৭৫-এর ৩ নভেম্বর জেল হত্যার পর কিভাবে রাষ্ট্রযন্ত্র খুনিদের দেশত্যাগের সুযোগ দেয় এবং চাকরি দিয়ে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করে। খুনিদের বাংলাদেশের প্রতিনিধি বানিয়ে দূতাবাসগুলোতে চাকরি দেয়াকে এক লজ্জাজনক অধ্যায় বলে অভিহিত করেছেন সাবেক কূটনীতিকরা। তারা জানান, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দূতাবাসে চাকরি দেয়ার বিষয়টি পোল্যান্ডসহ কয়েকটি দেশ মেনেও নেয়নি। কোন কোন কর্মকর্তা নানাভাবে এ ঘটনার প্রতিবাদ করেছেন।
সাবেক কূটনীতিকরা জানান, ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর জেলহত্যার পর ৪ নভেম্বর বঙ্গবন্ধুর খুনিদের একটি বিশেষ বিমানে রেঙ্গুন হয়ে ব্যাংকক পাঠিয়ে দেয়া হয়। সেখান থেকে পাকিসতান সরকারের দেয়া একটি বিমানে তাদের লিবিয়া নিয়ে যাওয়া হয়। লিবিয়ার প্রেসিডেন্ট মুয়ামমার গাদ্দাফি তাদের সাদরে গ্রহণ করেন। তারা বলেন, বাংলাদেশ থেকে তাদের সঙ্গে যান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন পরিচালক, জোট আমলের পররাষ্ট্র সচিব ও রাষ্ট্রদূত এবং বর্তমানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা শমসের মবিন চৌধুরী। সব খুনিকে একসঙ্গে লিবিয়ায় রাখা নিরাপদ নয় মনে করে ১৯৭৬ সালের ৮ জুন সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান তাদের ১২ জনকে বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দেয়ার ব্যবস্থা করেন।
কয়েকজন সাবেক পররাষ্ট্র সচিব বলেন, খুনিরা লিবিয়াতে বসে জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধেও নানা ষড়যন্ত্র করতে পারে এই আশংকা থেকেই তাদের চাকরি দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে দেয়া হয়। তবে হত্যাকাণ্ডে নেতৃত্বদানকারী লে. কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান ও লে. কর্নেল খন্দকার আব্দুর রশীদ চাকরিতে যোগ দিতে রাজি হননি। তারা জিয়া সরকার ও লিবিয়ার প্রেসিডেন্ট গাদ্দাফির সঙ্গে সমঝোতা করে সেখানে ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু করেন।
জিয়া সরকার যাদেরকে চাকরি দেয় তাদের মধ্যে লে. কর্নেল শরিফুল হক ডালিমকে চীন দূতাবাসে প্রথম সচিব, লে. কর্নেল আজিজ পাশাকে আর্জেন্টিনায় প্রথম সচিব, মেজর একেএম মহিউদ্দিন আহমেদকে আলজেরিয়ায় প্রথম সচিব, মেজর বজলুল হুদাকে পাকিসতানে দ্বিতীয় সচিব, লে. কর্নেল শাহরিয়ার রশিদকে ইন্দোনেশিয়ায় দ্বিতীয় সচিব, মেজর রাশেদ চৌধুরীকে সৌদি আরবে দ্বিতীয় সচিব, মেজর নূর চৌধুরীকে ইরানে দ্বিতীয় সচিব, মেজর শরিফুল হোসেনকে কুয়েতে দ্বিতীয় সচিব, কর্নেল কিসমত হাশেমকে আবুধাবিতে তৃতীয় সচিব, লে. খায়রুজ্জামানকে মিসরে তৃতীয় সচিব, লে. নাজমুল হোসেনকে কানাডায় তৃতীয় সচিব ও ক্যাপ্টেন আবদুল মাজেদকে সেনেগালে তৃতীয় সচিব হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয়। ঢাকা থেকে শমসের মবিন চৌধুরী তাদের জন্য পাসপোর্ট তৈরী করে নিয়োগপত্র, ব্যাগ, জিনিসপত্র, নগদ অর্থসহ লিবিয়া যান। আর লিবিয়ায় খুনিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সব কিছু প্রসতুত করেন সেনা কর্মকর্তা নূরুল ইসলাম শিশু।
পরবর্তীতে এরশাদ সরকার ডালিমকে বেইজিংয়ে নিয়োগ দিতে গিয়ে না পেরে পরে হংকংয়ে ভারপ্রাপ্ত মিশন প্রধান হিসাবে নিয়োগ দেন। পোল্যান্ডে ডালিমকে একই পদে নিয়োগ দিলেও সেদেশের সরকার তাকে গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানায়। এরপর লন্ডনে এরশাদ ও ডালিমের মধ্যে এক বৈঠকের ভিত্তিতে তাকে কেনিয়াতে হাইকমিশনার নিয়োগ দেয়া হয়। অন্যদের মধ্যে পরবর্তীতে আজিজ পাশা ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও রোমেও দায়িত্ব পালন করেন। একেএম মহিউদ্দিন আহমেদ সৌদি আরবের মিশন উপ-প্রধান হিসাবে নিয়োগ পান। রাষ্ট্রদূত সিএম শফি সামীর দাবি অনুযায়ী তার বিরোধিতার কারণে এবং বেনজির ভুট্টো গ্রহণ করতে রাজি না হওয়ায় একই পদে মহিউদ্দিনকে করাচিতে নিয়োগ দিতে পারেনি এরশাদ। রাশেদ চৌধুরী টোকিও’র কাউন্সিলর হন। নূর চৌধুরীকে এরশাদ আমলে আলজেরিয়ায় কাউন্সিলর হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয়। এর আগে তিনি ব্রাজিলে চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। শরিফুল হোসেন ওমানে চার্জ দ্যা অ্যাফেয়ার্স নিযুক্ত হন। অন্যরাও পদোন্নতি পান। তাদের জন্য পদোন্নতি, সুযোগ-সুবিধা সব অবারিত ছিল।
শুধু তাই নয়, এসব খুনি এরশাদ ও খালেদা জিয়া সরকারের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় রাজনীতিতে অংশ নেন এবং রাজনৈতিক দল গঠন করেন। শাহরিয়ার রশিদ ও বজলুল হুদা ১৯৮০ সালের পর প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক শক্তি নামের একটি দল গঠন করেন। ১৯৮৭ সালে ফারুক রহমান ও আব্দুর রশিদ গঠন করেন ফ্রিডম পার্টি। পরে বজলুল হুদাও ফ্রিডম পার্টিতে যোগ দে। এর আগে ১৯৮৬ সালে এরশাদের সঙ্গে রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচন করেন লে. কর্নেল ফারুক। বজলুল হুদা ফ্রিডম পার্টির হয়ে ১৯৮৮’র নির্বাচনে মেহেরপুর থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। আর ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রম্নয়ারি খালেদা জিয়ার ভোটার বিহীন এক তরফা নির্বাচনে কুমিল্লা থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন লে. কর্নেল রশিদ। এভাবে এরশাদ ও খালেদা জিয়ার আমলে খুনিরা সংসদে বসেন।
সাবেক কূটনীতিকরা আরো জানান, খুনিরা বিভিন্ন দেশে চাকরিকালীন নানা ধরনের অনিয়ম, বিশৃংখলা ও চাকরি বিধি লংঘন করে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেন। এদের মধ্যে ডালিম নানা জায়গায় অনেক অঘটনের জন্ম দেন। তাকে পোল্যান্ড সরকার গ্রহণ না করায় সে নিয়োগের আদেশ না থাকা সত্ত্বেও লন্ডন চলে আসে। এরশাদ লন্ডন সফরের সময় হিথ্রো বিমান বন্দরের এলকক এন্ড ব্রাউন স্যুটে এবং পরবর্তীতে হোটেলে তার সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেন। অথচ সে সময় তার কোন নিয়োগপত্র ছিল না। কেনিয়া সরকার ডালিমের অকূটনীতিসুলভ আচরণে অসন্তুষ্ট হয়ে তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকবার বাংলাদেশ সরকারের কাছে অভিযোগ করে। ডালিম চীনে কর্মরত অবস্থায় সেখানকার রাষ্ট্রদূত আব্দুল মমিনকেও নানাভাবে হেনসতা করেন। বজলুল হুদা পাকিসতানে দূতাবাসের কর্মচারিদের মারধর করতেন। আজিজ পাশা তুরস্কের কাউন্সিলর থাকাকালীন তৎকালীন রাষ্ট্রদূতকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে একটি কক্ষে আটকে রাখেন। ওই রাষ্ট্রদূত তখন ঢাকায় এসওএস বা জরুরি উদ্ধার বার্তা পাঠিয়ে উদ্ধার পান। বজলুল হুদা ’৯৭ সালে ব্যাংককে একটি সুপারস্টোরে চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়েন।
প্রসঙ্গত বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়া শেষে গত ১৯ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্ট খুনিদের আপিলের রায়ে ১২ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত লে. কর্নেল (বরখাসত) সৈয়দ ফারুক রহমান, লে.কর্নেল (অবঃ) সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, লে. কর্নেল (অবঃ) মহিউদ্দিন আহমেমদ (আর্টিলারি), মেজর (অবঃ) এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেমদ (ল্যান্সার) ও মেজর (অব.) বজলুল হুদা বর্তমানে কারাগারে আটক রয়েছেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অপর ৬ জন পলাতক রয়েছেন। এরা হচ্ছেন লে. কর্নেল (অব.) এসএইচ এমবি নূর চৌধুরী, লে. কর্নেল (অব.) শরীফুল হক ডালিম, লে. কর্নেল (অব.) খন্দকার আব্দুর রশিদ, লে. কর্নেল (অব.) এম এ রাশেদ চৌধুরী, ক্যাপ্টেন (অব.) আব্দুল মাজেদ ও রিসালদার মোসলেম উদ্দিন। এছাড়া লে. কর্নেল (অবঃ) মোঃ আজিজ পাশা পলাতক থাকা অবস্থায় ২০০২ সালে জিম্বাবুয়েতে মারা যান।
তৎকালীন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও সাবেক পররাষ্ট্র সচিব সিএম শফি সামী বলেন, খুনিদের এভাবে রাষ্ট্রীয় আনুকূল্য দেয়া, দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে দেয়া ছিল জাতির জন্য এক লজ্জাজনক অধ্যায়। এ ঘটনাগুলো পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে ভয়াবহ নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার জন্ম দেয়। আনোয়ার সাদাত বেঁচে থাকাকালীন একজন রাষ্ট্রদূত পরিচয়পত্র পেশ করতে গেলে তাকে প্রকাশ্যেই তিনি বলেছিলেন, আমার ট্যাংক দিয়েই তোমরা আমার বন্ধুকে হত্যা করেছো। শফি সামী বলেন, ১৯৮৭ থেকে ’৯১ সাল সময়কালে একেএম মহিউদ্দিনকে পাকিসতানের করাচিতে ডেপুটি হাইকমিশনার নিয়োগ দেয়া হলে আমি তাকে মেনে নেইনি। পাকিসতান সরকারকে জানিয়েই তিনি একেএম মহিউদ্দিনকে প্রত্যাখ্যান করেন বলে জানান। এছাড়া ’৯২-’৯৩ সালে চীনের রাষ্ট্রদূত থাকাকালেও রাশেদ চৌধুরীকে উপ-হাইকমিশনার হিসাবে নিয়োগ প্রত্যাখ্যান করেছিলেন বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে সেভাবে সংগঠিত প্রতিবাদ না হলেও অনেকে বিভিন্ন উপায়ে প্রতিবাদ করেছিলেন।
’৭৫ সালে লন্ডনে ডেপুটি হাইকমিশনার এবং সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ফারুক চৌধুরী বলেন, হত্যাকারীদের বিভিন্ন দূতাবাসে নিয়োগ অনেকে মেনে নিতে না পারলেও তাদের কিছু করার ছিল না। কেননা সামরিক শাসকরাই তাদের নিয়োগ দেয়, সব নিয়ম-কানুন তাদের হাতে। আবুধাবীতে কর্মরত থাকার সময় আমার অধীনে অভিযুক্ত কিসমত হাসেমকে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। তিনি বলেন, এটা ছিল একটি অসহনীয় ঘটনা। কিন্তু রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তা হিসাবে রাষ্ট্রের নিয়োগের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা যায় না। তিনি বলেন, নিয়োগের আদেশগুলো আসতো চীফ মার্শাল এডমিনিস্ট্রেটরের অফিস থেকে। তাই আদেশগুলো আমি কখনোই খুঁজে পাইনি।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সময় ফ্রান্সে কর্মরত সাবেক পররাষ্ট্র সচিব এটিএম নজরুল ইসলাম বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনেক মেধাবি কর্মকর্তার ওপরে খুনিদের সরাসরি কাউন্সিলর, প্রথম সচিবের মত উচ্চপদে নিয়োগ দেন জিয়াউর রহমান। এরশাদ সরকারও তাদেরকে পুরস্কৃত করে। তিনি একেএম মহিউদ্দিন, শরফুল হোসেন, আজিজ পাশাকে ঢাকায় নিয়ে আসেন এবং অন্যদের উচ্চতর পদে পদোন্নতি দেন।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সময় সুইজারল্যান্ডের জেনেভা মিশনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান এবং পরবর্তীতে সচিব পদমর্যাদায় ফরেন সার্ভিস একাডেমীর প্রিন্সিপ্যাল মহিউদ্দিন আহমদ এ বিষয়ে বলেন, জিয়া সরকার প্রাথমিকভাবে খুনিদের লিবিয়াতে নিয়ে গেলেও ষড়যন্ত্রের আশংকায় তাদের সবাইকে সেখানে একসঙ্গে রাখার সাহস পায়নি। তখন তাদেরকে বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দেয়। তিনি বলেন, শমসের মবিন চৌধুরী, মেজর জেনারেল নূরুল ইসলাম শিশু ঢাকা থেকে সবকিছু তদারক করেন। নূরুল ইসলাম শিশু এখন যুক্তরাষ্ট্রের ওকলাহোমাতে বাস করেন। এই দুইজন সেনাবাহিনীতে জিয়ার ঘনিষ্ঠ ছিলেন, সহকর্মী হিসাবে খুনিদেরও চিনতেন। তিনি জানান, শমসের মবিনকে আহত মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে বঙ্গবন্ধুই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চাকরি দেন। ’৭৫-এ শমসের মবিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিচালক ছিলেন।
সাবেক রাষ্ট্রদূত মোসতফা ফারুক মোহামমদ এমপি ’৭৫-এ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কর্মরত ছিলেন। তিনি বলেন, এক অস্বসিতকর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে তখন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা সময় পার করেছেন। অনেকে অফিসে আসতেন না। তেমন কোন কাজকর্ম করতেন না কেউ। অল্প কয়েকজন কর্মকর্তা সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতেন। তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে যোগাযোগ ছাড়াই খুনিদের বিদেশের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দেয়া হয়েছে। তিনি জানান, অনেক দেশ তাদের নিয়োগ মেনে নিলেও ভিয়েতনাম, পোল্যান্ড কাউকে মেনে নিয়নি। এমনকি পরবর্তীতে পাকিসতানও খুনিদের একজনকে গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানায়।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের সময় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কর্মরত এবং পরবর্তীতে রাষ্টদূত ও পররাষ্ট্র সচিব হওয়া বেশ কয়েকজন কূটনীতিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ’৭৫-এর ৩ নভেম্বর জেল হত্যার পর কিভাবে রাষ্ট্রযন্ত্র খুনিদের দেশত্যাগের সুযোগ দেয় এবং চাকরি দিয়ে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করে। খুনিদের বাংলাদেশের প্রতিনিধি বানিয়ে দূতাবাসগুলোতে চাকরি দেয়াকে এক লজ্জাজনক অধ্যায় বলে অভিহিত করেছেন সাবেক কূটনীতিকরা। তারা জানান, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দূতাবাসে চাকরি দেয়ার বিষয়টি পোল্যান্ডসহ কয়েকটি দেশ মেনেও নেয়নি। কোন কোন কর্মকর্তা নানাভাবে এ ঘটনার প্রতিবাদ করেছেন।
সাবেক কূটনীতিকরা জানান, ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর জেলহত্যার পর ৪ নভেম্বর বঙ্গবন্ধুর খুনিদের একটি বিশেষ বিমানে রেঙ্গুন হয়ে ব্যাংকক পাঠিয়ে দেয়া হয়। সেখান থেকে পাকিসতান সরকারের দেয়া একটি বিমানে তাদের লিবিয়া নিয়ে যাওয়া হয়। লিবিয়ার প্রেসিডেন্ট মুয়ামমার গাদ্দাফি তাদের সাদরে গ্রহণ করেন। তারা বলেন, বাংলাদেশ থেকে তাদের সঙ্গে যান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন পরিচালক, জোট আমলের পররাষ্ট্র সচিব ও রাষ্ট্রদূত এবং বর্তমানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা শমসের মবিন চৌধুরী। সব খুনিকে একসঙ্গে লিবিয়ায় রাখা নিরাপদ নয় মনে করে ১৯৭৬ সালের ৮ জুন সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান তাদের ১২ জনকে বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দেয়ার ব্যবস্থা করেন।
কয়েকজন সাবেক পররাষ্ট্র সচিব বলেন, খুনিরা লিবিয়াতে বসে জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধেও নানা ষড়যন্ত্র করতে পারে এই আশংকা থেকেই তাদের চাকরি দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে দেয়া হয়। তবে হত্যাকাণ্ডে নেতৃত্বদানকারী লে. কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান ও লে. কর্নেল খন্দকার আব্দুর রশীদ চাকরিতে যোগ দিতে রাজি হননি। তারা জিয়া সরকার ও লিবিয়ার প্রেসিডেন্ট গাদ্দাফির সঙ্গে সমঝোতা করে সেখানে ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু করেন।
জিয়া সরকার যাদেরকে চাকরি দেয় তাদের মধ্যে লে. কর্নেল শরিফুল হক ডালিমকে চীন দূতাবাসে প্রথম সচিব, লে. কর্নেল আজিজ পাশাকে আর্জেন্টিনায় প্রথম সচিব, মেজর একেএম মহিউদ্দিন আহমেদকে আলজেরিয়ায় প্রথম সচিব, মেজর বজলুল হুদাকে পাকিসতানে দ্বিতীয় সচিব, লে. কর্নেল শাহরিয়ার রশিদকে ইন্দোনেশিয়ায় দ্বিতীয় সচিব, মেজর রাশেদ চৌধুরীকে সৌদি আরবে দ্বিতীয় সচিব, মেজর নূর চৌধুরীকে ইরানে দ্বিতীয় সচিব, মেজর শরিফুল হোসেনকে কুয়েতে দ্বিতীয় সচিব, কর্নেল কিসমত হাশেমকে আবুধাবিতে তৃতীয় সচিব, লে. খায়রুজ্জামানকে মিসরে তৃতীয় সচিব, লে. নাজমুল হোসেনকে কানাডায় তৃতীয় সচিব ও ক্যাপ্টেন আবদুল মাজেদকে সেনেগালে তৃতীয় সচিব হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয়। ঢাকা থেকে শমসের মবিন চৌধুরী তাদের জন্য পাসপোর্ট তৈরী করে নিয়োগপত্র, ব্যাগ, জিনিসপত্র, নগদ অর্থসহ লিবিয়া যান। আর লিবিয়ায় খুনিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সব কিছু প্রসতুত করেন সেনা কর্মকর্তা নূরুল ইসলাম শিশু।
পরবর্তীতে এরশাদ সরকার ডালিমকে বেইজিংয়ে নিয়োগ দিতে গিয়ে না পেরে পরে হংকংয়ে ভারপ্রাপ্ত মিশন প্রধান হিসাবে নিয়োগ দেন। পোল্যান্ডে ডালিমকে একই পদে নিয়োগ দিলেও সেদেশের সরকার তাকে গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানায়। এরপর লন্ডনে এরশাদ ও ডালিমের মধ্যে এক বৈঠকের ভিত্তিতে তাকে কেনিয়াতে হাইকমিশনার নিয়োগ দেয়া হয়। অন্যদের মধ্যে পরবর্তীতে আজিজ পাশা ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও রোমেও দায়িত্ব পালন করেন। একেএম মহিউদ্দিন আহমেদ সৌদি আরবের মিশন উপ-প্রধান হিসাবে নিয়োগ পান। রাষ্ট্রদূত সিএম শফি সামীর দাবি অনুযায়ী তার বিরোধিতার কারণে এবং বেনজির ভুট্টো গ্রহণ করতে রাজি না হওয়ায় একই পদে মহিউদ্দিনকে করাচিতে নিয়োগ দিতে পারেনি এরশাদ। রাশেদ চৌধুরী টোকিও’র কাউন্সিলর হন। নূর চৌধুরীকে এরশাদ আমলে আলজেরিয়ায় কাউন্সিলর হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয়। এর আগে তিনি ব্রাজিলে চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। শরিফুল হোসেন ওমানে চার্জ দ্যা অ্যাফেয়ার্স নিযুক্ত হন। অন্যরাও পদোন্নতি পান। তাদের জন্য পদোন্নতি, সুযোগ-সুবিধা সব অবারিত ছিল।
শুধু তাই নয়, এসব খুনি এরশাদ ও খালেদা জিয়া সরকারের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় রাজনীতিতে অংশ নেন এবং রাজনৈতিক দল গঠন করেন। শাহরিয়ার রশিদ ও বজলুল হুদা ১৯৮০ সালের পর প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক শক্তি নামের একটি দল গঠন করেন। ১৯৮৭ সালে ফারুক রহমান ও আব্দুর রশিদ গঠন করেন ফ্রিডম পার্টি। পরে বজলুল হুদাও ফ্রিডম পার্টিতে যোগ দে। এর আগে ১৯৮৬ সালে এরশাদের সঙ্গে রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচন করেন লে. কর্নেল ফারুক। বজলুল হুদা ফ্রিডম পার্টির হয়ে ১৯৮৮’র নির্বাচনে মেহেরপুর থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। আর ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রম্নয়ারি খালেদা জিয়ার ভোটার বিহীন এক তরফা নির্বাচনে কুমিল্লা থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন লে. কর্নেল রশিদ। এভাবে এরশাদ ও খালেদা জিয়ার আমলে খুনিরা সংসদে বসেন।
সাবেক কূটনীতিকরা আরো জানান, খুনিরা বিভিন্ন দেশে চাকরিকালীন নানা ধরনের অনিয়ম, বিশৃংখলা ও চাকরি বিধি লংঘন করে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেন। এদের মধ্যে ডালিম নানা জায়গায় অনেক অঘটনের জন্ম দেন। তাকে পোল্যান্ড সরকার গ্রহণ না করায় সে নিয়োগের আদেশ না থাকা সত্ত্বেও লন্ডন চলে আসে। এরশাদ লন্ডন সফরের সময় হিথ্রো বিমান বন্দরের এলকক এন্ড ব্রাউন স্যুটে এবং পরবর্তীতে হোটেলে তার সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেন। অথচ সে সময় তার কোন নিয়োগপত্র ছিল না। কেনিয়া সরকার ডালিমের অকূটনীতিসুলভ আচরণে অসন্তুষ্ট হয়ে তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকবার বাংলাদেশ সরকারের কাছে অভিযোগ করে। ডালিম চীনে কর্মরত অবস্থায় সেখানকার রাষ্ট্রদূত আব্দুল মমিনকেও নানাভাবে হেনসতা করেন। বজলুল হুদা পাকিসতানে দূতাবাসের কর্মচারিদের মারধর করতেন। আজিজ পাশা তুরস্কের কাউন্সিলর থাকাকালীন তৎকালীন রাষ্ট্রদূতকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে একটি কক্ষে আটকে রাখেন। ওই রাষ্ট্রদূত তখন ঢাকায় এসওএস বা জরুরি উদ্ধার বার্তা পাঠিয়ে উদ্ধার পান। বজলুল হুদা ’৯৭ সালে ব্যাংককে একটি সুপারস্টোরে চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়েন।
প্রসঙ্গত বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়া শেষে গত ১৯ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্ট খুনিদের আপিলের রায়ে ১২ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত লে. কর্নেল (বরখাসত) সৈয়দ ফারুক রহমান, লে.কর্নেল (অবঃ) সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, লে. কর্নেল (অবঃ) মহিউদ্দিন আহমেমদ (আর্টিলারি), মেজর (অবঃ) এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেমদ (ল্যান্সার) ও মেজর (অব.) বজলুল হুদা বর্তমানে কারাগারে আটক রয়েছেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অপর ৬ জন পলাতক রয়েছেন। এরা হচ্ছেন লে. কর্নেল (অব.) এসএইচ এমবি নূর চৌধুরী, লে. কর্নেল (অব.) শরীফুল হক ডালিম, লে. কর্নেল (অব.) খন্দকার আব্দুর রশিদ, লে. কর্নেল (অব.) এম এ রাশেদ চৌধুরী, ক্যাপ্টেন (অব.) আব্দুল মাজেদ ও রিসালদার মোসলেম উদ্দিন। এছাড়া লে. কর্নেল (অবঃ) মোঃ আজিজ পাশা পলাতক থাকা অবস্থায় ২০০২ সালে জিম্বাবুয়েতে মারা যান।
তৎকালীন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও সাবেক পররাষ্ট্র সচিব সিএম শফি সামী বলেন, খুনিদের এভাবে রাষ্ট্রীয় আনুকূল্য দেয়া, দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে দেয়া ছিল জাতির জন্য এক লজ্জাজনক অধ্যায়। এ ঘটনাগুলো পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে ভয়াবহ নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার জন্ম দেয়। আনোয়ার সাদাত বেঁচে থাকাকালীন একজন রাষ্ট্রদূত পরিচয়পত্র পেশ করতে গেলে তাকে প্রকাশ্যেই তিনি বলেছিলেন, আমার ট্যাংক দিয়েই তোমরা আমার বন্ধুকে হত্যা করেছো। শফি সামী বলেন, ১৯৮৭ থেকে ’৯১ সাল সময়কালে একেএম মহিউদ্দিনকে পাকিসতানের করাচিতে ডেপুটি হাইকমিশনার নিয়োগ দেয়া হলে আমি তাকে মেনে নেইনি। পাকিসতান সরকারকে জানিয়েই তিনি একেএম মহিউদ্দিনকে প্রত্যাখ্যান করেন বলে জানান। এছাড়া ’৯২-’৯৩ সালে চীনের রাষ্ট্রদূত থাকাকালেও রাশেদ চৌধুরীকে উপ-হাইকমিশনার হিসাবে নিয়োগ প্রত্যাখ্যান করেছিলেন বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে সেভাবে সংগঠিত প্রতিবাদ না হলেও অনেকে বিভিন্ন উপায়ে প্রতিবাদ করেছিলেন।
’৭৫ সালে লন্ডনে ডেপুটি হাইকমিশনার এবং সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ফারুক চৌধুরী বলেন, হত্যাকারীদের বিভিন্ন দূতাবাসে নিয়োগ অনেকে মেনে নিতে না পারলেও তাদের কিছু করার ছিল না। কেননা সামরিক শাসকরাই তাদের নিয়োগ দেয়, সব নিয়ম-কানুন তাদের হাতে। আবুধাবীতে কর্মরত থাকার সময় আমার অধীনে অভিযুক্ত কিসমত হাসেমকে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। তিনি বলেন, এটা ছিল একটি অসহনীয় ঘটনা। কিন্তু রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তা হিসাবে রাষ্ট্রের নিয়োগের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা যায় না। তিনি বলেন, নিয়োগের আদেশগুলো আসতো চীফ মার্শাল এডমিনিস্ট্রেটরের অফিস থেকে। তাই আদেশগুলো আমি কখনোই খুঁজে পাইনি।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সময় ফ্রান্সে কর্মরত সাবেক পররাষ্ট্র সচিব এটিএম নজরুল ইসলাম বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনেক মেধাবি কর্মকর্তার ওপরে খুনিদের সরাসরি কাউন্সিলর, প্রথম সচিবের মত উচ্চপদে নিয়োগ দেন জিয়াউর রহমান। এরশাদ সরকারও তাদেরকে পুরস্কৃত করে। তিনি একেএম মহিউদ্দিন, শরফুল হোসেন, আজিজ পাশাকে ঢাকায় নিয়ে আসেন এবং অন্যদের উচ্চতর পদে পদোন্নতি দেন।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সময় সুইজারল্যান্ডের জেনেভা মিশনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান এবং পরবর্তীতে সচিব পদমর্যাদায় ফরেন সার্ভিস একাডেমীর প্রিন্সিপ্যাল মহিউদ্দিন আহমদ এ বিষয়ে বলেন, জিয়া সরকার প্রাথমিকভাবে খুনিদের লিবিয়াতে নিয়ে গেলেও ষড়যন্ত্রের আশংকায় তাদের সবাইকে সেখানে একসঙ্গে রাখার সাহস পায়নি। তখন তাদেরকে বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দেয়। তিনি বলেন, শমসের মবিন চৌধুরী, মেজর জেনারেল নূরুল ইসলাম শিশু ঢাকা থেকে সবকিছু তদারক করেন। নূরুল ইসলাম শিশু এখন যুক্তরাষ্ট্রের ওকলাহোমাতে বাস করেন। এই দুইজন সেনাবাহিনীতে জিয়ার ঘনিষ্ঠ ছিলেন, সহকর্মী হিসাবে খুনিদেরও চিনতেন। তিনি জানান, শমসের মবিনকে আহত মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে বঙ্গবন্ধুই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চাকরি দেন। ’৭৫-এ শমসের মবিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিচালক ছিলেন।
সাবেক রাষ্ট্রদূত মোসতফা ফারুক মোহামমদ এমপি ’৭৫-এ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কর্মরত ছিলেন। তিনি বলেন, এক অস্বসিতকর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে তখন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা সময় পার করেছেন। অনেকে অফিসে আসতেন না। তেমন কোন কাজকর্ম করতেন না কেউ। অল্প কয়েকজন কর্মকর্তা সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতেন। তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে যোগাযোগ ছাড়াই খুনিদের বিদেশের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দেয়া হয়েছে। তিনি জানান, অনেক দেশ তাদের নিয়োগ মেনে নিলেও ভিয়েতনাম, পোল্যান্ড কাউকে মেনে নিয়নি। এমনকি পরবর্তীতে পাকিসতানও খুনিদের একজনকে গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানায়।