হত্যা, কু, ষড়যন্ত্রের রাজনীতি বন্ধ করে দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়বো -- প্রধানমন্ত্রী

হত্যা, কু, ষড়যন্ত্রের রাজনীতি বন্ধ করে দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়বো -- প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি চিরতরে বন্ধ করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছেন।
গতকাল ৩ নভেম্বর জেলহত্যা দিবস উপলৰে বঙ্গবন্ধু আনৱর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি বলেন, বাংলাদেশে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদের কোন স্থান নেই। আমরা বাংলাদেশকে মধ্যএশিয়ার একটি শানিৱকামী দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চাই। আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর সভাপতিত্বে এই আলোচনা সভায় শেখ হাসিনা আরো বলেন, যত ষড়যন্ত্রই করা হোক না কেন, বঙ্গবন্ধু হত্যা, জেল হত্যা, ২১ আগস্ট হত্যার বিচার হবেই।
আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ড. মহিউদ্দীন খান আলমগীর, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, সতীশচন্দ্র রায়, কেন্দ্রীয় নেতা মোহাম্মদ নাসিম, সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকার, পলস্নী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, যুগ্ম সম্পাদক মাহাবুব-উল আলম হানিফ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আহম্মদ হোসেন, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম, মেজবাহ উদ্দিন সিরাজ, আল সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া ও আইন প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট কামরম্নল ইসলাম।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বক্তৃতার শুরম্নতেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জেলখানায় নিহত জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরম্নল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমেদ, এম মনসুর আলী এবং কামরম্নজ্জামানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
শেখ হাসিনা ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর কারাগারে জাতীয় চার নেতার হত্যাকাণ্ডের কথা উলেস্নখ করে বলেন, জেলখানা হচ্ছে নিরাপদ জায়গা। সেই নিরাপদ জায়গায় জাতীয় চার নেতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে, যা ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা। বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে যারা মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করে বিজয় অর্জন করেছে তাদেরকে হত্যা করার একটাই উদ্দেশ্য তাহল স্বাধীনতার ইতিহাস মুছে ফেলার ঘৃণ্য প্রয়াস চালানো।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, যারা গর্বের সঙ্গে ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছিল জিয়াউর রহমান সেই আত্মস্বীকৃত খুনিদের শুধু ইনডেমনিটি দেয়নি বরং বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেছিলেন। তার স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রম্নয়ারি ভোটারবিহীন নির্বাচন করে খুনি রশিদ ও হুদাকে সংসদ সদস্য করেছিলেন। জেলহত্যা বিচারের রায় ঘোষণার পূর্ব মুহূর্তে রায়কে প্রভাবিত করার জন্যে মামলার অন্যতম একজন আসামিকে প্রমোশন দিয়ে রাষ্ট্রদূত করেছিলেন। শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপির কাজই হচ্ছে হত্যাকাণ্ডকে উৎসাহিত করা, মানবাধিকার লংঘন করা, খুনি-সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদীদের আশ্রয় দেয়া।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার প্রক্রিয়া যখন চূড়ানৱ পর্যায়ে তখন মামলার অন্যতম আইনজীবী ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপসের ওপর হামলা করা হয়েছে। তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নারী-শিশুকে হত্যা করে এদের রক্তের পিপাসা মেটেনি। তিনি বিডিআর হত্যাকাণ্ডের কথা উলেস্নখ করে বলেন, ষড়যন্ত্র এখনও অব্যাহত রয়েছে। তিনি আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী ও সকল গণতন্ত্রকামী মানুষকে সকল ষড়যন্ত্রের বিরম্নদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী বলেন, জাতীয় চার নেতা জীবন দিয়েছেন, কিন্তু মাথা নত করেননি। তিনি বলেন, বাঙ্গালী অনেক অত্যাচার সহ্য করেছে, রক্তের বিনিময়ে দেশ স্বাধীন করেছে। জাতীয় চার নেতার বিষয়ে সত্য ইতিহাস লেখার আহবান জানান তিনি।
বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, জাতীয় চার নেতা কোন আপোষ করেননি বলেই তাঁদের বন্দি অবস্থায় কারাগারে হত্যা করা হয়েছে। তিনি মানবাধিকার কর্মীদের সমালোচনা করে বলেন, যেখানে মানবাধিকার ভূলুণ্ঠিত হয়েছে, সেখানে মানবাধিকার কর্মীরা নীরব রয়েছেন।
শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, ’৭১-এর বিজয় স্বাধীনতা বিরোধীরা মেনে নিতে পারেনি। এ কারণে বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়েছে। দেশে যত অপশক্তি সৃষ্টি হয়েছে তার মহানায়ক জিয়াউর রহমান।
মহিউদ্দিন খান আলমগীর বলেন, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে কেউ খুন করে রেহাই পাবে না। লতিফ সিদ্দিকী বলেন,বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে জাতীয় চার নেতা ঐক্যবদ্ধ থেকে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, ১৯৭১ সালে খন্দকার মোশতাক ৪ নেতার মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা করেছিল। মুক্তিযুদ্ধ বানচাল করা এবং দেশ যাতে স্বাধীন হতে না পারে এ কারণেই এ বিভেদ সৃষ্টি করা হয়েছিল। তিনি বলেন, জাতীয় চার নেতা ঐক্যবদ্ধ ছিলেন। তিনি একটি জাতীয় পত্রিকার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, এক সাংবাদিক কারাগারে হত্যাকান্ডের ইতিহাস বিকৃতি করেছে। চার নেতা মৃত্যুর পরও এদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির উদ্দেশ্যেই এসব করা হয়েছে বলে তিনি উলেস্নখ করেন । স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি, যুদ্ধাপরাধী, ’৭১ ও ’৭৫-এর ঘাতকরা এখনো ষড়যন্ত্র করছে।
মোহাম্মদ নাসিম বলেন, আমরা আমাদের বাবাকে হারিয়েছি; কিন্তু বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বাবাসহ পরিবারের সবাইকে হারিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু এবং জাতীয় চার নেতা এখন ছবি হয়ে গেছেন। তিনি চার নেতা হত্যা মামলার পুনর্বিচারের দাবি জানান। তিনি বলেন, যার পিতা বঙ্গবন্ধুর সাথে বেঈমানী করেনি, তার সনৱান বঙ্গবন্ধুর কন্যার সাথেও বেঈমানী করতে পারেন না।
জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, জাতির কলংক মুছে ফেলতে জাতির জনক ও চার নেতার হত্যাকারীর বিচার, ২১ আগষ্ট গ্রেনেড হামলার রহস্য উদঘাটন করতে হবে।
বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, যারা বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করেছে তাদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে জাতির কলংক মুছে ফেলতে হবে।
মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, চার নেতা জীবন দিয়েছিলেন, কিন্তু বঙ্গবন্ধুর সাথে বেঈমানী করেননি।
আলোচনা সভার শুরম্নতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ জেলখানায় নিহত জাতীয় চার নেতার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
ব্রিটিশ প্রতিনিধি দলের সাৰাৎ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদকে কার্যকর ও দেশের গণতন্ত্রকে আরো সুদৃঢ় করার ব্যাপারে তাঁর অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন। জন ব্যাটলের নেতৃত্বে মঙ্গলবার ব্রিটিশ পার্লামেন্টারি ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট কমিটির (আইডিএ) সফররত নয় সদস্যের প্রতিনিধিদল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর কার্যালয়ে সৌজন্য সাৰাৎ করতে এলে তিনি এ অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।
প্রধানমন্ত্রীর ডেপুটি প্রেস সচিব মাহবুবুল হক শাকিল বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের জানান, বৈঠকে ডিএফআইডি’র সহায়তায় বাংলাদেশের উন্নয়ন ও সংসদীয় গণতন্ত্রকে সুদৃঢ় করাসহ ব্যাপক উন্নয়ন ইস্যু নিয়ে বিসৱারিত আলোচনা করা হয়। শাকিল বলেন, ব্রিটিশ সংসদীয় প্রতিনিধিদল এ দেশের মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে তাঁর ও তাঁর পরিবারের ত্যাগের প্রশংসা করেন।
ওআইসি মহাসচিবের সাৰাৎ
সফররত ওআইসি মহাসচিব প্রফেসর একেমেলেদ্দিন ইহসানোগলু জলবায়ু পরিবর্তনের কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বে আনৱর্জাতিক বিভিন্ন ফোরামে বাংলাদেশের সক্রিয় ভূমিকার প্রশংসা করেছেন। তিনদিনের সফরে বাংলাদেশে এসে ওআইসি মহাসচিব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর কার্যালয়ে সৌজন্য সাৰাৎকালে এ প্রশংসা করেন।
আনৱর্জাতিক সন্ত্রাস প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা তাঁর দৃঢ় অঙ্গীকারের কথা পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, বাংলাদেশ কখনই কোন সন্ত্রাসীকে তার ভূমি ব্যবহার করতে দেবে না। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব এম এ করিম, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মোলস্না ওয়াহিদুজ্জামান এবং রাষ্ট্রদূত এম জিয়াউদ্দিন এসময় উপস্থিত ছিলেন।
বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পসৱবক অর্পণ
বাসস জানায়, জেলহত্যা দিবস উপলৰে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গলবার সকালে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কে বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পসৱবক অর্পণ করেন।
প্রথমে তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এবং পরে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ ও মন্ত্রিসভার সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে দলীয় প্রধান হিসেবে পুষ্পসৱবক অর্পণ করেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী বনানী কবরস্থানে জেলখানায় নিহত জাতীয় নেতা সৈয়দ নজরম্নল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমেদ ও এম মনসুর আলীর কবরে পুষ্পসৱবক অর্পণ করে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পসৱবক অর্পণের পর মুজিবনগর সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি জেলখানায় নিহত সৈয়দ নজরম্নল ইসলামের পুত্র ও আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, অতীতে জেলহত্যার বিচার নিয়ে প্রহসন হয়েছে। এবার সুষ্ঠু বিচার হবে। শুধু খুনিরা নয়, তাদের মদদদাতারাও রেহাই পাবে না। তিনি বলেন, সরকার জেলহত্যার ঘটনা পুনঃবিচারের সিদ্ধানৱ নিয়েছে। খুব শিগগিরই বিচার শুরম্ন হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের রায় কার্যকর এবং জেলহত্যার সুষ্ঠু বিচার না হলে দেশে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে না। আমরা জেলহত্যার ন্যায়বিচার চেয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পসৱবক অর্পণের পর আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পসৱবক অর্পণ করেন। পরে তারা বনানী কবরস্থানে জেলখানায় নিহত নেতৃবৃন্দের কবরে পুষ্পসৱবক অর্পণ করেন।

Popular posts from this blog

THE CONSTITUTION OF THE BANGLADESH AWAMI LEAGUE

ইতিহাসবন্ধনী

Justice order of the day