বঙ্গবন্ধু মামলার হাইকোর্টের চূড়ান্ত রায়
বঙ্গবন্ধু মামলার হাইকোর্টের চূড়ান্ত রায়
ঢাকা, নভেম্বর ১৯ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)--স্বাধীনতা সংগ্রামের নায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলার চূড়ান্ত বিচারে হাইকোর্ট ১২ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে। খালাস দেয় তিন আসামিকে। ২০০১ সালের ৩০ এপ্রিল হাইকোর্টের তৃতীয় বেঞ্চের বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করিম এ রায় দিয়েছিলেন। হাইকোর্টের সেই চূড়ান্ত রায়ে বরখাস্ত লে. কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান, অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল খন্দকার আবদুর রশিদ, অবসরপ্রাপ্ত মেজর বজলুল হুদা, অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল শরিফুল হক ডালিম, অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল এ এম রাশেদ চৌধুরী, অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ (ল্যান্সার), অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল এস এইচ বি এম নূর চৌধুরী, অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল মো. আজিজ পাশা, অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ (আর্টিলারি), রিসালদার মোসলেমউদ্দিন ও অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন আব্দুল মাজেদকে দেওয়া নিু আদালতের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। ক্যাপ্টেন মো. কিসমত হাসেম, অবসরপ্রাপ্ত মেজর আহমেদ শরিফুল হোসেন ও অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন নাজমুল হোসেন আনসারের ফাঁসির আদেশ বাতিল করে হাইকোর্ট। রায়ের শেষ অংশে হাইকোর্ট অভিমতে বলেছিল, ১২ সেনা কর্মকর্তার চাকরি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আত্মীকরণ করা হয়েছিল বলে সরকার পক্ষ সাক্ষ্য উপস্থাপন করেছে। তারা হল, মেজর শরিফুল হক, মেজর আজিজ পাশা, মেজর এ কে এম মহিউদ্দিন, মেজর বজলুল হুদা, মেজর রাশেদ চৌধুরী, মেজর নূর চৌধুরী, মেজর আহমেদ শরিফুল হোসেন, মেজর সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, ক্যাপ্টেন মাজেদ, লে. নাজমুল হোসেন আনসার, ক্যাপ্টেন কিসমত হাসেম ও অপর একজন। অভিমতে বলা হয়, এই সাক্ষ্য প্রমাণ করে না যে, দণ্ডিত আসামিরা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের হত্যাকান্ডের পুরস্কার হিসেবে তা পেয়েছিলেন। কারণ, ওই সাক্ষ্য ঘটনার প্রায় এক বছর পরের। এর মধ্যে অপর তিনটি ঘটনা ঘটে গেছে। এর একটি জেলহত্যা, অপর দু'টি ৩ নভেম্বর ও ৭ নভেম্বরের ঘটনা। পারিপার্শ্বিক অবস্থায় এই সুনির্দিষ্ট 'ইনফারেন্সে' আসা যায় না যে, সেই ঘটনার সকালে, এই আসামিরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল। অভিমতে আরও বলা হয়, সরকার পক্ষ এই আসামিদের বিরুদ্ধে সন্দেহাতীতভাবে অভিযোগ প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছে। আসামিরা সেই সন্দেহের সুবিধা পাবে, যদি না সরকার পক্ষ অপর কোন বিশ্বাসযোগ্য সাক্ষ্য দিয়ে সেই সন্দেহ দূর না করে। কিন্তু বর্তমান মামলায় সেই সন্দেহ দূর করার জন্য সরকার পক্ষ কোন বিশ্বাসযোগ্য সাক্ষ্য উপস্থাপন করতে পারেনি। রায়ে বলা হয়, ফৌজদারি আইনশাস্ত্রের মূলনীতি হলো, আসামি দোষী প্রমাণ না হওয়া পর্যন্ত তাকে নির্দোষ ধরে নিতে হয়। অভিমতে আরও বলা হয়, সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার অপরাধ যদিও একটি বিদ্রোহ প্রকৃতির, তবু অপরাধের প্রকৃতি আবেগ দিয়ে প্রভাবিত নয়। আমরা কখনোই নিশ্চিতভাবে জানব না, দণ্ডিতরা ছাড়া আর কে বঙ্গবন্ধু ও পরিবারের সদস্যদের হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল। তাই এ মামলার সাক্ষ্য-প্রমাণ সতর্কতার সঙ্গে বিচার বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। রায়ে বলা হয়, বর্তমান হত্যা ও ষড়যন্ত্রের এ মামলায় বেশিরভাগ সাক্ষীই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছে। অভিযুক্তদের অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে বের করতে অধিক সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। হাইকোর্ট বলেছে, লে. কর্নেল ফারুক ও লে. কর্নেল শাহরিয়ার রশিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি বিবেচনার বাইরে রাখা হয়েছে। কারণ, বিভক্ত রায়ে দুই বিচারপতি সেগুলো সত্য ও স্বেচ্ছাপ্রণোদিত বলে একমত হতে পারেননি। তাই আমিও সেগুলো বিবেচনার বাইরে রাখছি। লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমদের (আর্টিলারি) অপর একমাত্র স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি সত্য ও স্বেচ্ছাপ্রণোদিত প্রমাণিত হয়েছে। তাই এই জবানবন্দি কেবল তার বিরুদ্ধে যাবে। তবে মেজর আহমেদ শরিফুল হোসেইন, ক্যাপ্টেন কিসমত হাসেম ও ক্যাপ্টেন নাজমুল হোসেন আনসারকে জড়িয়ে তার এই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি কোন সুনির্দিষ্ট প্রমাণ দিয়ে সমর্থিত না হওয়ায় এই তিন আসামির বিরুদ্ধে তা বিবেচনায় আনা হল না। এই একই বিবেচনায় ঢাকার দায়রা জজ আদালত এ মামলায় দফাদার মারফত আলী ও এলডি আবুল হোসেন মৃধাকে খালাস দিয়েছিল। সরকার পক্ষ সন্দেহাতীতভাবে অভিযোগ প্রমাণে ব্যর্থ হওয়ায় মেজর আহমেদ শরিফুল হোসেইন, ক্যাপ্টেন কিসমত হাসেম ও ক্যাপ্টেন নাজমুল হোসেন আনসারকে খালাস দেওয়া হল। তাদের মৃত্যুদন্ডের রায় বাতিল করা হল। লে. কর্নেল (অব) মহিউদ্দিন আহমেদ (আর্টিলারি), ক্যাপ্টেন (অব) আব্দুল মাজেদ ও রিসালদার মোসলেমউদ্দিনকে দায়রা আদালত সঠিকভাবেই মৃত্যুদন্ডে দণ্ডিত করেছেন। তাদের ক্ষেত্রে ডেথ রেফারেন্স গ্রহণ করা হল। লে. কর্নেল (অব) মহিউদ্দিন আহমেদের (আর্টিলারি) আপিল খারিজ করা হল। হাইকোর্ট এর আগে ২০০০ সালের ১২ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় বিভক্ত রায় দিয়েছিল। বিচারপতি মো. রুহুল আমিন নিু আদালতে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ১৫ আসামির ১০ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে পাঁচজনকে খালাস দিয়েছিলো। অপর বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ডই বহাল রাখেন। বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করিম হাইকোর্টের তৃতীয় বেঞ্চের বিচারপতি হিসেবে চূড়ান্ত রায় দেন।
এই রায়ের মধ্য দিয়ে দেরিতে হলেও জাতি তার প্রাপ্য পেয়েছে : ড. কামাল হোসেন
ঢাকা,বাংলাদেশ, ১৯ নভেম্বর (বাসস) : আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আইনজীবী ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর হত্যা মামলার রায়কে ঐতিহাসিক আখ্যা দিয়ে বলেছেন, দেরিতে হলেও বাঙালি জাতি তাদের প্রাপ্য পেয়েছে।তিনি বলেন, জাতির জনক হত্যাকাণ্ডের বিচার যারা আটকে রেখেছিল, তাদেরও বিচার হওয়া উচিত।আজ বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় ঘোষণার পর সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, জাতির জনকের হত্যাকাণ্ডের বিচার লাভের যে সাংবিধানিক অধিকার দেশবাসীর রয়েছে তা প্রতিষ্ঠা করতে আমাদের অনেক মূল্য দিতে হয়েছে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে সংবিধানের ওপর আঘাত করা হয়েছিল। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তান ও জাতির জনকের বিচার হবে না- এটা কি কল্পনা করা যায়?তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু হচ্ছেন এ জাতির হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন-ান। তার ডাকে সাড়া দিয়ে সমগ্র জাতি অবিস্মরণীয় মূল্য দিয়ে স্বাধীনতা এনেছে। তাঁর হত্যাকাণ্ড স্বাধীনতার ওপর আঘাত। হত্যাকারীরা স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি।ড. কামাল বলেন, আইন অনুযায়ী বিচার হবে এটা সংবিধানে প্রতিষ্ঠিত। তা সত্ত্বেও ৩৪ বছর জাতিকে বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার পেতে অপেক্ষা করতে হয়েছে। তিনি বলেন, হত্যাকারীরা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে দম্ভের সাথে প্রচার করেছে তাদেরকে রক্ষার জন্যই তথাকথিত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ করা হয়েছিল। তিনি বলেন, সাংবিধানিকভাবেই আইনের অধিকার মানুষের ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার স্বীকৃত। আজকের এই রায় সাংবিধানিক শাসনের যে প্রতিশ্রুতি সর্বোচ্চ আদালত তা পালন করেছেন। দেরিতে হলেও জাতির জনকের হত্যার বিচার হলো।তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে সংবিধানের ওপর যে আঘাত করা হয়েছিল, তার বিচারের রায় ঘোষণার মাধ্যমে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার পথ প্রশস- হলো। তিনি বলেন, আজকের এই রায় ঐতিহাসিক। এই রায় পুরো জাতির একটা বড় অর্জন। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের দাবি করে যারা সংগ্রাম-আন্দোলন করেছেন, জীবন দিয়েছেন, তাদের একটা তালিকা হওয়া উচিত।‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের সেই কলঙ্কময় রাত্রিতে হত্যার সময় আমি দেশে ছিলাম না, এই হত্যার বিচার চেয়ে পাঁচ বছর নির্বাসনে ছিলাম। দেশে থাকলে ঘাতকরা হয়তো আমাকেও টার্গেট করতো’ উল্লেখ করে ড. কামাল বলেন, সংবিধানের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বিচার পাওয়ার অধিকার যদি বাধাগ্রস- হয় তাহলে আমাদের সকলকেই এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে সাংবিধানিক অধিকার রক্ষা করতে হবে। স্বাধীনতার শত্রু ও ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
ঢাকা, নভেম্বর ১৯ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)--স্বাধীনতা সংগ্রামের নায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলার চূড়ান্ত বিচারে হাইকোর্ট ১২ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে। খালাস দেয় তিন আসামিকে। ২০০১ সালের ৩০ এপ্রিল হাইকোর্টের তৃতীয় বেঞ্চের বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করিম এ রায় দিয়েছিলেন। হাইকোর্টের সেই চূড়ান্ত রায়ে বরখাস্ত লে. কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান, অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল খন্দকার আবদুর রশিদ, অবসরপ্রাপ্ত মেজর বজলুল হুদা, অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল শরিফুল হক ডালিম, অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল এ এম রাশেদ চৌধুরী, অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ (ল্যান্সার), অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল এস এইচ বি এম নূর চৌধুরী, অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল মো. আজিজ পাশা, অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ (আর্টিলারি), রিসালদার মোসলেমউদ্দিন ও অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন আব্দুল মাজেদকে দেওয়া নিু আদালতের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। ক্যাপ্টেন মো. কিসমত হাসেম, অবসরপ্রাপ্ত মেজর আহমেদ শরিফুল হোসেন ও অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন নাজমুল হোসেন আনসারের ফাঁসির আদেশ বাতিল করে হাইকোর্ট। রায়ের শেষ অংশে হাইকোর্ট অভিমতে বলেছিল, ১২ সেনা কর্মকর্তার চাকরি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আত্মীকরণ করা হয়েছিল বলে সরকার পক্ষ সাক্ষ্য উপস্থাপন করেছে। তারা হল, মেজর শরিফুল হক, মেজর আজিজ পাশা, মেজর এ কে এম মহিউদ্দিন, মেজর বজলুল হুদা, মেজর রাশেদ চৌধুরী, মেজর নূর চৌধুরী, মেজর আহমেদ শরিফুল হোসেন, মেজর সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, ক্যাপ্টেন মাজেদ, লে. নাজমুল হোসেন আনসার, ক্যাপ্টেন কিসমত হাসেম ও অপর একজন। অভিমতে বলা হয়, এই সাক্ষ্য প্রমাণ করে না যে, দণ্ডিত আসামিরা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের হত্যাকান্ডের পুরস্কার হিসেবে তা পেয়েছিলেন। কারণ, ওই সাক্ষ্য ঘটনার প্রায় এক বছর পরের। এর মধ্যে অপর তিনটি ঘটনা ঘটে গেছে। এর একটি জেলহত্যা, অপর দু'টি ৩ নভেম্বর ও ৭ নভেম্বরের ঘটনা। পারিপার্শ্বিক অবস্থায় এই সুনির্দিষ্ট 'ইনফারেন্সে' আসা যায় না যে, সেই ঘটনার সকালে, এই আসামিরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল। অভিমতে আরও বলা হয়, সরকার পক্ষ এই আসামিদের বিরুদ্ধে সন্দেহাতীতভাবে অভিযোগ প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছে। আসামিরা সেই সন্দেহের সুবিধা পাবে, যদি না সরকার পক্ষ অপর কোন বিশ্বাসযোগ্য সাক্ষ্য দিয়ে সেই সন্দেহ দূর না করে। কিন্তু বর্তমান মামলায় সেই সন্দেহ দূর করার জন্য সরকার পক্ষ কোন বিশ্বাসযোগ্য সাক্ষ্য উপস্থাপন করতে পারেনি। রায়ে বলা হয়, ফৌজদারি আইনশাস্ত্রের মূলনীতি হলো, আসামি দোষী প্রমাণ না হওয়া পর্যন্ত তাকে নির্দোষ ধরে নিতে হয়। অভিমতে আরও বলা হয়, সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার অপরাধ যদিও একটি বিদ্রোহ প্রকৃতির, তবু অপরাধের প্রকৃতি আবেগ দিয়ে প্রভাবিত নয়। আমরা কখনোই নিশ্চিতভাবে জানব না, দণ্ডিতরা ছাড়া আর কে বঙ্গবন্ধু ও পরিবারের সদস্যদের হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল। তাই এ মামলার সাক্ষ্য-প্রমাণ সতর্কতার সঙ্গে বিচার বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। রায়ে বলা হয়, বর্তমান হত্যা ও ষড়যন্ত্রের এ মামলায় বেশিরভাগ সাক্ষীই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছে। অভিযুক্তদের অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে বের করতে অধিক সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। হাইকোর্ট বলেছে, লে. কর্নেল ফারুক ও লে. কর্নেল শাহরিয়ার রশিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি বিবেচনার বাইরে রাখা হয়েছে। কারণ, বিভক্ত রায়ে দুই বিচারপতি সেগুলো সত্য ও স্বেচ্ছাপ্রণোদিত বলে একমত হতে পারেননি। তাই আমিও সেগুলো বিবেচনার বাইরে রাখছি। লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমদের (আর্টিলারি) অপর একমাত্র স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি সত্য ও স্বেচ্ছাপ্রণোদিত প্রমাণিত হয়েছে। তাই এই জবানবন্দি কেবল তার বিরুদ্ধে যাবে। তবে মেজর আহমেদ শরিফুল হোসেইন, ক্যাপ্টেন কিসমত হাসেম ও ক্যাপ্টেন নাজমুল হোসেন আনসারকে জড়িয়ে তার এই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি কোন সুনির্দিষ্ট প্রমাণ দিয়ে সমর্থিত না হওয়ায় এই তিন আসামির বিরুদ্ধে তা বিবেচনায় আনা হল না। এই একই বিবেচনায় ঢাকার দায়রা জজ আদালত এ মামলায় দফাদার মারফত আলী ও এলডি আবুল হোসেন মৃধাকে খালাস দিয়েছিল। সরকার পক্ষ সন্দেহাতীতভাবে অভিযোগ প্রমাণে ব্যর্থ হওয়ায় মেজর আহমেদ শরিফুল হোসেইন, ক্যাপ্টেন কিসমত হাসেম ও ক্যাপ্টেন নাজমুল হোসেন আনসারকে খালাস দেওয়া হল। তাদের মৃত্যুদন্ডের রায় বাতিল করা হল। লে. কর্নেল (অব) মহিউদ্দিন আহমেদ (আর্টিলারি), ক্যাপ্টেন (অব) আব্দুল মাজেদ ও রিসালদার মোসলেমউদ্দিনকে দায়রা আদালত সঠিকভাবেই মৃত্যুদন্ডে দণ্ডিত করেছেন। তাদের ক্ষেত্রে ডেথ রেফারেন্স গ্রহণ করা হল। লে. কর্নেল (অব) মহিউদ্দিন আহমেদের (আর্টিলারি) আপিল খারিজ করা হল। হাইকোর্ট এর আগে ২০০০ সালের ১২ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় বিভক্ত রায় দিয়েছিল। বিচারপতি মো. রুহুল আমিন নিু আদালতে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ১৫ আসামির ১০ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে পাঁচজনকে খালাস দিয়েছিলো। অপর বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ডই বহাল রাখেন। বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করিম হাইকোর্টের তৃতীয় বেঞ্চের বিচারপতি হিসেবে চূড়ান্ত রায় দেন।
এই রায়ের মধ্য দিয়ে দেরিতে হলেও জাতি তার প্রাপ্য পেয়েছে : ড. কামাল হোসেন
ঢাকা,বাংলাদেশ, ১৯ নভেম্বর (বাসস) : আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আইনজীবী ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর হত্যা মামলার রায়কে ঐতিহাসিক আখ্যা দিয়ে বলেছেন, দেরিতে হলেও বাঙালি জাতি তাদের প্রাপ্য পেয়েছে।তিনি বলেন, জাতির জনক হত্যাকাণ্ডের বিচার যারা আটকে রেখেছিল, তাদেরও বিচার হওয়া উচিত।আজ বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় ঘোষণার পর সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, জাতির জনকের হত্যাকাণ্ডের বিচার লাভের যে সাংবিধানিক অধিকার দেশবাসীর রয়েছে তা প্রতিষ্ঠা করতে আমাদের অনেক মূল্য দিতে হয়েছে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে সংবিধানের ওপর আঘাত করা হয়েছিল। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তান ও জাতির জনকের বিচার হবে না- এটা কি কল্পনা করা যায়?তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু হচ্ছেন এ জাতির হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন-ান। তার ডাকে সাড়া দিয়ে সমগ্র জাতি অবিস্মরণীয় মূল্য দিয়ে স্বাধীনতা এনেছে। তাঁর হত্যাকাণ্ড স্বাধীনতার ওপর আঘাত। হত্যাকারীরা স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি।ড. কামাল বলেন, আইন অনুযায়ী বিচার হবে এটা সংবিধানে প্রতিষ্ঠিত। তা সত্ত্বেও ৩৪ বছর জাতিকে বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার পেতে অপেক্ষা করতে হয়েছে। তিনি বলেন, হত্যাকারীরা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে দম্ভের সাথে প্রচার করেছে তাদেরকে রক্ষার জন্যই তথাকথিত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ করা হয়েছিল। তিনি বলেন, সাংবিধানিকভাবেই আইনের অধিকার মানুষের ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার স্বীকৃত। আজকের এই রায় সাংবিধানিক শাসনের যে প্রতিশ্রুতি সর্বোচ্চ আদালত তা পালন করেছেন। দেরিতে হলেও জাতির জনকের হত্যার বিচার হলো।তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে সংবিধানের ওপর যে আঘাত করা হয়েছিল, তার বিচারের রায় ঘোষণার মাধ্যমে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার পথ প্রশস- হলো। তিনি বলেন, আজকের এই রায় ঐতিহাসিক। এই রায় পুরো জাতির একটা বড় অর্জন। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের দাবি করে যারা সংগ্রাম-আন্দোলন করেছেন, জীবন দিয়েছেন, তাদের একটা তালিকা হওয়া উচিত।‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের সেই কলঙ্কময় রাত্রিতে হত্যার সময় আমি দেশে ছিলাম না, এই হত্যার বিচার চেয়ে পাঁচ বছর নির্বাসনে ছিলাম। দেশে থাকলে ঘাতকরা হয়তো আমাকেও টার্গেট করতো’ উল্লেখ করে ড. কামাল বলেন, সংবিধানের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বিচার পাওয়ার অধিকার যদি বাধাগ্রস- হয় তাহলে আমাদের সকলকেই এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে সাংবিধানিক অধিকার রক্ষা করতে হবে। স্বাধীনতার শত্রু ও ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।