ইতিহাসের নৃশংসতম নারী ও শিশুহত্যা কী অপরাধ ছিল তাদের!

ইতিহাসের নৃশংসতম নারী ও শিশুহত্যা কী অপরাধ ছিল তাদের!
নঈম নিজাম
বাবার মৃত্যুবার্ষিকী পালনে আবদুর রব সেরনিয়াবতের থাকার কথা ছিল বরিশালে। কিন্তু হঠাৎ করেই তিনি সফর স্থগিত করে থেকে যান ঢাকায়। নিয়তি তাকে ঢাকাতেই রেখে দেয়। একইভাবে বঙ্গবন্ধুর একমাত্র ভাই শেখ আবু নাছেরের থাকার কথা খুলনায়। নিয়তি তাকেও ঢাকায় রাখে। বড় ভাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে জীবন বিসর্জন দেন শেখ নাছের। রাজনীতির নিষ্ঠুর অধ্যায়ের সঙ্গে যার কোনো সম্পর্ক ছিল না। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শুধু জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হননি। ঘাতকের হাত থেকে রেহাই পাননি নারী ও শিশুরা। নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব, সুলতানা কামাল, পারভীন জামাল রোজি, বেগম আরজু মনি ও বেবী সেরনিয়াবতকে। উচ্ছল শিশু শেখ রাসেল, বাবু ও আরিফকেও বাঁচতে দেয়নি খুনিরা। মৃত্যুর আগে এই শিশুরা জানতে পারেনি তাদের অপরাধের কথা।
১৫ আগস্টের কয়েকদিন আগে তিন দিনের ব্যবধানে বিয়ে হয় শেখ কামাল ও শেখ জামালের। সুলতানা কামাল ও রোজি জামালের হাতের মেহেদির রঙ শুকায়নি। এই বাড়িতে তারা নতুন এসেছেন। মৃত্যুর আগে জেনেও যেতে পারেননি তাদের কী অপরাধ ছিল? রোজি এবং সুলতানার কোলে আশ্রয় নিয়েও রেহাই পায়নি রাসেল। মৃত্যুর আগে শিশু রাসেল দেখে যান এই পৃথিবীর বর্বরতা। বেগম মুজিব বারবার আকুতি জানিয়েছিলেন শিশু রাসেলকে হত্যা না করার জন্য। কিন্তু বাংলাদেশের স্বাধীনতার নেপথ্যের অনুপ্রেরণা ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের সেই আহ্বানে কারো মন গলেনি। যুবনেতা শেখ ফজলুল হক মনির স্ত্রী আরজু মনি ছিলেন অনতঃসত্ত্বা। বেয়নট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করা হয় তার গর্ভের সনতানকে। এই পৃথিবীর আলোর মুখ দেখার আগেই একটি শিশু খুনিদের নৃশংসতার শিকার হন। অপর দুই শিশু তাপস, পরশ দেখেন এই নিষ্ঠুর চিত্র।
বরিশাল থেকে ঢাকায় এসে আবদুর রব সেরনিয়াবতের বাড়িতে রাতে ছিলেন ৭ জন তরুণ। তাদেরই একজন রিন্টু ছিলেন প্রবীণ নেতা আমির হোসেন আমুর খালাতো ভাই। খুনিরা রিন্টুসহ পাঁচজনকে হত্যা করে। আবদুর রব সেরনিয়াবতের বাড়িতে থাকাটাই ছিল তাদের অপরাধ। আক্রমণের পর টেলিফোন পেয়ে বঙ্গবন্ধুকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসেন একজন সেনাকর্মকর্তা নাম কর্নেল জামিল। রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিব। কর্নেল জামিল ব্যক্তিগত লাল প্রাইভেট কার নিয়ে উড়ে আসেন। সৈন্যরা তাকে বাধা দেয়। তিনি হইচই করেন এবং সৈন্যদের গালাগাল করে ৩২ নম্বরের দিকে অগ্রসর হন। সৈন্যরা বলল, আমরা গুলি করব। তিনি বলেন, গুলি করো। জীবন দেন কর্নেল জামিল।
১৫ আগস্ট শুধু জাতির জনককে হত্যা করেনি খুনিরা। শিশু, নারী ও নিরপরাধ মানুষ হত্যার দায়ে এই খুনিরা অভিযুক্ত। বাংলাদেশের মানুষ আইনের শাসন দেখতে চায়। বিচার চায় অপরাধীদের। অবসান চায় একটি নিষ্ঠুর, বর্বর অধ্যায়ের। এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের রায় কার্যকরের মধ্য দিয়েই স্বাভাবিক হতে পারে সবকিছু। জাতি অধীর আগ্রহে অপেক্ষমাণ।

Popular posts from this blog

THE CONSTITUTION OF THE BANGLADESH AWAMI LEAGUE

ইতিহাসবন্ধনী

ব্রিগেডিয়ার বারীর যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা